Saturday, April 20, 2024
বাড়িউত্তরণ-২০২১একাদশ বর্ষ, নবম সংখ্যা, আগস্ট-২০২১অলিম্পিকে বাংলাদেশের রোমান-দিয়া; জিম্বাবুয়েতে আলোকিত বাংলাদেশের ক্রিকেট

অলিম্পিকে বাংলাদেশের রোমান-দিয়া; জিম্বাবুয়েতে আলোকিত বাংলাদেশের ক্রিকেট

আরিফ সোহেল :

প্রথমবারের মতো দেশের বাইরে জিম্বাবুয়েতে টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয় বাংলাদেশ ক্রিকেটে সৃষ্টি করেছে নতুন এক অধ্যায়। বিদেশের মাটিতে সাকিব-তামিম-মাহমুদ উল্লাহ-লিটন-সাদমান-শান্ত-সৌম্য-মেহেদী-শামীমের ব্যাটে-বলে আলোকিত হয়েছে বাংলাদেশ। ছুঁয়েছে টি-টোয়েন্টির শততম ম্যাচে জয়ের বিরল রেকর্ড।
মুমিনুলদের শুরুটা ছিল ক্রিকেটের মর্যাদার টেস্ট দিয়ে। জিম্বাবুয়ের মাঠে অনুষ্ঠিত একমাত্র টেস্টে ২২০ রানের বড় জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। ৩ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে স্বাগতিকদের হোয়াইটওয়াশের লজ্জা ডুবিয়েছে বাংলাদেশ। আর সবশেষে টি-টোয়েন্টি সিরিজও জিতে বাংলাদেশ রচনা করেছে নয়া ইতিহাস।
গত ৭ জুলাই বাংলাদেশের জিম্বাবুয়ে সফর শুরু হয়েছিল টেস্ট ম্যাচ দিয়ে। চলেছে ১১ জুলাই অবধি। একমাত্র টেস্টে বিদেশের মাটিতে বড় ব্যবধানের জয় বাংলাদেশকে চালকের আসনে বসিয়েছিল। বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে মাহমুদ উল্লাহর (১৫০*) রানের সঙ্গে লিটন দাসের (৯৫), তাসকিনের অসাধারণ (৭৫) এবং অধিনায়ক মুমিনুলের (৭০) ব্যাটে ৪৬৮ রানের বড় পুজি ছুঁয়েছিল। জবাবে সাকিব ৪/৮২ ও মেহেদী ৫/৮২ ভেলকিতে ২৭৬ রানে গুঁড়িয়ে গিয়েছিল স্বাগতিকদের প্রথম ইনিংস। দুই নবীন সাদমান ও শান্তর সেঞ্চুরিতে ২৮৪ রানে দ্বিতীয় ইনিংস ঘোষণা করেছিল বাংলাদেশ। প্রলম্বিত টার্গেটের পেছনে স্বাগতিকদের লড়াই থেমেছে অনেক দূরে। যেখানে ২২০ রানের বড় লজ্জা নিশ্চিত হয়ে যায়। এবারও দুরন্ত মেহেদী ৪/৬৬ আর তাকে পথ দেখিয়েছেন স্ট্রাইক বোলার তাসকিন ৪/৮২।
পরের ৩ ওয়ানডে সিরিজে নাকাল জিম্বাবুয়ে। দাঁড়াতেই পারেনি বাংলাদেশের কখনও ব্যাটিংয়ের বিপক্ষে আবার কখনও বোলিংয়ের। ১৬ জুলাই প্রথম ওয়ানডে বাংলাদেশের জয় ১৫৫ রানের। লিটন দাসের অনবদ্য সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশের ২৭৬/৯ রানের জবাবে জিম্বাবুয়ে অলআউট হয়েছে ১২১ রানে। যেখানে সাকিব ছিলেন ম্যাচ উইনার বোলার ৫/৩০। পরের ম্যাচটি বেশ জমে উঠেছিল। রানের চেজিং ফিগারটা আহামরি ছিল না। তারপরও বোলিং উইকেটে জিম্বাবুয়ের ২৪০ রান টপকাতে বাংলাদেশের খোয়াতে হয়েছে ৭ উইকেট। যখন ৩ উইকেটের জয় নিশ্চিত তখন বল বাকি ছিল মাত্র ৫টি। এ ম্যাচের জয়ের নায়ক সাকিব আল হাসান। তার নান্দ্যনিক ৯৬ রানের অনবদ্য ব্যাটিংই নিশ্চিত করেছিল সিরিজ জয়। শেষ ওয়ানডে ছিল ব্যাটিং উইকেট ম্যাচ। জিম্বাবুয়ের আগে ব্যাটিং; রান ২৯৮। জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ২৯৯ রান। বাংলাদেশ ৫ উইকেট এবং ২ ওভার হাতে রেখেই জয় নিশ্চিত করে। এই ম্যাচে তামিমের মারমার কাটকাট ব্যাটিং ছিল উপভোগ্য। ১১২ রানের ইনিংসটি ছিল চোখ ধাঁধানো। ২২, ২৩ ও ২৫ বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে টি-টোয়েন্টি সিরিজ অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রথম ম্যাচে দারুণ সূচনা বাংলাদেশের। জয় ৮ উইকেটে। জিম্বাবুয়ের ১৫২ রানের পুঁজি বাংলাদেশ টপকে গিয়েছে খুব অনায়াসেই। দারুণ এবং উপভোগ্য ব্যাটিং করেছেন নাইম এবং সৌম্য সরকার। দুজনেই করেছেন হাফসেঞ্চুরি। পরের ম্যাচে বাংলাদেশের সিরিজের একমাত্র হারের লজ্জা এঁকে দিয়েছে জিম্বাবুয়ে ২৩ রানে হারিয়ে। জিম্বাবুয়ের ১৬৬ রানের জবাবে বাংলাদেশ তুলতে পেরেছিল মাত্র ১৪৩ রান। সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে জিম্বাবুয়ে ফের সূচনার বাংলাদেশকেই দেখেছে। প্রথম ব্যাটিং করে বাংলাদেশের বোলারদের তুলাধুনো করে জিম্বাবুয়ের ১৯৩ রানের ইনিংস তাদের উদ্বেলিত করছিল। বাংলাদেশ জিতেছে ৫ উইকেটের বড় ব্যবধানে।
জিম্বাবুয়েতে তিন সংস্করণের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজেদের শততম ম্যাচে জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। এর আগে অস্ট্রেলিয়া ও পাকিস্তান ছিল এই রেকর্ড নিয়ে ড্রাইভিং সিটে। জিম্বাবুয়ের ১৯৩ রান তাড়া করার একটু আলাদা চাপ ছিল; ছিল সংশয়ও। এমন ম্যাচে সৌম্য-সাকিব-আফিফ-মাহমুদ উল্লাহর ইনিংসের পর নবীন শামীম হোসেনের ১৫ বলে অপরাজিত ৩১ রান করে ৪ বল ও ৫ উইকেট বাকি রেখেই শেষ ম্যাচের সঙ্গে জিতেছিল সিরিজও।

অলিম্পিকে বাংলাদেশের রোমান-দিয়া সমাচার
অলিম্পিকে অংশগ্রহণই বরাবরের মতো বড় কথা- এবারও তাই প্রমাণিত হয়েছে। মাত্র ৪টি ইভেন্টে নেমেছিলাম লাল-সবুজের বাংলাদেশের ক্রীড়াবিদরা। তবে আর্চার রোমান-দিয়ারা তাক লাগিয়ে দিয়েছেন, তারাও পারেন। পারবেন সামনে- এজন্য প্রয়োজন ঠিকঠাক পরিকল্পনা।
এবারের টোকিও অলিম্পিকে দেশসেরা আর্চার রোমান সানা বাংলাদেশের ইতিহাস সেরা সাফল্য এনে দিয়েছেন। ছেলেদের রিকার্ভ-একক ইভেন্টে তিনি ইংল্যান্ডের প্রতিযোগীকে হারিয়ে উঠেছিলেন শেষ ষোলোতে। সেখানেও কানাডার এক প্রতিযোগীর সঙ্গে লড়েছেন হাড্ডাহাড্ডি। ৬-৪ সেট পয়েন্টে হারটা অল্পের জন্যই। অন্যদিকে মেয়েদের রিকার্ভ-এককে বাংলাদেশের ১৭ বছর বয়সী কিশোরী দিয়া সিদ্দিকী বেলারুশের প্রতিযোগীর কাছে হেরেছেন কঠিন লড়াইয়ের পর টাইব্রেকারে। তাও মাত্র ন্যূনতম পয়েন্টের ব্যবধানে। লড়াই করে রোমান-দিয়া সম্মিলিত লড়াইয়ে হার মেনেছিলেন আর্চারির শীর্ষশক্তি দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে। সেই ম্যাচ আক্ষেপ ছড়িয়েছে। তারা যে স্বপ্নের ফানুস উড়িয়েছেন, সেটিই বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে হতে পারে সবার অনুপ্রেরণা।
দিয়া সিদ্দিকী বেলারুশের প্রতিযোগী কারিনা জোমিন্সকায়ার কাছে ৬-৫ সেট পয়েন্টে হেরেছেন দিয়া। মহিলা এককের র‌্যাংকিংয়ের ৩১তম স্থানে থাকা জোমিন্সকায়ার সঙ্গে দারুণ লড়াই করেছেন র‌্যাংকিংয়ের ১৫৫তম স্থানে থাকা দিয়া। প্রথম সেট ২৩-২২ ব্যবধানে জিতলেও পরের সেটেই হেরে যান দিয়া, ২৬-২৫ পয়েন্টে জিতেন জোমিন্সকায়া। তৃতীয় সেটে জিতেনি কেউ, ২৫-২৫ সমান স্কোর থাকায় ১-১ সেট ভাগ করে নেন এই দুই আর্চার। চতুর্থ সেট ২৭-২৫ পয়েন্টে আবারও হেরে বসেন দিয়া। পঞ্চম সেটে দারুণভাবে ফিরেছেন ম্যাচে; ২৭-২৫ ব্যবধানে জিতেছিলেন দিয়া। পঞ্চম সেটেও ম্যাচ নিষ্পত্তি হয়নি। টাইব্রেকারে ১ পয়েন্টের ব্যবধানে দিয়ার এই হার অলিম্পিক মঞ্চ নতুন এক অধ্যায় সৃষ্টি করেছে।

লেখক : সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য, উত্তরণ

আরও পড়ুন
spot_img

জনপ্রিয় সংবাদ

মন্তব্য