উত্তরণ প্রতিবেদন: বেগম খালেদা জিয়া পৃথিবীতে একমাত্র নারী যিনি পাঁচবার জন্মগ্রহণ করেছেন? এর মধ্যে তার ভুয়া জন্ম তারিখ ১৫ আগস্টে জন্মদিন পালনের মূল ষড়যন্ত্র ছিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ তার পরিবারের সদস্যদের নির্মম হত্যাকা-ের দিন, অর্থাৎ জাতীয় শোক দিবসকে অসম্মান তথা শোক দিবসকে ভাবগাম্ভীর্যকে বিকৃত ও ক্ষুণœ করা। বেগম খালেদা জিয়ার ভুয়া জন্মদিন বিষয়ে মহমান্য হাইকোর্ট এক রুল জারি করেছেন, সে-বিষয় নিয়ে সোহাগ ফকিরের প্রতিবেদন-
পৃথিবীতে একমাত্র নারী যিনি পাঁচবার এই পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করেছেন। শুনলেই সবার চোখ যেন চড়কগাছ হয়ে ওঠার কথা। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের মানুষের মুক্তির জন্য গোটা জীবন সংগ্রাম এবং ত্যাগ স্বীকার করেছেন। আজীবন জেল-জুলুম ও নির্যাতন সহ্য করে হায়নার ছোবল থেকে প্রিয় বাংলাদেশ নামক একটি স্বাধীন ভূখ- উপহার দিয়ে গেছেন। শোষণকারী পাকিস্তান চূড়ান্ত পরাজিত হলেও তাদের দোসররা অবৈধভাবে বারবার রাষ্ট্রক্ষমতায় এসে বঙ্গবন্ধু ও স্বাধীনতাবিরোধী কর্মকা- চালিয়ে গেছে। তারই অন্যতম ধারাবাহিকতার অংশ হিসেবে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের শোক মøান করে দেওয়া। জাতীয় জীবনের কালো অধ্যায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হারানো শোককে হায়না উন্মাদনায় মুছে ফেলার অন্যতম ষড়যন্ত্র ছিল ১৫ আগস্টে বেগম খালেদা জিয়ার ভুয়া জন্মদিন পালন। ষড়যন্ত্রের যজ্ঞ হিসেবে দিনটাতে কেক কাটা ছিল যেন জাতির বুকে ছুরি চালানো। যা নীরবে নিভৃতে জাতি সয়ে গেছে বছরের পর বছর।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খলেদা জিয়া জন্মদিন সম্পর্কে সরকারের কাছে থাকা সকল নথিপত্র ৬০ দিনের মধ্যে দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন মহামান্য হাইকোর্ট। ১৩ জুন বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন। একই সঙ্গে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খলেদা জিয়ার জন্মদিনের বিভিন্ন তারিখ ব্যবহারের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল দিয়েছেন হাইকোর্ট। গত ২১ মে খালেদা জিয়ার বিভিন্ন জন্ম তারিখ ব্যবহারের বিরুদ্ধে বিবাদিদের নিষ্ক্রিয়তা চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মামুন অর রশিদের করা এক রিট আবেদনের ওপর প্রাথমিক শুনানি শেষে মহামান্য হাইকোর্ট এ আদেশ দেন। পররাষ্ট্র সচিব, নির্বাচন কমিশন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডসহ সরকারের সংশ্লিষ্টদের এ বিষয়ে সকল প্রকার নথিপত্র দাখিলের নির্দেশ দেন। আদালতের রিটের পক্ষে আইজীবী নাহিদ সুলতানা। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অরবিন্দ কুমার রায় ও বিপুল বাগমার। এ বিষয় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আইনজীবী বেগম খলেদা জিয়ার আইনজীবী এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন শুনানিতে যুক্ত হয়ে রিটের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। জাতীয় শোক দিবসের ভাবগাম্ভীর্যকে বিকৃত ও ক্ষুণœ করায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খলেদা জিয়ার বিভিন্ন জন্ম তারিখ উল্লেখ থাকার বিষয়ে স্বরাষ্ট্র সচিব, স্বাস্থ্য সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার ও গুলশান থানার ওসি এবং বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
বিএনপি দলটি বরাবর হিংসাত্মক ও বিকৃতি রাজনীতির যে পরিচয় দিয়েছেন তার অন্যতম দৃষ্টান্ত বেগম খালেদা জিয়ার ১৫ আগস্টে জাতীয় শোক দিবসে তার ভুয়া জন্মদিন পালন।
রিটের আবেদনে খালেদা জিয়ার ৫টি জন্মদিন ব্যবহারের কথা উল্লেখ রয়েছে। তার শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ সূত্রে জানা যায় যে, এসএসসির নম্বরপত্রে দেওয়া জন্ম তারিখ ছিল ৫ সেপ্টেম্বর ১৯৪৬ খ্রিষ্টাব্দ। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সাবেক সৌরশাসক জিয়াউর রহমানের সাথে খালেদা জিয়ার বৈবাহিক সূত্রে আবদ্ধ হন। সে বিবাহ নিবন্ধনে খালেদা জিয়ার জন্ম তারিখ লেখা রয়েছে ৪ আগস্ট ১৯৪৪ খ্রিষ্টাব্দ। অন্যদিকে ২০০১ সালে করা খালেদা জিয়ার মেশিন রিডেবল পাসপোর্টে জন্ম তারিখ লেখা হয় ৫ আগস্ট ১৯৪৬ খ্রিষ্টাব্দ। এ বছর নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন বেগম খালেদা জিয়া। মে মাসে করোনা পরীক্ষায় তার পজিটিভ রিপোর্ট এলে অর্থাৎ তার করোনা পরীক্ষার রিপোর্টে জন্ম তারিখ লেখা হয় ৮ মে ১৯৪৬ খ্রিষ্টাব্দ উল্লেখ করা হয়। এছাড়া জাতীয় শোক দিবস ১৫ আগস্টে বরাবরের মতো তার জন্মদিন পালন করে আসছেন তিনি। জাতীয় শোক দিবস ১৫ আগস্টে খালেদা জিয়ার তার জন্মদিন পালনে কেক কাটা ছিল জাতির বুকে ছুরি চালানো। যা মেনে নিতে পারেনি জাতি। মূলত বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের প্রতি অবজ্ঞা ও ঘৃণা প্রদর্শন ছিল ঐ জন্মদিনের মূল উদ্দেশ্য। খালেদা জিয়ার ভুয়া জন্মদিন পালনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে যে রুল জারি করা হয়েছে সে-বিষয় ইতিবাচক হিসেবে দেখছে জাতি।