Wednesday, October 4, 2023
বাড়িদশম বর্ষ, প্রথম সংখ্যা-ডিসেম্বর-২০১৯রাজনীতির মূলধারা আওয়ামী লীগ

রাজনীতির মূলধারা আওয়ামী লীগ

‘২১তম কাউন্সিল উপলক্ষে আওয়ামী লীগ ও এর অগণিত নেতা-কর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ীকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। এই কাউন্সিলে নির্বাচিত নতুন নেতৃত্ব বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে একদিকে দলে অনুপ্রবেশকারী ও নীতিভ্রষ্টদের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান গ্রহণ, অপরদিকে বঙ্গবন্ধুর লালিত স্বপ্ন ক্ষুধা-দারিদ্র্য, অশিক্ষা, দুর্নীতিমুক্ত উন্নত-সমৃদ্ধ আধুনিক বাংলাদেশ তথা বঙ্গবন্ধুর ‘সোনার বাংলা’ প্রতিষ্ঠায় বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করবেন, এটিই জাতির প্রত্যাশা।’

ড. হারুন-অর-রশিদ: বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এদেশের একটি অনন্য অসাধারণ রাজনৈতিক দলের নাম। আওয়ামী লীগ দীর্ঘ ৭০ বছরের সংগ্রামী ইতিহাস ও ঐতিহ্যের পতাকাবাহী একটি প্রতিষ্ঠান। ১৯৪৯ সালে প্রতিষ্ঠা থেকে আজ অবধি নিরবচ্ছিন্নভাবে বাঙালির সমাজ-রাজনীতি-সংস্কৃতির মূলধারা সমন্বয়, সমতা ও সম্প্রীতির আদর্শকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বহতা নদীর মতো ধারণ করে চলেছে। স্বাধীনতাসহ জাতির যা কিছু শ্রেষ্ঠ অর্জন, এর সিংহভাগ কৃতিত্ব এই দলের। জাতির পিতার নেতৃত্বে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করে এই দল থেমে থাকেনি, এই রাষ্ট্রের সার্বিক গঠন-গড়নে শুরু থেকে একচ্ছত্র নেতৃত্ব দিয়ে আজ জাতির জনকেরই সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ ও সৃজনশীল (Creative) নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ দেশকে উন্নয়নের মহাসড়কে বর্তমান পর্যায়ে তুলে এনেছে- এক অভাবনীয় উচ্চতায়, যা সারাবিশে^র জন্য আজ এক বড় বিস্ময়।
পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার মাত্র এক বছর ১০ মাসের মধ্যে বিরোধী রাজনৈতিক দল গঠন কিছুতেই সহজসাধ্য ছিল না। মুসলিম লীগ সরকারের রক্তচক্ষুর ভয়ে সেদিন ঢাকা শহরের কোথাও কেউ সরকার-বিরোধী রাজনৈতিক কর্মী সম্মেলনের জন্য হলরুম ভাড়া বা জায়গা দিতে সম্মত হননি। অবশেষে উদ্যোক্তাদের ঠাঁই হলো পুরান ঢাকার কে এম দাস লেনের কে এম বশির (হুমায়ুন সাহেব নামে পরিচিত)-এর ‘রোজ গার্ডেন’ বাগানবাড়িতে। বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগের সোহরাওয়ার্দী-আবুল হাশিম সমর্থক প্রগতিশীল অংশের কর্মীদের উদ্যোগে ১৯৪৯ সালের ২৩ ও ২৪ জুন অনুষ্ঠিত সম্মেলনে আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা পায়। কারাবন্দি অবস্থায় মাত্র ২৯ বছর বয়সে বঙ্গবন্ধু হলেন এর প্রতিষ্ঠাতা যুগ্ম সম্পাদক। তবে অচিরেই তিনি পরিণত হন এর প্রাণশক্তি রূপে। ১৯৫৩ সালেই পুরান ঢাকার মুকুল সিনেমা হলে ৩-৫ জুলাই অনুষ্ঠিত দলের কাউন্সিলে তার সাংগঠনিক রিপোর্ট পেশ কালে তিনি এই মর্মে ভবিষ্যৎ বাণী করেছিলেন,


আমাদের এই মহান কাউন্সিল অধিবেশন সাংগঠনিক ও অন্যান্য ব্যাপারে এমন গভীর বাস্তব ধর্মী সিদ্ধান্ত করিবে যে, উহা আমাদের সংগঠনকে উদ্দীপিত … করিয়া বর্ত্তমান ও ভবিষ্যৎ গণতান্ত্রিক দুনিয়ার জন্য এক অমর ইতিহাস সৃষ্টি করিবে।
বাঙালির হাজার বছরের স্বতন্ত্র জাতিসত্তার গঠন-গড়ন প্রক্রিয়ার ভেতর থেকে গড়ে ওঠা স্বাধীনতার স্বপ্ন, সংগ্রাম, লড়াই বা জাতির সার্বিক মুক্তির আকাক্সক্ষা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে পাকিস্তানি পর্বে মূর্ত হয়ে চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। সৃষ্টি হয় বাংলাদেশ বিপ্লব ১৯৭১। প্রতিষ্ঠা পায় স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র, বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু বাঙালির এই ইতিহাসের মহানায়ক। আর যে প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বাঙালি জাতির ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন, সেই প্রতিষ্ঠানের নাম আওয়ামী লীগ।
পুরান ঢাকার রোজ গার্ডেনে প্রতিষ্ঠা হলেও, আওয়ামী লীগের চলার পথ কখনোই কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না। এর কোনো সাফল্য বা অর্জনই আলোচনার গোলটেবিলে অর্জিত হয়নি। এ জন্য চরম বৈরী পরিবেশে কঠিন আন্দোলন-সংগ্রাম ও আত্মত্যাগ করতে হয়। পাকিস্তানি পর্বে ’৪৮-এর ভাষা-আন্দোলন থেকে শুরু আর ’৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের মাধ্যমে একটি পর্বের পরিসমাপ্তি ঘটে। পাকিস্তান ও বাংলাদেশ পর্বের এ-যাবৎ সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য যত আন্দোলন-সংগ্রাম ও অর্জন, আওয়ামী লীগ ব্যতিরেকে এর কোনো অর্জনই কি ভাবা সম্ভব? আর এসব অর্জনই হচ্ছে বঙ্গবন্ধু ও তার কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। উল্লেখ্য, প্রতিষ্ঠাকালীন যুগ্ম সম্পাদকের সময় বাদ দিলে, বঙ্গবন্ধু ১৪ বছর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক (১৯৫২-১৯৬৬) এবং আট বছর (১৯৬৬-১৯৭৪) সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। অপরদিকে, জননেত্রী শেখ হাসিনা ১৯৮১ থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত দীর্ঘ ৩৮ বছর ধরে এই সংগঠনের সভাপতির দায়িত্ব পালন করে চলছেন। যা কিছু আওয়ামী লীগের অর্জন, তা অনিবার্যভাবে এদেশের জনগণেরই অর্জন। ‘আওয়াম’ অর্থ জনগণ আর ‘লীগ হচ্ছে ঐ জনগণের সম্মিলনী’ বা ঐক্য। এদেশের জন-গণ-মন নন্দিত দলের নামই হচ্ছে আওয়ামী লীগ।
মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী ন্যূনতম সময়ের মধ্যে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের পুনর্গঠন-পুনর্বাসন সম্পন্ন করে বঙ্গবন্ধু যে মুহূর্তে সদ্য স্বাধীন রাষ্ট্রের একটি শক্তিশালী ভিত রচনা ও এর সার্বিক উন্নয়নে মনোনিবেশ করছিলেন, ঠিক তখনই মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত দেশি-বিদেশি চক্রের পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রে সংঘটিত হয় বাঙালির জাতির ইতিহাসে সবচেয়ে মর্মান্তিক, ১৫ আগস্ট ট্র্যাজেডি। এরপর মোশতাক-জিয়া-এরশাদ-বেগম খালেদা জিয়া ও বিএনপি-জামাত জোট সরকারের আমলে এদেশে মুক্তিযুদ্ধে প্রত্যাখ্যাত সেই পাকিস্তানি সেনা-আমলা শাসন ও সাম্প্রদায়িক ধারার পুনঃপ্রত্যাবর্তন ঘটে।
জাতির এমনই এক ক্রান্তিকালে কাণ্ডারির ভূমিকায় এগিয়ে এলেন বঙ্গবন্ধু হত্যার পর বিদেশে দীর্ঘ ছয় বছর নির্বাসনে থাকতে বাধ্য হওয়া তারই জ্যেষ্ঠ কন্যা, শেখ হাসিনা। প্রবাসে নির্বাসিত থাকা অবস্থায় ১৯৮১ সালের ১৪-১৬ ফেব্রুয়ারি হোটেল ইডেনে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে তিনি সর্বসম্মতিক্রমে দলের সভানেত্রী নির্বাচিত হন। একই বছর ১৭ মে তিনি স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেন। বলা যায়, সেদিন থেকেই শুরু হয় জনগণের ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশকে গড়ে তোলার তার নিরন্তর সংগ্রাম, যা ৩৮ বছর ধরে চলছে। এই আন্দোলন-সংগ্রামের দীর্ঘ পথে শেখ হাসিনাকে গ্রেফতারবরণ, একাধিকবার গৃহে অন্তরীণ থাকা, প্রায় এক বছর তার শেরে বাংলানগরের নির্জন কক্ষে সাব-জেলে কাটানো, মিথ্যা মামলায় বিশেষ আদালতে বিচারের সম্মুখীন হওয়া, হত্যার উদ্দেশ্যে জনসভা স্থলে বিধ্বংসী বোমা পুঁতে রাখা, জনসভা স্থলের উদ্দেশ্যে যাত্রাকালে গাড়িবহরে শত-শত রাউন্ড গুলিবর্ষণ ও বহু লোককে হতাহত করা (চট্টগ্রাম, ২৪ জানুয়ারি ১৯৮৮), ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলাসহ ২৪ বার তার নিজের প্রাণনাশের উদ্দেশ্যে আক্রমণের চেষ্টা ইত্যাদি তাকে মোকাবিলা করতে হয়েছে। ক্ষমতার বাইরে তো বটেই, এমনকি ক্ষমতায় থাকাকালীনও আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত ও প্রতিক্রিয়াশীল অপশক্তির ষড়যন্ত্র, সন্ত্রাসী তৎপরতা ইত্যাদি মোকাবিলা করে সব সময় এগিয়ে যেতে হয়েছে।
সংগঠনগতভাবে আওয়ামী লীগ এক মহান ঐতিহ্যের অধিকারী প্রতিষ্ঠান। যেমন- ২০১৯ সাল পর্যন্ত দলটি ৭০ বছরে ২১টি নিয়মিত কাউন্সিল এবং ৬টি বিশেষ কাউন্সিল অধিবেশন অনুষ্ঠিত করেছে, অর্থাৎ (বিশেষ কাউন্সিল বাদে) গড়ে প্রায় তিন বছরে একটি করে নিয়মিত কাউন্সিল। ২০১৯ সালের ২১-২২ ডিসেম্বর দলের পরবর্তী ত্রি-বার্ষিক কাউন্সিল অধিবেশন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বাংলাদেশে ডান-বাম নির্বিশেষে আর কোনো দল এভাবে প্রায় নিয়মিত কাউন্সিল অধিবেশন অনুষ্ঠিত করতে পারেনি বা করেনি।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ শুধু ক্ষমতা-প্রত্যাশী একটি গতানুগতিক রাজনৈতিক দল নয়, আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের সমাজ-সংস্কৃতি-রাজনীতির একটি বিশেষ ধারার প্রতিনিধিত্বকারীও। আর সেই ধারাই হচ্ছে বাংলাদেশের মূলধারা। এর সারকথা হচ্ছে- সমন্বয়, সমতা ও সম্প্রীতি। দেশের বৃহত্তম, দায়িত্বশীল ও ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে আওয়ামী লীগ শুধু দেশ পরিচালনায়ই নেতৃত্ব দেয় না, একই সঙ্গে দেশবাসীর সম্মুখে তুলে ধরে পথ চলার অগ্রবর্তী চিন্তাও।
বাঙালির সমন্বয় ও সম্প্রীতির আদর্শ, অন্যকথায়, অসাম্প্রদায়িকতা হচ্ছে সমাজ-রাজনীতির মূলধারার প্রধান বৈশিষ্ট্য। হাজার বছরের সময় পরিসরে এই আদর্শ সৃষ্টি ও তা ভিত্তি লাভ করে। পাকিস্তান পর্বে ’৪৮-’৫২-এর ভাষা-আন্দোলন থেকে শুরু করে বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে তা প্রবল রাজনৈতিক ধারা হিসেবে রূপ লাভ করে। সংগঠনগতভাবে এই পর্বে সকল আন্দোলন-সংগ্রামের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগকে রাজনীতির মূলধারা হিসেবে যদি মনে না করা যায়, তাহলে ’৪৮ থেকে ’৭১-এ সময়ের সকল আন্দোলন, এর আদর্শিক ভিত্তি, পরিশেষে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ইত্যাদির ব্যাখ্যা কী হবে? ধর্মভিত্তিক দ্বি-জাতিতত্ত্বের বিপরীতে দাঁড়িয়ে অসাম্প্রদায়িক আদর্শের ভিত্তিতেই স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠা। অসাম্প্রদায়িকতার আদর্শ যদি প্রধান ধারা না হবে (যার সার্থক প্রতিনিধিত্বকারী দল আওয়ামী লীগ), তাহলে ১৯৭০ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত যতগুলো নির্বাচন হয়েছে, তাতে জামায়াতে ইসলামীর মতো ধর্মভিত্তিক দল গড়ে ৬ শতাংশের বেশি ভোট লাভ করে না কেন? আবার এ-কথাও মনে রাখা প্রয়োজন যে, ভোটের সংখ্যা বিচার করেই রাজনীতির মূলধারা বিচার করা যায় না। আমাদের দেশে জিয়া-এরশাদ, খালেদা জিয়ার অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচন এমনকি ‘সালসা’ মার্কা (২০০১) নির্বাচনের কোনোটিতেই যে ব্যালটে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটেনি বা ঘটতে দেওয়া হয়নি, তা দেশবাসী সকলেরই জানা রয়েছে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ এককভাবে ৪৮.০৪ শতাংশ ভোট ও ২৩০টি আসন লাভ করে। পক্ষান্তরে, বিএনপি-জামাত জোট ৩৭.২০ শতাংশ ভোট এবং ৩২টি আসন লাভ করে (বিএনপি ৩২.৫০ শতাংশ ভোট এবং ৩০টি আসন অপরদিকে জামাত ৪.০ শতাংশ ভোট ও ২টি আসন পায়)।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতার নির্মম হত্যার পর দীর্ঘ ২১টি বছর বাংলাদেশ পাকিস্তানি ধারায় পরিচালিত হয়। এ-সময়ে বিভিন্ন সরকারের আশ্রয়-প্রশ্রয় ও বিদেশি উৎস থেকে প্রাপ্ত অর্থবলে আমাদের দেশে ধর্মীয় নামাবলি পরিহিত জঙ্গিগোষ্ঠীর উত্থান ঘটে। সামরিক-বেসামরিক গোষ্ঠীর আচরণও ছিল আওয়ামী লীগের প্রতি বৈরী। এমনই একটি চরম প্রতিকূল অবস্থার মধ্য দিয়ে ২১ বছর ক্ষমতার বাইরে থেকে সর্বশেষে ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠনের সুযোগ লাভ করে। মূলধারার প্রতিনিধিত্বকারী দল বা সংগঠন না হলে আওয়ামী লীগের ঐ অবস্থা থেকে কিছুতেই উত্তরণ ঘটার কথা নয়। আওয়ামী লীগ চরম প্রতিকূল অবস্থা থেকে উঠে এসেছে এবং পূর্বের ঐ পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তির আর কোনো সম্ভাবনা যে বাংলাদেশের রাজনীতিতে নেই, তা প্রায় নিশ্চিত করে বলা যায়। আওয়ামী লীগ যদি মূলধারাকেই প্রতিনিধিত্ব না করত, তাহলে এর পরিণতি পাকিস্তানের মুসলিম লীগ, ভারতের কংগ্রেসের বেহাল অবস্থা কিংবা বাংলাদেশের বিলুপ্ত বা প্রায় বিলুপ্ত বহু রাজনৈতিক দলের ভাগ্য বরণ করতে হতো। সেটি ঘটেনি এবং ভবিষ্যতেও তা ঘটার সম্ভাবনা নেই। রাজনৈতিক বাস্তববাদিতা (Political Realism), পরিবর্তিত অবস্থার সাথে খাপ খাইয়ে চলন ক্ষমতা বা পরিবর্তনশীলতা (Responsiveness/ Adaptabilit), দায়িত্বশীল ও গঠনমূলক ভূমিকা, অফুরন্ত ধারণ ক্ষমতা (Absorbability), উদ্ভাবনী ক্ষমতা (Ingenuity), নবীন-প্রবীণের সেতুবন্ধন (Recruitment) ইত্যাদি আওয়ামী লীগের বলিষ্ঠ দিক। মূলধারাকে প্রতিনিধিত্ব করে বলেই আওয়ামী লীগের দিনে দিনে আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠার সম্ভাবনাই বেশি।
২১তম কাউন্সিল উপলক্ষে আওয়ামী লীগ ও এর অগণিত নেতা-কর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ীকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। এই কাউন্সিলে নির্বাচিত নতুন নেতৃত্ব বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে একদিকে দলে অনুপ্রবেশকারী ও নীতিভ্রষ্টদের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান গ্রহণ, অপরদিকে বঙ্গবন্ধুর লালিত স্বপ্ন ক্ষুধা-দারিদ্র্য, অশিক্ষা, দুর্নীতিমুক্ত উন্নত-সমৃদ্ধ আধুনিক বাংলাদেশ তথা বঙ্গবন্ধুর ‘সোনার বাংলা’ প্রতিষ্ঠায় বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করবেন, এটিই জাতির প্রত্যাশা। জয় বাংলা। জয় বঙ্গবন্ধু। জয়তু আওয়ামী লীগ।

লেখক : প্রফেসর, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও উপাচার্য, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়

আরও পড়ুন
spot_img

জনপ্রিয় সংবাদ

মন্তব্য