Monday, October 2, 2023
বাড়িউত্তরণ-২০২১একাদশ বর্ষ, তৃতীয় সংখ্যা, ফেব্রুয়ারি-২০২১‘শান্তি, গণতন্ত্র, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে আমরা’

‘শান্তি, গণতন্ত্র, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে আমরা’

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’ গড়ে তুলতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রেখে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, শান্তি, গণতন্ত্র, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে আমরা হাঁটছি। সে-পথেই আমাদেরকে আরও এগিয়ে যেতে হবে। তাই আসুন, দল-মত-পথের পার্থক্য ভুলে ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে লাখো শহিদের রক্তের ঋণ পরিশোধ করি। একসঙ্গে কাজ করে দেশ থেকে দুর্নীতি, মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গিদের নির্মূল করি। গত ১৮ জানুয়ারি একাদশ জাতীয় সংসদের একাদশ অধিবেশনের (শীতকালীন অধিবেশন) প্রথম দিন রাষ্ট্রপতি এই আহ্বান জানান। এর আগে সংসদ অধিবেশনে বছরের প্রথম দিনের রেওয়াজ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ সংসদের উত্তর প্লাজা দিয়ে প্রবেশ করেন। সেখান থেকে বিকাল ৪টা ৫৪ মিনিটে অধিবেশন কক্ষে যান রাষ্ট্রপতি। স্পিকারের পাশের চেয়ারে বসেন রাষ্ট্রপতি। স্পিকার তাকে ভাষণ দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানানোর পর ডায়াসে দাঁড়িয়ে দীর্ঘ বক্তব্য রাখেন রাষ্ট্রপ্রধান। ভাষণের সংক্ষিপ্তসার সংসদে পাঠ করেন রাষ্ট্রপতি। ১৪৭ পৃষ্ঠার ভাষণের সংক্ষিপ্তসারে দেশের অর্থনীতি, বাণিজ্য-বিনিয়োগ, খাদ্য-কৃষি, পরিবেশ-জলবায়ু, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, করোনা মহামারি মোকাবিলাসহ বিভিন্ন খাতে সরকারের কার্যক্রম ও সাফল্য তুলে ধরেন। এছাড়া দেশে আইনের শাসন সুসংহত ও সমুন্নত রাখা এবং সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে সরকারের কার্যক্রমের প্রশংসা করেন। রাষ্ট্রপতি তার পুরো ভাষণটি পঠিত বলে গণ্য করার জন্য আহ্বান জানালে স্পিকার তা গ্রহণ করেন। বক্তব্য শেষে রাষ্ট্রপতি সংসদ অধিবেশন প্রস্থানের সময়ও জাতীয় সংগীত বাজানো হয়।
১৯ জানুয়ারি স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে শুরু হওয়া জাতীয় সংসদ অধিবেশনে ইন্টারমিডিয়েট অ্যান্ড সেকেন্ডারি অ্যাডুকেশন (অ্যামেন্ডমেন্ট) বিল-২০২১, বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড (সংশোধন) বিল-২০২১, বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড (সংশোধন) বিল-২০২১ সংসদে উত্থাপন করেন শিক্ষামন্ত্রী। পরে বিল ৩টি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সংসদে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়। বিল ৩টির উদ্দেশ্য ও কারণ সম্পর্কে বলা হয়েছে, প্রস্তাবিত আইনে বিশেষ পরিস্থিতিতে অতিমারি, মহামারি, দৈব দুর্বিপাকের কারণে বা সরকার কর্তৃক সময় সময় নির্ধারিত কোনো অনিবার্য পরিস্থিতিতে পরীক্ষা গ্রহণ, ফল প্রকাশ এবং সনদ করা সম্ভব না হলে সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপিত আদেশ দিয়ে কোনো বিশেষ বছরে শিক্ষার্থীদের জন্য পরীক্ষা ছাড়াই বা সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরীক্ষা নিয়ে ওই প্রজ্ঞাপনে উল্লিখিত পদ্ধতিতে মূল্যায়ন এবং সনদ দেওয়ার জন্য নির্দেশাবলি জারি করার বিষয় উল্লেখ রয়েছে।

ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর আলোচনা
অপশক্তির সকল ষড়যন্ত্র সম্পর্কে দেশবাসীকে সজাগ ও সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, নতুন করে আবারও তারা ষড়যন্ত্র করছে। ষড়যন্ত্র কিন্তু থেমে নেই। পথহারা পথিক এই বিএনপির নেতৃত্বাধীন অপশক্তির সকল ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দিতে হবে। পথহারা পথিকের মতোই তাদের ঘুরতে হবে, চিরদিনের জন্য নির্বাসিত হতে হবে। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে ১৯ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতির ভাষণের ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর সাধারণ আলোচনা শুরু হয়। চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী লিটন রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর ধন্যবাদ প্রস্তাবটি উত্থাপন করলে সাবেক চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ প্রস্তাবটি সমর্থন করেন। প্রথম দিনে আলোচনায় অংশ নেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী বেগম হাবিবুন নাহার, সরকারি দলের শহীদুজ্জামান সরকার, অসীম কুমার উকিল, বেগম সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি, সৈয়দা রুবিনা আখতার, বেগম শবনম জাহান এবং বিরোধী দল জাতীয় পার্টির গোলাম কিবরিয়া টিপু।
২০ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন, উন্নয়ন, অগ্রগতি ও সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় লাল সবুজের নিশান নিয়ে আওয়ামী লীগ ‘বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সিঁড়ি’ বেয়ে বাংলাদেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বব্যাপী করোনা পরিস্থিতিতে অনেক দেশে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিলেও বাংলাদেশ তা অনেকটাই এড়াতে পেরেছে। ২০২০ সালের সূচক অনুযায়ী বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৪১তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে ২০ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ অধিবেশনে টেবিলে উত্থাপিত প্রশ্নোত্তর পর্বে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য বেগম রওশন আরা মান্নানের প্রশ্নের লিখিত জবাবে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
২৪ জানুয়ারি সরকার ও বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা অভিন্ন কণ্ঠে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যোগ্য, প্রাজ্ঞ ও সাহসী নেতৃত্বের কারণেই করোনা মহামারিকালেও দেশের অর্থনীতির চাকা সচল ও চলমান রয়েছে। উন্নয়ন-অগ্রগতির ধারাবাহিকতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্বে এক অনন্য উদাহরণ স্থাপন করেছে। তবে দেশের এই বিশাল অর্জন কোনোভাবেই যেন মøান হয়ে না যায় সেজন্য দুর্নীতির বিরুদ্ধে আরও কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন তারা। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে ২৪ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তারা এসব কথা বলেন। আলোচনায় অংশ নেন শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, সরকারি দলের একেএম শাহজাহান কামাল ও দীপঙ্কর তালুকদার এবং জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ। এর আগে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা ও উত্তর টেবিলে উপস্থাপন এবং ৭১ বিধির নোটিসের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়।
২৬ জানুয়ারি সরকার ও বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর খুনি মোশতাক-জিয়া গংরা দেশকে ১০০ বছর পিছিয়ে দিয়ে গেছে। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সৎ, সাহসী, দূরদর্শী এবং এককেন্দ্রিকতার বিপরীতে বহুমাত্রিক নেতৃত্বগুণে দেশের ১৭ কোটি মানুষ সাহসী ও আশাবাদী হয়ে উঠেছে। শত প্রতিকূলতা ও মহামারি করোনা মোকাবিলা করে দেশকে উন্নয়ন-অগ্রগতির ধারা অব্যাহত রেখেছেন। টেকসই উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে নির্ধারিত সময়ের আগেই দেশ উন্নয়নের মহাসড়কে পৌঁছে যাবে। জনবিচ্ছিন্ন বিএনপি আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে, করোনার দুঃসময়ে অসহায় মানুষের কাছে না গিয়ে ঘরে বসে মিডিয়ার মাধ্যমে সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনা করছে। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে ২৬ জানুয়ারি জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তারা এসব কথা বলেন।
এদিকে ২৬ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ একাদশ জাতীয় সংসদ (জেএস)-এর একাদশ এবং ২০২১ সালের প্রথম অধিবেশনে গৃহীত ৩টি বিলের অনুমোদন দিয়েছেন। ২৬ জানুয়ারি ইস্যুকৃত এক তথ্য বিবরণীতে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি ২৫ জানুয়ারি ওই ৩টি বিলের অনুমোদন দেন। বিল ৩টি হচ্ছেÑ ‘ইন্টারমিডিয়েট অ্যান্ড সেকেন্ডারি অ্যাডুকেশন (সংশোধনী) বিল-২০২১’, ‘বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড (সংশোধনী) বিল-২০২১’, ‘বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড (সংশোধনী) বিল-২০২১’।
২৭ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা সকল স্তরে দুর্নীতি প্রতিরোধ ও দমনে সরকারের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিতে অটল থাকার কথা উল্লেখ করে বলেছেন, দুর্নীতির বিষবৃক্ষ সম্পূর্ণ উপড়ে ফেলে দেশের প্রকৃত আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য একটি স্থায়ী সুশাসনভিত্তিক প্রশাসনিক কাঠামো তৈরি করতে সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তবে দুর্নীতি প্রতিরোধে ব্যক্তিপর্যায়ে কর্তব্যনিষ্ঠা ও সততা, তথা চরিত্রনিষ্ঠা খুব দরকার। এজন্য বিদ্যমান আইনকানুন, নিয়মনীতির সঙ্গে দুর্নীতি দমনকে একটি আন্দোলন হিসেবে গড়ে তোলার অঙ্গীকার করতে হবে।

গ্রন্থনা : আশরাফ সিদ্দিকী বিটু, সহ-সম্পাদক, উত্তরণ

আরও পড়ুন
spot_img

জনপ্রিয় সংবাদ

মন্তব্য