এরশাদ, খালেদা জিয়া কেউ এদেশের মানুষের খাদ্যের নিরাপত্তা দেয়নি। আওয়ামী লীগ আজকে দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছে। বিএনপি বলে ক্ষমতা গেলে পালানোর সুযোগ পাবেন না। আমি বলতে চাই, আওয়ামী লীগ কখনও পালায় না। পালায় আপনাদের নেতারাই।
উত্তরণ প্রতিবেদন: প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা বিধৌত হযরত শাহ মুখদুম (র.)-এর পুণ্যভূমি রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদ্রাসা মাঠ ও তার চতুর্দিকের উত্তাল জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে দেশের উন্নয়নের জয়যাত্রা অব্যাহত রেখে ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে আবারও নৌকা মার্কায় ভোট দেওয়ার উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন।
২৯ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন রেখে বলেন, নৌকার ওপর বিএনপির এত রাগ কেন? নৌকার কারণে দেশ স্বাধীন হয়েছে। আর দেশ স্বাধীন হওয়ার কারণে জিয়াউর রহমান মেজর থেকে রাষ্ট্রপতি হয়েছে। খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী হয়েছে। এরপর নৌকার ওপর তাদের (বিএনপি) এত রাগ কেন? ক্ষমতা গেলে আওয়ামী লীগ পালানোর সুযোগ পাবে না- বিএনপি নেতাদের এমন বক্তব্যের কড়া জবাব দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বিএনপির উদ্দেশ্যে বলেন, পালায় কে? আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই- আওয়ামী লীগ কখনও পালায় না, পিছু হটে না। কারণ এটা বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া সংগঠন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ জনগণকে নিয়ে কাজ করে। পালায় আপনাদের নেতারাই। যেই নেতা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে মুচলেকা দিয়ে দেশ থেকে ভেগে গিয়েছিল, সেই দুর্নীতিতে সাজাপ্রাপ্ত নেতা (তারেক) আজ বড় বড় কথা বলে। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়, বিদেশ থাকায় আমরা দুই বোন বেঁচে যাই। জিয়াউর রহমান বাধা দিয়েছিল- আমাকে দেশে আসতে দেবে না। আমি বাধা অতিক্রম করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশে ফিরেছিলাম শুধু দেশের মানুষের ভাগ্যোন্নয়নের লক্ষ্য নিয়ে।
গত ২৯ জানুয়ারি বিকালে রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদ্রাসা মাঠে রাজশাহী জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিশাল জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাজশাহী সারাজীবন অবহেলার ছিল। আপনারা এখানে নৌকায় ভোট দিয়েছেন। আমরা উন্নয়ন করেছি। রাজশাহীতে ১০ হাজার ৬৬০ কোটি টাকার উন্নয়ন করা হয়েছে। রাজশাহীতে ৪ হাজার কোটি টাকার কাজ চলছে। আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় এসেছে, বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে কাজ করেছে।
সভামঞ্চে যোগ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শুরুতেই প্রায় ১ হাজার ৩১৬ কোটি ৯৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ২৬টি প্রকল্পের উদ্বোধন এবং প্রায় ৩৭৬ কোটি ২৮ হাজার টাকা ব্যয়ে আরও ৬টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। তিনি বলেন, আজ যে কাজগুলো উদ্বোধন করা হলো এগুলো রাজশাহীবাসীকে আমার উপহার।
রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী কামালের সভাপতিত্বে জনসভায় আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি এবং রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন প্রমুখ। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন, রাজশাহী নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াদুদ দারার সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য দেন রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী কামাল।
আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, শেখ হেলাল উদ্দিন এমপি, আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এমপি, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ এমপি, সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন, জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন এমপি, রাজশাহী-৫ আসনের এমপি ডা. মনসুর রহমান, রাজশাহী-৬ আসনের এমপি পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, রাজশাহী সদর আসনের এমপি ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা, রাজশাহী-৩ আসনের এমপি আয়েন উদ্দীন, রাজশাহী-৪ আসনের এমপি ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক, রাজশাহী জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মীর ইকবাল প্রমুখ।
বিএনপি নেতৃত্বের কড়া সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপির নেতারা কে? বিএনপি না-কি দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করবে! কাকে নিয়ে? দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত তাদের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নিয়ে। যে না-কি ২০০৭-এ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে স্ট্যাম্প কাগজে মুচলেকা দিয়েছিল, আর কোনোদিন রাজনীতি করবে না বলে দেশ থেকে ভেগে গিয়েছিল, পালিয়ে গিয়েছিল, সেই কথা কি বিএনপি নেতাদের মনে নেই?
তিনি বলেন, দুর্নীতিতে সাজাপ্রাপ্ত খালেদা জিয়া, তারেক, এমন কী খালেদা জিয়া, তারেক ও কোকোর মাধ্যমে যে টাকা পাচার করেছিল মানিলন্ডারিং করে। ৪০ কোটি পাচারকৃত টাকা আমরা বাংলাদেশে নিয়ে এসেছি। এর জবাব কি তারেক দিতে পারবে? আওয়ামী লীগ কখনও পালায় না। আওয়ামী লীগ জনগণকে নিয়ে কাজ করে। তিনি বলেন, এই সংগঠন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া সংগঠন। এই সংগঠন যখনই ক্ষমতায় এসেছে, বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হয়েছে। তারা অগ্নিসন্ত্রাস করে ১ হাজার ৮০০ বাস, ৩৩টি সরকারি অফিস, লঞ্চসহ অসংখ্য মানুষকে আন্দোলনের নামে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। সাধারণ মানুষসহ পুলিশকেও তারা নির্মমভাবে পিটিয়েছে। তারেক রহমান এতটা লুটপাট করেছে যে, বিদেশের মাটিতেও আয়েশি জীবনযাপন করছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জিয়া, খালেদা জিয়া এদেশের মানুষের কথা চিন্তা করে নাই। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছে। দেশে আর বেকারত্ব থাকবে না। সবার কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে কেউ গৃহহীন থাকবে না। এ সময় উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে প্রধানমন্ত্রী আবারও নৌকায় ভোট চাইলে জনসমুদ্রে থাকা লাখ লাখ মানুষ দু-হাত তুলে উন্নয়নের প্রতীক নৌকা মার্কায় ভোট দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।
শেখ হাসিনা বলেন, পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। বিদেশে থাকায় আমরা দুই বোন বেঁচে যাই। আমি জিয়াউর রহমানের ষড়যন্ত্র রুখে শুধুমাত্র দেশের মানুষের ভাগ্যের উন্নয়নের লক্ষ্যে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশে আসি। এরশাদ, খালেদা জিয়া কেউ এদেশের মানুষের খাদ্যের নিরাপত্তা দেয়নি। আওয়ামী লীগ আজকে দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছে। বিএনপি বলে ক্ষমতা গেলে পালানোর সুযোগ পাবেন না। আমি বলতে চাই, আওয়ামী লীগ কখনও পালায় না। পালায় আপনাদের নেতারাই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের যাদের বিচার শুরু করেছিলেন বঙ্গবন্ধু তাদের এনে ক্ষমতায় বসায় বিএনপি। এমন সময় আমি দেশে ফিরি শুধু দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করার জন্য। এই বিএনপি-জামাতের ভয়ে আমি পিছু হটিনি। আমি বাধা অতিক্রম করে দেশে ফিরেছি। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে আমার ছেলের বউয়ের বাচ্চা হবার সময় আমি বিদেশে ছিলাম। আমার নামে মার্ডার কেস দিয়েছিল। তবুও আমি দেশে ফিরেছি।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ১৯৯৬ সালের আগে জিয়া, এরশাদ বা খালেদা কেউই দেশের জন্য কাজ করেনি। এই রাজশাহী সবসময় অবহেলিত ছিল। ২০০১ সালের কথা চিন্তা করেন। বিএনপি-জামাত জোট শুধু খুন, ধর্ষণ, রাহাজানি, লুটপাট করত। নৌকায় ভোট দেওয়ার কারণে একটি মেয়েকে নির্মমভাবে ধর্ষণ করে। আপনাদের কীসের এত রাগ? সে-সময় বঙ্গবন্ধু দেশ স্বাধীন না করলে খালেদা কি প্রধানমন্ত্রী হতে পারত? তাহলে মানুষ নৌকায় ভোট দিলে আপনাদের এত রাগ কেন?
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই রাজশাহীতে পদ্মার ভাঙন ঠেকাতে আমরা টিবাঁধ করেছি। ২০০৯ সাল থেকে এই ১৪ বছর ৬ হাজার ৬৬৬ কোটি টাকার উন্নয়ন করেছি এই রাজশাহী জেলা ও মহানগরে। এবারও অনেকগুলো উন্নয়ন প্রকল্প আপনাদের উপহার দিয়ে গেলাম। শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার মানুষের জন্য কাজ করে। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ ও বৈশ্বিক মহামারির কারণে বিশ্বব্যাপী মুদ্রাস্ফীতি হলেও আমরা থেমে থাকিনি। সাধারণ মানুষের যেন কষ্ট না হয় বেশি টাকায় বিদেশ থেকে খাদ্য কিনে মানুষের হাতে কম টাকায় পৌঁছে দিয়েছি।
আমরা মানুষের জন্য কাজ করি। আর বিএনপি শুধু অগ্নিসন্ত্রাস করে মানুষ হত্যা করে। আপনারাই চিন্তা করেন বিএনপি-জামাত কীভাবে জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে মারে?
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি। আর তারা সেই ডিজিটাল প্লাটফরমে মানুষকে উসকানি দেয়। তারা শুধু মানুষকে হত্যা করতে পারে। তারা মানুষের উন্নতি সহ্য করতে পারে না। আজকে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছে। সামনে আরও উন্নত করব। তাই নৌকায় ভোট দিয়ে আমাদের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখুন। নৌকায় ভোট দিয়ে ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে স্মার্ট বাংলাদেশে পরিণত করুন।