ইমদাদুল হক মিলন: ছিপের ডগায় বড়শির সুতা বাঁধছে কাজল। নাইলনের সুতা শক্ত করে গিঁট দিতে গিয়ে দৃশ্যটা দেখল। প্রতিদিনেরই দৃশ্য। ঘরের সামনে রাখা পুরানা বালতির পানিতে কচলে কচলে হাত ধুইছে কদম হালদার। তারপর ধোয়া দুহাত মাথায় বুলাচ্ছে। বেশ কিছুক্ষণ ধরে কাজটা সে এখন করবে।
কাজল বুঝল, বুড়ো এখন বেরোবে। সেও বেরোবে। তবে বুড়োর আগে আজ বেরোতে পারবে না। আজ তিনটা ছিপেই নতুন বড়শি বাঁধতে হবে। দুটো জং ধরে বাঁকা হয়ে গেছে। মাছে থাবা দিলে আধারের সঙ্গে ভেঙে চলে যাবে। আরেকটা ফলিমাছে কেটে নিয়ে গেছে। ফলিটা বড় ছিল। আহা, ওরকম একটা ফলি ধরতে পারলে বুড়ো-বুড়ি দুজনেই খুশি হতো!
কদম হালদারের পরনে ঢোলা সবুজ রঙের টিশার্ট। আজকাল গ্রামের হাট-বাজারে দশ-বারো টাকায় এ-রকম টিশার্ট কেনা যায়। গার্মেন্টের বাতিল মাল। তবে বুড়োর জিনিসটা অতি পুরনো। লুঙ্গি-গামছাও পুরনো।
পুরনো কথাটা ভেবে হাসল কাজল। ভেজা হাত মাথায় বুলাতে বুলাতে তার হাসিটা দেখে ফেলল কদম। কী রে ছেমড়া, হাসচ ক্যা?
তোমারে দেইখা।
আমারে আইজ নতুন দেখলিনি?
না, রোজই দেখি। তয় আইজ হাসলাম একখান কথা ভাইবা।
কী কথা?
তুমি নিজে যেমুন পুরানা, তোমার কাপড়-চোপড়ও পুরানা। একখান নতুন লুঙ্গি কিনো নানা। একখান টিছাট কিনো, একখান গামছা কিনো। এক জিনিসে কতদিন চালাইবা?
এ সময় জুলেখার মা বেরোলো ঘর থেকে। বয়সের ভারে কুঁজো হয়েছে। কাজলের কথাগুলো সে শুনলো। তাচ্ছিল্যের গলায় বলল, বাড়ির একখান মাত্র পুরানা ঘর মেরামত করতে পারে না আইজ সাত-আষ্ট বছর ধইরা, সে কিনবো নতুন কাপড়-চোপড়? বুইড়ার মুরোদ আছেনি? টেকা কামাইতে মুরোদ লাগে। শাওন মাস শুরু হইয়া গেছে। ভাঙা চাল দিয়া পানি পইড়া ঘর ভাসে। তারে তুই কইতাছস লুঙ্গি-গামছা কিনতে! আর আমি কি পিন্দা থাকি হেইডা দেহচ না!
কাজল সুতার ডগায় নতুন বড়শি গিঁট দিয়ে বাঁধলো। চিন্তা কইরো না নানি। আমার এই তিন বড়শি দিয়া এইবার ম্যালা মাছ ধরুম। মাছ আর বাড়িত আনুম না। বাজারে নিয়া বেচুম। হেই টেকা দিয়া তোমার ঘর মেরামত কইরা দিমু। শাড়িও কিনা দিমুনে। তোমার ওই বুইড়া হালদাররে দিয়া কাম হইব না।
কদম জুলেখার মার দিকে তাকাল। নাতি বড় হইছে। বারো বচ্ছর বয়েস। এখন থিকা নাতিই সংসার দেখবো। আমার আশা ছাইড়া দেও জুলেখার মা। তুমি তো জানোই, ঘর মেরামতের লেইগা টেকা আমি জমাই। আবার পেটের দায়ে সেই টেকা ভাইঙ্গা খাই। কী করুম কও? তয় চেষ্টা আমি করি। এই বয়সেও নৌকা বাইয়া সংসার চালাই।
এইডারে সংসার চালান কয় না। একদিন খাই, দুইদিন খাই না। খিদায় আমার নাতিডা কষ্ট পায়।
কদম দীর্ঘশ্বাস ফেলল। আর কথা বলল না। ঘর থেকে বৈঠা এনে কাঁধে নিল। লুঙ্গির কোচড়ে নিল চাবি। বাড়ি থেকে বেরোল।
শ্রাবণ মাসের সকালটা আজ দুরকম চেহারা ধরেছে। এই ঝকঝক করছে রোদে, এই রোদ ডুবে গিয়ে ঘন মেঘের ছায়া পড়ল। ভোরের আলো ফোটার সময় এক পশলা বৃষ্টি হয়ে গেছে। যখন-তখন আবার নামবে।
কদম একবার আকাশের দিকে তাকালো। বড় বড় পা ফেলে নদীতীরে এলো। বর্ষাকাল বলে নদীটা নদী মনে হয়। দুকূল ভাসিয়ে বয়ে যাচ্ছে। শ্রোতও আছে বেশ। গ্রীষ্মকালে এই নদী মরা খাল।
নদীতীরে গাছপালা আছে বেশ। একটা বয়সি হিজলগাছের সঙ্গে নৌকা তালা মারা। জং ধরা শিকল তেমন মোটা না। রোজ সকালে নৌকার কাছে আসার সময় বুকটা একটু কাঁপে কদমের। কবে দেখবে নৌকা নেই। তালা ভেঙে নৌকা নিয়ে গেছে চোরে। একমাত্র সম্বল। এই নৌকা চুরি হলে আর কিছু থাকল না কদমের। না খেয়ে মরণ!
তবে এত পুরানা, ভাঙাচোরা ছইঅলা নৌকা চোরে বোধহয় নেবে না। কয়টাকা বেচতে পারবে? কী লাভ হবে নিয়ে? আর আজকাল এই ধরনের নৌকার কদরও নেই। আগের দিনে বউঝিরা নাঐর যেত ছইঅলা নৌকা নিয়ে। গ্রীষ্মবর্ষা দুই সিজনেই যেত। আজকাল আর যায় না। রাস্তাঘাট ভালো হয়েছে। রিকশা টেম্পো সিএনজির অভাব নেই। বাস ট্যাক্সি আছে, মাইক্রোবাস ভাড়া পাওয়া যায়। কে যাবে ঢিমাতালের নৌকা নিয়ে?
তারপরও এই নৌকার আয়েই বেঁচে আছে কদম হালদার। হাতে অঢেল সময় আছে এমন গরিব মানুষরা বড়সড় বোচকা-বুচকি সঙ্গে থাকলে নৌকা ভাড়া নেয়। তারা যায় ঘুমাতে ঘুমাতে। আর নদীর পানিতে ছপছপ বৈঠা ফেলে কদম। কোনো কোনোদিন একজন যাত্রীও জোটে না। তখন করতে হয় খেয়ামাঝির কাজ। নদী এপার-ওপার করে দশ-বিশ টাকা রোজগার হয়। ওই টাকায় তিন মানুষের সংসার চলে! তার ওপর ঝগড়াঝাটি লাগে খেয়ামাঝিদের সঙ্গে। ওদের রোজগারে ভাগ বসাচ্ছে ছইঅলা নৌকা!
কাজলটা যে কবে বড় হবে! কবে যে রুজি রোজগার শুরু করবে! অতদিন বাঁচবে কি না বুড়োবুড়ি, আল্লাহ মালুম! তবে কাজলটা হয়েছে শক্তপোক্ত। স্বর্ণগ্রাম হাইস্কুলে ক্লাস সিক্সে পড়ে। পড়ালেখায় মন নেই। মন শুধু মাছ ধরায়। বড় হয়ে মাছের কারবারিই হয় কি না কে জানে। সারাদিনই তো বড়শি নিয়ে নদীতে খালে যাচ্ছে, পুকুর ডোবায় যাচ্ছে। রান্নার মাছটা জোগাড় করে ফেলে।
নৌকার তালা খুলতে খুলতে আজ জুলেখার মার কথা খুব মনে পড়ল কদম হালদারের। একটা মাত্র ঘর বাড়িতে। সেই ঘরও এতগুলো বছরে ঠিক করতে পারল না। পারল না তার স্বভাবের জন্য। এত নীতিবান মানুষ হলে আজকালকার দিনে চলে! চাইলে এই হাত দিয়ে ম্যালা টাকাই রোজগার করা যায়। সেই কাজে বুড়ো কদমের সুবিধাও অনেক। কেউ সন্দেহই করবে না। নীতিবান মানুষ হিসেবে তার একটা নামডাক আছে। এই নামডাকের জোরে টাকায় কোচড় ভরে ফেলতে পারে কদম হালদার।
সেই কাজটা কী?
কাজটা হলো মাদকের ব্যবসা যারা করে তাদের সঙ্গে ভিড়ে যাওয়া। নৌকা করে মাদকের পোটলা পৌঁছে দেবে এখান থেকে ওখানে। ওখান থেকে সেখানে। পৌঁছে দেওয়া মাত্র টাকা। নগদ, কাড়িকাড়ি টাকা। মাঝিমাল্লারা অনেকেই আজকাল সেই কাজটা করছে।
এই হাত দিয়ে কদম হালদার সেই কাজ করবে? যে হাত দিয়ে… না, মরে গেলেও কদম সে-কাজ করবে না।
নদীর পানিতে হাত ধুয়ে আবার দুহাত মাথায় খানিক বুলালো কদম। তারপর নৌকা ছাড়ল। নূরপুর বাজারের দিকে যাবে। কপাল ভালো থাকলে ক্ষেপ একটা পেয়ে যেতে পারে।
ওদিকে আকাশে চলছে মেঘ রৌদ্রের খেলা।
বিকেল পর্যন্ত বাজারঘাটে বসে রইল কদম, ক্ষেপ পেল না। কোচড়ে একটা পয়সাও নেই যে এককাপ চা খাবে। পয়সা থাকলে দিনে এক-দুকাপ চা সে খায়। দুপুরে ভাত খায় না। সকালবেলা ভাত খেয়ে বেরোয়, সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে আবার ভাত। ঘরে চাল না থাকলে উপোশ। কাজলের বাড়ন্ত শরীর। নাতিটা ক্ষুধার কষ্টে ছটফট করতে করতে ঘুমিয়ে যায়। কদম হালদারের তখন দীর্ঘশ্বাস ফেলা ছাড়া করার কিছু থাকে না। জুলেখার মা বিড়বিড় করে নিজের কপালের দোষ দেয়। এমুন মাইনষের সংসারে আল্লায় আমারে পাঠাইছিল! বুড়াকালে না খাইয়া থাকতে হয়। জুলেখা বাইচা থাকলে কাজল ছেমড়াডার এই হাল হইত না। আহা রে, কোন পাষাণ বাপের ঘরে জš§াইলো নাতিডা। হারামির বাচ্চায় পোলাডার খবরও লয় না…
বিকালের দিকে ছোট একটা লঞ্চ আসে নারায়ণগঞ্জ থেকে। খেটে খাওয়া গরিব যাত্রী কিছু থাকে। ছোট কিছু ব্যবসায়ীও থাকে। বোচকা-বুচকি নিয়ে আসে। নারায়ণগঞ্জ থেকে মাল এনে এদিককার হাট-বাজারে কারবার করে। তেমন যাত্রী কখনো কখনো পাওয়া যায়। বাস টেম্পো চলে না, রিকশা সিএনজি চলে না এমন দূর গ্রামের যাত্রীও পাওয়া যায়। তারা কয়েকজন একত্র হয়ে ছইঅলা নৌকা ভাড়া নেয়। এক গ্রামেরই লোক হবে এমন না, যাওয়ার রাস্তায় পড়ে এমন লোকও থাকে। নদীর ধারে নৌকা থামিয়ে তাদের নামিয়ে দিতে হয়। দূরত্ব বুঝে ভাড়া। যদি তেমন যাত্রীও পাওয়া যায় তাহলে দিনটা আর মাটি হয় না কদমের।
কদম হালদার লঞ্চের আশায় বসে রইল। রোদ ডুবে গিয়ে আকাশ তখন অন্ধকার। হু হু করা হাওয়া বইছে। নদী উথাল-পাথাল করছে হাওয়ায়।
এই অবস্থায় লঞ্চটা এলো। ভাগ্যক্রমে একজন যাত্রীও পেল কদম। লুঙ্গি পাঞ্জাবি পরা পেট মোটা এক কারবারি। পেটের নিচের দিকে পাঞ্জাবি ভালোরকম টাইট হয়ে আছে। মুখে দাড়ি, মাথায় গোল সাদা টুপি। সঙ্গে রেকসিনের বড় সাইজের চারটা ব্যাগ। তবে কারবারি মানুষটা যাবে একেবারে উল্টো দিককার গ্রামে। খেঁজুরতলা। আকাশের যা অবস্থা, বৃষ্টি নিঝুম হয়ে নামবে এখনই। এই যাত্রী খেঁজুরতলায় পৌঁছে দিয়ে বাড়ি ফিরতে অনেকটা রাত হবে কদমের।
কী আর করা! যাত্রী না পেলে তো কালকের দিনটা না খেয়ে কাটাতে হবে! খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারে নিজের আর জুলেখার মার কথা কদমের মনে থাকে না। মনে থাকে কাজলের কথা। ক্ষুধার কষ্টে মুখটা শুকিয়ে থাকে। আহা, এই বয়সী ছেলে!
যাত্রী নিয়ে রওনা দিল কদম। লঞ্চ থেকে প্রথমে ব্যাগগুলো নামালো। তারপর লোকটা যখন নেমে আরাম করে বসল ছইয়ের তলায়, তখন নদীর পানিতে হাত দুটো ধুয়ে বৈঠা নিল। কারবারি লোকটা ব্যাপারটা খেয়াল করল। বৈঠা ধরার আগে হাত ধোয়ার কী আছে! একটু রসিক ধরনের লোক। বলল, ও মাঝি, নায়ের বৈঠা মনে হয় তোমার বউ! পয়পরিষ্কার হাতে তারে ধরলা!
কদম কথা বলল না। মৃদু হেসে নৌকা ছাড়ল। সেও নৌকা ছেড়েছে, বৃষ্টিটাও নামলো তখন। চারদিক অন্ধকার করে নামলো। খেঁজুরতলায় যেতে এখন অবশ্য কষ্ট হবে কম। যেতে হবে স্রোতের পক্ষে। জানটা বেরোবে ফেরার সময়। তখন উজান ঠেলতে হবে। এই বয়সেও কদম শক্তপোক্ত মানুষ। অসুবিধা তেমন হবে না।
কারবারি লোকটা বলল, আমি ঘুম দিলাম মাঝি। নাও ঘাটে ভিড়ানের আগে ডাক দিও।
বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে কদম বলল, আইচ্ছা, দিমু নে। আপনে আরামছে ঘুমান।
খেঁজুরতলা পৌঁছাতে সন্ধ্যা পার। কারবারি লোকটা পুরোটা সময় নাক ডাকিয়ে ঘুমালো। এক ফাঁকে নৌকার পুরানা হারিকেন জ্বেলে দিয়েছিল কদম। ভাড়া ঠিক হয়েছিল আশি টাকা। ঘাটে নেমে লোকটা বলল, আরও বিশ টাকা দিমু নে মাঝি। দুইটা ব্যাগ তুমি লও, দুইটা আমি লই। কিলোমিটার খানেক দূরে বাড়ি। আমারে বাড়িতে দিয়া আসো।
কদম বিনীত গলায় বলল, সেইটা আমি পারুম না ভাই। উজান ঠেইলা বহুত দূর যাওন লাগবো। আপনে জুয়ান আছেন। দুখান ব্যাগ দুই কান্ধে লন, আর দুইখান লন হাতে।
লোকটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, সেইটাই করন লাগবো। দেও, বড় ব্যাগ দুইখান কান্ধে ঝুলাইয়া দেও।
লোকটা চলে যাওয়ার পর দেরি করল না কদম। উজানে বৈঠা চালাতে লাগল। অন্ধকার আর বৃষ্টিতে কিছুই দেখা যাচ্ছে না। তবে দীর্ঘদিন নৌকা বেয়ে অভ্যস্ত। হারিকেনের টিমটিমে আলোয় নৌকা ঠিক পথেই চলল।
ঘটনা ঘটল বাড়ির কাছে এসে। হিজলগাছে নৌকা তালা দিতে গিয়ে হারিকেনের মøান আলোয় কদম দেখে ছোট কালো একটা ব্যাগ পড়ে আছে কারবারি লোকটা যেখানে শুয়েছিল সেখানে। কোমরে বেল্ট দিয়ে বাঁধার ব্যাগ। বেশ ফোলা। আগে গ্রামের কারবারিরা কোমরে যে টাকার ‘তফিল’ বাঁধতো, ব্যাগটা আসলে সেই ‘তফিল’। আজকালকার কারবারিরা এ-ধরনের ব্যাগ ব্যবহার করে।
ওই ব্যাগ দেখে বুকটা ধরাস করে উঠল কদমের। হায় হায়, লোকটা টাকার ব্যাগ ফালাইয়া গেল না-কি! প্রায় ছুটে গিয়ে ব্যাগটা ধরল কদম। বাইরে থেকে হাতিয়ে বোঝার চেষ্টা করল ভিতরে টাকা না অন্য কিছু।
টাকাই মনে হচ্ছে।
ব্যাগের চেন খুলল কদম। ছইয়ের সঙ্গে ঝুলছে হারিকেন। টিমটিমে একটুখানি আলো আছে। সেই আলোয় ব্যাগে তিনটা বান্ডিল দেখতে পেল টাকার। নৌকার বাইরে ঘোরতর অন্ধকার। তারপরও সাবধানি চোখে এদিক-ওদিক তাকিয়ে বান্ডিল তিনটা বের করল সে। দুটো এক হাজার টাকার বান্ডিল আর একটা পাঁচশো টাকার। হিসাব কদম কম-বেশি বোঝে। বুঝল মোট আড়াই লাখ টাকা। আর টাকাগুলো একেবারে নতুন। চকচকা। নতুন টাকার গন্ধও অন্যরকম। সেই গন্ধও সে পেল।
কদম দিশাহারা। কী হবে এখন? এই টাকার সে কী করবে? লোকটার নাম জানে না। খেঁজুরতলা থেকে কিলোমিটারখানেক দূরে বাড়ি বলেছিল। গ্রামের নাম বলেনি। সেই লোককে কদম কেমন করে খুঁজে বের করবে! এতটা রাত হয়েছে। এখন নতুন করে খেঁজুরতলায় গিয়ে সেই লোককে খুঁজে বের করা কি সম্ভব! যেতে-আসতেই তো রাত কাবার হয়ে যাবে! তার ওপর সঙ্গে এতগুলো টাকা!
কদম ধপ করে নৌকার পাটাতনে বসে পড়ল। না, করণীয় কী সেটা ঠা-া মাথায় চিন্তা করতে হবে। গরম মাথায় চিন্তা করলে কাজ হবে না। নদীর পানিতে দু-হাত কিছুক্ষণ ভিজালো কদম। সেই হাত মাথায় বুলাতে বুলাতে ঠিক করে ফেলল কী করবে সে।
চটের একটা থলি থাকে নৌকায়। অনেক সময় এই থলিতে করে বাজার থেকে চাউল ডাল কিনে নেয়। টাকার ব্যাগটা সেই থলিতে রাখল কদম। বাইরে ঘোরতর অন্ধকার আর ঝিরঝিরি বৃষ্টি এখন। রাতও হয়েছে বেশ। দশটার কম না। আজ আর হারিকেনটা নৌকায় রাখল না কদম। হারিকেন হাতে বাড়ির পথ ধরল।
কাজল খেয়েদেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। জুলেখার মা জেগে ছিল। ঘরে ঢোকার আগে ব্যাগটা ঢোলা টিশার্টের তলায় লুকিয়ে ফেলেছিল কদম। বুড়ির চোখের জ্যোতি কমেছে। সে কিছু বুঝতেই পারল না। এত রাত কেন হলো ওই নিয়ে একটু ঘ্যানঘ্যান করল। টাকার ব্যাগের কথা ছাড়া সবই বলল কদম। আর কথার ফাঁকে নিজের ভেজা জামাকাপড়ের সঙ্গে চটের থলিটাও দলাই-মলাই করে রেখে দিল ঘরের কোণে। সকালবেলা তার ঘুমই ভাঙে সবার আগে। তখন উঠে কোনোরকমে চারটা পান্তা মুখে দিয়ে বাড়ি থেকে বেরোবে। কাজল ঘুম থেকে ওঠার আগেই কাজটা সারতে হবে। ছেমড়া বড় ট্যাটন। ব্যাগ দেখে ফেললে বিরাট সমস্যা।
স্বামীর ভাত বেড়ে দিয়ে সামনে বসে আছে জুলেখার মা। বৃষ্টি ভালোরকম শুরু হয়েছে। পুরানা টিনের চালে ঝমঝম শব্দ। এদিক-ওদিক দিয়ে পানি পড়ছে ঘরে। ওই নিয়ে বকর বকর করেই যাচ্ছে বুড়ি। কদম একটা কথাও বলল না। ঘুমাবার আগে ক্ষেপের আশি টাকা বুড়ির হাতে দিয়ে বলল, কাজলরে দিয়া বাজার করাইয়ো। আমি ভোরবেলা বাইর হইয়া যামু। কাম আছে।
ভোরবেলা, নদীর পানির মতন আলো মাত্র ফুটেছে, তখনই বেরোলো কদম। পান্তা খেয়ে নিয়েছে। বালতির পানিতে হাত ধুয়ে মাথায় সেই হাত বুলিয়েই বেরিয়েছে। সব ভুলে গেলেও এই কাজ কখনো ভোলে না সে।
খেঁজুরতলায় এসে কদম পৌঁছাল আটটা সাড়ে আটটার দিকে। রোদ ওঠেনি। আকাশ ছেঁয়ে আছে ঘন মেঘে। সকাল থেকে দুবার বৃষ্টি হয়ে গেছে। পলিথিনে শরীর মাথা ঢেকে নৌকা বেয়েছে কদম। ফলে জামাকাপড় শুকনা। চটের থলিটা এমনভাবে নৌকার পাটাতনে ফেলে রেখেছে, দেখে ভুলেও কেউ ভাববে না কী আছে ওই থলিতে। কিন্তু কারবারি লোকটাকে এখন কীভাবে খুঁজে বের করবে কদম! না লোকটার নাম জানে, না তার গ্রামের নাম জানে!
খেঁজুরতলার ঘাটে তিন-চারটা দোকানঘর। কোনোটা মুদি দোকান, কোনোটা চা-নাশতার। কাল রাতে একটাও খোলা ছিল না। খোলা থাকলে দোকানিরা কেউ না কেউ লোকটার হদিস দিতে পারতো। যে-রকম অন্ধকার আর বৃষ্টি ছিল, ওই অবস্থায় দোকান খোলা রেখেই বা তারা কী করবে! গাহক পাবে কোথায়?
ঘাটের একেবারে লাগোয়া মুদি দোকানিকে কদম বলল, মিয়া ভাই, নাওখান একটু দেইখা রাইখেন। আমার ফিরতে দেরি হইব।
কদমের বিনয়ীভাবে দোকানি আপ্লুত। বলল, চিন্তা কইরেন না ভাই। আপনের নাও কেউ ছুঁইতেও পারব না। আমি আছি।
চটের থলি হাতে নিশ্চিন্তে হাঁটা দিল কদম। নদীরপার থেকে একটাই মাটির রাস্তা। দুদিকের ধানক্ষেত বর্ষার পানিতে কোমর ডুবিয়েছে। রাস্তা সোজা গিয়ে ঢুকেছে গ্রামের দিকে। এই একটা সুবিধা হলো। গ্রামে ঢুকে লোকটার চেহারা সুরতের বর্ণনা দিলে কেউ না কেউ হদিস দিতে পারবেই। গ্রাম এলাকার লোক পাশাপাশি গ্রামেরও অনেকের খবর রাখে।
সেই ভাবেই কারবারি লোকটার বাড়ি খুঁজে পেল কদম। তার নাম মালেক ব্যাপারি। সাতঘরিয়া বাজারে জামাকাপড়ের দোকান। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ থেকে মাল কিনে এনে বাজারের দোকানে বসে বিক্রি করে। আবার গ্রাম থেকে অনেক সময় নৌকা বোঝাই করে চাউল নিয়ে বিক্রি করে আসে শহরে। গ্রামে গ্রামে ঘুরে ধান কেনে। সেই ধান ভাঙিয়ে চাউল করে নিয়ে যায় ঢাকা-নারায়ণগঞ্জে। টাকা আছে ম্যালা। তবে লোকটা খুবই কৃপণ।
আজ সকালে বারান্দার চেয়ারে হতাশমুখে বসে আছে মালেক ব্যাপারি। তার মন খুবই খারাপ। এতগুলো টাকা চলে গেছে। রাতেরবেলাই বাড়ির লোক জেনেছে। টাকার শোক ছোট শোক না। বাড়িতে শোকের ছায়া। ব্যাপারির শুধু ভাবনা ব্যাগটা কোথায় পড়ল? লঞ্চে না নৌকায়? লঞ্চে পড়লে নামার সময় টের পেত। নৌকায়ই পড়েছে! না-কি লঞ্চ থেকে নামার সময় বেল্ট খুলে গিয়েছিল ব্যাগের। নিঃশব্দে কোথাও খসে পড়েছে। এত বছরের ব্যবসায়ী জীবন। কখনো তো এমন ঘটেনি! ঘুমের তালে যদি নৌকায় পড়ে গিয়ে থাকে, নিশ্চয় মাঝি পেয়েছে। কোথাকার মাঝি, কোন গ্রামের লোক, নাম কী কিছুই তো জানে না ব্যাপারি। কোথায় খুঁজবে সেই লোককে! আর খুঁজে পেলেই কি সে স্বীকার করবে? এতগুলো টাকার লোভ ওই পদের একজন মাঝি সামলাতে পারবে?
এই ভাবনার পরপরই বারবাড়ির দিকে প্রথমে গলা খাঁকারির শব্দ, তারপর ডাক। ব্যাপারি সাব বাড়িত আছেন নি?
ব্যাপারি বারবাড়ির দিকে তাকাল। তারপর ভূত দেখার মতো চমকালো। আরে, এই তো সেই মাঝি লোকটা!
নিজের অজান্তে উঠে দাঁড়াল ব্যাপারি।
লোকমুখে শুনে কদম ঠিক নিশ্চিত হতে পারেনি এই কি তার আসল লোক কি না! এখন ব্যাপারিকে দেখে মুখটা উজ্জ্বল হলো তার। আল্লাহ রহম করছে। পাইছি আপনেরে।
কদম বারান্দার সামনে এসে দাঁড়াল। চটের থলেয় হাত ঢুকিয়ে ব্যাগটা বের করে ব্যাপারির দিকে বাড়িয়ে দিল। এই ধরেন আপনের আমানত। আমার নাওয়ে ফালাইয়া আইছিলেন। ভিতরে আড়াই লাখ টেকা আছে। গইনা দেখেন ঠিক আছে কি না।
ব্যাপারির তখন বেঁহুশ হয়ে যাওয়ার দশা। ব্যাগ ধরে ফ্যালফ্যাল করে কদমের দিকে খানিক তাকিয়ে রইল, তারপর দিল চিৎকার। আরে শুনছোনি তোমরা, টেকার ব্যাগ পাওয়া গেছে! এই যে ব্যাগ লইয়া আইছে মাঝি…
মুহূর্তে সারাবাড়ির মানুষ দৌড়ে এলো। কদমকে ঘিরে ভিড় লেগে গেল। ব্যাপারি তখন ব্যাগ থেকে টাকার বান্ডিল বের করে সবাইকে দেখাচ্ছে। এই যে দেখো টেকা! একটা টেকাও কম না। পুরা আড়াই লাখ।
তারপর বারান্দা থেকে নেমে কদমকে জড়িয়ে ধরল। ভাই, ভাই গো, তুমি তো মানুষ না ভাই! তুমি তো ফেরেশতা! এতগুলি টেকা হাতে পাইয়া…
ব্যাপারি কেঁদে ফেলল।
এই ধরনের বাড়ির ঘরবারান্দা উঠোন থেকে উঁচু। কদম বারান্দার মাটিতে বসল। আমারে এক গেলাস পানি খাওয়ান গো মা সকলরা। ব্যাপারি সাবরে পামু কি পামু না এই চিন্তায় গলা শুকাইয়া গেছে!
একটি কিশোরী মেয়ে দৌড়ে গিয়ে পানি নিয়ে এলো। ধীরে ধীরে পানিটা খেল কদম। আরামের একটা শ্বাস ফেলল।
ব্যাপারি চোখ মুছতে মুছতে ছেলের বউকে বলল, বউ, এই মানুষরে আমি আইজ ছাড়–ম না। মোরগ জবাই করো। পোলাও রান্দো। তারে খাওয়াও। তারবাদে অন্যকথা।
কদম বিনীত গলায় বলল, না ব্যাপারি সাব। আমি কিছুই খামু না। পানি খাইছি এক গেলাস, আর আপনের আমানত আপনেরে বুঝাইয়া দিতে পারছি তাতেই আমার কলিজা ঠা-া। আমি আর দেরি করুম না। বহুত দূর যাওন লাগবো।
না না, এইটা হইব না ভাই। তোমার লগে আমার কথা আছে। খাও না খাও, বসো। আমার কথা শোনো। এককাপ চা খাও। আমিও খাই। খাইতে খাইতে কথা কই।
হ, চা এককাপ খাইতে পারি। লগে একটু মুড়ি দিতে বইলেন।
ব্যাপারির বলতে হলো না। প্রথমে রেকাবিতে করে মুড়ি এলো। তারপর এলো চা।
চায়ে চুমুক দিতে দিতে কদমের সংসারের সব খবর নিল ব্যাপারি। টাকার বান্ডিল তিনটা তখনও তার কোলে। বাড়ির লোকজনও আছে সামনে। পঞ্চাশ হাজার টাকার বান্ডিলটা কদমের দিকে বাড়িয়ে দিল সে। ভাই, এইটা তুমি নেও। আমার তো গেছিল পুরাটাই। পাওয়া যখন গেছে, কিছু তুমি নেও। এই টেকা দিয়া ঘর ঠিক করো, নৌকা ঠিক করো। একটু আরামে জীবনটা কাটাও। আর আমার বাড়ির দরজা তোমার লেইগা খোলা। যখন যা দরকার হইব আমারে জানাইবা। আমি তোমার লেইগা আছি ভাই। তুমি মানুষ না, তুমি ফেরেশতা।
একমুঠ মুড়ির সঙ্গে এক চুমুক করে চা খাচ্ছিল কদম। সেই অবস্থায় খুবই বিনীত গলায় বলল, না ব্যাপারি সাব। এইটা আমারে মাফ করেন। এইটা আমি নিমু না। আমি আমার দায়িত্ব পালন করছি। তার বিনিময়ে আমি কিছু চাই না। আমি যে আপনের আমানত আপনের হাতে তুইলা দিতে পারছি এইটাই আমার বিরাট পাওয়া।
কদমের কথা শুনে ব্যাপারি বাকরুদ্ধ। তবে বাড়ির লোকজন নিজেদের মধ্যে মুখ চাওয়া-চাওয়ি করছে আর টুকটাক কথা বলছে। আরে কয় কি মানুষটা! এমুন মানুষও দুনিয়ায় আছেনি!
ব্যাপারি গিন্নি বলল, ও ভাই, এমুন আপনে কেমনে হইলেন? এমুন মানুষ তো জিন্দেগিতে দেখিও নাই, এমুন মানুষের কথাও কোনোদিন শুনিও নাই। কে আপনেরে এমুন বানাইলো? যার কোনো লোভ নাই!
কদম বলল, শোনেন মা সকলরা, ব্যাপারি সাব আপনেও শোনেন। আমরা গরিব মানুষ। হালদার। হালদার গো কাম হইল জমিতে হাল দেওয়া। আবার কেউ কেউ কয়, নৌকার হাল যে ধরে সেও হালদারল। আমি অহন নৌকার হালদার। মাঝি। বাপ-দাদারা একসময় গিরস্তি করছে। নদীতে ভাইঙ্গা নিছে বেবাক। খালি সাত শতাংশ বাড়িটা এখন আছে। বাবায় আমারে কামে দিছিল ঢাকার টাউনে। স্বাধীনতার পরের ঘটনা। আমার তখন বারো-তেরো বচ্ছর বয়স। পুরান ঢাকার গে-ারিয়া এলাকার এক বাড়িতে কাম করতাম। পেটেভাতে। বেতন দিত না। সেই বাড়ির বড় ছেলে বিরাট নামকরা মুক্তিযোদ্ধা আছিল। ছাত্রনেতা আছিল। তার বিয়াতে বঙ্গবন্ধু আসছিলেন। বঙ্গবন্ধু! বুঝতে পারলেন ব্যাপারটা? বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। জাতির পিতা। তার সেই সাদা পায়জামা পাঞ্জাবি পরা, মুজিব কোট পরা, হাতে পাইপ। চাইরপাশে কত নামি-দামি নেতা। বিয়া উপলক্ষে আমারে নতুন শার্ট-প্যান্ট কিনা দিছে বাড়ির লোকে। অনুষ্ঠানে টুকটাক কাম করতাছি। বঙ্গবন্ধুরে দেইখা মাথাটা ঘুইরা গেল। চোখের সামনে দেখতাছি বঙ্গবন্ধুরে। যার কথায় মুক্তিযুদ্ধ হইল, দেশ স্বাধীন হইল, আমরা পাইলাম সোনার বাংলা, সেই মানুষরে দেখতাছি চোখের সামনে! ছবিতে দেখছি, রেডিওতে তার ভাষণ শুনছি! তারে দেখতাছি চোখের সামনে! বুজলেন মা সকলরা, বুজলেন ব্যাপারি সাব! কাম কাইজের কথা ভুইলা গেলাম। পোলাপান মানুষ তো! ভিড় ঠেইলা বঙ্গবন্ধুর সামনে গিয়া খাড়াইলাম। তার পায়ে দুই হাত দিয়া সালাম করলাম। সেই হাত নিজের মাথায় ছোঁয়াইলাম। বঙ্গবন্ধু একবার আমার মুখের দিকে তাকাইলেন। মুখে কী সুন্দর হাসি! বললেন, ভালো থাকিস রে। ভালো থাকিস।
চায়ের কাপ আর মুড়ির রেকাবি নামিয়ে রাখল কদম। তারপর থিকা আমি ভালো আছি। আমার কোনো লোভ নাই, চাওয়া-পাওয়া নাই। সংসারে কষ্ট। খাওন জোটে না কোনো কোনোদিন। ঘর ভাইঙ্গা পড়ছে। মাইয়া মইরা যাওনের পর থিকা নাতিডা আমার সংসারে। তারপরও আমি ভালো আছি। ক্যান ভালো আছি জানেন? বঙ্গবন্ধুর জন্য! ওই যে তিনি বলছিলেন, ভালো থাকিস রে, ভালো থাকিস।
বাড়ির লোক স্তব্ধ হয়ে কদমের কথা শুনছে। কদম বলল, আর যেই হাত দিয়া আমি বঙ্গবন্ধুর পা ছুঁইছিলাম, তার ছোঁয়া লাইগা আছে হাতে, এই হাত দিয়া আমি খারাপ কাজ করি কেমনে, বলেন?
ব্যাপারির দিকে তাকিয়ে অমায়িক ভঙ্গিতে কদম বলল, বৈঠা ধরনের আগে হাত ধুইতে দেইখা আপনে একটু মশকরা করছিলেন ব্যাপারি সাব। কিন্তু আমি হাত দুইটা ক্যান ধুই শোনেন সেইটা। হাত ধুইয়া সেই হাত মাথায় বুলাই ক্যান, শোনেন সেই কথা। হাত ধুইলেই মনে হয়, বঙ্গবন্ধুর পা ছোঁয়া হাত আমার নতুন কইরা শুদ্ধ হইল। এই হাত দিয়া আমি কোনো খারাপ কাজ করতে পারব না। হাত মাথায় বুলাইলে মনে হয়, খারাপ কাজ করার কোনো চিন্তা আমার মাথায় আসবো না। আমি হইলাম এমুন মানুষ। বঙ্গবন্ধুর পা ছোঁয়া মানুষ। তিনি বলছেন ভালো থাকতে, আমি ভালো আছি।
কদম উঠল। যাই ব্যাপারি সাব। যাইগো মা সকল।
ধীরপায়ে হেঁটে লম্বা উঠান পার হলো কদম। রাস্তায় গিয়ে পড়ল। আকাশ এতকক্ষণ অন্ধকার হয়েছিল শ্রাবণের মেঘে। এইমাত্র সেই মেঘ সরে গিয়ে দুর্দান্ত একটা রোদ উঠল। সেই রোদে ব্যাপারি বাড়ির মানুষজন দেখতে পেল নিখাত সোনার মতো ঝকঝকে একজন মানুষ আপন মনে হেঁটে যাচ্ছে।
লেখক : সাহিত্যিক ও সাংবাদিক