বর্ণাঢ্য আয়োজনে উৎসবমুখর পরিবেশে বাংলাদেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের ২১তম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়ে গেল। গত ২০-২১ ডিসেম্বর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বসেছিল প্রাণের মেলা। দেশের প্রতিটি এলাকা থেকে হাজার হাজার কাউন্সিলার, ডেলিগেট ছাড়াও সম্মেলনে সমবেত হয়েছিল আওয়ামী লীগের কয়েক লক্ষ কর্মী-সমর্থক-শুভানুধ্যায়ী। সম্মেলনের মঞ্চ থেকে সভাপতি শেখ হাসিনা সুস্পষ্ট ভাষায় দৃঢ়কণ্ঠে ঘোষণা করেছেন, আমরা যে কোনো ত্যাগের বিনিময়ে ‘অর্থনৈতিক মুক্তিসহ ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ে তুলব।’ তিনি একটি উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার চলমান কর্মযজ্ঞে দেশবাসীর সুদৃঢ় ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন। আবেগে উদ্বেলিত প্রতিনিধিরা উচ্ছ্বসিতভাবে শেখ হাসিনার এই উদাত্ত আহ্বানের প্রতি স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন ব্যক্ত করেছেন।
২১ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত কাউন্সিল অধিবেশনে আগামী তিন বছরের জন্য আওয়ামী লীগ কার্যনির্বাহী সংসদ এবং এর কর্মকর্তা, উপদেষ্টা পরিষদ, পার্লামেন্টারি বোর্ড ও স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ড ইত্যাদি গঠিত হয়েছে। জননেত্রী শেখ হাসিনা নবমবারের মতো সভাপতি পুনর্নির্বাচিত হয়েছেন। ওবায়দুল কাদেরও সাধারণ সম্পাদক পদে পুনর্নির্বাচিত হয়েছেন। বস্তুত পার্টি নেতৃত্বে কোনো মৌলিক পরিবর্তন হয়নি। দেশবাসীর প্রত্যাশা, অভিজ্ঞতায় ঋদ্ধ এই নেতৃত্ব আগামী দিনেও দেশবাসীর প্রত্যাশা অনুযায়ী দেশকে জননেত্রী শেখ হাসিনার উপরে উল্লিখিত লক্ষ্য অর্জনের দিকে অগ্রসর করে নিয়ে যেতে সক্ষম হবে।
নির্বাচিত নতুন নেতৃত্বের সামনে এখন ৩টি অগ্রাধিকার এবং বেশ কয়েকটি চ্যালেঞ্জ রয়েছে। অগ্রাধিকার ৩টি হলোÑ ১. আগাছা-পরগাছা উপড়ে ফেলে দলকে তৃণমূল পর্যন্ত সুদৃঢ় গণভিত্তির ওপর গড়ে তোলা, ২. অর্জিত সাফল্যসমূহকে সমুন্নত রেখে দেশবাসীর আস্থাকে অপরিবর্তনীয় ও সুসংহত করা এবং ৩. সরকারের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে দেশ গঠনে গণ-উদ্যোগ গড়ে তোলা। জননেত্রী শেখ হাসিনা একাধিক লেখায় এই ‘সামাজিক ও গণ-উদ্যোগের’ ওপর জোর দিয়েছেন।
আওয়ামী লীগের সামনে বড় চ্যালেঞ্জগুলো হলোÑ ১. অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির উচ্চহারকে বজায় রাখা এবং উন্নয়নের গতি আরও বেগবান করা, ২. কেবল প্রবৃদ্ধি নয়, উন্নয়নের সুফল যাতে দেশবাসী বিশেষত প্রান্তিক জনগোষ্ঠী পায়, সে-জন্য দারিদ্র্য নিরসনের কর্মসূচিকে দৃঢ়ভাবে বাস্তবায়িত করা, ৩. দারিদ্র্য হার হ্রাস ও জনগণের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন হলেও বাংলাদেশে আয়বৈষম্য ও ধনী-দরিদ্রের পার্থক্য উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। আয় ও ধনবৈষম্য হ্রাস আমাদের মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকার, একটি ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গড়ার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা। এই চ্যালেঞ্জটি মোকাবিলা করতে এবং ভারসাম্যপূর্ণ কল্যাণ অর্থনীতি গড়ে তুলতে না পারলে আমাদের দেশে সামাজিক অস্থিরতা দূর করা যাবে না, ৪. দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরতে হবে। দুর্নীতি, দুর্বৃত্তায়ন বন্ধ করতে না পারলে উন্নয়নের সুফল যেমন জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছানো সহজ হবে না, তেমনি এটা জনরোষের কারণ হয়ে থাকবে, ৫. সর্বক্ষেত্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে, ৬. জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের নীতি অব্যাহত রাখতে হবে এবং ৭. গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো সুসংহত করার পাশাপাশি পরাজিত শক্তি বিশেষত বিএনপি-জামাত জোটের সকল ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে জনগণকে সচেতন-সংগঠিত করে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
সব কিছু ছাপিয়ে আমাদের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ যে কোনো মূল্যে দেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখা। আমরা মনে করি, জননেত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে বাংলাদেশ সর্বপ্রকার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সক্ষম হবে। দেশ এগিয়ে যাবে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তোলার অবিচল লক্ষ্য বাস্তবায়নে।