২০ বছর মেয়াদি প্রেক্ষিত পরিকল্পনা অনুমোদন
উত্তরণ ডেস্ক: ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ গড়তে ‘বাংলাদেশ প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০২১-৪১’ অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (এনইসি)। দারিদ্র্য নির্মূল করা, মাথাপিছু আয় সাড়ে ১২ হাজার ডলারে উন্নীত করা, জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৯ দশমিক ৯ শতাংশে উন্নীত করাসহ ভবিষ্যৎ বিশ্বব্যবস্থায় শিল্পায়ন, রপ্তানি বহুমুখীকরণ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে এ পরিকল্পনায়।
গত ২৫ ফেব্রুয়ারি শেরে বাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় দ্বিতীয় প্রেক্ষিত পরিকল্পনার অনুমোদন দেওয়া হয়। সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান সংবাদ সম্মেলনে এর বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। ২০ বছর মেয়াদি পরিকল্পনাটি তৈরি করেছে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি)। ৪টি পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার মাধ্যমে এর বাস্তবায়নের দিক-নির্দেশনা থাকবে।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, উন্নত দেশে উন্নীত হতে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে। তাছাড়া প্রেক্ষিত পরিকল্পনাটি তৈরির ক্ষেত্রে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ২০১১ সালের তথ্য ধরা হয়েছে, সেটি আপডেট করতে হবে। সামাজিক নিরাপত্তার আওতা বাড়াতে হবে। বয়স্ক ও বিধবা নারীদের বেশি করে ভাতার আওতায় আনতে হবে। ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য কমানোর উদ্যোগ নিতে হবে বলেও পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সম্পদের উৎসের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে মন্ত্রী বলেন, ‘যে কোনো পরিকল্পনাই হোক না কেন, তা বাস্তবায়নে নিজস্ব সম্পদের ওপরই নির্ভর করতে হবে। আগে বৈদেশিক সহায়তানির্ভর ছিল আমাদের অর্থনীতি। এখন অনেক অগ্রগতি হওয়ায় সেই অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে।’
প্রেক্ষিত পরিকল্পনার বিষয়ে জিইডির সদস্য (জ্যেষ্ঠ সচিব) ড. শামসুল আলম বলেন, দলিলটির বিষয়ে সভায় অনেক মতামত এসেছে, এগুলো অন্তর্ভুক্ত করা হবে। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ব্লক চেইন, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, আইওটি ইত্যাদি বিষয় যুক্ত করা হবে। এছাড়া বৈঠকের আলোচনায় এসেছে খরা ও লবণাক্তসহিষ্ণু জাতের ফসল আবিষ্কার বাড়াতে হবে। মূলত রূপকল্প ২০২১-এর ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের উন্নয়নপথে জাতিকে এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যেই সরকার ‘রূপকল্প ২০৪১’ গ্রহণ করেছে। বর্তমান বিশ্বের বিভিন্ন উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশ ও উচ্চ আয়ের দেশগুলো যে উন্নয়ন পথ পাড়ি দিয়েছে, তাদের ইতিবাচক অভিজ্ঞতা বিবেচনায় রাখা হয়েছে।
পরিকল্পনা দলিলে বলা হয়েছে, চরম দারিদ্র্য নেমে আসবে শূন্য দশমিক ৭ শতাংশে এবং দারিদ্র্যের হার নেমে আসবে শূন্য দশমিক ৫ শতাংশের নিচে। মূল্যস্ফীতি ৪ দশমিক ৪ শতাংশে বেঁধে রাখা, জনসংখ্যা প্রবৃদ্ধি শূন্য দশমিক ৪ শতাংশসহ গড় আয়ুষ্কাল ৮০ বছরে উন্নীত করা, ন্যূনতম খরচে বিদ্যুৎ উৎপাদনসহ অর্থনীতিকে টেকসই করতে নানা পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। পরিকল্পনায় বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে বৈষম্য হ্রাস, ধারাবাহিক জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন, দারিদ্র্য নিরসন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, রপ্তানি বহুমুখীকরণ, বিনিময় হার ব্যবস্থাপনা, লেনদেনের ভারসাম্য রক্ষা, পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তা, টেকসই বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, টেকসই প্রবৃদ্ধির জন্য পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন ব্যবস্থাপনা এবং স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার প্রস্তুতি।