উত্তরণ প্রতিবেদন :
২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে ঘটেছিল নারকীয় জঙ্গি হামলার ঘটনা। বহু বিদেশি হত্যা করে জনমনে আতঙ্ক তৈরি ও আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আইএস-এর দৃষ্টি আকর্ষণই ছিল ঐ হামলার মূল উদ্দেশ্য। নির্মম ও নিষ্ঠুর ঐ হামলার মূল পরিকল্পনা করেছিলেন নব্য জেএমবির প্রধান সমন্বয়ক তামিম চৌধুরী, নুরুল ইসলাম মারজান ও সারোয়ার জাহান।
বেকারিতে হামলা ও হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিলেন পাঁচ জঙ্গি যারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিশেষ অভিযানে নিহত হয়। হামলা প্রচেষ্টায় জড়িত ছিলেন নব্য জেএমবির সাত জঙ্গি। গত ২৭ নভেম্বর এই সাত জঙ্গিকে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদÐ দিয়েছেন ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মজিবুর রহমান। রায়ে বিচারক বলেন, পরিকল্পনাকারী তিনজন ও অভিযুক্ত সাত জঙ্গির একই অভিপ্রায় ছিল যে পাঁচ জঙ্গি রোহান ইবনে ইমতিয়াজ, মীর সামেহ মোবাশ্বের, নিরবাস ইসলাম, মো. খায়রুল ইসলাম পায়েল ও মো. শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বলকে দিয়ে মূল হামলাকারী গুলশানের ক‚টনৈতিক এলাকায় বড় ধরনের হামলা করে বহু দেশি-বিদেশি মানুষকে হত্যা করেন। সেই অভিপ্রায় বাস্তবায়নের জন্য আসামিদের মধ্যে কেউ পরিকল্পনা, কেউ অস্ত্র সংগ্রহ, কেউ প্রশিক্ষণ ও প্ররোচনা এবং কেউ পরিকল্পনা অনুমোদন দিয়ে ঐ হামলা সংঘটিত করেন। এ-কারণে ঐ হামলার মূল পরিকল্পনাকারী, সমন্বয়কারী এবং ঐ হামলাকারী ও হামলা প্রচেষ্টায় জড়িত কারও ভ‚মিকা ছোট বা বড় করে দেখার সুযোগ নেই। সকলেই একই অভিপ্রায় নিয়ে ঐ নারকীয় হামলা প্রচেষ্টায় অংশগ্রহণ করে একই অপরাধ করেছেন।
সাত জঙ্গির কার কি দায়
রায়ে বিচারক বলেন, তামিম চৌধুরী, মারজান ও সারোয়ার জাহানের পরিকল্পনায় মৃত্যুদÐপ্রাপ্ত সাত আসামির মধ্যে জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে রাজীব গান্ধী পরিকল্পনা ও প্রশিক্ষণ দিয়ে সদস্য রিক্রুট এবং অস্ত্র-সংক্রান্ত তথ্য প্রদান করেন। রাকিবুল হাসান রিগেন মূল হামলাকারীদের প্রশিক্ষণ ও প্ররোচনা দেন। আবদুস সবুর খান হামলার পরিকল্পনা ও অনুমোদন দেন। আসলাম হোসেন ওরফে র্যাশ অস্ত্র ও গুলি আনা-নেওয়া করেন এবং হামলার জন্য বসুন্ধরায় ভাড়া বাসার ব্যবস্থা করেন। মামুনুর রশিদ অস্ত্র সরবরাহ করেন এবং আসামি শরিফুল ইসলাম খালেদ হামলার পরিকল্পনা করে প্রচেষ্টা গ্রহণ করে দেশি-বিদেশি ২৩ জনকে হত্যা, গুরুতর জখম এবং অন্যদের আঘাত করে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ৬(২)(অ) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন, যা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে পেরেছে রাষ্ট্রপক্ষ। এজন্য সাত জঙ্গিকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ঐ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে তাদের মৃত্যুদÐের পাশাপাশি ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হলো। তাদের মৃত্যু নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত গলায় ফাঁসি দিয়ে ঝুলিয়ে রেখে মৃত্যুদÐ কার্যকরের নির্দেশ দেওয়া গেল।
মূল পরিকল্পনাকারী ও সমন্বয়কারী হলেন তামিম
রায়ে বলা হয়, তামিম চৌধুরীর নেতৃত্বে এই হামলা সংঘটিত হয়। আসামি আসলাম হোসেন র্যাশের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এ তথ্য উঠে এসেছে।
রায়ে সাত জঙ্গিকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ৮ ধারায় ছয় মাস এবং ৯ ধারায় পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদÐ দেন ট্রাইব্যুনাল। এছাড়া ওই আইনের ৭ ধারায় আসামি মামুনুর রশিদ ব্যতীত অপর ছয় জঙ্গিকে ১০ বছর সশ্রম কারাদÐ ও ১০ লাখ টাকা অর্থদÐ এবং অনাদায়ে আরও দুই বছরের সশ্রম কারাদÐ দেওয়া হয়।
এক নজরে বিচার
হামলা : ১ জুলাই ২০১৬ রাত পৌনে ৯টা।
মামলা দায়ের : ২০১৬ সালের ২ জুলাই, সন্ত্রাস দমন আইনে, গুলশান থানায়।
অভিযোগপত্র দাখিল : ২০১৮ সালের ২৩ জুলাই।
অভিযোগ গঠন : ২০১৮ সালের ২৬ নভেম্বর, ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালে।
সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু : ২০১৮ সালের ৩ ডিসেম্বর।
সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ : ২০১৯ সালের ২৭ অক্টোবর।
যুক্তিতর্ক শেষ : ২০১৯ সালের ১৭ নভেম্বর।