উত্তরণ প্রতিবেদন: বঙ্গবন্ধুকে হৃদয়ে ধারণ করে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কয়েক লাখ শিশুশিক্ষার্থী গত ৭ মার্চ একযোগে সমবেত কণ্ঠে পাঠ করল জাতির পিতার ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ। এদিন খুলনা জেলা স্টেডিয়ামে ১৯ হাজার ২০০ জন, বাগেরহাট জেলার কয়েকটি বিদ্যালয় ও মাদ্রাসায় একযোগে কয়েক লাখ, ঝিনাইদহের বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান স্টেডিয়ামে ৫ হাজার এবং নড়াইলের শিল্পী সুলতান মঞ্চে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের কণ্ঠে ভেসে আসে ‘রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরও দেব…/এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম…/সাত কোটি মানুষকে দাবায়ে রাখতে পারবা না।’
খুলনা জেলা স্টেডিয়াম যেন ৭ মার্চ এক টুকরো রেসকোর্স ময়দানে পরিণত হয়েছিল। বেলা ৩টা ২০ মিনিটে সারিবদ্ধভাবে ১৯ হাজার ২০০ শিশু জাতির পিতার ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ সমবেত কণ্ঠে উচ্চারণ করে। বঙ্গবন্ধুর ১৯ মিনিটের সেই ভাষণ পুরোটাই মুখস্থ করে এসেছিল ১০১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এই শিশুরা। তাদের ভাষণ শুনে মুগ্ধ হন উপস্থিত অতিথি, সরকারি কর্মকর্তা, আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী, শিক্ষক, বিভিন্ন পেশাজীবী, অভিভাবকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। ভাষণ পাঠের পর খুলনার বিভাগীয় কমিশনার ড. মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে সোনার বাংলা গড়ার শপথ পাঠ করান শিক্ষার্থীদের।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বঙ্গবন্ধুর ভ্রাতুষ্পুত্র ও সংসদ সদস্য শেখ হেলাল উদ্দিন। সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক মো. হেলাল হোসেন। বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক, শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান এমপি, সংসদ সদস্য শেখ সালাহ উদ্দিন জুয়েল, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন, খুলনা মহানগর পুলিশ কমিশনার খন্দকার লুৎফুল কবির, খুলনা রেঞ্জ পুলিশের ডিআইজি ড. খ. মহিদ উদ্দিন, খুলনা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ হারুনুর রশীদ ও মহানগর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার অধ্যাপক আলমগীর কবীর।
অনুষ্ঠানে হুইপ পঞ্চানন বিশ্বাস, সংসদ সদস্য শেখ আকতারুজ্জামান বাবু, সাবেক সিনিয়র সচিব আবদুস সামাদ, পুলিশ সুপার এসএম শফিউল্লাহ, মাধ্যমিক এবং উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালকসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও অভিভাবকরা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঢাকা রেসকোর্স ময়দানে উপস্থিত থাকা আট ব্যক্তিকে সম্মাননা দেওয়া হয়। তারা হলেন বাগেরহাট-১ আসনের সংসদ সদস্য শেখ হেলাল উদ্দিন, খুলনা সিটি মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক, খুলনা-২ আসনের সংসদ সদস্য শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল, শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান এমপি, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ হারুনুর রশীদ, মুক্তিযুদ্ধকালীন মুজিব বাহিনীর খুলনা আঞ্চলিক প্রধান শেখ কামরুজ্জামান টুকু, খুলনা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মকবুল হোসেন মিন্টু ও ফুলতলা উপজেলা চেয়ারম্যান শেখ আকরাম হোসেন।
বাগেরহাট জেলার ১ হাজার ৬৮৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৭ মার্চ সকাল ১১টায় কয়েক লাখ শিক্ষার্থী একযোগে ৭ মার্চের ভাষণ পাঠ করে। জেলা সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক মামুনুর রশীদ। বাগেরহাট কামিল মাদ্রাসা মাঠে একই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক কামরুল ইসলাম। ৭ মার্চের ভাষণ ছাড়াও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আলোচনা সভা ও বঙ্গবন্ধুর ওপর নির্মিত তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
সকালে ঝিনাইদহ শহরের বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান স্টেডিয়ামে জেলা সদরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে আসা ৫ হাজার শিক্ষার্থী বঙ্গবন্ধু সেজে এসেছিল। তারা ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর মতো একই ভঙ্গিতে ১৯ মিনিটের ভাষণ প্রদান করে। শেষে সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভায় জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ঝিনাইদহ-১ আসনের সংসদ সদস্য আবদুল হাই, সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ খালেদা খানম, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব আকরাম-আল-হোসেন, পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামান ও জেলা পরিষদের সচিব রেজাই রাফিন সরকার।
বেলা ৩টা ২০ মিনিটে নড়াইল শহরের শিল্পী সুলতান মঞ্চ চত্বরে জেলা প্রশাসন ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজনে হাজারো কণ্ঠে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ ও শুদ্ধসুরে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়। এ সময় ৩০ ফুট লম্বা বঙ্গবন্ধু টাওয়ার, ২৭০/৮৫ ফুট বাংলাদেশের মানচিত্র ও ৬০/৩৬ ফুট জাতীয় পতাকা প্রদর্শন, গণসংগীত, কবিতা এবং আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।