Sunday, September 24, 2023
বাড়িদশম বর্ষ, দ্বিতীয় সংখ্যা-জানুয়ারি-২০২০লাল সবুজে রঙিন সাংস্কৃতিক মঞ্চ

লাল সবুজে রঙিন সাংস্কৃতিক মঞ্চ

বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠতম অর্জনের দিন গৌরবময় মহান বিজয় দিবসের ৪৮তম উৎসব ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ২১তম কাউন্সিলের উৎসবে মাতোয়ারা ছিল সংস্কৃতি অঙ্গন। বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালায় হৃদয়ের জানালা খুলে স্মরণ করা হয় জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের। কবিতা, নৃত্য ও বিজয়ের গানে মুখর হয়ে ওঠে বাংলাদেশ।

১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসের দিন
সেক্টর কমান্ডার ফোরাম আয়োজিত রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আলোচনা সভার পরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে কবিতা আবৃত্তি, নাটক ও গান পরিবেশন করে শিল্পীরা।
জাতীয় জাদুঘরে পক্ষকালব্যাপী বিশেষ প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। প্রদর্শনীতে থাকে মহান মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন নিদর্শন, পেইন্টিং, দুর্লভ কিছু আলোকচিত্র ও বিভিন্ন গ্রন্থ, মুক্তিযুদ্ধে ব্যবহৃত বিভিন্ন অস্ত্র, মুক্তিযোদ্ধাদের স্বহস্তে লিখিত পত্র, রাজাকার, আলবদর, আলশামসদের পরিচয়পত্র এবং মুক্তিযুদ্ধের সময়কালীন বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে জাতীয় নাট্যশালায় আয়োজিত হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। আনুষ্ঠানে কবিতা আবৃত্তি, নৃত্য ও সংগীত পরিবেশন করে শিল্পীরা। পরে সৈয়দ শামসুল হকের ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’ নাটকের ২০০তম মঞ্চায়ন হয়। বাংলা একাডেমির আয়োজনে নজরুল মঞ্চে আয়োজিত হয় কবিতা আবৃত্তি, সংগীত পরিবেশনা। বাংলাদেশ শিশু একাডেমি আয়োজন করে শিশু চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা।
অন্যদিকে মহান বিজয় দিবসে ‘জয় বাংলা’ সেøাগান ও জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে ছায়ানটের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় খেলার মাঠে। দলীয় নৃত্যে হাজারো শিল্পীর সম্মেলক কণ্ঠে কবিতা আবৃত্তি, কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, সুভাষ মুখোপাধ্যায়, আবদুল লতিফের কিছু উল্লেখযোগ্য দেশাত্মবোধক গানে পরিবেশনের সাথে নৃত্যের ঝংকার তোলেন শিল্পীরা। পাশাপাশি একক সংগীতের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক জাগরণের প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়। বিশাল এই আয়োজনে অংশ নেন ২০০ শিল্পী। পরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের ঐতিহাসিক ক্ষণকে স্মরণ করে ৪টা ৩১ মিনিটে ‘জয় বাংলা’ সেøাগান আর জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শেষ হয় অনুষ্ঠানটি। অন্যদিকে বরাবরের মতো এবারেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মহসিন হলের মাঠে ‘গৌরবময় বিজয়ের ৪৮ বছর’ শিরোনামে এক কনসার্টের আয়োজন করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ। বিজয় দিবস উপলক্ষে বিএফডিসি প্রাঙ্গণে নির্মিত স্মৃতিসৌধ ‘উত্তাপ’-এ ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট ‘বিজয়ের অঙ্গীকার সাংস্কৃতিক অধিকার’ সেøাগানকে সামনে রেখে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে শোভাযাত্রা করে। কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি’তে এসে শেষ হয়। শহিদ মিনারসহ সব মঞ্চেই ছিল কবিতা আবৃত্তি, গান, নৃত্য ও নাটকের পরিবেশনা। ‘আমি বাংলাদেশ’ সেøাগানে চ্যানেল আই প্রাঙ্গণে চলে বিজয় মেলা। ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবরে আয়োজিত হয় কবিতা আবৃত্তি, গান, নৃত্য। সবুজবাগ বালুর মাঠে বঙ্গবন্ধুর জীবনভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র ও স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পীরা গান পরিবেশন করে।
এছাড়াও লাল সবুজের পোশাক পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণ, শাহবাগ, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, টিএসসি, কেন্দ্রীয় খেলার মাঠসহ রাজধানীর অলিগলিতে ছিল সাধারণ মানুষের ঢল। রাতের ঢাকা আলোকসজ্জায় বর্ণিল সাজে ফুটে ওঠে জাতীয় লাল সবুজ পতাকা, বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ, স্মৃতিসৌধ ইত্যাদি। বাহারি আলোতে হাইকোর্ট, জাতীয় সংসদ ভবন, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ মতিঝিলের শাপলা চত্বরের বিভিন্ন ভবন।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ২১তম কাউন্সিলের উৎসব
উপমহাদেশের প্রাচীন ও ঐতিহাসিক রাজনৈতিক সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ২১তম কাউন্সিলের উদ্বোধনী দিনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গত ২০ জানুয়ারি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ২১তম কাউন্সিলে সাংস্কৃতিক কমিটির তত্ত্বাবধায়নে শিল্পীদের মনোজ্ঞ পরিবেশনা সকলকে মুগ্ধ করে। দেশি-বিদেশি আমন্ত্রিত অতিথি, কাউন্সিলর ও ডেলিগেটদের সামনে সাংস্কৃতিক উপস্থাপনার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানে নিয়ে আশা হয় বিশেষ দ্যোতনা। খ্যাতনামা শিল্পীরা সম্মেলক কণ্ঠে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে উদ্দীপনা জাগানো, ‘সাড়ে সাত কোটি মানুষের আরেকটি নামÑ শেখ মুজিবুর, মুজিবুর’, ‘বাংলার হিন্দু, বাংলার বৌদ্ধ, বাংলার খ্রিষ্টান, বাংলার মুসলমানÑ আমরা সবাই বাঙ্গালী’, ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’ ইত্যাদি গান পরিবেশন করেন। এরপর একদল নৃত্যশিল্পী ‘আমরা জন্মেছি এই বাংলায়’ শীর্ষক গীতি নৃত্যানুষ্ঠান পরিবেশন করে। নৃত্যে নিপুণভাবে পেছনের ডিজিটাল ব্যানারে ফুটিয়ে তোলা হয় রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ, বঙ্গবন্ধুর লড়াই সংগ্রাম, রক্তাক্ত শোকাবহ ১৫ আগস্ট এবং বর্তমান সরকারের সারাদেশের বিভিন্ন উন্নয়ন অগ্রযাত্রার চিত্র। তারপর জাতীয় সম্মেলনের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হলে সন্ধ্যার পর আবার শুরু হয় সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা। যেখানে খ্যাতিমান শিল্পীরা সংগীত পরিবেশন করেন। আয়োজনের মধ্যে দর্শনার্থীর ভিড় ছিল সিআরআই’র ইতিহাসভিত্তিক স্থাপনা। বিশেষ করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ওপর নির্মিত ডকুমেন্টারি প্রদর্শনীতে। সব মিলিয়ে ডিসেম্বর ছিল উৎসবের মাস।

শাহ্ সোহাগ ফকির

আরও পড়ুন
spot_img

জনপ্রিয় সংবাদ

মন্তব্য