Sunday, September 24, 2023
বাড়িনবম বর্ষ,একাদশ সংখ্যা,অক্টোবর-২০১৯শিখরে শেখ হাসিনা : অপ্রতিরোধ্য বাংলাদেশ

শিখরে শেখ হাসিনা : অপ্রতিরোধ্য বাংলাদেশ

এতসব গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার মধ্যে কোনটি নিয়ে লিখব, ভাবনায় পড়ে গেলাম। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর ইঙ্গিতপূর্ণ হুঁশিয়ারি, প্রধানমন্ত্রীর দু-দুটো পুরস্কারে ভূষিত হওয়া, উন্নয়ন দৌড়ে বাংলাদেশ বিশ্বের প্রথম ২০টি দেশের একটি হওয়া এবং দেশের অভ্যন্তরে দুর্নীতি দুর্বৃত্তায়নের বিরুদ্ধে চলমান সাড়া জাগানো অভিযান- গুরুত্বের দিক থেকে কোনটি রেখে কোনটি বলি। দুর্নীতি-দুর্বৃত্তায়ন নিয়ে অভিযান নিয়ে শেষ কথা বলার সময় এখনও আসেনি। কেবল এটুকু বলা যায়, প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী অঙ্গীকার, ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স’ যে ফাঁকা বুলি ছিল না, দেশবাসী সেটি বুঝতে শুরু করেছে। চলমান অভিযান ইতোমধ্যেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সরকারের ভাবমূর্তিকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে, অন্যদিকে জনপ্রত্যাশাকেও বাড়িয়ে দিয়েছে। গত রোববার, ২৯ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, আরেকটি ১/১১-এর পুনরাবৃত্তি রোধে আমরাই দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। রাজনীতিবিদরাই, রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় এই লক্ষ্য অর্জনের উদ্যোগ নেবে। এ জন্য আমি আমার ঘর থেকেই (আওয়ামী লীগ) শুরু করেছি। দুর্নীতির সাথে যারাই জড়িত, আমার দলের হলেও কেউ রেহাই পাবে না। প্রধানমন্ত্রীর এই তাৎপর্যপূর্ণ ঘোষণায় চলমান অভিযান সম্পর্কে আর কোনো সন্দেহ-সংশয় থাকল না। আমরা এই অভিযানের সাফল্য কামনা করছি।
প্রতিষেধক টিকাদান কর্মসূচির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাফল্যকে বিশ্বের কাছে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হিসেবে তুলে ধরেছে। গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাক্সিনস অ্যান্ড ইমিউনাইজেশন বোর্ড প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পদকে ভূষিত করায় বাংলাদেশের মর্যাদা যে ঈর্ষণীয় পর্যায়ে উপনীত হয়েছে, এটি তারই স্বাক্ষর। উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে গড় আয়ুষ্কাল বৃদ্ধিতে (৭৩ বছর) বাংলাদেশ অনেকটাই এগিয়ে আছে। শিশুমৃত্যুর হার, প্রসূতি বা মাতৃমৃত্যুর হার সর্বনিম্নে নামিয়ে আনা, প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া এবং টিকাদান কর্মসূচির সফল বাস্তবায়নের মাধ্যমে সংক্রামক ব্যাধি প্রতিরোধ করার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত বিশ্ববাসীকে চমৎকৃত করেছে। কেবল অর্থনৈতিক উন্নয়নের সূচকেই নয়, বাংলাদেশ যে সামাজিক উন্নয়নে- স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে বিশ্বের রোল মডেল হয়ে উঠেছে, এটা কোনো বাগাড়ম্বর নয়, অতিকথন নয়। প্রকৃতই বাংলাদেশ শিক্ষণীয় নজির স্থাপন করেছে। বিশ্ব সম্প্রদায় জননেত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্ব, তার উদ্ভাবনী বিভিন্ন জনকল্যাণমুখী পদক্ষেপ এবং ‘সবার জন্য স্বাস্থ্য’ এই নীতিমালার বাস্তবায়নে দৃঢ়তার যথার্থ মূল্যায়ন করেছে। আমরা দেশবাসীর পক্ষ থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে এই উজ্জ্বল অর্জনের জন্য অভিনন্দন জানাই।
তারুণ্যের শক্তিকে সৃজনশীল দক্ষ মানবশক্তি হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের জন্যও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ইউনিসেফ কর্তৃক ‘চ্যাম্পিয়ন অব স্কিল ডেভেলপমেন্ট ফর ইয়ুথ’ পুরস্কার অর্জন করেছেন। প্রকারান্তরে এই পুরস্কার বাংলাদেশের তরুণ-যুবকদের নতুন স্বপ্নে উজ্জীবিত করবে। বাংলাদেশ তারুণ্যের দেশ; প্রাণাবেগে উজ্জ্বল সৃষ্টিসুখে উল্লাসের দেশ। তরুণরাই এদেশের ভবিষ্যৎ। মাদকাশক্তি, পরীক্ষায় নকল, শিশু ও নারীর সম্ভ্রমহানি এবং দলাদলি-সংঘাতের আকর বলে তরুণদের যে নেতিবাচক ভাবমূর্তি অনেকের প্রচারে প্রাধান্য পায়, তাদের অফুরন্ত প্রাণশক্তি এবং সৃজনশীলতা ঢাকা পড়ে যায়- এই পুরস্কার সেই নেতিবাচকতার উপযুক্ত জবাব দিয়েছে। জাগ্রত যৌবনের শক্তি না থাকলে বাংলাদেশ উন্নয়ন প্রতিযোগিতায় বিশ্বের প্রথম ২০টি দেশের অন্যতম হতে পারত না। নিন্দুকদের মুখে ছাই দিয়ে বঙ্গবন্ধু-কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ, বাংলাদেশের তরুণ সমাজ এগিয়ে চলেছে নতুন স্বপ্নের দেশ গড়ার মহতি কর্মযজ্ঞে। বাংলাদেশের কপালে দরিদ্র দেশের ছাপ মারা। এই সেদিনও বাংলাদেশ ছিল ‘স্বল্পোন্নত’ দেশের তালিকায়। পৌনে দু’শ বছরের ঔপনিবেশিক শাসন, প্রায় ২৫ বছরের পাকিস্তানি শোষণ-বঞ্চনা এবং বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর দীর্ঘ ২১ বছরের স্বৈরশাসন, বাংলাদেশকে দারিদ্র্যের অতল গহ্বরে ঠেলে দিয়েছিল। ক্ষুধা-দারিদ্র্য-নিরক্ষরতা, পশ্চাৎপদতা ছিল আমাদের নিত্যদিনের সঙ্গী। আমরা আক্ষরিক অর্থেই হয়ে পড়েছিলাম পরনির্ভরশীল ভিক্ষুকের জাতি। বঙ্গবন্ধু বলেছেন, ভিক্ষুকের জাতির কোনো সম্মান থাকে না। বিশ্ব দরবারে আমাদেরও কোনো সম্মান ছিল না। স্বাধীনতার পর যে সম্ভাবনার দুয়ার উন্মোচিত হয়েছিল, জিয়া-এরশাদ-খালেদা, সেই দুয়ার বন্ধ করে দিয়েছিল। বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনা সেই দুয়ার খুলে দিয়েছেন। তিনি আমাদের কপালে দারিদ্র্যের তিলক মুছে দিয়েছেন। বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল (উবাবষড়ঢ়রহম) দেশের কাতারেই কেবল উন্নীত হয়নি; মাথাপ্রতি আয়, প্রবৃদ্ধি এবং সামাজিক সূচকে বাংলাদেশ এখন অনুন্নত ও উন্নয়নশীল ১৭৮টি দেশের মধ্যে শীর্ষ ২০টি দেশের কাতারে উঠে এসেছে। ২০২১ সালের মধ্যেই বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে (ইতোমধ্যেই নিম্নমধ্যম আয়ের দেশ হয়ে গেছে)। আমাদের প্রবৃদ্ধি এখন এশিয়ার সর্বোচ্চ। এসব সাফল্যের রূপকার শেখ হাসিনা বিশ্ব পরিসরে মর্যাদার শিখর স্পর্শ করেছেন।
বাংলাদেশের এই অর্জনকে বিশ্বব্যাংক ও বিশ্বে খ্যাতিমান অর্থনীতিবিদরা আখ্যায়িত করেছেন ‘মিরাক্যাল ইকোনমি’ বলে। এসব মিরাক্যালের পেছনে রয়েছে বাংলাদেশের ১৬ কোটি সৃষ্টিশীল মানুষ। আর তাদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ‘মিরাক্যাল’ ব্যক্তিত্ব- প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ- অপ্রতিরোধ্য এদেশের সম্মুখযাত্রা।

আরও পড়ুন
spot_img

জনপ্রিয় সংবাদ

মন্তব্য