উত্তরণ প্রতিবেদন: যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের তৈরি করোনাভাইরাসের ৩ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন কিনবে বাংলাদেশ। এজন্য সিরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া এবং বাংলাদেশের বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি করেছে সরকার। ৫ নভেম্বর স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এমপি’র উপস্থিতিতে এ-সংক্রান্ত ত্রিপক্ষীয় একটি সমঝোতা চুক্তি সই হয়েছে। প্রত্যেক ব্যক্তির ২ ডোজ করে টিকা নিতে হবে। এই ৩ কোটি ডোজ টিকা বাংলাদেশের দেড় কোটি মানুষকে দেওয়া যাবে। ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটের দেশীয় এজেন্ট হিসেবে বাংলাদেশে এই টিকা সরবরাহ করবে বেক্সিমকো। বাংলাদেশে প্রতি ডোজ টিকার দাম পড়বে ৫ ডলার (৪২৫ টাকা)। আগামী ফেব্রুয়ারিতে এই টিকা আসতে পারে বলে আশা প্রকাশ করছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী, যদিও পরীক্ষা ও অনুমোদনের পর্ব এখনও শেষ হয়নি।
সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এমপি, বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হাসান পাপন এমপি, বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের নবনিযুক্ত হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আবদুল মান্নান ও স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আলী নূর উপস্থিত ছিলেন। সরকারের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোস্তফা কামাল, সিরাম ইনস্টিটিউটের অতিরিক্ত পরিচালক সন্দ্বীপ মলয় এবং বেক্সিমকোর চিফ অপারেটিং অফিসার রাব্বুর রেজা নিজ নিজ পক্ষে চুক্তিতে সই করেন।
অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, করোনা ভ্যাকসিন আমদানি প্রসঙ্গে দেশের মানুষ অনেকদিন থেকেই অপেক্ষা করছে। এই চুক্তির ফলে সেই অপেক্ষার অবসান ঘটছে। এক্ষেত্রে দেশের বেক্সিমকো ফার্মা বড় ভূমিকা রেখেছে। বেক্সিমকো ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে সরকারের সেতুবন্ধন তৈরি করে দিয়েছে। ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের বেক্সিমকো ফার্মার কাছে ভ্যাকসিন দিলে বেক্সিমকো ফার্মা সরকারের কাছে তা হস্তান্তর করবে। প্রথম লটে সরকার ৩ কোটি ভ্যাকসিন আমদানি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই ৩ কোটি ভ্যাকসিন ডোজ দুবার করে প্রতি ব্যক্তিকে দেওয়া হবে। ফলে প্রথমে দেড় কোটি মানুষকে দেড় কোটি ভ্যাকসিন প্রতিমাসে ৫০ লাখ করে দেওয়া হবে। পরবর্তীতে একই পরিমাণ ভ্যাকসিন একইভাবে ২৮ দিন পর পুনরায় দ্বিতীয় ডোজ হিসেবে দেওয়া হবে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, এই টিকা বিতরণ করা হবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুযায়ী। চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীসহ যারা করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সামনের সারিতে আছেন, তাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। পর্যায়ক্রমে দেশের সবাইকে টিকার আওতায় আনার ব্যবস্থা করা হবে বলেও সাংবাদিকদের জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
আগামী ফেব্রুয়ারিতে এই টিকা আসতে পারে বলে ধারণা করছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী, যদিও পরীক্ষা ও অনুমোদনের পর্ব এখনও শেষ হয়নি। তিনি জানান, বেক্সিমকো ভারত থেকে টিকা এনে সরকারকে পৌঁছে দেবে। যারা ব্যক্তিগতভাবে সিরাম ইনস্টিটিউটের কাছ থেকে বেক্সিমকোর মাধ্যমে টিকা নেবে, সেই দাম আলাদা হবে। আমরা মনে করি এই ভ্যাকসিনটি নিরাপদ হবে। বিভিন্ন দেশে ট্রায়াল হয়েছে, কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। এটার কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। আমাদের তাড়াতাড়ি পাওয়াটাও একটা বিরাট বিষয়, এটা আমরা পাব।
জাহিদ মালেক বলেন, জনসংখ্যার দিকে আমরা ৬ নম্বরে আছি; কিন্তু করোনাভাইরাসে মৃত্যুর হারের দিক থেকে আমরা ৩১ নম্বরে, অনেক পেছনে আছি। আমাদের সুস্থতার হারও ভালো। নিরাপদ থাকার জন্য সবাইকে মাস্ক ব্যবহার করার, সামাজিক দূরত্বের নিয়ম মেনে চলার এবং নিজ নিজ পরিবারকে সুরক্ষিত রাখার তাগিদ দেন জাহিদ মালেক।
বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হাসান পাপন এমপি বলেন, সিরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের যোগসূত্রটা আমরা করে দিয়েছি। যখনই বাজারে আসবে এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও বাংলাদেশ সরকারের অনুমোদন পাওয়া যাবে, তখনই নিয়ে আসা হবে। সবচেয়ে কম দামে তারা আমাদের ভ্যাকসিন দেবে। করোনা মহামারির শুরু থেকেই আমরা কাজ করছি, আমাদের কমিটমেন্ট ছিল সরকারের পাশে দাঁড়ানোর।
ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী বলেন, সিরাম ইনস্টিটিউট বিশ্বে পরিচিত ও বৃহৎ একটি প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশের বেক্সিমকো সিরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে যে চুক্তি করেছে তাতে খুব সহজেই ভ্যাকসিন পাবে।
স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব আবদুল মান্নান বলেন, কোভিডের ভ্যাকসিন তৈরির জন্য ১৬৬টি কোম্পানি কাজ করছে। এর মধ্যে ২৮টি কোম্পানি হিউম্যান ট্রায়াল স্টেজে গেছে। মাত্র ৯টি কোম্পানি থার্ড ট্রায়াল করতে ক্যাপাবিলিটি ডেভেলপ করেছে। ভ্যাকসিন গবেষণা এবং উৎপাদনকারী ৬টি কোম্পানির সঙ্গে বাংলাদেশ শুরু থেকে যেগাযোগ করছে। এর মধ্যে সবচেয়ে আশার আলো নিয়ে এসেছে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির ভ্যাকসিন। মানবদেহে সাফল্যজনক প্রয়োগ হওয়ায় আমরা আশাবাদী হয়ে উঠেছি। তিনি বলেন, আমরা দ্রুত সময়ে ভ্যাকসিন পাব বলে আভাস পাচ্ছি এবং কাছাকাছি চলে যাচ্ছি। এই চুক্তির ফলে সারাদেশের ১৮ কোটি মানুষ আশার আলো দেখবে বলে জানান স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব।