Monday, December 4, 2023

হোয়াইটওয়াশ এবং সিরিজ জয়ের গল্প

নতুন মন্ত্র দীক্ষিত সাকিব-লিটনরা; সেই মন্ত্র পাঠ করে করে যুদ্ধের ময়দানে প্রতিপক্ষ গোলা-বারুদে ধসিয়ে দিয়েছে। বিশ^কাপে ঠিক এমন দলের স্বপ্ন-প্রত্যাশায় থাকছে ক্রিকেটপ্রেমী বাঙালিরা।

আরিফ সোহেল: ওয়ানডেতে বাংলাদেশ এখন হেলাফেলার দল নয়- মানতে হচ্ছে শক্তিশালী প্রতিপক্ষদেরও। কিন্তু টি-টোয়েন্টি ভার্সানে অবস্থা তথৈবচ। ৫৫টি সিরিজে মাত্রটি ১২টি জয়; ৫টি ড্র। এই ভার্সানে তাল-লয় খুঁজে পাচ্ছিল না বাংলাদেশ। অথচ আগামী বছর ভারতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। বিশ্বকাপ টার্গেট করেই হাতুরু সিংহকে দ্বিতীয় ইনিংসে মাঠে নামিয়েছে বাংলাদেশ। দুই সিরিজ শেষে বলাই যায়- তাতেই বাজিমাত। টানা এই প্রথম ৫ টি-টোয়েন্টি ম্যাচে জয় নিয়ে অন্য এক বাংলাদেশের ইঙ্গিত দিচ্ছে। বিশ্বকাপ ঘিরে বাড়ছে বাংলাদেশের সম্ভাবনার আলোকোজ্জ্বল মশাল।
ইংলিশদের টি-টোয়েন্টি সিরিজে হোয়াইটওয়াশের পর আইরিশদের বিপক্ষেও দুরন্ত ছন্দে বাংলাদেশ। অনায়াসে ২-১ সিজি জয়। এই দুই সিরিজের রেকর্ড আর অর্জনে সাজানো ম্যাচগুলো বাংলাদেশকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে।
অগ্নিঝরা মার্চ মানেই ভিন্ন কিছু প্রাপ্তি যোগ। সাম্প্রতিক সময়ে দারুণ ছন্দে আছে দল। তবুও টি-টোয়েন্টি সিরিজের শেষ ম্যাচে আইরিশদের কাছে হারে কষ্ট লুকিয়ে রয়েছে। এই আইরিশদের ৩-০-তে সিরিজ হারিয়েছিল ২০১২ সালে। আইরিশদের বিপক্ষে প্রথম দুই টি-টোয়েন্টিতে দলকে দুরন্ত সূচনা এনে দেওয়া লিটন দাস ও রনি তালুকদার সিরিজে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের তালিকায়। লিটন দাস করেছেন ১৩৫ রান। রনি তালুকদার ১২৫ রান। এই সিরিজের সেরা বোলার তাসকিন আহমেদ; নিয়েছেন ৮ উইকেট। প্রথম ও শেষ ম্যাচে সাকিব আল হাসান উইকেট না পেলেও দ্বিতীয় ম্যাচে শিকার করেছেন ৫ উইকেট।
ইংল্যান্ড ধ্রুপদী কাব্যকথার পর আইরিশদেরও উড়িয়ে-গুঁড়িয়ে দারুণ এক সিরিজ শেষ করেছে বাংলাদেশ। ১৮ মার্চ ওয়ানডে সিরিজে রেকর্ড রান আর বড় জয়ে শুরু হয় বাংলাদেশের। এই সিরিজের আগে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান ছিল অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৩৩৩। বাংলাদেশের ৩৩৮/৮ রানের জবাবে; আয়ারল্যান্ড ১৫৫/১০; জয়ের ব্যবধান ১৮৩ রান। এর আগে ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ ১৬৯ রানের জয় ছিল জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিলেটে ২০২০ সালে। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে প্রথম ম্যাচের রানের রেকর্ড টপকে গড়ে নতুন ৩৪৯/৬। ব্যাটে ৬০ বলে মুশফিকের সেঞ্চুরিও নতুন রেকর্ড। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সাকিবের ৬৩ বলে করা সেঞ্চুরির রেকর্ডটি ঢেকে দিলেন মুশফিকুর। তারপরও বৃষ্টিতে ম্যাচ পণ্ড হয়েছিল। তৃতীয় ম্যাচে ১০ উইকেটে জয়- এটাও নতুন ইতিহাস। এর আগে ৫ বার ৯ ইউকেটের জয় ছিল সেরা। এই ম্যাচে আইরিশদের ১০ উইকেট নিয়ে তিন পেসার; এটাও বাংলাদেশের জন্য নতুন কিছু।
আইরিশদের বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচে ১৮ বলে ফিফটি করে লিটন দাস ভেঙেছেন মোহাম্মদ আশরাফুলের ১৫ বছরের পুরনো রেকর্ড। আশরাফুল করেছিলেন ২০ বলে; ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ২০০৭ সালে। দেশের মাটিতে ২০১৯ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে মিরপুরে আফিফ হোসেনের করা ২৪ বলে হাফসেঞ্চুরির রেকর্ডটিও এই সিরিজের তৃতীয় ম্যাচে চট্টগ্রামে স্পর্শ করেছেন রনি তালুকদার। এই সিরিজে লিটন ও রনির যুগলবন্দির ১২৪ রান সর্বোচ্চ। এর আগে ২০২১ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হারারেতে নাঈম ও সৌম্যের ছিল ১০২।
শক্তিশালী ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে শুরুটা ভালো হয়নি বাংলাদেশের। ৩ ওয়ানডের সিরিজে পরপর ২ ম্যাচে হেরেছিল বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ম্যাচে ১৩২ রানের বড় হারে হোয়াইটওয়াশ হওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু সেখান থেকেই ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ। তৃতীয় ওয়ানডেতে ইংল্যান্ডকে ৫০ রানের হারিয়ে নতুন জয়ের পথ রচনা করেছে। মুশফিক, সাকিব এবং শান্তর ব্যাটে বাংলাদেশ তুলেছিল ২৪৬ রানের মোটামুটি লড়িয়ে ইনিংস। বাংলাদেশের বোলিং তোপের মুখে মাত্র ১৯৬ রানেই অল আউট হয়ে যায়। ৪ উইকেট নিয়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন সাকিব। যথারীতি এবাদত এবং তাইজুল নিয়েছেন ২টি করে।
টি-টোয়েন্টি সিরিজে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশ প্রথম ম্যাচে ৬ এবং দ্বিতীয় ম্যাচে ৪ উইকেটের ব্যবধানে জিতেছে। তৃতীয় ম্যাচে ইংল্যান্ডকে ১৬ রানে হারিয়েছে। পুরোপুরি হোয়াইটওয়াশ। এর আগে হোয়াইটওয়াশের তালিকায় ছিল আয়ারল্যান্ড, জিম্বাবুয়ে এবং আরব আমিরাতের মতো দল। এবারের শিকার চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড।
বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশের ঘটনা এক কথায় অবিশ্বাস্য। ইংল্যান্ড কিন্তু শুধু টি-টোয়েন্টিতেই নয়; চ্যাম্পিয়ন ৫০ ওভারের বিশ্বকাপেও। তেমন এক দলকে মাটিয়ে নামিয়ে আনা চারটিখানি কথা নয়- এটা কল্পনার চাইতেও বেশি; অভাবিত। ব্যাটিং-বোলিং-ফিল্ডিং; তিন বিভাগেই মাঠে সেরা প্রমাণ করেছে বাংলাদেশ।
ইংলিশদের হোয়াইটওয়াশের পর ফোন করে বাহবা দিয়েছেন ক্রিকেটপ্রাণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দিয়েছেন অভিনন্দনও। আর বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা রীতি-রেয়াজ অনুযায়ী পাচ্ছেন বিশেষ বোনাসও। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন জানিয়েছেন, ‘পূর্ব ঘোষিত পরিকল্পনা অনুযায়ী দেওয়া হচ্ছে এই বোনাস। যে কোনো দলের সঙ্গে প্রথমবার কিছু করলে আমরা ওদের ভালো বোনাস দেই।’
সব মিলিয়ে ওয়ানডেতে বাংলাদেশ সমীহ জাগানিয়া দল হলেও টি-টোয়েন্টিতে একটি রীতিমতো সাগরে হাবুডুবু খাওয়া এলেবেলে দল। নতুন করে আবার দায়িত্ব নিয়ে কোচ চন্ডিকা হাতুরু সিংহে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের কথা বলেছিলেন। এবং তিনি তার মনোনিবেশ করেছিলেন ওই ভার্সানেই। নতুন মন্ত্র দীক্ষিত সাকিব-লিটনরা; সেই মন্ত্র পাঠ করে করে যুদ্ধের ময়দানে প্রতিপক্ষ গোলা-বারুদে ধসিয়ে দিয়েছে। বিশ্বকাপে ঠিক এমন দলের স্বপ্ন-প্রত্যাশায় থাকছে ক্রিকেটপ্রেমী বাঙালিরা।

আরও পড়ুন
spot_img

জনপ্রিয় সংবাদ

মন্তব্য