Sunday, September 24, 2023
বাড়িSliderসোনার বাংলা গড়ব

সোনার বাংলা গড়ব

উত্তরণ প্রতিবেদন: স্বাধীন বাংলায় বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উৎসব উপলক্ষে একসঙ্গে গর্জে উঠল কোটি মানুষের কণ্ঠের দৃপ্ত শপথ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নত-সমৃদ্ধ-অসাম্প্রদায়িক চেতনার ‘সোনার বাংলা’ গড়তে দৃঢ় প্রত্যয়ে শপথ নিল পুরো দেশবাসী।
গত ১৬ ডিসেম্বর বিকাল সাড়ে ৪টায় জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় জুড়ে গিয়েছিল দেশের প্রতিটা অঞ্চল। বর্তমান সরকারের অন্যতম সাফল্য ডিজিটাল বাংলাদেশের কল্যাণে এক মঞ্চ থেকে দেশ গড়ার শপথ পাঠে অংশ নিল সব জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন পর্যায়ের মানুষ। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে গলা মিলিয়ে একযোগে শপথ পাঠে বলল, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে পাকিস্তানি শাসকদের শোষণ ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে এক রক্তক্ষয়ী মুক্তি সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে। বিশ্বের বুকে বাঙালি জাতি প্রতিষ্ঠা করেছে সুবর্ণজয়ন্তী এবং মুজিববর্ষের বিজয় দিবসে দৃপ্তকণ্ঠে শপথ করছি যে, শহিদের রক্ত বৃথা যেতে দেব না, দেশকে ভালোবাসব, দেশের মানুষের সার্বিক কল্যাণে সর্বশক্তি নিয়োগ করব। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের আদর্শে উন্নত-সমৃদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার সোনার বাংলা গড়ে তুলব। মহান সৃষ্টিকর্তা আমাদের সহায় হোন।’
এ সময় দেশবাসীর উদ্দেশ্যে বক্তৃতার শুরুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ ৩০ লাখ শহিদের আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করে বলেন, আজ ১৬ ডিসেম্বর ২০২১। বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের দিন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিজয় দীর্ঘ ২৪ বছরের স্বাধীনতা সংগ্রামের ফসল। বাংলাদেশের মানুষের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক অধিকার আদায়ের জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার জীবন উৎসর্গ করেছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমগ্র পাকিস্তানে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। বাঙালি জাতি পাকিস্তানের শাসনভার গ্রহণ করবে এটা পাকিস্তানের সামরিক শাসক ইয়াহিয়া খান মেনে নিতে পারে নাই। তাই বাঙালিদের ওপর শুরু করে নিপীড়ন-নির্যাতন। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার ঐতিহাসিক ভাষণে বাংলাদেশের মানুষকে ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলার আহ্বান জানান। যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে প্রস্তুত থাকতে বলেন। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে প্রতি জেলা, মহকুমা, থানা, গ্রামে সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তুলতে নির্দেশ দেন। ডাক দেন অসহযোগ আন্দোলনের। বঙ্গবন্ধু তার ভাষণে বলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ বাংলাদেশের জনগণ এই নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করে।
বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭১ সালের ২৫-এ মার্চ মধ্যরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী রাজারবাগ পুলিশ লাইন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য স্থানে আক্রমণ করে গণহত্যা শুরু করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সে-রাতেই স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন : “ইহাই হয়তো আমার শেষ বার্তা। আজ হইতে বাংলাদেশ স্বাধীন। আমি বাংলাদেশের জনগণকে আহ্বান জানাইতেছি যে, যে যেখানে আছ, যাহার যাহা কিছু আছে, তাই নিয়ে রুখে দাঁড়াও। সর্বশক্তি দিয়ে হানাদার বাহিনীকে প্রতিরোধ করো। পাকিস্তানী দখলদার বাহিনীর শেষ শত্রুটিকে বাংলার মাটি হতে বিতাড়িত না করা পর্যন্ত এবং চূড়ান্ত বিজয় অর্জন না করা পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাও।” শেখ মুজিবুর রহমানের ২৬-এ মার্চের প্রথম প্রহরে স্বাধীনতার ঘোষণা ঢাকার পিলখানায় তৎকালীন ইপিআর হেডকোয়ার্টার থেকে ওয়ারলেসের মাধ্যমে সমগ্র দেশে পাঠানো হয়। পূর্ব থেকেই ইপিআরের সুবেদার মেজর শওকত আলী তার তিনজন সহকর্মীসহ সেখানে অপেক্ষায় ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর এই বার্তা বাংলাদেশের সকল পুলিশ স্টেশন অর্থাৎ থানায় প্রেরণ করা হয়। থানায় কর্মরত অফিসাররা এই বার্তা সংগ্রাম পরিষদের নেতাদের হাতে ভোর রাতে পৌঁছে দেন। একই সঙ্গে টেলিগ্রাম ও টেলিপ্রিন্টারেও এ বার্তা সমগ্র দেশে পৌঁছে দেয়া হয়। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা হেঁটে, মুখে চোঙ্গা ফুঁকিয়ে বা রিকশায় করে মাইক দিয়ে জেলা থেকে থানা পর্যন্ত এই বার্তা প্রচার করেন। প্রচারপত্র তৈরি করে বিলি করেন। ২৬-এ মার্চ দুপুরে চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্র থেকে চট্টগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক আবদুল হান্নান স্বাধীনতার ঘোষণা প্রথম পাঠ করেন। এরপর একে একে অন্যান্য নেতা এই ঘোষণা পাঠ করতে থাকেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের স্বাধীনতার ঘোষণা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রেডিও, টেলিভিশন ও পত্রিকায়ও প্রচারিত হয়। বাঙালিরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নির্দেশ মোতাবেক যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ। আমাদের পাশে দাঁড়ায় প্রতিবেশী ভারত, রাশিয়াসহ অন্যান্য বন্ধুপ্রতিম দেশ ও সেসব দেশের জনগণ। মিত্রবাহিনীর সহযোগিতায় হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীকে আমরা পরাজিত করি। লাখো শহিদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয় আমাদের বিজয়।
দেশবাসীর উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, প্রিয় দেশবাসী, আসুন আমরা বাংলাদেশের বিজয়ের এই সুবর্ণজয়ন্তী এবং মুজিববর্ষে শপথ গ্রহণ করি যে, আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিকে সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলব, বিশ্বসভায় উন্নত সমৃদ্ধ বিজয়ী জাতি হিসেবে আমরা মাথা উঁচু করে চলব। এ লক্ষ্য অর্জনে আমরা এখন শপথ গ্রহণ করব। এরপরই শপথ বাক্য পাঠ করান প্রধানমন্ত্রী। এ সময় সকল মুক্তিযোদ্ধা ও দেশবাসীকে অভিনন্দনও জানান তিনি।

আরও পড়ুন
spot_img

জনপ্রিয় সংবাদ

মন্তব্য