১৯৯৬ ও ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের ক্ষমতা গ্রহণের প্রসঙ্গ টেনে
বঙ্গবন্ধু-কন্যা বলেন, ২১ বছর পর আমরা জনগণের ভোটে রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পাই। আমরা চেয়েছি দেশকে নিজের পায়ে দাঁড় করাতে। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে।
উত্তরণ প্রতিবেদক: প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা দেশবাসীর প্রতি আবার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেছেন, দেশের জনগণ আমাদের ওপর আস্থা-বিশ্বাস ও ভোটের মাধ্যমে সমর্থন দিয়েছে বলেই বাংলাদেশকে উন্নয়নের মহাসড়কে আনতে সক্ষম হয়েছি। বাংলাদেশ আজকে এগিয়ে যাচ্ছে। এই এগিয়ে চলার পথেও অনেক বাধা আমাদের অতিক্রম করতে হয়েছে। শত বাধা অতিক্রম করে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। আমাদের সামনে আরও এগিয়ে যেতে হবে।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে গত ২৪ নভেম্বর জাতীয় সংসদে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে কার্যপ্রণালী বিধি ১৪৭ অনুযায়ী সংসদে সাধারণ আলোচনার প্রস্তাব উত্থাপন করে বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আমরা অতীত সরকারগুলোর মতো ক্ষমতাকে কখনও ভোগের বস্তু হিসেবে নেইনি, নিয়েছি জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনের সুযোগ হিসেবে। বঙ্গবন্ধুর পদাঙ্ক অনুসরণ করে মানুষের ভাগ্য বদলের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। এই উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রেখেই বাংলাদেশ আরও সামনের দিকে এগিয়ে যাবে।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা ধরে রেখে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। বাংলাদেশকে আমরা আধুনিক জ্ঞান ও প্রযুক্তিসম্পন্ন উন্নত-সমৃদ্ধ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। দেশের প্রতিটি ঘরে আমরা বিদ্যুতের আলো জ্বেলেছি, মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে আমাদের অঙ্গীকারÑ দেশের একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না। ইনশাল্লাহ, ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের উন্নত-সমৃদ্ধিশালী দেশ হিসেবে আমরা বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে পারব।
বঙ্গবন্ধুর সরকারের সময় নানা ষড়যন্ত্রের প্রসঙ্গ টেনে সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেন, চক্রান্ত মোকাবিলা করেই জাতির পিতা দেশকে গড়ে তুলছিলেন। যেন কারও কাছে হাত পাততে না হয়, তার জন্য তিনি দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচি দেন। ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য দূর করতে ক্ষমতাকে বিকেন্দ্রীকরণ করেন। স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করেন। বঙ্গবন্ধু যে কাজগুলো করতে চেয়েছিলেনÑ এর জন্য আর পাঁচ বছর হাতে পেলে বাংলাদেশ উঠে দাঁড়াত। আজ যে সম্মানজনক অবস্থানে আমরা আসতে পেরেছি, জাতির পিতা বেঁচে থাকলে সেই জায়গায় আমরা স্বাধীনতার ১০ বছরে পৌঁছে যেতে পারতাম। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি দীর্ঘদিন দেশ চালাচ্ছি। প্রতিটি ক্ষেত্রে যখন কোনো কাজ করতে যাই, দেখতে পাই সেটার ভিত্তি জাতির পিতা তৈরি করে দিয়ে গেছেন। আমার কাছে বিস্ময় মনে হয়, এত অল্প সময়ে কীভাবে এত কাজ করে যেতে পারলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য, যখন তিনি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ে তুলছিলেন, তখন কিছু লোক অস্থিরতায় ভুগছিলেন। পাকিস্তান হানাদাররা স্যারেন্ডার করেছিল ঠিকই, কিন্তু তারা তাদের কিছু দালাল যুদ্ধাপরাধী রেখে যায়। তারা আমাদেরই মুক্তিযুদ্ধের অংশকে হাতিয়ে নিয়ে দেশে অরাজকতা সৃষ্টির চেষ্টা চালায়। এত অল্প সময়ে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাটা তাদের সহ্য হয়নি। দেশ স্বাধীন হয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াবে, তা পাকিস্তানি দোসররা মানতে পারেনি। বঙ্গবন্ধু সরকারের এত উন্নয়ন তারা এটা সহ্য করতে পারেনি।
তিনি বলেন, তারা নানা অপপ্রচার করেও যখন জনগণের সমর্থন পেল না, তখনই পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট নির্মমভাবে তাকে (বঙ্গবন্ধু) হত্যা করা হয়। তাকে হত্যার মধ্য দিয়ে দেশে বারবার ক্যু, মুক্তিযোদ্ধা, সাধারণ মানুষের মৃত্যু, সংবিধান ক্ষত-বিক্ষত। ইনডেমনিটি দিয়ে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার বন্ধ করে খুনিদের পুনর্বাসিত ও পুরস্কৃত করা হয়। রাষ্ট্রপতির প্রার্থী পর্যন্ত করা হয়। এর ফলাফল হিসেবে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা ব্যাহত হয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর আমাদের ভিক্ষুকের জাতিতে পরিণত করা হয়েছিল।
১৯৯৬ ও ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের ক্ষমতা গ্রহণের প্রসঙ্গ টেনে বঙ্গবন্ধু-কন্যা বলেন, ২১ বছর পর আমরা জনগণের ভোটে রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পাই। আমরা চেয়েছি দেশকে নিজের পায়ে দাঁড় করাতে। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে। রাস্তাঘাটসহ প্রতিটি সেক্টরে উন্নতি হবে। জনগণ আমাদের ওপর আস্থা রেখে বারবার ভোট দিয়ে সরকার গঠনের সুযোগ দিয়েছে। যার কারণে আজ আমরা উন্নয়নের মহাসড়কে। ১২ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে।
তিনি বলেন, করোনার মধ্যে আমরা সব সেক্টরে প্রণোদনা দিয়েছি। কোনো মানুষের খাদ্যের অভাব না হয় সেজন্য কাজ করে যাচ্ছি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর পদাঙ্ক অনুসরণ করে একদম তৃণমূল পর্যায় থেকে মানুষের উন্নয়ন ও ভাগ্যবদলের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। করোনা না থাকলে আমরা দেশের দারিদ্র্যের হার ১৭ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনতে সক্ষম হতাম। করোনার মধ্যেও আমাদের উন্নয়ন থেমে নেই। বাংলাদেশকে এগিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনার কাঠামো ঠিক করা আছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ২০৪১ সালে বাংলাদেশকে কীভাবে দেখতে চাই, সেই পরিপ্রেক্ষিতে পরিকল্পনাও আমরা করে রেখেছি। জলবায়ু পরিবর্তন থেকে আমাদের প্রজন্মের পর প্রজন্ম যেন বেঁচে থাকতে পারে সে লক্ষ্যে এ ব-দ্বীপকে সুন্দরভাবে গড়ে তোলার জন্য ‘ডেল্টা প্ল্যান-২১০০’ আমরা গ্রহণ করে বাস্তবায়নে কাজ শুরু করেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর আকাক্সক্ষা ছিল দেশটাকে গড়ে তুলবেন, বাংলাদেশকে সাজাবেন। যেন প্রতিটি মানুষ নাগরিক সুবিধা পান। জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য তিনি মাত্র সাড়ে তিন বছর সময় পেয়েছিলেন। দেশের উন্নয়নে তিনি স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করে কাজ করতে শুরু করেন। একটি প্রদেশ থেকে দেশে উন্নীত করার যত আইন, নিয়ম নীতিমালা সবই তিনি করে দিয়ে যান।
সরকারপ্রধান আরও বলেন, আমরা ক্ষমতাকে জনগণের সেবা করার সুযোগ মনে করেছি। জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনের সুযোগ মনে করি। আমরা দারিদ্র্যের হার ২০ শতাংশে নামিয়ে আনতে পেরেছি। করোনা মহামারি না থাকলে এটাকে আমরা ১৭ শতাংশে নামিয়ে আনতে পারতাম। বিশ্বব্যাপী মন্দার মধ্যেও আমরা দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী দেশ। ৪১টি অর্থনৈতিক শক্তিশালী দেশের মধ্যে বাংলাদেশ একটি। তিনি বলেন, আমরা ২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারের রূপকল্প অর্জন করতে পেরেছি। জনগণ ভোট দিয়েছে বলে আমরা সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করতে পারছি। রজতজয়ন্তী উদযাপনের সময়ও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিল। আমাদের স্বাধীনতার ফসল হচ্ছে এই সংসদ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা যে সংবিধান উপহার দিয়েছিলেন, সেই সংবিধানের ভিত্তিতে আমাদের নির্বাচন ও আজকের এই সংসদ।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু এদেশের মানুষের জন্য নিজের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য বিসর্জন দিয়েছেন, বছরের পর বছর কারা নির্যাতন ভোগ করেছেন। আমরা পিতৃস্নেহ থেকে বঞ্চিত হয়েছি। আমার মা সব সময় বঙ্গবন্ধুর পাশে থেকে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন। বাবার কাছ থেকে দেশপ্রেম, মানুষের প্রতি ভালোবাসা এবং তাদের ভাগ্যের পরিবর্তনের শিক্ষা পেয়েছি। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। বঙ্গবন্ধুর ডাকে দেশের মানুষ অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে দেশকে স্বাধীন করেছে। আমাদের দেশের স্বাধীনতার জন্য মিত্র দেশ ভারতের অনেকে রক্ত দিয়েছেন, তাদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি।