দেশে যে কোনো আন্তর্জাতিক আসর চলাকালে শত ব্যস্ততার মধ্যে সময় করে ছুটে আসেন স্টেডিয়ামে। বিদেশেও গেছেন খেলোয়াড়দের উৎসাহ দেওয়ার জন্য। খেলোয়াড়দের অনুপ্রাণিত করার জন্য জাতীয় পতাকা হাতে নিয়ে দোলান। কখনও ফোনে, কখনও সামনে ডেকে বাহবা জানান।
আরিফ সোহেল: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ কন্যা, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৫তম জন্মজয়ন্তী। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নপথে অবিচল শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে নিয়ে নব ইতিহাস রচনা করেছেন। সর্বশেষ নিজেদের অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করে বিশ্বে বাংলাদেশকে উচ্চতর আসনে নিয়ে গেছেন। দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতির সমান্তরাল বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের সব সাফল্যের সঙ্গে জুড়ে রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর নাম। সেই ক্রীড়াঙ্গন নিয়ে কি কথা বলেন; তাকে নিয়ে ক্রীড়াঙ্গনের মানুষগুলো কী বলে; তা নিয়েই আমাদের গল্প; তার ৭৫তম জন্মজয়ন্তীতে।
আবদুস সাদেক, [সাবেক ফুটবলার এবং হকি খেলোয়াড়]
আবাহনীর ফুটবল ও হকি দলের অধিনায়ক আবদুস সাদেক বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্রীড়া পরিবারের সদস্য। তার আন্তরিকতায় হকিতে ফ্লাডলাইট বসানো সম্ভব হয়েছে। এশিয়া কাপ ও এশিয়ান গেমসে বাংলাদেশ ভালো খেলেছে।’
কাজী সালাউদ্দিন, [বাফুফে সভাপতি]
কিংবদন্তি ফুটবলার বাফুফের সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরেই গত ১১ বছরে ক্রীড়াঙ্গনে অভাবনীয় সাফল্য এসেছে। ফুটবলেও অগ্রগতি হয়েছে। মেয়েরা শিরোপা জিতেছে। এশিয়ান গেমস ইতিহাসে গ্রুপপর্ব পেরিয়ে প্রথমবার নক আউটপর্ব খেলেছে বাংলাদেশ। কিশোররা সাফে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। আয়োজন করা গেছে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ ও বঙ্গবন্ধু গোল্ড কাপ। প্রধানমন্ত্রী প্রকৃত ক্রীড়াপ্রেমিক বলেই তার হাত ধরেই ক্রীড়াঙ্গনে উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে।’
নাজমুল হক পাপন, [বিসিবি সভাপতি]
বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সবচেয়ে বড় ভক্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ৭৫তম জন্মজয়ন্তীতে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন তেমন কথাই বললেন। বলেছেন, ‘আমি অবাক হয়ে যাই আসলে। উনি যে কতটা ভালোবাসেন খেলাধুলাকে, আমার মনে হয় আমাদের কারোরই ধারণা নেই। উনি যে কতটা ক্রীড়াপাগল, সেটা বলে বোঝানোটা কঠিন।
রকিবুল হাসান, [সাবেক ক্রিকেটার]
ক্রিকেটে জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক রকিবুল হাসান বলেছেন, ‘প্রায় একযুগে ক্রীড়াঙ্গনে ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। ক্রীড়াঙ্গনে বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনার বিকল্প নেই। ক্রীড়াপ্রেমিক প্রধানমন্ত্রী বলেই অধিকাংশ খেলাতে সাফল্য আসছে। তাতে যতই দেখছি আমি ততই বোকা বনে যাই। কীভাবে এত কাজের ভিড়ে ক্রীড়াঙ্গনকে আগলে রাখছেন।’
আকরাম খান, [সাবেক ক্রিকেটার]
আকরাম খান বলেছেন, ‘ক্রিকেট বিশ্বে বাংলাদেশ এই জায়গায় পৌঁছানোর পেছনে মাঠের খেলোয়াড়দের যেমন অবদান আছে, তেমনি অবদান আছে আরও অনেকেরই। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি অবদান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। তিনি যদি সাহায্য, সমর্থন এবং অনুপ্রেরণা না দিতেন, তাহলে ক্রিকেট এই জায়গায় আসত না।’ তিনি আরও বলেছেন, ‘বাংলাদেশ ১৯৯৬ সালে এসিসি ট্রফি চ্যাম্পিয়ন হয়ে দেশে ফেরার পর প্রধানমন্ত্রী ক্রিকেটারদের সংবর্ধনা দিয়েছিলেন। প্রত্যেককে ১ লাখ টাকা করে পুরস্কার দিয়েছিলেন। এটা অনেক বড় প্রাপ্তি।’
মো. আব্দুল গাফ্ফার, [জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কারপ্রাপ্ত ফুটবলার]
জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কারপ্রাপ্ত সাবেক ফুটবলার ও ক্রীড়া সংগঠক মো. আব্দুল গাফ্ফার বলেছেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একজন ক্রীড়াবান্ধব ব্যক্তিত্ব। সময় সুযোগ পেলে মাঠে ছুটে আসেন। উপস্থিত হয়ে খেলোয়াড়দের উৎসাহিত করেন। তাই তিনি খেলোয়াড় ক্রীড়াবিদ, ক্রীড়া সংগঠকদের কাছে এক নিরন্তন অনুপ্রেরণার নাম।’
সাকিব আল হাসান, [ক্রিকেটার]
ক্রিকেটের তার নাম সবার আগেই। শুধু বাংলাদেশেই নয়, ক্রিকেট বিশ্বে সাকিব আল হাসান এখন অনন্য ও অসামান্য উচ্চতার শিখর স্পর্শ করা এক নাম। সাকিব আল হাসান বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে একজন ক্রীড়া মানুষ হিসেবে সব সময় পাশে পেয়েছি। তিনি আমাদের টিমের প্রত্যেক সদস্যকে মানসিক শক্তি-সমৃদ্ধ আত্মবিশ্বাসী একজন খেলোয়াড় হিসেবে গড়ে তুলতে সাহস, অনুপ্রেরণা ও মনোবল জুগিয়েছেন।’
ক্রীড়াবান্ধব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যা যা বলেছেন
খেলাধুলায় উৎসাহিত করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘গ্রামাঞ্চলের বন্ধ হওয়া খেলাধুলা সচল করতে হবে।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘খেলাধুলা শরীরচর্চা এবং সাংস্কৃতিকচর্চা একটি জাতির জন্য অপরিহার্য। আমাদের জেলা-উপজেলা পর্যায়ে ফুটবল, ক্রিকেট, ভলিবল, সাঁতার, হকিসহ বিভিন্ন খেলার সাথে সাথে দেশীয় খেলাগুলো; যেমনÑ ডাংগুলি, সাতচারা, গোল্লাছুট থেকে শুরু করে হাডুডু-সহ যেসব খেলা প্রচলিত ছিল, সেগুলো আবার চালু করতে হবে। আন্তঃস্কুল প্রতিযোগিতার আয়োজন করতে হবে।’
শেখ হাসিনার আমলে যত অর্জন
২০১১ আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ ভারত, শ্রীলংকা ও বাংলাদেশ যৌথভাবে বিশ্বকাপ আয়োজন করে। বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ আয়োজনের সুযোগ পায়। এ বছর আইসিসি মহিলা ক্রিকেট বাছাই পর্ব-২০১১ এ স্বাগতিক বাংলাদেশ মহিলা ক্রিকেট দল ওয়ানডে স্ট্যাটাস অর্জন করে।
ক্রীড়াক্ষেত্রে অবকাঠামোগত উন্নয়ন
ক্রীড়াক্ষেত্রে গৌরব অর্জনের পাশাপাশি অবকাঠামোগত ব্যাপক সাফল্য অর্জিত হয়েছে। ২০১১ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট উপলক্ষে প্রায় ৩০৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ঢাকা বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম, শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়াম, চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ স্টেডিয়াম, খুলনা শেখ আবু নাসের স্টেডিয়াম ও নারায়ণগঞ্জ খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামকে আন্তর্জাতিকমানের স্টেডিয়ামে উন্নীত করা হয়েছে। বিভিন্ন ক্রীড়া স্থাপনা নির্মাণ এবং সংস্কারের জন্য প্রায় ১২৬ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে।
শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে দেশের তৃণমূল পর্যায় থেকে মেধাবী খেলোয়াড়দের জাতীয় পর্যায়ে তুলে আনার অভিপ্রায়ে প্রতিটি উপজেলায় একটি করে মোট ৪৯০টি মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার নীতিমালা খসড়া চূড়ান্ত
জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার নীতিমালা খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার নীতিমালার আওতায় খেলোয়াড় হিসেবে বাংলাদেশি নাগরিকরা জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কারের জন্য বিবেচিত হন।
৬টি সরকারি শারীরিক শিক্ষা কলেজে স্নাতক ডিগ্রি চালু
যুবক ও যুব নারীদের নিবিড় প্রশিক্ষণ করে ব্যাচেলর অব ফিজিক্যাল অ্যাডুকেশন (বিপিএড) শিক্ষা প্রদান করছে। ঢাকা শারীরিক শিক্ষা কলেজে মাস্টার্স অব ফিজিক্যাল অ্যাডুকেশন (এমপিএড) কোর্স চালু করা হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা প্রাথমিক বিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্ট
এ কর্মসূচি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্নবাসনার আয়োজন। দেশজুড়ে প্রাইমারি স্কুলের ছেলে ও মেয়েদের জন্য আয়োজিত এই ফুটবল টুর্নামেন্টে প্রতি বছর অংশ নেয় ২০ লাখের বেশি ছাত্র-ছাত্রী। এশিয়া নয়, এর বাইরে কোনো দেশে এত বেশি ছোট ছোট ছেলেমেয়ের অংশগ্রহণে ফুটবল টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হয় না।
দেশে যে কোনো আন্তর্জাতিক আসর চলাকালে শত ব্যস্ততার মধ্যে সময় করে ছুটে আসেন স্টেডিয়ামে। বিদেশেও গেছেন খেলোয়াড়দের উৎসাহ দেওয়ার জন্য। খেলোয়াড়দের অনুপ্রাণিত করার জন্য জাতীয় পতাকা হাতে নিয়ে দোলান। কখনও ফোনে, কখনও সামনে ডেকে বাহবা জানান। শুধু সাফল্যে নয়, ব্যর্থতার সময়েও তিনি পাশে দাঁড়ান অভিভাবকের স্নেহে, উপদেশ দেন ভেঙে না পড়ার।
লেখক : সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য, উত্তরণ