মঞ্চসারথি আতাউর রহমান: আজকের স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের জনগণ চিরকালই নাট্যমুখী ছিল। আমাদের লোকজ প্রয়োগশিল্প, যেমনÑ যাত্রা ও পালাগান, কবিগান, কথকথা, পুঁথিপাঠ ইত্যাদির পাশাপাশি এবং পরে হলেও মঞ্চ-নাটক দর্শকদের মনে ঠাঁই করে নিয়েছিল। ব্রিটিশ এবং পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক শাসককালে আমাদের তৎকালীন পূর্ববঙ্গের নাট্যচর্চা অফিস ক্লাব ও পাড়ার ক্লাবসমূহের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পূজা-পার্বণে বিভিন্ন নাটমঞ্চে নাট্যাভিনয় হতো। এছাড়া স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বার্ষিক নাটক মঞ্চায়ন হতো। বর্তমান লেখক পাকিস্তান আমলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন আবাসিক হলে বার্ষিক নাটকের মঞ্চায়ন প্রত্যক্ষ করেছে। এছাড়াও কেন্দ্রীয়ভাবে ডাকসুও বার্ষিক নাটক পরপর দু-ই সন্ধ্যা মঞ্চায়ন করত। সে-সময়ে পরপর দু-সন্ধ্যা বা তিন সন্ধ্যা নাটকের মঞ্চায়ন হতো। নাটকগুলো বেশির ভাগই ঐতিহাসিক ঘটনাবলিকে কেন্দ্র করে রচিত হতো। মাঝেমধ্যে দু-একটি সামাজিক নাটকেরও মঞ্চায়ন হতো। নাট্যকারদের গিরিশ ঘোষ, শচীন সেনগুপ্ত এবং আমাদের দেশের কল্যাণ মিত্রের নাটক যথেষ্ট জনপ্রিয় ছিল।
আমাদের স্বাধীনতা অর্জনের পূর্বকালে নুরুল মোমেন, আনিস চৌধুরী, আসকার-ইবনে সাইক এবং মুনীর চৌধুরী নাট্যকার হিসেবে দর্শক-প্রিয় নাম ছিল। আবদুল্লাহ-আল-মামুনের নাট্যকার হিসেবে আত্মপ্রকাশ স্বাধীনতা অর্জনের পূর্বকালেই ঘটে। ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দে আমাদের মহান ও রক্তক্ষয়ী রাষ্ট্রভাষা অর্জনের সংগ্রামের মধ্য দিয়ে সূচনা হয় দ্রোহ-চেতনার নাট্য-সৃজন। আমাদের দেশ গৌরব মুনীর চৌধুরী রচনা করলেন ‘কবর’, যে নাটকটির নাম আজও ঘরে ঘরে সমাদৃত। আমরা এতকাল মঞ্চ-নাটককে বিনোদনের মাধ্যম হিসেবেই জানতাম। আজ তার সাথে আরেকটি অভিপ্রায় যুক্ত হয়েছেÑ নাটক গণশিক্ষার মাধ্যম এবং দ্রোহ-চেতনা প্রকাশেরও মাধ্যম। আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রধান পুরুষ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৫২-এর ভাষা আন্দোলনের একজন প্রধান বিপ্লবী ছিলেন এবং তার কারাবাসের সূচনা সে-সময় থেকে শুরু হয়। তিনিই নিয়ে এলেন স্বাধীনতা অর্জনের যুগপৎ সোনালি ও রক্তাপ্লুত সড়কে। আমরা স্বাধীনতা অর্জন করলাম সে হিমালয়-সম মহামানবের আবির্ভাবে। আমাদের নাটক পেল নতুন দ্যোতনা। আমাদের প্রাণপ্রিয় মাতৃভাষা বাংলা ভাষায় রচিত হলো বিশ্বমানের দ্রোহ-চেতনার নাটক। স্বাধীনতা অর্জনের ত্রহ্যস্পর্শে আমাদের নাট্য-ভুবন এক নতুন বিশ্বজয়ী রূপ পরিগ্রহ করল। যার প্রতিভাস কেবল মঞ্চে নয়, রেডিও ও টেলিভিশন নাটককেও প্রভাবিত করল।
আমাদের স্বাধীনতা অর্জনের সমবয়েসী আমাদের দর্শনীর বিনিময়ে নাট্যচর্চার ইতিহাস। নাট্যচর্চা পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক আমলেও ছিল; কিন্তু তা ছিল সখের থিয়েটার চর্চারই নামান্তর, নাটক পরপর দু-সন্ধ্যা অভিনীত হতো এবং শেষ হতো। স্বাধীনতার অর্জনের পরে ১৯৭৩ সালের প্রথম দিকে একটি নতুন অভিপ্রায় যুক্ত হলো। আমরা দর্শনী অর্থাৎ টিকিটের বিনিময়ে নাট্য প্রদর্শনীর অয়োজন করব এবং মঞ্চ-নাটকের পরপর একাধিক প্রদর্শনী হবে; ফলে একটি নাটকের ২০ থেকে ১০০টি প্রদর্শনী সে-সময়েই হয়েছে। নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের দেওয়ান গাজীর কিস্সার আজ অবধি প্রায় ৪০০টি প্রদর্শনী হয়েছে এবং লোক নাট্যদলের ‘কঞ্জুস’-এর প্রায় হাজার প্রদর্শনী ছুঁই ছুঁই করছে। গত ৪০ বছর ধরে আমরা যে কোনো মঞ্চ প্রযোজনার ৫০টির কম প্রদর্শনীর কথা ভাবিনি। চট্টগ্রামের তীর্যক নাট্যদল রবীন্দ্রনাথের ‘বিসর্জন’ এবং ‘রক্তকরবী’ নাটকের ২০০টি প্রদর্শনীর পথে এগিয়ে চলেছে। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশে ১৯৭২ সাল থেকে শুরু করে এই গত শতাব্দীর শেষ প্রান্ত সারাদেশের নাট্যচর্চা অনেক বেগবান ও প্রাণবন্ত ছিল। ঢাকা, চট্টগ্রাম, বরিশাল, কুমিল্লা, নোয়াখালী, ময়মনসিংহ, রাজশাহী, খুলনা, যশোর, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁওয়ে দর্শনীর বিনিময়ে নাট্যচর্চা ছিল অত্যন্ত বেগবান। নাটকের মানুষেরা ঢাকার নাটক সরণি মহিলা সমিতি ও গাইড হাউস মঞ্চে কোনো প্রযুক্তিগত সুবিধা ছাড়া, কেবলমাত্র ফ্যানের নিচে মাঝারি মঞ্চে, সাধারণ চেয়ার সম্বলিত মিলনায়তনে অসাধারণ সব নাট্য প্রযোজনা উপস্থাপন করেছে। মঞ্চ-নাটক তখন ছিল একটি উন্মাদনা ও প্রবল ভালোবাসার ধন। এখানে কোনো আর্থিক লাভের প্রশ্নই উঠত না। অনেক নাট্যকর্মী নিজেদের গাঁটের পয়সা খরচ করে মঞ্চ-নাটকে নিবেদিত থাকত; যা ছিল অনেকটা নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর মতো। উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের মানুষেরা আমাদের আর্থিক আয় শূন্য এই নাট্য প্রয়াস দেখে বিস্মিত হতো। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের পরে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশে তখনকার সময়ের অনেক নাট্যকর্মীই যুদ্ধাস্ত্র ছেড়ে নাটককে সামাজিক অস্ত্র হিসেবে বেছে নিয়েছিল। আমাদের সবার কাছে নাটক কেবল বিনোদনের মাধ্যম ছিল না, মঞ্চ-নাটক ছিল একটি গণশিক্ষারও মাধ্যম, যা সব ধরনের দুঃশাসন, অপসংস্কৃতি, মৌলবাদ, সাম্প্রদায়িকতা এবং সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সব সময়ই ছিল সোচ্চার, তবে মঞ্চ-নাটককে আমরা সবসময়ই প্রথমত ও প্রধানত প্রয়োগ শিল্পমাধ্যম হিসেবেই গণ্য করেছি। মঞ্চ-নাটক হচ্ছে সভ্যতার সমবয়েসী প্রয়োগ শিল্প। মিসরীয় যুগ ধরলে মঞ্চ-নাটকের বয়স পাঁচ হাজার বছর, প্রাচীন গ্রিসকে মঞ্চ-নাটকের সুবর্ণ সময় ধরলে বয়স প্রায় আড়াই হাজার বছর এবং আমাদের উপমহাদেশের নাট্যকার কালিদাস, শুদ্রক আর ভাসের সময়কে ধরা হলে মঞ্চ-নাটকের বয়স প্রায় দু-হাজার বছর। সে তুলনায় চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন মাধ্যম অভিনয় শিল্পের পরিপ্রেক্ষিতে একেবারেই নবীন। মঞ্চ-নাটক হচ্ছে অভিনয় শিল্পের সূতিকাগার। গ্রিসের মানুষরা বিশ্বাস করত যে মঞ্চ-নাটক একটি জাতির পরিচয় বহন করে অথবা একটি জাতিকে চেনা যায় তার মঞ্চ-নাটকের দর্পণে। সে-কারণেই বিশ্বব্যাপী চলচ্চিত্র, টেলিভিশন এবং অন্যান্য বিনোদন মাধ্যমের আগ্রাসন সত্ত্বেও মঞ্চ-নাটক সুস্থ-সবল দেহে জঙ্গম পদযাত্রায় আজও তার বিজয় পতাকা উড়াচ্ছে। আমাদের দেশেও এর ব্যত্যয় ঘটেনি। দেশের মানুষ এক বাক্যে মেনে নিয়েছিল যে, আমাদের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেরা ফসল আমাদের মঞ্চ-নাটক। সে-কারণেই আমাদের মঞ্চের মানুষেরা গত ৪৮ বছর ধরে মঞ্চের বিজয় পতাকা হাতে নিয়ে মঞ্চ-নাটকের চর্চায় নিরলস রয়েছে। আমাদের দেশের নাট্যকর্মীরা তাদের মঞ্চ-নাটকের চর্চাকে কর্মযোগের সাধনা হিসেবে গ্রহণ করেছে এবং সে-কারণেই আমাদের দেশের নাট্যজনরা বাংলাদেশের হাজার বছরের পুরনো সভ্যতা, সংস্কৃতি ও কৃষ্টিকে আলিঙ্গন করে কর্মিষ্ঠ রয়েছে। যাত্রা, পালাগান, পুঁথিপাঠসহ আরও অসংখ্য লোকজ আঙ্গিক আমাদের আধুনিক নাটকের মঞ্চে অনায়াসে স্থান করে নিয়েছে। আমাদের মুনীর চৌধুরী, নুরুল মোমেন, আনিস চৌধুরীর মতো প্রতিভাবান নাট্যকারেরাও আগে থেকেই ছিলেন। স্বাধীনতা অর্জনের পরে তাদের সাথে কাঁধ মেলালেন মমতাজ উদ্দিন আহম্মেদ, আবদুল্লাহ-আল-মামুন, মামুনুর রশীদ, সেলিম আল-দীন, সৈয়দ শামসুল হকের মতো মেধাবী নাট্যকাররা। এই সেরা নাট্যকারদের পাশাপাশি আমাদের মঞ্চ শোভিত হলো বাংলা ভাষার প্রধান নাট্যকার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাট্য সম্ভার থেকে বেছে নেওয়া বেশ কয়েকটি নাট্য প্রযোজনা দিয়ে। তার ‘রক্তকরবী’, ‘বিসর্জন’, ‘তাসের দেশ’, ‘অচলায়তন’, ‘মুক্তধারা’, ‘রথের রশি’, ‘রাজা’ বিপুলভাবে অভিনীত হয়েছে ঢাকায় এবং ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলা শহরে। পাশাপাশি ভারতের নাট্যকার বাদল সরকার, মনোজ মিত্র, উৎপল দত্ত, বুদ্ধদেব বসু, বিজয় টেন্ডুলকার, গিরিশ কার্নাড প্রমুখের নাটকও ঢাকা এবং চট্টগ্রামের মঞ্চে অভিনীত হয়েছে। রবীন্দ্রনাথের সমসাময়িক নাট্যকার দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের ‘সাজাহান’ নাটক মঞ্চায়িত হয়েছে মহিলা সমিতি মঞ্চে। সংক্ষেপে এই তালিকা দেওয়া হলো। এছাড়া বিশ্বের সেরা নাট্যকার উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের ‘ম্যাকবেথ’, ‘টেম্পেস্ট’, ‘ত্রয়লাস ও ক্রেসিদা’, ‘এজ ইউ লাইক ইট’, ‘টেমিং অব দ্য শ্রু’, ‘মার্চেন্ট অব ভেনিস’, ‘এ মিড সামারাস নাইটস ড্রিম’, ‘হ্যামলেট’, ‘ওথেলো’, ‘কোরিওলেনাস’সহ আরও কয়েকটি নাটক ঢাকা ও দেশের অন্যান্য জেলা শহরের মঞ্চে নিয়মিতভাবে অভিনীত হয়েছে। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিসহ দেশের নাট্যকর্মীরা কিছুদিন আগে খুব জাঁকজমকের সাথে শেক্সপিয়ারের ৪০০তম মৃত্যুবার্ষিকী এবং ৪৫২তম জন্মবার্ষিকী পালনের লক্ষ্যে বছরব্যাপী এক কর্মসূচির সূচনা করেছিল। এই কর্মসূচিতে শেক্সপিয়ারকে ঘিরে বছরব্যাপী নানা বর্ণিল আয়োজনের কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়াও, হেনরিক ইবসেন, মলিয়ের, বের্টল্ট ব্রেশট, চেকভ, দারিয়ো ফো, আলবেয়ার ক্যামু, ফেরেঙ্ক মলনার, এডওয়ার্ড এ্যালবি, কার্ল স্যুখমায়ার, স্যামুয়েল বেকেট, এরিয়েল ডর্ফম্যান, জন মিলিংটন সিঙ্গ, স্ট্রিন্ডবার্গ, জাঁ পল সাঁত্রে, হেরল্ড পিন্টার, ইউজিন ও নীল, তৌফিল-আল-হাকিম, স্বদেশ দীপক-সহ প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের বরেণ্য আরও নাট্যকাররা বাংলাদেশের মঞ্চে ঠাঁই করে নিয়েছে, হয় অনুবাদে না হয় রূপান্তরিত রূপে। লোকজ আঙ্গিকের পাশাপাশি আধুনিক নাট্য আঙ্গিককেও এদেশের নাট্যকর্মীরা আলিঙ্গন করেছে। আমাদের দেশের নাট্যপদযাত্রা আজও অব্যাহত আছে। বর্তমানে সারাদেশে ৩৫০টির মতো নাট্যদল সক্রিয় রয়েছে এবং রাজধানী শহর ঢাকায় ৬০টির মতো নাট্যদল নিয়মিত নাট্যচর্চা করে চলেছে। বর্তমানে ৬টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে নাট্যকলা আলাদা বিষয় হিসেবে স্বয়ংসম্পূর্ণ বিভাগে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে পঠিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও শিক্ষকদের আনুকূল্যে অত্যন্ত মনোগ্রাহী নাট্য প্রযোজনা করে চলেছে। এছাড়াও দেশের বেশ কয়েকটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে নাট্যকলা পৃথক বিষয় হিসেবে পড়ানো হয়। তবে, এই সত্যটি মেনে নিতে হবে যে বর্তমানে নাট্যচর্চায় আগের সেই জোয়ার অব্যাহত নেই। এর জন্য মঞ্চ-নাটককে সরকারি, বিভিন্ন ফাউন্ডেশন ও বহুজাতিক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের আর্থিক আনকূল্য লাভ করতে হবে। পৃথিবীর সব দেশেই কেবল বাণিজ্যিক থিয়েটার ছাড়া, সব ন্যাশনাল থিয়েটারগুলো বৃহৎ অঙ্কের সরকারি অনুদান লাভ করে আসছে। দেশের নাট্যদলগুলোকে পেশাজীবিত্ব অর্জনের জন্যে সরকারি ও বেসরকারি অনুদান লাভ করা আশু প্রয়োজন। এছাড়া বর্তমানে ঢাকা শহরে শিল্পকলা একাডেমির ৩টি নাট্যশালায় নাট্যচর্চার প্রধান স্থান হয়েছে। মঞ্চ নাটককে ছড়িয়ে দিতে হলে গুলশান, মিরপুর, উত্তরা এবং পুরনো ঢাকায় নাট্যশালার প্রয়োজন। বর্তমানে অব্যাহত যানজটের কারণে ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও শিল্পকলা একাডেমি মঞ্চগুলোতে রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে দর্শক নাটক দেখতে আসতে পারে না। বর্তমানের সংস্কৃতিবান্ধব সরকার মঞ্চ নাটকের প্রচার ও প্রসারের জন্য হাত বাড়িয়ে দেবে এমন প্রত্যয় আমাদের আছে। তবেই না সুস্বাস্থ্য এবং দর্শকপ্রিয়তা নিয়ে আমাদের গর্বের মঞ্চ-নাটক বেঁচে থাকবে এবং সারাবিশ্বে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হবে। সভ্যতার সমবয়েসী আমাদের মঞ্চ-নাটক এক অনন্য প্রয়োগ শিল্প মাধ্যম হিসেবে ভবিষ্যতে প্রচার ও প্রসার লাভ করবে, এই প্রত্যয় আমি ব্যক্ত করছি নির্দ্বিধায়।
সবশেষে, আমাদের নাট্য আন্দোলনের আধুনিক সূচনা পর্ব ছিল ১৯৫২-এর ভাষা আন্দোলন। বাংলা ভাষা আমাদের নতুন দ্যোতনায় উজ্জীবিত হলো আমাদের দেশের মৌলিক, অনূদিত এবং রূপান্তরিত নাটকসমূহে তার প্রভাব পড়ল। আমাদের বাংলা ভাষার নাট্যকাররা বিশ্বজয়ী হলেন। ১৯৫২-এর ভাষা আন্দোলনের দ্রোহ চেতনার প্রভাব পড়ল আমাদের রেডিও ও টেলিভিশন নাটকেও। বাংলা ভাষা আজকের পৃথিবীতে অন্যতম প্রধান ভাষা হিসেবে বিবেচিত। ১৯৫২-এর রক্তক্ষয়ী ভাষা আন্দোলন ছিল তার সূতিকাগার। আমাদের দ্রোহ চেতনার উত্তরণ ঘটে তখন থেকেই, যা আমাদের স্বাধীনতা অর্জনের পথে নিয়ে যায়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর দুর্বার শক্তির উৎস ছিল বাংলা ভাষা এবং বাঙালি জাতীয়তাবাদ। জয় হোক আমাদের ভাষা আন্দোলনের, জয় হোক বাঙালি জাতির, জয় হোক জাতির কা-ারি ও পিতা মৃত্যুঞ্জয়ী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের। তোমার জন্মশতবর্ষে তোমাকে জানাই আমাদের প্রণতি, কারণ তুমি আমাদের মাঝে না এলে আজ আমরা জাতিভিত্তিক ও ভাষাভিত্তিক রাষ্ট্র বাংলাদেশ পেতাম না। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।
লেখক : অভিনেতা, নাট্য নির্দেশক, কবি ও ২১শে পদকপ্রাপ্ত