উত্তরণ প্রতিবেদন: ২৯ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এমপি এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা-১০ আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপসকে দক্ষিণ এবং বর্তমান মেয়র আতিকুল ইসলামকে উত্তরে দলীয় প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেন। ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে আওয়ামী লীগ সমর্থিত দুই সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন ওবায়দুল কাদের। পরিচ্ছন্ন ইমেজ, জনপ্রিয়তাসহ সব কিছু বিচার-বিশ্লেষণ করেই মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের মেয়র পদে আতিকুল ইসলাম এবং ফজলে নূর তাপসের প্রার্থিতা ঘোষণার পর তাদের হাত উঁচু করে ধরেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ অন্য নেতারা।
সংবাদ সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে ৭৫ জন এবং উত্তর সিটি কর্পোরেশনে ৫৪ জন আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলরদের নাম ঘোষণা করেন। সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের বিপুলসংখ্যক কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন। গত ২৮ ডিসেম্বর রাতে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে গণভবনে অনুষ্ঠিত দলের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠকে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থিতা চূড়ান্ত করা হয়। উত্তর ও দক্ষিণের জন্য মোট ২০ জন মেয়র পদে দলের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছিলেন।
দলের মনোনয়ন পাওয়ার পরপরই সংসদ সদস্য পদ থেকে পদত্যাগপত্র স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর কাছে জমা দিয়েছেন ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস। আর আনিসুল হকের মৃত্যুর পর এ-বছর ফেব্রুয়ারিতে উপনির্বাচনে জিতে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের দায়িত্বে আসেন বিজিএমই’র সাবেক সভাপতি ব্যবসায়ী নেতা মো. আতিকুল ইসলাম। এবারও তাকে মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ।
উন্নত বাংলাদেশের জন্য উন্নত রাজধানী প্রয়োজন
তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস তাকে মনোনয়ন প্রদানের জন্য আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা এবং দলের মনোনয়ন বোর্ডের সদস্যদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানান, সেই সঙ্গে স্মরণ করেন ঢাকা উত্তর সিটির প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের অবদানের কথা। আনিসুল হকের কাজ থেকে অনুপ্রেরণা পাওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক অল্প সময়ে প্রমাণ করেছিলেনÑ সততা, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করলে মানুষের দরজায় কীভাবে নাগরিক সেবা পৌঁছানো সম্ভব। সেটিকে পুঁজি করে আমি কাজ করতে চাই। আর ঢাকা দক্ষিণের মানুষের সহযোগিতা চাই। তারা আমাকে সমর্থন দিয়ে আমার প্রতি আস্থা রেখে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করলে একটি সুন্দর নগরী উপহার দেব। নির্বাচিত হলে কী করবেন? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিন তিনবার নির্বাচিত এই সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার তাপস বলেন, জনগণ যদি আমাকে নির্বাচিত করে, দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের আপামর জনগণের নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করতে আমার পূর্ণ সময় আমি কাজ করে যাব। ঢাকা-১০ আসনের নির্বাচিত সংসদ সদস্য হিসেবে কাজ করতে গিয়ে আমি উপলব্ধি করেছি, আমাদের প্রাণপ্রিয় নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উন্নত বাংলাদেশের জন্য কাজ করে চলেছেন। আমাদের রূপকল্প দিয়েছেন একটি উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণের। সেই উন্নত বাংলাদেশের জন্য একটি উন্নত রাজধানী প্রয়োজন। সেই উন্নত রাজধানী গড়ার লক্ষ্যে এই সুযোগটা আমি গ্রহণ করব, জনগণের কাছে যাব।
পেশায় আইনজীবী ব্যারিস্টার তাপস রাজনীতিতে তার অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে বলেন, ঢাকা দক্ষিণের জনগণ যদি আমাকে নির্বাচিত করে, তাহলে বৃহৎ পরিসরে, ঐতিহ্যবাহী পুরান ঢাকার ঐতিহ্য সংরক্ষণ করে স্বমহিমায় প্রস্ফুটিত করার লক্ষ্যে এবং পুরান ঢাকার অধিবাসীদের দীর্ঘদিনের অবহেলা ঘুচিয়ে তাদের একটি উন্নত রাজধানী, যেখানে সকল নাগরিক সুযোগ-সুবিধা থাকবেÑ আমি সেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি।
এদিকে দ্বিতীয়বারের মতো মেয়র পদে আওয়ামী লীগের সমর্থন পাওয়ায় বক্তব্যের শুরুতেই দলের সভাপতি শেখ হাসিনাসহ দলের মনোনয়ন বোর্ডের সদস্যদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের বর্তমান মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম। উত্তরের ভোটারদের সহযোগিতা কামনা করে তিনি বলেন, উপনির্বাচনে নির্বাচন করে বিজয়ী হওয়ার পর গত ৯ মাসে যে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেছি, সবাই জানেন, যেদিন থেকে দায়িত্ব পেয়েছি সেদিন থেকে একটি দিনও সময় নষ্ট করিনি। তাই আসুন আমরা সবাই মিলে একটা সুন্দর ঢাকা শহর গড়ে তুলি। আমরা জানি আমাদের কী চ্যালেঞ্জ রয়েছে, এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হলে একসঙ্গে সবাই মিলে কাজ করতে হবে।
এদিকে স্থানীয় সরকার সিটি নির্বাচন আইন অনুযায়ী, সংসদ সদস্য বা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র পদে থেকে কেউ মেয়র পদে নতুন নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন না। সে অনুযায়ী স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন ঢাকা-১০ আসন থেকে নির্বাচিত ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস।
ঢাকার দুই সিটির নির্বাচন ৩০ জানুয়ারি
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) নির্বাচন আগামী ৩০ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে। গত ২২ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশন ভবনে এ দুই সিটি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদা। এবারে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ঐদিন সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ করা হবে।
সিইসি কেএম নূরুল হুদা জানান, নির্বাচনে প্রার্থীদের মনোনয়ন দাখিলের শেষ দিন ছিল ৩১ ডিসেম্বর। মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই করা হয় ২ জানুয়ারি। প্রার্থিতা প্রত্যাহার এর শেষ দিন ছিল ৫ জানুয়ারি। প্রতীক বরাদ্দ করা হবে ১০ জানুয়ারি। বিদ্যমান ভোটার তালিকা দিয়েই ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটিতে নির্বাচন করা হবে। ৫৪টি সাধারণ ওয়ার্ড ও ১৮টি সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি)। এ নির্বাচনে ১ হাজার ৩৪৯টি ভোটকেন্দ্রের ৭ হাজার ৫১৬টি ভোটকক্ষে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে ৩০ লাখ ৩৫ হাজার ৬২১ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাবেন।
অন্যদিকে ৭৫টি সাধারণ ওয়ার্ড ও ২৫টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে (ডিএসসিসি)। এ নির্বাচনে ১ হাজার ১২৪টি ভোটকেন্দ্রের ৫ হাজার ৯৯৮টি ভোটকক্ষে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। মোট ২৩ লাখ ৬৭ হাজার ৪৮৮ ভোটার এ নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল ঢাকার দুই সিটির নির্বাচন একযোগে অনুষ্ঠিত হয়। তবে উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আনিসুল হক মৃত্যুবরণ করলে সেখানে উপনির্বাচন হয় গত বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি।