Thursday, March 28, 2024
বাড়িSliderকেনা চাল আমেরিকা আসতে দেয়নি

কেনা চাল আমেরিকা আসতে দেয়নি

সব সময় আমার মা ছিলেন বাবার ছায়াসঙ্গী। আমার বাবার আদর্শটাকে তিনি ধারণ করেছিলেন। প্রতিটি কাজে তিনি সহযোগিতা করতেন। আমার আব্বার খুব সৌভাগ্য, আমার মায়ের মতো একজন জীবন সাথী পেয়েছিলেন।

উত্তরণ প্রতিবেদন: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষের সময় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান খুবই সতর্ক ছিলেন। ঐ বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাস থেকেই বঙ্গবন্ধু নিয়মিত খাদ্য সচিবের মাধ্যমে দেশের খাদ্যগুদামে চালের মজুত এবং কত চাল আনতে হবে তার হিসাব নেন। নগদ টাকা দিয়ে চাল কেনা হলো; কিন্তু আমেরিকা সেই জাহাজ আসতে দেয়নি। সেটা ঘুরিয়ে দিল। চুয়াত্তরের দুর্ভিক্ষ অনেকটা মনুষ্যসৃষ্টই বলতে হবে।’
গত ৮ আগস্ট মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ৯২তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন’ এবং ‘বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব পদক-২০২২ প্রদান’ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে চুয়াত্তরের দুর্ভিক্ষের ঘটনার বিষয়ে আরও বলেন, ‘আশপাশের মানুষ বঙ্গবন্ধুকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছেন। আমাদের দেশের মানুষের বোধ হয় একটা চরিত্র আছে, সরকারে কেউ থাকলে তার আশপাশে যারা থাকে, তারা দেশের সার্বিক পরিস্থিতিটাকে খুব সুন্দরভাবে দেখাতে চেষ্টা করে।’ সেই সময়ে সারাদেশের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে বঙ্গমাতার যোগাযোগ হতো জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশের কোথায় কী হচ্ছে তাও আমার মা জানতেন। মা আব্বাকে বললেন, চালের দাম কিন্তু বেড়ে যাচ্ছে। আব্বা অফিসে এসে খবর নিলেন। অফিসে একজন জানাল, অত দাম না, এই দাম। আব্বা মাকে বললেন, আমি তো ওদের খবর নিতে বললাম, ওরা বলল এত কম। একটা অল্প দাম বলা হলো। তখন মা আব্বাকে বললেন, তোমাকে ঠিক তথ্য দেয়নি। তোমাকে টাকা দিচ্ছি, যে বলেছে তাকে বলিও আমাকে এক মণ চাল কিনে দিতে।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তিনি সত্যিই টাকা দিলেন। কিন্তু ঐ দামে আর চাল পাচ্ছে না। তখন মা আব্বাকে বললেন, এরা সব সময় তোমাকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। তুমি এ ব্যাপারে সতর্ক থাকবে। অর্থাৎ রাষ্ট্র চালাচ্ছেন আমার বাবা; কিন্তু পাশে থেকেও ছোট ছোট জিনিসগুলো আমার মা খেয়াল করছেন। তারপর পদক্ষেপ নেওয়ার কারণে চালের দাম কমে এসেছিল। ১০ টাকা কেজির চাল ৩ টাকায় নামিয়ে এনেছিলেন।’
প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে বঙ্গমাতার নেপথ্য ভূমিকা তুলে ধরে বলেন, প্রধান রাজনৈতিক ইস্যুতে বঙ্গমাতার সিদ্ধান্ত দেশের স্বাধীনতা অর্জনে সহায়তা করেছে। বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের আদর্শ ধারণ করে বাংলাদেশের নারীদের ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত হয়ে দেশের কল্যাণে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জীবন সাথী হিসেবে ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের মতো একজন নারীকে পেয়েছিলেন বলেই বাঙালির সংগ্রাম সফল হতে পেরেছে।
তিনি বলেন, সব সময় আমার মা ছিলেন বাবার ছায়াসঙ্গী। আমার বাবার আদর্শটাকে তিনি ধারণ করেছিলেন। প্রতিটি কাজে তিনি সহযোগিতা করতেন। আমার আব্বার খুব সৌভাগ্য, আমার মায়ের মতো একজন জীবন সাথী পেয়েছিলেন। আর সেই সাথে আমার দাদা-দাদির কথাও বলব। শেখ হাসিনা বলেন, আমার আব্বা এই রকম একজন জীবন সাথী এবং বাবা-মা পেয়েছিলেন বলেই কিন্তু আমাদের এই সংগ্রামে সাফল্য অর্জন করা, দেশের স্বাধীনতা অর্জন করাÑ এটা সহজ হয়েছিল। যদি আমার মায়ের মতো এই ধরনের জীবন সাথী না পেতেন, যদি সব সময় স্বামীকে বিরক্ত করতেনÑ যে এটা চাই, ওটা চাই, মন্ত্রিত্ব থেকে কেন পদত্যাগ করবে? মন্ত্রীর বাড়ি ছেড়ে আমাকে যেতে হবে কেন? এত আয়েশে থেকে সেখান থেকে চলে যেতে হবে নাজিরাবাজারের অন্ধ গলিতে? আমার মা কখনও এই কথা বলেননি। যখন জীবনে যেই অবস্থা এসেছে, সেই অবস্থায় মানিয়ে চলা সেটার অদ্ভুত শক্তি ছিল। বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব তার সন্তানদেরও একই শিক্ষায় গড়ে তুলেছেন বলে জানান তার বড় মেয়ে শেখ হাসিনা।
১৯৩০ সালের ৮ আগস্ট গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যের সঙ্গে তাকেও হত্যা করে খুনিরা। সেই রাতে বঙ্গমাতার সাহসিকতার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ১৫ আগস্টে তিনি (বঙ্গমাতা) নিজের জীবন ভিক্ষা চাননি। নিজের জীবনও দিয়ে গেছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও আমার মা যেসব সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, সেটাই কিন্তু আমাদের এই স্বাধীনতা অর্জনে সব থেকে সহায়ক হয়েছে। ৬-দফা বাদ দিয়ে যদি আওয়ামী লীগ ৮-দফায় চলে যেত, তাহলে কখনও এদেশের মানুষের মুক্তি আসত না। ৭ মার্চের ভাষণ দেওয়ার ক্ষেত্রেও আমার মায়ের মতামতই গুরুত্ব পেয়েছে।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার লেখা ‘শেখ ফজিলাতুন্নেছা আমার মা’ শীর্ষক একটি গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করেন। তিনি ঢাকায় কর্মজীবী নারীদের জন্য ‘বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব’ অত্যাধুনিক ১০ তলা হোস্টেলও উদ্বোধন করেন। এ সময় তিনি মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়কে দেশের প্রতিটি জেলায় কর্মজীবী মহিলা হোস্টেল করার নির্দেশনা দেন। বঙ্গমাতার জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠান থেকে মোবাইল ব্যাংকিং-এর মাধ্যমে ২ হাজার ৫০০ অসচ্ছল নারীর মাঝে ৫০ লাখ টাকার আর্থিক সহায়তা বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন।
বিভিন্ন ক্ষেত্রে ‘গুরুত্বপূর্ণ অবদান ও গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকার’ স্বীকৃতি হিসেবে দেশের পাঁচ নারীকে ‘বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব পদক’ দেন প্রধানমন্ত্রী। স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকার জন্য গোপালগঞ্জ জেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা আশালতা বৈদ্য (যুদ্ধকালীন কমান্ডার) এবং সমাজসেবায় অবদানের জন্য কিশোরগঞ্জ জেলার মোছা. আছিয়া আলম এ বছরের বঙ্গমাতা পদক পেয়েছেন। এছাড়া রাজনীতির ক্ষেত্রে সিলেট জেলার সৈয়দা জেবুন্নেছা হক, অর্থনীতিতে কুমিল্লার সংসদ সদস্য সেলিমা আহমাদ, শিক্ষাক্ষেত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক নাসরীন আহমাদ ভূষিত হয়েছেন বঙ্গমাতা পদকে। রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকবিতা
পরবর্তী নিবন্ধশেখ হাসিনা একটি পথপ্রদর্শক নক্ষত্র
আরও পড়ুন
spot_img

জনপ্রিয় সংবাদ

মন্তব্য