সম্পাদকের কথা: বিশ্ব ইতিহাসের দীর্ঘতম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের অবসান ঘটল। সাম্প্রতিককালে অথবা সুদূর অতীতে আর কখনোই এত দীর্ঘদিন স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদ্রাসা বন্ধ ছিল না। কখনও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে- বন্যার প্লাবনেÑ ভূমিকম্পে অথবা যুদ্ধাবস্থায়, মারি ও মড়কে টানা দেড় বছরাধিক কাল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল না। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধকালে টানা ৯ মাস শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। এছাড়া আর কোনো নিদর্শন প্রায় দুর্লভ। দেড় বছর পর স্কুল ও কলেজ ছাত্র-ছাত্রীদের কলকাকলীতে মুখর হয়েছে। কোভিড-১৯ এর প্রাণঘাতী সংক্রমণের কাছে অসহায় মানুষকে জীবন বাঁচাতে এই পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হয়েছিল।
ইতোমধ্যে কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ এবং তজ্জনিত মৃত্যুহারও কমে এসেছে। এক কথায় কোভিড পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণের মধ্যে। সে-জন্য সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা যুক্তিসংগত। এতদসত্ত্বেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কোনো বিকল্প নেই। কোভিডে অনাকাক্সিক্ষত যে মৃত্যু ঘটেছে, তার কোনো ক্ষতিপূরণের সম্ভাবনা নেই। উৎপাদন ব্যবস্থা, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প-কারখানা তথা অর্থনীতির যে ক্ষতি হয়েছে, উৎপাদন ও অর্থনীতিতে গতিশীলতা বাড়িয়ে তার ক্ষতিপূরণ হয়তো করা যেতে পারে। ইতোমধ্যে জীবনকে হাতের মুঠোয় রেখে আমাদের শ্রমজীবী মানুষ ও উদ্যোক্তারা তার প্রমাণ রেখেছেন। কিন্তু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি পড়েছে আমাদের শিক্ষা-ব্যবস্থা। যে সময় চলে গেছে, তা আমরা ফিরে পাব না। শিক্ষা-ব্যবস্থায় সংঘটিত ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া আমাদের কাছে একটা বিরাট চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য প্রয়োজন সম্মিলিত প্রয়াস এবং পরিকল্পিত উদ্যোগ। আশা করি, ‘হার না মানা’ বাঙালি জাতি সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সক্ষম হবে।
কোভিড মোকাবিলায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিক প্রচেষ্টা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে প্রভূত প্রশংসা অর্জন করেছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশের ৫ কোটির বেশি মানুষকে কোভিড টিকার আওতায় আনা হয়েছে। গত ২৮ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীর ৭৫তম জন্মদিন উপলক্ষে দেশের সর্বত্র মানুষকে ৭৫ লাখ ডোজ ও নিয়মিত আরও ৫ লাখ ডোজ মিলে মোট ৮০ লাখ ডোজ টিকা দেওয়ার কর্মসূচি বাস্তবায়িত হয়েছে। এই ব্যাপক টিকাদান কোভিড সংক্রমণকে নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়েছে। সরকারের লক্ষ্য হচ্ছে দেশের ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকার আওতায় আনা। আমরা বিশ্বাস করি, এই লক্ষ্য অর্জনে বাংলাদেশ সাফল্য লাভ করবে। আমাদের প্রত্যাশা, এসব পদক্ষেপের জন্য কোভিড সংক্রমণ যেমন পূর্বের মতো ঊর্ধ্বগামী হবে না, তেমনি মানুষের জীবনকে নিরাপদ করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাফল্য বিশ্বজনীন নজির স্থাপনে সক্ষম হবে। জননেত্রী শেখ হাসিনা প্রমাণ করেছেন ‘সবার উপরে মানুষ সত্য’ তাহার উপরে নয়।