উত্তরণ প্রতিবেদন: ওয়াসার পানি ব্যবহারে সবাইকে মিতব্যয়ী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বিল কমানোর চিন্তা থেকে হলেও পানি অপচয় করবেন না। কম পানি ব্যবহার করলে বিলও কম আসবে।’ গত ১০ অক্টোবর সকালে প্যান প্যাসিফিক হোটেল সোনারগাঁওয়ে এক অনুষ্ঠানে মুন্সিগঞ্জের লৌহজংয়ের জশলদিয়ায় পদ্মা ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট (ফেজ-১), ঢাকার সাভারের তেঁতুলঝরায় ওয়েল ফিল্ড কনস্ট্রাকশন প্রজেক্ট (ফেজ-১) এবং নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের গান্ধাপুর ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনকালে তিনি এসব কথা বলেন। প্রথম দুটি প্রকল্পের যথাক্রমে ৪৫ ও ১৫ কোটি লিটার পানি সরবরাহ এবং শেষের প্রকল্পটির ৫০ কোটি লিটার পানি শোধনের সক্ষমতা রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা বর্তমানে কেবল ঢাকা নয়, বিভাগীয় শহরগুলোতেও নিরাপদ খাবার পানি সরবরাহ করছি। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে জেলা ও উপজেলা থেকে ইউনিয়ন পর্যায়ের মানুষের কাছে নিরাপদ খাবার পানি পৌঁছে দেওয়া। শেখ হাসিনা বলেন, ‘সবার জন্য নিরাপদ পানি’ সরকারের এই সেøাগানকে ধারণ করে ঢাকা ওয়াসা রাজধানীর বস্তিগুলোতে আইনসম্মত ও নিরাপদ পানি সংযোগের প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে নিশ্চিত করেছে। পর্যায়ক্রমে সব বস্তি পানি সরবরাহের আওতায় আনা হবে। তিনি বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে সব বিভাগীয় শহরে ভূ-উপরিস্থ পানির উৎসের মাধ্যমে নিরাপদ পানি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ চলছে। ভূ-গর্ভস্থ পানির ওপর চাপ কমাতে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ও ব্যবহারের ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভূ-গর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরতা না কমালে আমাদের গুরুতর পরিণতি মোকাবিলা করতে হবে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ব্যবস্থার জন্য শিল্পাঞ্চল ও আবাসিক এলাকায় জলাধার নির্মাণ এবং বর্জ্য ও দূষিত পানি নিষ্কাশনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী সেচ কাজে বৃষ্টি ও ভূ-উপরিস্থ পানি ব্যবহারের জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণে ৪ হাজার ৭০০ জলাধার নির্মাণ করা হয়েছে এবং গুরুত্বপূর্ণ সব নদীর নাব্য বজায় রাখা ও তা জলাধার হিসেবে ব্যবহার করতে নদী খননের কাজ চলছে। সবার জন্য বিশুদ্ধ খাবার পানি নিশ্চিত করতে সরকারের উদ্যোগের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পানি সরবরাহ, স্যুয়ারেজ এবং ড্রেনেজ সিস্টেম নিয়ে আমাদের সরকার ৩টি মাস্টার প্ল্যান তৈরি করেছে।
এমডিজির সফল বাস্তবায়নের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতিসংঘের ঘোষিত এসডিজি-২০৩০ এর ১৭টি লক্ষ্যের মধ্যে ৬ নম্বর হচ্ছে ‘সবার জন্য স্যানিটেশনের টেকসই ব্যবস্থাপনা ও পর্যাপ্ত সুযোগ নিশ্চিত করা। আমরা সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় এসডিজি সমন্বিত করেছি এবং এটি বাস্তবায়ন হচ্ছে। তার সরকার ২০৪১ সাল নাগাদ দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশকে একটি সমৃদ্ধ ও উন্নত দেশে পরিণত করতে কাজ করে যাচ্ছে।
এলজিআরডি মন্ত্রী তাজুল ইসলাম, স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব হেলাল উদ্দীন আহমেদ, বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি-জিমিং, দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত হু কাং-ইল, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) কান্ট্রি ডিরেক্টর মনমোহন প্রকাশ ও ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। এতে রাজধানীর ক্রমবর্ধমান পানির চাহিদা মেটাতে এই তিন প্রকল্প এবং বিগত ১০ বছরে ঢাকা ওয়াসার গৃহীত বিভিন্ন প্রকল্প ভিডিও উপস্থাপনার মাধ্যমে প্রদর্শন করা হয়।
ঢাকায় হচ্ছে আরও দুই মেট্রোরেল
ঢাকায় আরও দুটি মেট্রোরেল নির্মাণ করা হবে। একটির রুট হবে হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে নতুন বাজার, বাড্ডা হয়ে কমলাপুর রেলস্টেশন। এটির দৈর্ঘ্য হবে ৩১ কিলোমিটার। অন্যটি সাভারের হেমায়েতপুর থেকে আমিনবাজার, গাবতলী, মিরপুর-১, কচুক্ষেত, বনানী, গুলশান-২, নতুনবাজার হয়ে ভাটারা পর্যন্ত। এটির দৈর্ঘ্য ২০ কিলোমিটার। এই প্রকল্প দুটি ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট বা লাইন-১ ও ৫ নামে পরিচিত হবে। ৯৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্প দুটি বাস্তবায়ন করা হবে। ২০২৬ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পটি শেষ হওয়ার কথা। তবে নির্ধারিত মেয়াদের আগে এবং বরাদ্দ করা অর্থের তুলনায় কম ব্যয়েই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের আশা করছে সরকার। গত ১৫ অক্টোবর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এই দুই প্রকল্পসহ মোট ১০টি প্রকল্প অনুমোদন হয়। এসব প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারের অর্থায়ন ৩০ হাজার ৪৬৬ কোটি টাকা। জাইকা এবং এডিবির ঋণ ৬৯ হাজার ৪৩ কোটি টাকা। বাকি অর্থ বাস্তবায়নকারী সংস্থার নিজস্ব। এই ১০ প্রকল্পের বাইরে আরও ৫টি প্রকল্প সম্পর্কে একনেকে অবহিত করা হয়। ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দের কম হওয়ায় এসব প্রকল্প একনেকে অনুমোদনের প্রয়োজন হয়নি। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী এবং একনেকেরও চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা। বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান। একনেকের বৈঠকে পরিকল্পনামন্ত্রী ছাড়াও সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি, তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ এমপিসহ বেশ কয়েকজন সিনিয়র মন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন।