সাইদ আহমেদ বাবু: ২০১৯-কে বিদায় জানিয়ে মধ্যপ্রাচ্যসহ সারাবিশ্ব শুধু জানুয়ারিতেই নতুন বছরে প্রবেশ করল না, একটি নতুন দশকে প্রবেশ করল এবং একবিংশ শতাব্দীর তৃতীয় দশকে প্রবেশ করল। ২০১৬ সালে আমেরিকার ৫৮তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জিতে হোয়াইট হাউসের ঠিকানায় পা রাখেন ট্রাম্প। চলতি বছরেই মেয়াদ শেষ হচ্ছে তার। ২০১৯ সালেই ইরানে ইসলামি বিপ্লবের ৪০ বছর পূরণ হলো, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ওয়াশিংটনের ৪০ বছরের শত্রু তেহরানের সঙ্গে নতুন করে সংঘাত ডেকে এনেছে। নতুন বছরের শুরুতেই ইরানি জেনারেল কাসিম সোলাইমানিকে হত্যার ঘটনা নতুন বছরের শীর্ষ শিরোনাম হয়েছে। দেশে-বিদেশে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছেন এই ইরানি সেনাপতি। সবাই জানতে চায়, কে এই কাসিম সোলাইমানি এবং কেন তাকে মার্কিন প্রেসিডেন্টের নির্দেশে হত্যা করা হয়েছে?
আমেরিকার অভিযোগ, লেবাননে হিজবুল্লা আর প্যালেস্টাইনে হামাস জঙ্গিদের দীর্ঘদিন ধরে মদত দিয়ে আসছে কুদস। পরমাণু চুক্তি থেকে বেরিয়ে এসে ইরানের ওপর একাধিক নিষেধাজ্ঞা চাপানোর পরে গত এপ্রিলে ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড ও কুদস বাহিনীকে জঙ্গি সংগঠন আখ্যা দিয়ে কালো তালিকাভুক্ত করে আমেরিকা। মধ্যপ্রাচ্যে শত শত মার্কিন সেনাসদস্যের মৃত্যুর জন্য তাকেই দায়ী করে আসছে দেশটি। কুদস বাহিনী যতদিন ইরাকে আইএসের বিরুদ্ধে লড়ছিল, ততদিন সোলেমানির বিরুদ্ধে কিছুই বলতে শোনা যায়নি আমেরিকাকে। কয়েকদিন আগে ইরাকের রাজধানী বাগদাদে মার্কিন দূতাবাসে হামলা চালায় বিক্ষোভকারীরা। ইরানের মদদেই ওই বিক্ষোভকারীদের ইন্ধন দিয়েছিলেন ইরাকের কয়েকটি বিদ্রোহী গোষ্ঠীর নেতারা। মার্কিন মেরিন সেনারা সেদিনের বিক্ষোভ দমন না করতে পারলে তারা দূতাবাস দখল করে নিতÑ এমন ঝুঁকি ছিল। ট্রাম্প বলেছেন, সোলেমানিকে হত্যার নির্দেশ দেওয়ার পেছনে কারণ হচ্ছে, তিনি মার্কিন দূত ও সেনা কর্মকর্তাদের ওপর হামলার পরিকল্পনা করেছিলেন। তার আগেই আমরা তাকে সরাতে সক্ষম হয়েছি। তবে সোলেমানি এ-ধরনের হামলার পরিকল্পনা করেছিলেন, এমন কোনো প্রমাণ দিতে পারেনি মার্কিন সরকার।
এ ব্যাপারে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যা করেছে তা অনেক আগেই করা উচিত ছিল। তাহলে অনেকের জীবন বাঁচানো যেত। সম্প্রতি ইরানে বিক্ষোভকারীদের দমনপীড়ন করা হয়েছিল সোলাইমানির নেতৃত্বেই। তাতে কয়েক হাজার নিষ্পাপ মানুষকে অত্যাচার করা হয়েছিল ও মেরে ফেলা হয়েছিল। গত ৩ জানুয়ারি ইরানের অন্যতম শীর্ষ সেনাকর্তার মৃত্যুকে ঘিরে অস্থির হয়ে উঠেছে মধ্যপ্রাচ্যের ভূ-রাজনৈতিক ভারসাম্যও।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ট ট্রাম্প ইরাকের প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করেছিলেন, তিনি যাতে সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে সমঝোতার চেষ্টা করেন। আদিল আবদুল মাহদি বলেছেন, ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ডস বাহিনীর কমান্ডার মেজর জেনারেল কাসেম সোলাইমানি বাগদাদের আমন্ত্রণেই ইরাক সফরে গিয়েছিলেন এবং গত ৩ জানুয়ারি ভোররাতে বাগদাদের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করার কিছুক্ষণ পর সোলাইমানির বহনকারী গাড়ি লক্ষ্য করে মার্কিন হেলিকপ্টার থেকে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়। এতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন আইআরজিসি কমান্ডার মেজর জেনারেল কাসেম সোলাইমানি ও ইরাকে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন হাশদ আশ-শাবি’র উপ-প্রধান আবু মাহদি আল-মুহানদিস’সহ ১০ জন। ৩ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ৮টায় তার (ইরাকি প্রধানমন্ত্রী) সঙ্গে সাক্ষাৎ করার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই মার্কিন হামলায় তিনি নিহত হন। এর জবাবে ইরান প্রতিশোধ হিসেবে ইরাকে দুটি মার্কিন বিমানঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। সেদিনই ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে বিধ্বস্ত হয় ইউক্রেনীয় উড়োজাহাজ। নিহত হন ১৭৬ জন আরোহী। তাদের মধ্যে ৮২ ইরানি, ৫৭ কানাডিয়ান, ৯ ইউক্রেনীয়, ৪ আফগান, ৪ ব্রিটিশ এবং ৩ জার্মান নাগরিক ছিলেন। উড়োজাহাজ ভূপাতিত করার কথা ইরানের শীর্ষ কর্মকর্তারা প্রথমে অস্বীকার করে। অবশেষে ঘটনার তিন দিন পর ১১ জানুয়ারি কর্তৃপক্ষ স্বীকার করে, অনিচ্ছাকৃত ভুলে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ভূপাতিত হয়েছে ইউক্রেনের উড়োজাহাজ। এরপর সর্বোচ্চ নেতা আলি খামেনিসহ দেশটির শীর্ষ ব্যক্তিদের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষুব্ধ হয় ইরানের তরুণ-সমাজ। আর এতে যুক্তরাষ্ট্র-ইরানের মধ্যকার উত্তেজনা নতুন মোড় নেয়।
কে এই সোলাইমানি
ইরানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সামরিক নেতা সোলাইমানির জন্ম ১৯৫৭ সালে ইরানের পূর্ব অঞ্চলের রাবোর শহরে। সেখানে শিশু বয়সেই তাকে বাবার ঋণের অর্থ পরিশোধের জন্য কাজ করতে হয়েছে। সে-সময় ইরানে ক্ষমতায় ছিল শাহ রাজতন্ত্র। ইরানে ১৯৭৯ সালে আয়াতুল্লাহ খোমেনির নেতৃত্বে শাহ রাজতন্ত্রের পতনের পরপরই কাসেম সোলাইমানি ইসলামি বিপ্লবী গার্ডস বাহিনীতে (আইআরজিসি) যোগ দেন। খোমেনির ঘোষিত ইসলামি প্রজাতন্ত্রে নতুন কোনো অভ্যুত্থান ঠেকাতে সে-সময় বাহিনীটি গঠন করা হয়। মাত্র ২০ বছর বয়সে কাসেম সোলাইমানি সামরিক বাহিনীতে যোগ দিয়ে ইরাক-ইরান যুদ্ধে অংশ নেন। সামরিক দক্ষতা ও দৃঢ়তার কারণে পদোন্নতির এক পর্যায়ে ১৯৯৮ সালে তিনি ইরানের অত্যন্ত ক্ষমতাবান ও রাজনৈতিকভাবে বিশ্বস্ত বিপ্লবী গার্ডের কুদস ব্রিগেডের কমান্ডার হন। দেশের বাইরেও তিনি সাফল্য দেখিয়েছেন। আফগান-ইরান সীমান্তে দায়িত্ব পালনের সময় মাদকপাচার নিয়ন্ত্রণে তিনি বিরাট ভূমিকা পালন করেন। সেখানে তিনি নিজের কৃতিত্বের পরিচয় রাখেন। এ-কারণে তাকে একটি ব্রিগেডের প্রধান করা হয়েছিল। এক পর্যায়ে আইআরজিসি’র প্রধান হন তিনি। আর আড়ালে থেকে ইরানের শক্তি বাড়াচ্ছিলেন পশ্চিম এশিয়ার একটা বড় অংশজুড়ে। ইরাক, আফগান সীমান্ত ছাড়াও সোলাইমানির তৎপরতা ইরানের বাইরে লেবানন ও সিরিয়ায় পরিব্যাপ্ত। ২০০৮ সালে ইরাকি সেনাবাহিনী ও মুক্তাদা আল-সদরের অনুগত মাহদি বাহিনীর মাঝে যুদ্ধের উপক্রম হয়, তখন সোলাইমানি মধ্যস্থতার ভূমিকা পালন করে নিজেদের স্বার্থ সংরক্ষণ করেন।
২০১১ সালে সোলাইমানি মেজর জেনারেল হতে জেনারেল পদে উন্নীত হন। ২০১২ সালে তিনি নিজে সিরিয়ান হিজবুল্লাহ-এর নেতৃত্ব দিয়ে রণাঙ্গনে বাশার-বিরোধী সুন্নি বাহিনীগুলোকে নির্মূল করেন। আল-কাসির এর যুদ্ধে সোলাইমানিকে সরাসরি অংশগ্রহণ করতে দেখা যায়। মধ্যপ্রাচ্যে ইরানি ছায়াযুদ্ধে সাফল্যের প্রধান রূপকার ছিলেন জেনারেল সোলাইমানি। ইরানের আঞ্চলিক ও ভূ-রাজনৈতিক, সামরিক কর্তৃত্ব এসেছে মূলত তারই হাত ধরে। সিরিয়া ও ইরাক যুদ্ধের গতিপ্রকৃতি তিনি বদলে দিয়েছিলেন নিজের অনন্য সমরকৌশলে। জেনারেল সোলাইমানিকে গত বছর মার্চে তাকে ইরানের সর্বোচ্চ সামরিক সম্মান ‘অর্ডার অব জুলফিকার’ তুলে দিয়েছিলেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিই। ১৯৭৯ সালে ইসলামি বিপ্লবের পর সোলাইমানিই একমাত্র ব্যক্তি, যিনি এই সম্মান পেয়েছেন। মঞ্চে তাকে ‘বিপ্লবের জীবন্ত শহিদ’ বলে উল্লেখও করেছিলেন।
সোলাইমানি হত্যার পর ইরান ও যুক্তরাষ্ট্র ছাড়িয়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে মধ্যপ্রাচ্যসহ সারাবিশ্বে। দেশ দুটি একে-অপরকে পাল্টাপাল্টি হুমকিও দিয়েছে। এদিকে সোলাইমানি হত্যার পর থেকেই ইরানে চলছে যুক্তরাষ্ট্র আগ্রাসনবিরোধী বিক্ষোভ। এরই অংশ হিসেবে তেহরানে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের জাতীয় পতাকাতে অগ্নিসংযোগ করে ইরানের বাসিন্দারা। সোলেমানিকে হত্যার চরম প্রতিশোধ নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ইরানের শীর্ষ আধ্যাত্মিক নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। জামকরন মসজিদের মাথার ওপর উড়ানো হলো ইরানের ‘যুদ্ধ নিশান’ ওই লাল পতাকা। ইরানে শোক মিছিলে জনসমুদ্রে পরিণত হয়। আমেরিকা বিরোধী সেøাগান উঠতে থাকে। শিয়াপন্থি বিপুল সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিছিলে যোগ দেন রাজনৈতিক নেতাদেরও একটা বড় অংশ। অন্যদিকে ইরাকে বাগদাদ থেকে শুরু হওয়া মিছিল কারবালা ঘুরে শেষ হয় নজাফ শহরে। সোলাইমানির লাশ জন্মস্থান কেরমানের শহরতলিতে দাফন অনুষ্ঠানে কালো পোশাক পরে মাতন করেছে লাখ লাখ ইরানি।
এই ‘পরিকল্পিত’ খুনের বদলা নিতেই সোলেমানির শেষকৃত্যের অনুষ্ঠান থেকেই তেহরান জানালÑ ‘তোমরা অন্যায়ভাবে সেনাপ্রধানকে মেরেছ, আমরাও তাই আর চুক্তির শর্ত মানতে বাধ্য নই।’ ইরানের ঘোষণায় সেটির মৃত্যু হলো। চোখের জল মুছে বাবার শেষকৃত্যের অনুষ্ঠান থেকে ট্রাম্পকে ‘উন্মাদ’ বললেন সোলাইমানি-কন্যা জেনাবও। তার হুঁশিয়ারি, ‘আমার বাবা শহিদ হওয়া মানেই সব শেষ, এটা ভেবে থাকলে বড় ভুল করবেন।’ কাজেই সব বন্ধু ও শত্রুর জেনে রাখা উচিত জেনারেল সোলাইমানির শাহাদাতের পর দ্বিগুণ উৎসাহে প্রতিরোধ আন্দোলন এগিয়ে যাবে এবং এই আন্দোলনের বিজয় অনিবার্য।
সোলাইমানি হত্যার পর ইরান ও যুক্তরাষ্ট্র ছাড়িয়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে মধ্যপ্রাচ্যসহ সারাবিশ্বে। দেশ দুটি একে-অপরকে পাল্টাপাল্টি হুমকিও দিয়েছে। এর জের ধরে বিশ্বজুড়ে বড় ধরনের বিভেদ ও সংঘাতের আশঙ্কাও করছেন অনেকে।
এদিকে গত ৬ জানুয়ারি ইরাকি সংসদে ভোটের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ইরাক থেকে সব বিদেশি সৈন্য প্রত্যাহার করা হবে। এ সিদ্ধান্তের পরও দেশটিতে নিযুক্ত ৫ হাজার মার্কিন সেনা সরাতে অস্বীকৃতি জানায় যুক্তরাষ্ট্র। তাদের দাবি, মার্কিন সেনাদের উপস্থিতি মধ্যপ্রাচ্যের জন্য ভালো। এর পাল্টা আরও বড়সড় নিষেধাজ্ঞা চাপানোর হুমকি দিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সাফ জানিয়ে দিলেন, ইরাকে ঘাঁটি তৈরির অর্থ ফেরত না-দিলে কোনোভাবেই সেখান থেকে সেনা সরাবেন না তিনি। এ পরিস্থিতিতে পশ্চিম এশিয়ায় আরও ৩ হাজার সেনা পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে আমেরিকা। তাছাড়া, বাগদাদের মার্কিন দূতাবাস এক বিবৃতি জারি করে মার্কিন পর্যটকদের ইরাক ছেড়ে চলে যেতে বলেছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ইরাকে বিমান হামলায় ইরানি জেনারেল সোলাইমানিকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যার নিন্দা এবং মধ্যপ্রাচ্যে পুনরায় সৈন্য পাঠানোর প্রতিবাদে বিক্ষোভে নামেন সাধারণ মানুষ। এ-সময় তাদের হাতে প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল ‘যুদ্ধ নয় শান্তি’, ‘যুদ্ধ নয় উন্নয়ন’, ‘যুদ্ধ নয় বন্ধুত্ব’, ‘নো জাস্টিস নো-পিচ-ইউএস আউট অব মিডল ইস্ট’ সেøাগান দেয়। এই সেøাগানে বিক্ষোভ হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসি, নিউইয়র্ক, শিকাগোসহ ৮০টি শহরে প্রতিবাদ মিছিল হয়েছে।
আমেরিকা-বিরোধী বিক্ষোভ হয়েছে প্রতিবেশী ইরাকসহ পশ্চিম এশিয়ার বিভিন্ন দেশেও। মার্কিন কংগ্রেসও ট্রাম্পের এই আক্রমণকে সমর্থন করেনি। ডেমোক্র্যাট নেতা ক্রিস মারফি টুইট করে বলেন, সোলাইমানি আমেরিকার শত্রু, এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু যেভাবে কংগ্রেসে আলোচনা না করেই ট্রাম্প বাগদাদে ঢুকে তাকে হত্যা করলেন, এটা মার্কিন জনগণের নিরাপত্তা ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দেবে, তাতে সমস্যা আরও জটিল হলো। যুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি হলো। এটা মেনে নেওয়া যায় না।
প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ও ডেমোক্র্যাট নেতা ন্যান্সি পেলোসি বলেছেন, হামলা চালিয়ে সোলেমানিকে হত্যার ঘটনা ভয়াবহ সংঘাতকে উসকে দেবে। এ উত্তেজনা এমন একটি পর্যায়ে পৌঁছতে পারে, যেখান থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও বিশ্বকে ফিরে আসার আর কোনো সুযোগ থাকবে না। ফ্রান্সের ইউরোপবিষয়ক মন্ত্রী অ্যামেলি দি মন্তেচেলিন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় ইরানি জেনারেলের নিহত হওয়ার ঘটনা বিশ্বকে আরও বিপজ্জনক করে তুলবে। রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, কাসেম সোলেমানি হত্যাকা-ে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা বাড়াবে। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জেং শুয়াং বলেছেন, আন্তর্জাতিক সম্পর্কে বল প্রয়োগের সবসময় বিরোধী বেইজিং। আমরা সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে বিশেষত যুক্তরাষ্ট্রকে শান্ত থাকা এবং সংঘাত এড়িয়ে চলার আহ্বান জানাই। জার্মানির চ্যান্সেলর এঙ্গেলা মার্কেলের মুখপাত্র উলরিক ডেমার বলেছেন, উত্তেজনা মারাত্মক অবস্থায় পৌঁছেছে। এখন সব পক্ষের সংযম প্রদর্শন ও সংঘাত এড়িয়ে চলা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনি গুতেরাসো এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
কাসেম সোলাইমানি শুধু ইরানেই জনপ্রিয় ছিলেন না। ইরাকসহ সিরিয়া ও ইয়েমেনের বিভিন্ন বিদ্রোহী গোষ্ঠীর মধ্যেও তার বিপুল জনপ্রিয়তা এবং প্রভাব ছিল। ইরাকের বিদ্রোহী শিয়া গোষ্ঠীগুলোর প্রতি সোলাইমানির সমর্থন ছিল।
সিরিয়া যুদ্ধে সোলাইমানির ভূমিকা নিয়ে সমালোচনা থাকলেও ইরাকের মাটিতে ইরানের একজন গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ব্যক্তিত্বকে হত্যা করা সব ধরনের আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন ও চূড়ান্ত হঠকারিতা হিসেবেই বিবেচিত হবে। মধ্যপ্রাচ্যের ভূ-রাজনীতিতে এ ঘটনার সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়বে। বছরের পর বছর অর্থনৈতিক ও সামরিক অবরোধে কাবু ইরান যে প্রতিরোধ যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছিল, তার অন্যতম নায়ক ছিলেন সোলাইমানি। যুক্তরাষ্ট্রের ‘ফরেন পলেসি’ জার্নাল বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন পেশায় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের তালিকা তৈরি করে। ওই তালিকায় সামরিক খাতে সোলাইমানিকে এক নম্বরে রাখা হয়।
রাজনীতিবিষয়ক মার্কিন বার্তা সংস্থা ‘পলিটিকো’ এ-বিষয়ে এক সংবাদ বিশ্লেষণে লিখেছে, সোলাইমানিকে হত্যার মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের এক নম্বর শত্রুকে নিশ্চিহ্ন করা হলো। তবে এই সিদ্ধান্ত মধ্যপ্রাচ্য মার্কিন স্বার্থের জন্য বুমেরাং হতে পারে এবং ওই এলাকা হয়ে উঠতে পারে রণক্ষেত্র।