Sunday, September 24, 2023
বাড়িউত্তরণ ডেস্কস্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতি অনিয়মের তদন্ত শুরু

স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতি অনিয়মের তদন্ত শুরু

সাহেদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

উত্তরণ ডেস্ক : স্বাস্থ্য খাতে বিগত ১০ বছরের দুর্নীতি ও অনিয়ম তদন্তে ১১ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে একটি বিশেষ সংস্থাকে। সম্প্রতি করোনাসামগ্রী কেনাকাটা, মাস্ক কেলেঙ্কারি ও রিজেন্ট হাসপাতাল কেলেঙ্কারিসহ স্বাস্থ্যের সব অনিয়মের তদন্ত এরই মধ্যে শুরু হয়েছে। কাউকে ছাড় না দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জানা গেছে, তদন্তের আওতায় থাকবে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর, নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তর, ওষুধ প্রশাসনসহ এ মন্ত্রণালয়ের অধীনে সব অধিদপ্তর, বড় বড় মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বিভাগীয় স্বাস্থ্য অফিস, সিভিল সার্জন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ স্থানীয় স্বাস্থ্য প্রশাসন।
সংশ্লিষ্টদের মতে, বিগত ১০ বছরে স্বাস্থ্য খাতে বড় ধরনের সাগর চুরির ঘটনা ঘটেছে। কোটি কোটি টাকা দিয়ে তদবিরের মাধ্যমে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে আসেন অসৎ কর্মকর্তারা। এরপর তারা নানা অনিয়মের মাধ্যমে নিজেদের আখের গোছান। এ কারণে করোনা দুর্যোগের মধ্যে ডাক্তার-নার্সসহ স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের মধ্যে নিম্নমানের মাস্ক সরবরাহের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের বড় সিন্ডিকেট জড়িত। করোনা পরীক্ষায় ভুয়া রিপোর্ট দেওয়ার স্পর্ধাও দেখিয়েছে রিজেন্ট হাসপাতাল। এর মালিক মোহাম্মদ সাহেদ ওরফে সাহেদ করিমের অপকর্মের সঙ্গে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের এক শ্রেণির কর্মকর্তা জড়িত। সাহেদের টাকায় অনেকেই বাড়ি-গাড়ির মালিক হয়েছেন। অথচ রিজেন্ট হাসপাতালসহ মাস্ক ও করোনাকালে কেনাকাটায় কেলেঙ্কারির ঘটনার পর গুটিকয়েক কর্মকর্তাকে বদলি ছাড়া কারোর বিরুদ্ধে বড় কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। তবে এবার হাইকমান্ডের নির্দেশে শুরু হয়েছে তদন্ত। তদন্তে যাদের নাম আসবে তাদের বিরুদ্ধে নেওয়া হবে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা। এদিকে নার্সিং কাউন্সিলের এক কর্মকর্তা এক বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেলেও ১২ বছর ধরে তিনি বহাল তবিয়তে আছেন এবং নানা দুর্নীতিতে জড়িত বলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সাম্প্রতিককালে টেলিফোনে টাকা-পয়সা লেনদেনের একটি অডিও-ভিডিও রেকর্ড গোয়েন্দা সংস্থার কাছে এসেছে। এছাড়া মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তার নরসিংদী, মুন্সিগঞ্জ, গাজীপুর, সাভার ও মোহাম্মদপুরে বিপুল সম্পদের সন্ধান পেয়েছেন তদন্ত টিমের কর্মকর্তারা। সম্প্রতি মাস্ক কেলেঙ্কারি নিয়ে ইত্তেফাক-সহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে। নিম্নমানের মাস্ক সরবরাহকারীর সঙ্গে জড়িতরা সরকারবিরোধী বিভিন্ন কর্মকা-েও জড়িত রয়েছে বলে তথ্য এসেছে। জানা গেছে, এসব কর্মকর্তা ছাত্রজীবন থেকে শুরু করে বিভিন্ন সময় বিএনপি-জামাত-শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল। তারা ঘাপটি মেরে থেকে সরকারের সঙ্গে মিশে ছিল।
উল্লেখযোগ্য ১১টি খাতের অনিয়ম-দুর্নীতির মধ্যে রয়েছেÑ কেনাকাটা, নিয়োগ, পদোন্নতি, বদলি, পদায়ন, চিকিৎসাসেবা, চিকিৎসা সরঞ্জাম, ওষুধ সরবরাহের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো। স্বাস্থ্য খাতে বেশির ভাগ যন্ত্রপাতিই কেনা হয়েছে চাহিদাপত্র ছাড়াই। ‘এ’ ক্যাটাগরির যন্ত্রপাতির মূল্যে সরবরাহ করা হয়েছে ‘সি’ ক্যাটাগরির যন্ত্রপাতি। কখনও কখনও দেশে থেকেই যন্ত্রপাতি সরবরাহ করে ট্যাগ লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে কোনো নামকরা বিদেশি কোম্পানির। অথচ বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনার আমলে দেশে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনসহ স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে নেওয়া হয়েছে ব্যাপক পরিকল্পনা। তৃণমূল পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে গ্রাম পর্যায়েও হেলথ কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপনের বৈপ্লবিক কর্মসূচির বাস্তবায়ন করেছে সরকার। কিন্তু স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দের এক বড় অংশ মহাচোরদের পকেটে জমা হচ্ছে। এমন কী করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যেও থেমে নেই স্বাস্থ্য খাতের অনিয়ম-দুর্নীতি। করোনাভাইরাস মোকাবিলায় ল্যাবরেটরি যন্ত্রপাতি, পিপিই, টেস্টিং কিট, ওষুধপত্র ইত্যাদি চিকিৎসাসামগ্রী কেনাকাটায় অন্তত ২২ কোটি টাকার সঠিক হিসাব দিতে পারছে না স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেন, স্বাস্থ্য খাতকে দুর্নীতিমুক্ত করতে হলে দুর্নীতিবাজদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
এদিকে বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের যন্ত্রপাতি কেনাকাটায় দুর্নীতি-অনিয়মে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে ১৪ ঠিকাদারকে ‘কালো তালিকা’ভুক্ত করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। দুদকের তদন্তে এদের নাম উঠে আসায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) ডা. মো. বেলাল হোসেন স্বাক্ষরিত এ নির্দেশনা দেশের সব হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। গত ৯ জুলাই এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, সরকারি অর্থের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিতকরণসহ ক্রয় কার্যক্রমে স্বচ্ছতা আনা এবং দুর্নীতি, প্রতারণা ও চক্রান্তমূলক কার্যকলাপে জড়িত ছিল ১৪টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠান ও তাদের মালিকদের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দুদক মামলা করে সেই তালিকা পাঠিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে।

সাহেদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
রাজধানীর রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান সাহেদ করিমের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে ইমিগ্রেশন পুলিশকে চিঠি দিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। গত ৯ জুলাই পুলিশ সদর দপ্তরের একটি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, রিজেন্ট হাসপাতালের মালিক সাহেদের দেশত্যাগের আশঙ্কা রয়েছে। এ কারণেই ইমিগ্রেশন পুলিশকে বলা হয়েছে তাকে দেশত্যাগ করতে না দেওয়ার জন্য। এদিকে সাহেদের অন্যতম সহযোগী তরিকুল ইসলাম ওরফে তারেক শিবলীকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। সকালে রাজধানীর নাখালপাড়া থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
করোনা টেস্ট না করে ফলাফল দেওয়া, লাইসেন্সের মেয়াদ না থাকাসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে রাজধানীর রিজেন্ট হাসপাতালের উত্তরা ও মিরপুরের দুটি শাখা সিলগালা করে দেয় র‌্যাব। পরে তার বিরুদ্ধে গত ৭ জুলাই রাতে উত্তরা পশ্চিম থানায় মামলা করা হয়। মামলায় প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান সাহেদসহ ১৭ জনকে আসামি করা হয়েছে। টেস্ট না করেই ফলাফল দিয়ে তারা প্রায় ৩ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এসব অভিযোগে এ পর্যন্ত রিজেন্টের আটজন কর্মকর্তাসহ মোট ৯ জনকে আটক করা হলো।

সূত্র : দৈনিক ইত্তেফাক

পূর্ববর্তী নিবন্ধকরোনা সংকট সমাধান ও ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ
পরবর্তী নিবন্ধউত্তরণের পথে
আরও পড়ুন
spot_img

জনপ্রিয় সংবাদ

মন্তব্য