Sunday, September 24, 2023
বাড়িSliderজাওয়াহিরি শেষ রক্ষা হলো না

জাওয়াহিরি শেষ রক্ষা হলো না

জাওয়াহিরি কট্টর ব্যক্তিই ছিলেন। তিনি চাইতেন মার্কিন বাহিনী বিশ্বের যেখানেই মোতায়েন করা হোক না কেন, সেখানেই তাদের ওপর আক্রমণ চালিয়ে যেতে।

সাইদ আহমেদ বাবু: আফগানিস্তানে ড্রোন হামলা চালিয়ে গত ৩১ জুলাই আল-কায়দা নেতা আয়মান আল-জাওয়াহিরিকে হত্যা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। আল-কায়দা প্রধান আয়মান আল-জাওয়াহিরিকে হত্যা সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বড় সন্ত্রাসবিরোধী সাফল্য। গত ২ আগস্ট টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে জাওয়াহিরিকে হত্যার ঘোষণা দেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তিনি বলেন, ‘জাওয়াহিরি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের ওপর হত্যাকা- ও সহিংসতা চালিয়েছিলেন। এই সন্ত্রাসী নেতার মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের টুইন টাওয়ারে হামলায় ৩ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। ওই ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের পরিবার এ ঘটনায় স্বস্তি পাবে বলে আমার মনে হয়।’
১৯৫১ সালের ১৯ জুন মিশরের রাজধানী কায়রোতে চিকিৎসক ও স্কলারের এক শ্রদ্ধাভাজন মধ্যবিত্ত পরিবারে তার জন্ম। তার দাদা রাবিয়া আল-জাওয়াহিরি ছিলেন মধ্যপ্রাচ্যের সুন্নি ইসলামিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আল-আজহারের গ্র্যান্ড ইমাম। তার এক চাচা ছিলেন আরব লিগের প্রথম মহাসচিব। স্কুলে থাকা অবস্থাতে ইসলামি রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন জাওয়াহিরি। বে-আইনি মুসলিম ব্রাদারহুডের সদস্য হওয়ায় ১৫ বছর বয়সে প্রথম গ্রেফতার হয়েছিলেন তিনি। এ গ্রুপটি মিশরের সবচেয়ে পুরনো এবং বড় ইসলামি সংগঠন। রাজনৈতিক তৎপরতা সত্ত্বেও পড়াশোনা থামাননি তিনি। কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল স্কুল থেকে মেডিসিনে ডিগ্রি নেন তিনি। ১৯৭৪ সালে স্নাতক সম্পন্ন করার পর চার বছর পর মাস্টার্স শেষ করেন। ১৯৫৫ সালে মারা যাওয়া তার বাবা একই স্কুলের ফার্মাকোলজির প্রফেসর ছিলেন। মার্কিন লেখক ও সাংবাদিক লরেন্স রাইট তার চমৎকার গবেষণাভিত্তিক বই ‘দ্য লুমিং টাওয়ার’-এ দেখিয়েছেন, জাওয়াহিরির আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে চিকিৎসক, কেমিস্ট ও ফার্মাসিস্ট ছিলেন ৩১ জন। উল্লেখ্য, তার দাদা পাকিস্তানে মিশরীয় রাষ্ট্রদূত ছিলেন এবং জাওয়াহিরি বিখ্যাত লাল মসজিদ ঘটনায় জড়িয়ে পড়েন। সেটি আরও একটি বিরাট উপাখ্যান।
জাওয়াহিরির অনুপ্রেরণা ছিলেন ব্রাদারহুডের প্রতিষ্ঠাতা সাইদ কুতব, যিনি পশ্চিমা দেশগুলোকে দেখতেন জাগতিক প্রলোভনের ক্ষেত্র হিসেবে। এজন্য পশ্চিমাদের প্রত্যাখ্যান ও ধ্বংস করা ধার্মিক মুসলমান হিসেবে দায়িত্ব বলে মনে করতেন সাইদ কুতব। জাওয়াহিরি মিশরে যে পরিবারে জন্মেছিলেন, তার পূর্বপুরুষ ছিলেন বিজ্ঞানী ও স্বনাম খ্যাত মুসলিম পণ্ডত। এ কারণে তিনি আধুনিক প্রযুক্তি ও সপ্তম শতকের মূল্যবোধের সম্মিলন ঘটাতে পেরেছিলেন, যা আল-কায়দাকে রীতিমতো হামলার জন্য মুখিয়ে রাখত।
লরেন্স রাইটের বইয়ের তথ্য বলছে, জাওয়াহিরি মাত্র ১৫ বছর বয়সে প্রথম গোপন আস্তানা গড়ে তুলেছিলেন। এজন্য তিনি গ্রেফতার হন এবং ব্যাপকভাবে নির্যাতনের শিকার হন। কঠোর তদন্ত কর্মকর্তারা পাশবিক নির্যাতন চালিয়ে আন্ডারগ্রাউন্ডে থাকা অন্যদের তথ্য দিতে জাওয়াহিরিকে বাধ্য করেছিলেন। এ অপমান ছিল তার জীবনের সবচেয়ে তিক্ত স্মৃতি।
জাওয়াহিরির উত্থান কয়েক দশক আগে। ইসরায়েলের সাথে একটি শান্তিচুক্তি করে প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাত ইসলামপন্থিদের বেশ খেপিয়ে তুলেছিলেন। এজন্য তিনি সমালোচনাকারী শত শত ব্যক্তিকে আটকও করেন। বিচারের সময় আল-জাওয়াহিরি অভিযুক্তদের নেতা হিসেবে আবির্ভূত হন। বিশ্ববাসী প্রথম তার নাম শুনেছিল ১৯৮১ সালে মিশরের প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাতকে হত্যার পর, যখন তিনি আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়েছিলেন। সাদা পোশাক পরা জাওয়াহিরি চিৎকার করে বলেছিলেন, আমরা ত্যাগ স্বীকার করছি এবং ইসলামের বিজয় না হওয়া পর্যন্ত আরও ত্যাগ স্বীকার করার জন্য প্রস্তুত আছি। প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাতকে হত্যার অভিযোগ থেকে আল-জাওয়াহিরিকে মুক্তি দেওয়া হলেও অবৈধ অস্ত্র রাখার দায়ে আদালত তাকে তিন বছরের কারাদণ্ড দিয়েছিলেন।
১৯৮৫ সালে কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর তিনি মিশর থেকে সৌদি আরব চলে যান। এর পরপরই তিনি পাকিস্তানের পেশোয়ারে চলে যান এবং সেখান থেকে আফগানিস্তান যান। সেখানে গিয়ে তিনি ইজিপশিয়ান ইসলামিক জিহাদ-এর একটি অংশ প্রতিষ্ঠা করেন। আফগানিস্তানে যখন সোভিয়েত আগ্রাসন চলছিল। সেখানে তিনি সোভিয়েত (তৎকালীন) বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধরত আফগানিস্তানে আহত ইসলামি মুজাহিদীন গেরিলাদের চিকিৎসার জন্য রেড ক্রিসেন্টের সঙ্গে কাজ করতে শুরু করেন। ওই সময়ে বিন লাদেনের সঙ্গে পরিচয় হয় তার। সৌদি ধনকুবের ও আল-কায়দার শীর্ষনেতা ওসামা বিন লাদেন তখন আফগানিস্তানে যুদ্ধ করছিল। আফগানিস্তান থেকে সোভিয়েত সৈন্য প্রত্যাহারের পরের বছরগুলোতে তিনি বুলগেরিয়া, ডেনমার্ক এবং সুইজারল্যান্ডে বসবাস করেছেন বলে ধারণা করা হয়।
কখনও কখনও ভুয়া পাসপোর্ট ব্যবহার করে বলকান অঞ্চল, অস্ট্রিয়া, ইয়েমেন, ইরাক, ইরান এবং ফিলিপিন্স ভ্রমণ করেছেন বলে ধারণা রয়েছে। এছাড়া তিনি গোপনে বাংলাদেশ সফরে এসে বঙ্গোপসাগরে জাহাজে অবস্থান করে বিএনপি-জামাত জোট সরকারের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সাথে সাক্ষাৎ করেন। ধারণা করা হয়, ১৯৯০-এর দশকে জাওয়াহিরি নিরাপদ আশ্রয় এবং অর্থ জোগাড়ের জন্য বিশ্বজুড়ে ঘুরে বেড়ান। এ সংগঠনটি মিশরের সরকারকে উৎখাত করার চেষ্টা চালায়। ১৯৯০ দশকের মাঝামাঝি ইসলামিক স্টেট প্রতিষ্ঠা করে। এ সময় মিশরজুড়ে তারা প্রায় ১ হাজার ২০০ মানুষকে হত্যা করে। দেশি নাগরিকদের হত্যার জন্য দায়ী বলে মনে করা হয়। এর দুই বছর পরে জাওয়াহিরির অনুপস্থিতিতে মিশরের একটি সামরিক আদালত তাকে মৃত্যুদণ্ড দেন। এরপর ১৯৯৩ সালে মিশরে ইসলামি জিহাদের নেতৃত্ব নিজ কাঁধে তুলে নেন জাওয়াহিরি। তিনি মিশরের তৎকালীন সরকারকে উৎখাত করে বিশুদ্ধ ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য নানা তৎপরতা শুরু করেন।
১৯৯৫ সালের জুনে আদ্দিস আবাবায় তার নেতৃত্বে মিশরের প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারককে হত্যাচেষ্টা হয়। তখন মিশরের বিভিন্ন মন্ত্রীদের ওপর হামলা চালায় সংগঠনটি। এর মধ্যে ছিল প্রধানমন্ত্রী আতিফ সিদকি। শুধু তাই নয়, একই সময়ে তিনি পাকিস্তানের ইসলামাবাদে মিশরীয় দূতাবাসে হামলার নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেখানে জঙ্গিদের হামলায় ১৬ জন নিহত হয়েছিলেন। ১৯৯৬ সালে তিনি রাশিয়ায় গ্রেফতার হয়ে ছয় মাস কারাগারে ছিলেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল তিনি ভিসা ছাড়া চেচনিয়া ভ্রমণ করেন। ১৯৯৭ সালে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট তাকে ইসলামিক জিহাদের একটি অংশ কনকোয়েস্ট গ্রুপের প্রধান নেতা হিসেবে চিহ্নিত করে। সে-সময় আল-জাওয়াহিরি আফগানিস্তানের জালালাবাদ শহরে যান। সেখানে ওসামা বিন লাদেনের ঘাঁটি ছিল। এক বছর পরে ইজিপশিয়ান ইসলামিক জিহাদ এবং আল-কায়দাসহ ৫টি ইসলামিক জঙ্গি সংগঠন মিলে ওয়ার্ল্ড ইসলামিক ফ্রন্ট গঠন করে। তারা ইহুদি এবং ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। মার্কিন নাগরিকদের হত্যার জন্য প্রথম ফতোয়া দেয় ইসলামিক ফ্রন্ট।
১৯৯৮ সালে আয়মান আল-জাওয়াহিরি মার্কিন দূতাবাসে হামলায় অংশগ্রহণের জন্য আমেরিকার কালো তালিকাভুক্ত হন। ধারাবাহিক আক্রমণের একটি ১৯৯৮ সালের ৭ আগস্ট কেনিয়া এবং তানজানিয়ার মার্কিন দূতাবাসে বোমা হামলায় ২২৪ জন নিহত এবং ৫ হাজার জনেরও বেশি আহত হওয়ার জন্য আল-জাওয়াহিরিকে অভিযুক্ত করা হয়েছিল। ১৯৯৯ সালে মিশরের আদালত জাওয়াহিরির অনুপস্থিতিতে তাকে মৃত্যুদ- দেয়। ততদিনে তিনি অবশ্য আল-কায়দার গুরুত্বপূর্ণ নেতা হয়ে ওঠেন। তারপর থেকেই জাওয়াহিরিকে খোঁজা হচ্ছিল। ধারণা করা হচ্ছিল, তিনি আফগানিস্তানের দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলে লুকিয়ে আছেন।
তিনি ১২ অক্টোবর ২০০০ সালে ইয়েমেনে ইউএসএস কোল নৌযানে হামলার ষড়যন্ত্র করেছিলেন বলেও ধারণা করা হয়, যে হামলায় ১৭ মার্কিন নাবিক নিহত এবং ৩০ জনেরও বেশি আহত হয়েছিল। এফবিআইয়ের মোস্ট ওয়ান্টেড তালিকায় ছিল জাওয়াহিরির নাম। তাকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য ২৫ মিলিয়ন ডলার পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছিল।
স্যাটেলাইট টেলিফোনে জাওয়াহিরির কথোপকথন থেকে জানা যায়, এসব হামলার সাথে ওসামা বিন লাদেন জড়িত। এ হামলার দু-সপ্তাহ পরে আফগানিস্তানে ইসলামিক ফ্রন্টের ট্রেনিং ক্যাম্পে বোমাবর্ষণ করে আমেরিকা। এর পরের দিন পাকিস্তানের এক সাংবাদিককে ফোন করে জাওয়াহিরি বলেন, ‘আমেরিকাকে বলুন তাদের বোমা হামলা, তাদের হুমকি এবং তাদের আগ্রাসনে আমরা ভয় পাই না। যুদ্ধ সবে শুরু হয়েছে।’ ৯/১১-এর পর আল-কায়দা বছরের পর বছর ধরে বালি, মোম্বাসা, রিয়াদ, জাকার্তা, ইস্তাম্বুল, মাদ্রিদ, লন্ডন এবং এর বাইরে অনেক জায়গায় আক্রমণ চালিয়েছিল। ২০০৫ সালে লন্ডনে ৫২ জন নিহত হওয়ার হামলা পশ্চিমে আল-কায়দার সর্বশেষ বিধ্বংসী হামলার একটি। এসব কারণে জাওয়াহিরি আল-কায়দার জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং মার্কিন চিন্তার কারণ ছিলেন।
জাওয়াহিরি মাঝে মাঝে অনলাইন ভিডিও বক্তৃতার মাধ্যমে অনুসারীদের উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করতেন। তবে তিনি আল-কায়দার বেশ কয়েকটি বড় বড় হামলার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ২০০১ সালে টুইন টাওয়ার হামলার পরিকল্পনার সঙ্গেও জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ করে যুক্তরাষ্ট্র। সেই হামলায় ৩ হাজার মানুষ নিহত হয়েছিলেন। ২০০৯ সালের ৩০ এপ্রিল মার্কিন সরকার বিবৃত করে, আল-জাওয়াহিরি আল-কায়দার আক্রমণ এবং সেনাবিভাগের কমান্ডার হিসেবে নিযুক্ত হয়েছেন এবং ওসামা বিন লাদেন তখন থেকে শুধু দলটির ভাবাদর্শগত নেতা হিসেবে বিবেচিত হন।
২০১১ সালের মে মাসে মার্কিন বাহিনী ওসামা বিন লাদেনকে হত্যা করলে, তারপর গোষ্ঠীটির নেতা হিসেবে আবির্ভূত হন জাওয়াহিরি। তার আগে জাওয়াহিরিকে মনে করা হতো বিন লাদেনের ডান হাত। অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রে ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরে হামলার নেপথ্যে ‘আভিযানিক মস্তিষ্ক’ চালিয়েছিলেন জাওয়াহিরি।
মার্কিন বিমান হামলাকে ফাঁকি দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার পর পাকিস্তানের উপজাতি অধ্যুষিত এলাকায় গোপনে আশ্রয় নিয়েছেন জাওয়াহিরি। ২০০৬ সালের জানুয়ারিতে সেখানে বিমান হামলা চালিয়েছিল মার্কিন বাহিনী এবং তাকে হত্যা করতে চেয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। ওই হামলায় চার আল-কায়দা সদস্য নিহত হলেও বেঁচে যান জাওয়াহিরি। দুই সপ্তাহ পর ভিডিও বার্তায় তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশকে সতর্ক করে বলেন, বুশ বা পৃথিবীর কোনো শক্তিরই ক্ষমতা নেই তার মৃত্যু এক সেকেন্ডও এগিয়ে আনে। পশ্চিমা ও তাদের সমর্থকদের বিরুদ্ধে মুসলিমদের গণজাগরণ ঘটবে- এমনটা বিশ্বাস করতেন জাওয়াহিরি। তার এ বিশ্বাসের প্রতিফলন তিনি দেখতে পেয়েছিলেন আরব বসন্তের মধ্যে। কায়রোর তাহরির স্কয়ারে যে গণ-অভ্যুত্থান ঘটেছিল, যার ধাক্কায় পতন ঘটে প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারকের, সেই অভ্যুত্থানকে নিজের পক্ষে নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন জাওয়াহিরি। তিনি ওই সময় (২০১১ সালের মার্চ মাসে) একটি ইশতেহার প্রকাশ করেন।
জাওয়াহিরি কট্টর ব্যক্তিই ছিলেন। তিনি চাইতেন মার্কিন বাহিনী বিশ্বের যেখানেই মোতায়েন করা হোক না কেন, সেখানেই তাদের ওপর আক্রমণ চালিয়ে যেতে। যদিও নতুন যুদ্ধক্ষেত্রে ঝুঁকি নেওয়ার ব্যাপারে ওসামা বিন লাদেন ছিলেন সংশয়ী; কিন্তু জাওয়াহিরি এক্ষেত্রে চরম কট্টর উত্তরসূরিদের চেয়েও অনেক এগিয়ে ছিলেন।
আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ পরিচালিত ড্রোন হামলায় তিনি নিহত হন। আয়মান আল-জাওয়াহিরিকে হত্যার খবর নিশ্চিত করে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, জাওয়াহিরির বিরুদ্ধে মার্কিন নাগরিকদের হত্যা ও সহিংসতার প্রমাণ রয়েছে। এখন ন্যায় বিচার হয়েছে এবং এই সন্ত্রাসী নেতা আর নেই।
প্রেসিডেন্ট বাইডেন জানিয়েছেন, ৭১ বছর বয়সী জাওয়াহিরিকে হত্যার জন্য হামলা করতে তিনি অনুমোদন দিয়েছিলেন। এজন্য কয়েক মাস পরিকল্পনা করা হয়।
জাওয়াহিরিকে হত্যার মধ্য দিয়ে ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর আমেরিকায় হামলায় নিহতদের পরিবারের জন্য বিচারের বিষয়টি সুরাহা করবে।
তবে জাওয়াহিরি যখন তার কাবুলের অ্যাপার্টমেন্টের বারান্দায় বেরিয়ে এলেন, হেলফায়ার ক্ষেপণাস্ত্র তখন তাকে নির্ভুলভাবে চিহ্নিত করতে সক্ষম হলো এবং ক্ষমাহীনভাবে আঘাত হানল। ওসামা বিন লাদেনের চেয়ে ১১ বছর বেশি বেঁচে থাকতে পেরেছিলেন জাওয়াহিরি; কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকেও প্রাণ খোয়াতে হলো। আর যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের পক্ষে প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলতে পারলেন, ‘এর জন্য কতদিন সময় লেগেছে সেটা বড় বিষয় নয়, কোথায় লুকিয়ে ছিল সেটাও কোনো ব্যাপার নয়। তুমি যদি আমেরিকার জনগণের জন্য হুমকি হও, তাহলে আমেরিকা তোমাকে খুঁজে বের করবে।’ মনে হচ্ছে, আমেরিকা বিশ্বে তাদের করা তালিকাভুক্ত সকল ইসলামি সন্ত্রাসীদের আফগানিস্তানে এনে একটি গ-ির মধ্যে আবদ্ধ করেছে, যেহেতু জাওয়াহিরি তাদের টার্গেট সেহেতু তাকে হত্যার সকল পরিকল্পনা ছিল এবং সময়মতো তা করা হয়েছে। তাই সব চেষ্টা করেও জাওয়াহিরির শেষ রক্ষা হলো না।

লেখক : সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য, উত্তরণ

আরও পড়ুন
spot_img

জনপ্রিয় সংবাদ

মন্তব্য