Monday, December 4, 2023

স্মার্ট বাংলাদেশ রূপকল্প

চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের এই একবিংশ শতাব্দীতে বাংলাদেশকে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ হিসেবে গড়ে তুলতে দেশরত্ন শেখ হাসিনার এই দৃঢ় প্রত্যয় আমাদের কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে।

আশেক মাহমুদ সোহান
শেখ হাসিনা স্বপ্ন দেখতে জানেন এবং স্বপ্ন পূরণ করতেও জানেন। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে জনগণের প্রত্যাশা পূরণে নেওয়া প্রতিটি ওয়াদা রক্ষা করে তিনি এর প্রমাণ দিয়েছেন। তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ডিজিটাল বাংলাদেশের মতো চ্যালেঞ্জকে ২০২১ সালের মাঝে বাস্তবায়ন করে দেখাবেন, আজ মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ এখন আমার আপনার সবার গর্বের বিষয়। তাই স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্নও যে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা পূরণ করবেন, তা বাংলাদেশের আপামর জনতা জানে এবং বিশ্বাস করে। স্মার্ট বাংলাদেশ ঘোষণার মাধ্যমে ইতোমধ্যে দেশের প্রত্যেকটি নাগরিক একটি সুন্দর বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছে, আসুন জেনে নেই স্মার্ট বাংলাদেশ নিয়ে কয়েকজন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া তরুণের ভাবনা।

সবচেয়ে জরুরি ইন্টারনেট
আমার মতে, বাংলাদেশকে তখনই স্মার্ট বলা হবে যখন দেশের মানুষ হবে স্মার্ট, অর্থাৎ প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষ, দেশের অর্থনীতি হবে শক্তিশালী এবং সম্পূর্ণ প্রযুক্তিনির্ভর, স্মার্ট গভর্নমেন্ট, অর্থাৎ সরকারি সব সুযোগ-সুবিধা প্রযুক্তির মাধ্যমে লাভ করা সম্ভব হবে। সর্বশেষ স্মার্ট সোসাইটি, অর্থাৎ সমাজের সর্বস্তরে প্রযুক্তির সঠিক ও সহজ ব্যবহার নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা ও দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন। অনেকেই স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের বিভিন্ন প্রতিকূলতা সামনে এনে এটি কার্যকর হবে না- এমন ধারণা পোষণ করলেও, ব্যক্তিগতভাবে আমি স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে আমরা সফল হব- এ বিষয়ে আমি আশাবাদী। কারণ জাইকা এবং যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বোস্টন কনসাল্টিংয়ের সহযোগিতায় প্রণীত আইসিটি মাস্টারপ্ল্যান ২০৪১ আমি পড়েছি। এতে দেশকে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, ইন্টারনেট অব থিংসের মতো প্রযুক্তি ব্যবহার করে দেশকে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, জ্বালানি, যোগাযোগ, শক্তি ও সম্পদ, অবকাঠামো, অর্থনীতি, বাণিজ্য, আর্থিক লেনদেন, সাপ্লাই অব চেইন, নিরাপত্তাসহ বাংলাদেশকে জ্ঞানভিত্তিক ও উদ্ভাবনী জাতি হিসেবে গড়ে তোলার প্রকল্পসহ ৪০টি মেগা প্রকল্প গ্রহণের প্রস্তাব করা হয়েছে। গঠন করা হয়েছে ৩০ সদস্য বিশিষ্ট স্মার্ট বাংলাদেশ টাস্কফোর্স।
স্মার্ট বাংলাদেশের ঘোষণা সম্প্রতি দেওয়া হলেও, এর কার্যক্রম অনেক আগে শুরু হয়েছে এবং বাস্তবায়নও দীর্ঘমেয়াদি। তাই আপাতদৃষ্টিতে এটি অনেক কঠিন মনে হলেও সময়োপযোগী হওয়ায় সময়ের সাথে সাথে এর কার্যকারিতাও দৃশ্যমান হবে বলে আমি মনে করি। ডিজিটাল বাংলাদেশের কার্যক্রম মূলত স্মার্ট বাংলাদেশেরই প্লাটফর্ম। সে-লক্ষ্যে নাগরিকদের স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র, স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্স, স্মার্ট পাসপোর্ট, মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে কোভিড-১৯ টিকাদান, ট্রেন-বাসের টিকিট ক্রয় ইত্যাদি বিষয়গুলো আশার আলো দেখায়। সম্প্রতি ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, আগামী পহেলা বৈশাখ থেকে যাবতীয় ভূমিকর অনলাইনের মাধ্যমে গৃহীত হবে। অর্থাৎ নাগরিকদের তথ্যের ও সরকারি সেবার সহজলভ্যতা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। সেই সাথে সাধারণ মানুষও নিজ প্রয়োজনের তাগিদেই প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষ হয়ে উঠবে।
স্মার্ট ইকোনমির ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত ও শক্তিশালী অর্থনীতি জরুরি। আন্তর্জাতিক বাজার সম্প্রসারণ, ইন্ডাস্ট্রি ব্রান্ডিং, পলিসি সহায়তা, ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ তৈরির মাধ্যমে ঘোষিত রূপকল্প-৪১ বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এছাড়াও যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে পদ্মা সেতু, বঙ্গবন্ধু রেল সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলি টানেল, এক্সপ্রেসওয়েসহ বিভিন্ন অবকাঠামোগত স্থাপনা নির্মাণ যোগাযোগের সাথে সাথে ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধিতে ভূমিকা পালন করছে। সেই সাথে নতুন করে যুক্ত হচ্ছে ব্লু ইকোনমি সেক্টর, মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর, ব-দ্বীপ পরিকল্পনা-২১ এর মতো পরিকল্পনাগুলোর বাস্তবায়ন কার্যক্রম আশার সঞ্চার করছে। প্রযুক্তিগত দিক থেকে দক্ষ, অর্থাৎ স্মার্ট হওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে জরুরি ইন্টারনেট। তাই ইন্টারনেটের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ২০২৪ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে তৃতীয় সাবমেরিন কেবলের সাথে যুক্ত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সরকার। এখন ব্যবহৃত ৩৪০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ, যা ১৩২০০ জিবিপিএসে পৌঁছে যাবে। ইন্টারনেট ব্যবহারে এক অভূতপূর্ব বিপ্লব সাধিত হবে বলে আমি আশা রাখি। সেই সাথে ভারত, মিয়ানমার, ফ্রান্স ও নেপালের কাছে ব্যান্ডউইথ লিজ দিয়ে ৯.৫৪ মিলিয়ন ডলার আয় করা সম্ভব হবে। সেই সাথে বঙ্গবন্ধু-২ স্যাটেলাইট অচিরেই প্রেরণ করা হবে বলে সরকারের তরফ থেকে বলা হয়েছে। অর্থাৎ প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ সাধিত হবে ক্রমান্বয়ে। সর্বোপরি প্রযুক্তির সহজ সুষ্ঠু ও নিরাপদ ব্যবহারের মাধ্যমে সমাজিকভাবে এক স্মার্ট সমাজে আমরা প্রবেশ করব, যা আজকের দিনের ডিজিটাল বাংলাদেশের বহুল কাক্সিক্ষত স্মার্ট সংস্করণ- এক লালিত স্বপ্ন স্মার্ট বাংলাদেশ।

খন্দকার সাব্বির আহমেদ
সংস্কৃত বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

তরুণ সমাজ খুবই আশাবাদী
সমতার বিশ্ব, গণতান্ত্রিক বিশ্ব, বৈষম্যহীন বিশ্বের অন্যতম স্বপ্নদ্রষ্টা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবের জ্যেষ্ঠ কন্যা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা আমাদের সামনে স্মার্ট বাংলাদেশের ধারণা নিয়ে এসেছেন। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, সেটি ইতোমধ্যে আমাদের তরুণ সমাজসহ বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষের মনে দোলা দিয়েছে। যার ফলে আমরা তরুণ সমাজ খুবই আশাবাদী। আমরা জানি, জননেত্রীর হাত ধরে বাংলাদেশ একটি ডিজিটাল বাংলাদেশে পরিণত হয়েছে। স্মার্ট বাংলাদেশের সিদ্ধান্ত সময়ের সবচেয়ে অসাধারণ সিদ্ধান্ত।
তরুণ সমাজ চায় না বাংলাদেশ পাঁচবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হোক। তরুণ সমাজ চায় না ঘরের মানুষ ঘরে ফিরবে কী না- সংশয়ে থাকুক প্রিয়জন। তরুণ সমাজ চায় না বিদ্যুতের অভাবে অন্ধকারাচ্ছন্ন থাকুক বাংলাদেশের মানুষ। তরুণ সমাজ চায় না হাওয়া ভবন নামে দুর্নীতির আখড়া তৈরি হোক। আমরা চাই না বাংলাদেশের মানুষ কষ্টে থাকুক। তাই আজকের তরুণ সমাজ চায়, দেশরত্ন শেখ হাসিনার হাত ধরে নতুন সম্ভাবনাময় স্মার্ট বাংলাদেশ। আমার চাই- শান্তি, সম্প্রীতি, মানবিক ও উন্নত বাংলাদেশ।
আর এই স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে সবচেয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে আমাদের তরুণ প্রজন্মকে। এগিয়ে আসতে হবে মানবিক, সামাজিক, শিক্ষণীয় সকল কর্মকাণ্ডে। কারণ একজন স্মার্ট ছাত্রই পারে দেশকে স্মার্টভাবে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরতে। আমাদেরই সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সন্ত্রাসমুক্ত শিক্ষার পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে। বই পড়ার পাশাপাশি নিজেকে তৈরি করতে হবে সম্ভাবনাময়ী সুনাগরিক হিসেবে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে এবং বিশ্বের বুকে মাথা উঁচিয়ে ধরবে। দেশরত্ন শেখ হাসিনার স্মার্ট বাংলাদেশ ভাবনায় বাংলাদেশের মেহনতি মানুষ উজ্জীবিত।
আমরা তরুণ প্রজন্ম আশা করছি, বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনার হাতেই হবে সম্ভবনাময়ী স্বপ্নের স্মার্ট বাংলাদেশ।

এম হাযরুল হাসান আলিফ
ইংরেজি বিভাগ, সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ, পাবনা

উন্নত প্রযুক্তিগত বাংলাদেশ
আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ ভাবনা হলো একটি উন্নত ও প্রযুক্তিগত বাংলাদেশ গড়ে তোলার প্রকল্প। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার উদ্দেশে তার সরকার এ অবধি অনেকগুলো পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তার মধ্যে অন্যতম হলো- ভিশন ২০২১, যার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশকে একটি ডিজিটালাইজড দেশে পরিণত করা।
অন্যান্য পদক্ষেপের মধ্যে রয়েছে : ই গভর্নেন্স প্রকল্প, ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেম, মোবাইল কৃষি, চিকিৎসা ও অন্যান্য সেবা, আইসিটি ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট, ফস্টারিং ইনোভেশন, হাইটেক পার্ক প্রতিষ্ঠা, গ্লোবাল পার্টনারশিপ উন্নয়ন ইত্যাদি। এসবের সুফল আমরা ইতোমধ্যে দেখতে পাচ্ছি। যেখানে ২০০৭ সালে বাংলাদেশের সাক্ষরতার হার ছিল ৪৬.৬৬ শতাংশ সেখানে বর্তমানে বাংলাদেশের সাক্ষরতার হার দাঁড়িয়েছে প্রায় ৭৫ শতাংশ। ২০০৭-০৮ অর্থবছরে যেখানে বাংলাদেশের জনগণের মাথাপিছু আয়ের পরিমাণ ছিল ৬৮৬ মার্কিন ডলার সেখানে ২০২২-২৩ অর্থবছরে মাথাপিছু আয়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৭৬৫ মার্কিন ডলার।
এসব উদ্যোগ যেমন করেছে দেশের অর্থনীতিকে সচল, দেশের মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন, তেমনি দিয়েছে তরুণদের আলোকিত ভবিষ্যৎ গড়ার প্রেরণা। এসব অবদানের জন্য আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে চির কৃতজ্ঞ।

মো. ইমাম মাহমুদ রিসান
সরকার ও রাজনীতি বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

চতুর্থ শিল্প বিপ্লব
ডিজিটাল প্রযুক্তির নিত্যনতুন উদ্ভাবনের পথ ধরে আসা চতুর্থ শিল্প বিপ্লব বিজয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অদম্য অগ্রগতিতে এগিয়ে যাওয়া বর্তমান সরকার বহুমাত্রিক পরিকল্পনা-কর্মকৌশল গ্রহণ করে যাচ্ছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলার আধুনিক রূপ তথ্যপ্রযুক্তি সমৃদ্ধ ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রূপকল্প ২০২১ ঘোষণা করেন। বাংলাদেশ আজ সত্যিই ডিজিটাল বাংলাদেশে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে ২০৪১ সাল নাগাদ একটি সাশ্রয়ী, টেকসই, বুদ্ধিদীপ্ত, জ্ঞানভিত্তিক, উদ্ভাবনী, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়াই সরকারের প্রধান লক্ষ্য।
এই স্মার্ট বলতে এখানে ভালো কাপড় পরিধান, স্মার্টফোন ব্যবহার করে স্মার্টলি চলাফেরা করাকে বুঝায় না। এখানে স্মার্ট বাংলাদেশ হবে এমন এক বাংলাদেশ, যেখানে মানুষ দেশের যে অঞ্চলেই বসবাস করুক না কেন, সে প্রযুক্তির বদৌলতে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা সমতারভিত্তিতে পেতে পারবে। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার ভিত্তি ৪টি। এগুলো হচ্ছে- স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট গভর্নমেন্ট এবং স্মার্ট সোসাইটি। স্মার্ট বাংলাদেশের রোডম্যাপ ডিজিটাল বাংলাদেশ টাস্কফোর্সের নাম পরিবর্তন করে স্মার্ট বাংলাদেশ টাস্কফোর্স গঠন করেছে সরকার। ২০২৫ সালের মধ্যে প্রায় ২ লাখ বিদ্যালয়, ভূমি অফিস, হেলথ কমপ্লেক্সকে ফাইবার অপটিকের আওতায় আনা হবে। অনলাইনে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে চালু হবে ওয়ান স্টুডেন্ট ও ওয়ান ল্যাপটপ। তরুণ প্রজন্মের মেধা, বুদ্ধি ও জ্ঞানের বিকাশ কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠবে আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর। ডিজিটালসেবা কেন্দ্রীয়ভাবে সমন্বিত ক্লাউডের আওতায় নিয়ে আসা হবে। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে সাশ্রয়ী মূল্যে ডিভাইস সরবরাহ ও ফ্রি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। সকল নাগরিকের পাশাপাশি যুবসমাজকে নিজেদের প্রযুক্তিনির্ভর স্মার্ট নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।

সুমন আহমেদ
আইসিটি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ

প্রযুক্তিবান্ধব জনগোষ্ঠী গড়তে হবে
বাংলাদেশ স্বাধীনতা-পরবর্তী ৫০ বছরে বিশ্বের দরবারে একটি ভঙ্গুর রাষ্ট্রকাঠামো থেকে নিজেকে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠিত করেছে। একজন শিক্ষার্থী হিসেবে, একজন বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে, নিজের জন্মভূমিকে একুশ শতকের বিশ্বে একটি প্রযুক্তিগত স্বনির্ভর দেশ ও জাতি হিসেবে দেখতে পাওয়া স্বপ্নের মতো হবে।
স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে, আমাদের এখনও অনেক ক্রোশ পথ পাড়ি দিতে হবে। আমাদের অনেক বেশি বিজ্ঞানচর্চা, প্রযুক্তিবান্ধব ও মানুষকে প্রযুক্তি ব্যবহারে অভ্যস্ত করে তুলতে হবে। প্রান্তিক অঞ্চলের মানুষকেও প্রযুক্তিবান্ধব, প্রযুক্তির সহজলভ্যতা নিশ্চিত করতে হবে।
স্মার্ট নগর ও শহরের পাশাপাশি আমাদের ব্যক্তিজীবনে স্মার্ট মানসিকতার সাথে নিজেদের অভ্যস্ত করে তুলতে হবে, তার জন্য প্রয়োজন সৃজনশীল শিক্ষাব্যবস্থা, যা আমাদের মেধা ও মনন বিকাশে সহায়তা করবে। আনন্দের বিষয়, আমাদের দেশে উচ্চশিক্ষার হার বৃদ্ধি পেয়েছে অনেকাংশে। তাই, স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে স্মার্ট ইকোনমি, উদ্ভাবনী দক্ষতা বৃদ্ধি, ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণে জোর দেওয়া ইত্যাদি দিকে সুস্পষ্ট নজর রাখতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে, একমাত্র মানুষকে প্রযুক্তিগত দক্ষ করে তুলতে পারলে স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে। হিউম্যানওয়্যারই পারে সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যারকে সঠিকভাবে পরিচালনা করতে। সুতরাং, এত জনসংখ্যার দেশে স্মার্ট জনশক্তি উৎপাদন করতে পারাই স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের মূল উপাদান হিসেবে কাজ করবে।
স্মার্ট বাংলাদেশ হবে প্রতিটি বাংলাদেশির জন্য অহংকার। যে স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ার জন্য ৩০ লাখেরও অধিক মানুষ নির্লিপ্তভাবে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে যুদ্ধ করে স্বাধীনতা এনেছিল, সেই মহান জাতি আমরা সব সময় বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে বাঁচব।
স্মার্ট বাংলাদেশের রূপরেখা আমাদের স্বপ্নের বাংলাদেশ। ধন্যবাদ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনাকে স্মার্ট বাংলাদেশের মতো একটি ধারণাকে প্রতিষ্ঠার বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য, বর্তমান বাংলাদেশের জন্য এটি খুবই জরুরি।

রাইসুল ইসলাম আকাশ
পরিসংখ্যান বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

মেট্রোরেল আশার সঞ্চার করেছে
২০২২ সালের ১২ ডিসেম্বর স্মার্ট বাংলাদেশ দিবস ও ৪টি প্রতিপাদ্য বিষয়কে লক্ষ্য করে স্মার্ট বাংলাদেশ প্রতীয়মান করতে বদ্ধপরিকর গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা। প্রতিপাদ্য ৪টি বিষয় হলো- ১. স্মার্ট সিটিজেন ২. স্মার্ট সোসাইটি ৩. স্মার্ট গভর্নমেন্ট ৪. স্মার্ট ইকোনমি।
তিনি বাংলাদেশকে স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চান। টেকসই, সাশ্রয়ী, স্বনির্ভরতা, বুদ্ধিদীপ্ত ও জ্ঞানভিত্তিক কৌশল এবং দেশের তরুণদের সহযোগিতা নিয়ে আগামীর বাংলাদেশ হবে শেখ হাসিনার স্মার্ট বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু, সাক্ষরতার হার, শিশুমৃত্যু হার হ্রাস, অবকাঠামোগত ও যোগাযোগক্ষেত্রে উন্নয়ন, সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন- সর্বোপরি সকল বিষয়ে ইতিবাচক পরিবর্তন হচ্ছে।
২০২২ সালের ২১ ডিসেম্বর সারাদেশে একদিনে ১০০ সেতুর উদ্বোধন, যা সারাবিশ্বে নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত। পদ্মা নদীর ওপর পদ্মা সেতু দক্ষিণবঙ্গের যোগাযোগব্যবস্থাকে গতিশীল ও ত্বরান্বিত করেছে। বাংলাদেশের ভেনিস খ্যাত বরিশালকে পদ্মা সেতু পরিপূর্ণ করেছে। যোগাযোগের অভূতপূর্ব উন্নয়নে স্মার্ট কানেক্টিভিটিতে আমরা ইতোমধ্যে এগিয়ে।
ঢাকার মতো জ্যাম ও জটের শহরে মেট্রোরেল আশার সঞ্চার করেছে। চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে এটি আশীর্বাদ। সেই সাথে নির্মাণাধীন ও উদ্বোধনের অপেক্ষায় থাকা এক্সপ্রেস হাইওয়েগুলো চালু হলে শহরবাসী স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে পারবে। বিদ্যুৎ উৎপাদনে পাবনার রূপপুর ও পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র ও মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র যুগান্তকারী ভূমিকা রাখবে। বছরের প্রথম দিন শিক্ষার্থীদের হাতে বই, দরিদ্র শিক্ষার্থীদের জন্য উপবৃত্তি মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তি, উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণ, প্রতিটা উপজেলায়, ইউনিয়ন, ওয়ার্ডে তথ্যসেবা ও কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে সকলের স্বাস্থ্যসেবা সুনিশ্চিতকরণ হচ্ছে। বয়স্কদের বয়স্ক ভাতা, বিধবাদের বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধীদের ভাতার আওতাধীন করা হয়েছে, অর্থাৎ সবার সামাজিক নিরাপত্তা দিচ্ছে। গৃহহীনদের আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় আবাসন ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
প্রায় সকল কাজ এখন অনলাইনভিত্তিক পরিচালিত হচ্ছে ই-কমার্স, ই-স্বাস্থ্য, ই-নথি সেবা ইত্যাদি। মূলত জনগণের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে স্মার্টনেসের যে চর্চা তা এর মাধ্যমে এগিয়ে যাচ্ছে।
ডিজিটাল বাংলাদেশের পর লক্ষ্য স্মার্ট বাংলাদেশ। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের এই একবিংশ শতাব্দীতে বাংলাদেশকে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ হিসেবে গড়ে তুলতে দেশরত্ন শেখ হাসিনার এই দৃঢ় প্রত্যয় আমাদের কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে।

মো. নাইম উদ্দিন
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

আরও পড়ুন
spot_img

জনপ্রিয় সংবাদ

মন্তব্য