প্রায়ই শুনি, বাংলাদেশে বাক-স্বাধীনতা নেই। বিরোধীরা কথা বলতে পারছেন না। তাহলে মির্জা ফখরুল-গয়েশ্বররা কী বলছেন, আমরা জানছি কীভাবে? টেলিভিশনে বিএনপি নেতাদের হুঙ্কর তো নিত্যনিয়ত শুনছি।
মুনতাসীর মামুন: বিদেশ থেকে কবি দাউদ হায়দার আমাকে প্রায়ই ইউটিউবের নানা ক্লিপ পাঠান। এদেশে যুদ্ধাপরাধীরা থাকতে পারে, ঘাতকরা থাকতে পারে, ইসলামের নাম নিয়ে ধর্মব্যবসায়ীরা থাকতে পারে; কিন্তু দাউদ হায়দাররা পারে না। যাক, সেটি আলোচনার বিষয় নয়। তিনি বিএনপির ‘নেতা’ মাহমুদুর রহমানের বক্তব্যের একটি ভিডিও ক্লিপ পাঠিয়েছেন। সেখানে জনাব রহমান ফরমাইয়াছেন [অবিকল উদ্ধৃতি নয়] – গত ১৫ বছরে শেখ হাসিনা দেশে গণহত্যা চালাচ্ছেন। ইসলামিস্ট ও জাতীয়তাবাদীদের তিনি ভারতের ‘র’-এর সাহায্যে ১৯৭১ সাল থেকে নিশ্চিত করেছেন। মার্কিন প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত বার্নিকাট-কে হত্যার চেষ্টা চালিয়েছিল নানক, হাসিনার নির্দেশে। একইভাবে হামলা হয়েছে পিটার হাসের ওপর। মার্কিন দূতদের ওপর এই হামলা বিশ্বশান্তির জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অবলীলাক্রমে এ-রকম মিথ্যা বিএনপির নেতাকর্মীরাই বলতে থাকেন। তারা এই নিওরনে বিশ্বাস করেন, বারবার মিথ্যা-সত্যে পরিণত হয়। এটি ছিল নাজিদের চিন্তাভাবনা, তা বিএনপির চিন্তাধারা অমনটি হবে তাই স্বাভাবিক।
দাউদ ফোনে বলছিলেন, ‘আপনার একটি বক্তব্য ইউটিউবে আছে, যা আমাকে ঢাকা থেকে পাঠিয়েছেন একজন। সেখানে আপনি বলেছেন, শেখ হাসিনা না থাকলে কী হবে? বিএনপির কয়েকজনকে তা দেখালাম, তারা একবাক্যে বলেছেন, উনি তো শেখ হাসিনার পয়সা খেয়ে লেখেন। আমি বললাম, কত খেয়েছেন? বলল ওরা, অনেক। আমি বললাম, হাসিনার আমলে পদ-পদবি, হরাকার কিছুই তো তারা পাননি, তাহলে টাকাটা এলো কোত্থেকে? বলল তারা, ওই আর কী!
শেখ হাসিনার প্রশংসা করেন অনেকে এ-কথা বলেন। কিন্তু সে প্রসঙ্গে ব্যক্তির লাভ-লোকসানের ব্যাপার আসবে কেন? শেখ হাসিনার সময় হচ্ছে গলিপথ থেকে মেট্রোরেলে পৌঁছে দেওয়া, গলি থেকে এলিভেটেড এক্সপ্রেসে যাওয়া, ম্যানুয়েল থেকে ডিজিটাল হওয়া, নৌকা দিয়ে নদী না পেরিয়ে পদ্মা সেতুতে পেরুনো, বিদ্যুতের খাম্বা ছেড়ে পরমাণু যুগে পৌঁছানো। খালেদা জিয়া ২০০১ সালে বলেছিলেন, শেখ হাসিনার পয়সা হারাম। আজ হারাম খেয়ে কার কী অবস্থা সেটি তো দেখছেনই।
প্রায়ই শুনি, বাংলাদেশে বাক-স্বাধীনতা নেই। বিরোধীরা কথা বলতে পারছেন না। তাহলে মির্জা ফখরুল-গয়েশ্বররা কী বলছেন, আমরা জানছি কীভাবে? টেলিভিশনে বিএনপি নেতাদের হুঙ্কর তো নিত্যনিয়ত শুনছি। খবরের কাগজে বিএনপি নেতাদের যে গুরুত্ব দেওয়া হয়, তা তো আওয়ামী লীগ নেতাদের দেওয়া হয় না, ফ্যাসিবাদ হলে কি এ-রকম হতো? আওয়ামী লীগের ওবায়দুল কাদের ও হাছান মাহমুদ ছাড়া কেউ পারতপক্ষে কোনো কথা বলেন না। কিন্তু, দু-পক্ষের চাপান-উতোর কতটুকু অভিঘাত হানে জানি না; তবে, এটা জানি, অন্তর্জালে বিরোধীরা প্রবল। এসব চাপান-উতোরের চেয়ে ব্যক্তিগতভাবে আমার মনে হয়, তাদের পূর্বকালে বিএনপি-জামাত কী করেছিল তা বারবার স্মরণ করিয়ে দেওয়া, লেখা ও তথ্যচিত্রের মাধ্যমে। কারা, যাদের বয়স এখন ৩০/৩৫-এর নিচে তারা জানে না বিএনপি-জামাত আমল আসলে কী? সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটার বোধহয় তারাই।
জেনারেল জিয়া, যাকে বিএনপির জনক বলা হয়, তিনি ক্ষমতায় এসে সংবিধান বদলে ফেলে জাতির পিতাকে নির্বাসনে পাঠিয়েছিলেন। প্রাক্তন সচিব প্রয়াত জনাব বোরহান উদ্দিন লিখেছিলেন, বঙ্গভবনের স্টোর রুমে স্থান পেয়েছিল বঙ্গবন্ধুর ছবি। সংবিধান বদলে দেওয়ায় বাংলাদেশ পেয়েছিল পাকিস্তানের চরিত্র। খুনিদের ছেড়ে তাদের মিত্রে পরিণত করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী, ভাইস প্রেসিডেন্ট এসব করতে দ্বিধা করেননি। প্রচুর সৈনিক হত্যা করেছিলেন, যা নিয়ে এখন বইপত্র বেরিয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তখন ভিসানীতি প্রয়োগ, সুষ্ঠু নির্বাচন ও মানবাধিকার নিয়ে প্রশ্ন তোলেনি। ইউরোপীয় ইউনিয়নও নয়। জেনারেল জিয়ার উত্তরসূরি ছিলেন জেনারেল এরশাদ। জিয়ার নীতিই তিনি অনুসরণ করেছিলেন। এরপর খালেদা জিয়া এলেন ১৯৯১ সালে। তিনি এরশাদ আমলের ধারাবাহিকতা রক্ষা করেছিলেন। ২০০১ সালের তুলনায় সে-আমল ছিল খানিকটা মৃদু। ২০০১ সালে জামাতকে নিয়ে ক্ষমতায় এসে তিনি বিশ্বরেকর্ড করেন। পৃথিবীর কোথাও স্বাধীনতাবিরোধী বা ঘাতকদের নিয়ে কেউ ক্ষমতায় যায়নি। জিয়া যে সন্ত্রাস ও লুটের সংস্কৃতি চালু করেছিলেন তা বেগম জিয়া অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছেন পরিবার-পরিজনসহ। সে-সময়ের বাংলাদেশের চিত্রের খানিকটা উদাহরণ আমি দেব পরে।
বেগম জিয়া ও নিজামী ক্ষমতা থেকে চলে গেলেও পরবর্তীকালে তারা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য বাসে-ট্রাকে আগুন, স্কুলে আগুন, মানুষের গায়ে আগুন, পুলিশ হত্যা প্রভৃতি অব্যাহত রেখেছিলেন। তখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি, গণতন্ত্র, নির্বাচন, মানবাধিকার নিয়ে কোনো প্রশ্ন তোলেনি। এরপর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে, বিএনপি-জামাত সেই সরকারকে অবৈধ বলেছে। কিন্তু, সেই সরকারের অধীনে স্থানীয় সরকার থেকে সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। অবৈধ সরকারের সঙ্গে তারা কীভাবে হাত মেলাল। সংসদে গিয়ে বিএনপির সংসদ সদস্যরা বলছেন, অবৈধ সরকার মানে অবৈধ সংসদ। কিন্তু সেখানে বসে তারা যে টাকা নিয়েছেন, আইন পাস করেছেন, সব কি অবৈধ? গণতন্ত্রের নামে এত অগণতান্ত্রিক আর পৃথিবীর কোথাও হয় কী না সন্দেহ। আওয়ামী লীগ গঠনের পর থেকেই এসব প্রতিক্রিয়াশীল দলও সরকারের চক্ষুশূল। লিয়াকত আলী খান ঘোষণা করেছিলেন, ১৯৪৯ সালে যে আওয়ামী লীগ করবে তার মাথা কেটে নেব [শের কুচাল দেঙ্গে]। লিয়াকত নিজেই গুলি খেয়ে মারা গেলেন। মুসলিম লীগ আমলে নাজিমুদ্দীন থেকে নুরুল আমীনের প্রধান কাজ ছিল আওয়ামী লীগ ও কমিউনিস্টদের দমন। ১৯৫৮ থেকে ১৯৬৯ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের রাজনীতি করতে গিয়ে কতজন খুন হয়েছেন, নিঃস্ব হয়েছেন, জেলে থেকেছেন বলার কথা নয়। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানিরা জিজ্ঞেস করত, ‘তুম হিন্দু হ্যায়, তুম আওয়ামী হ্যায়।’ পরবর্তীকালে যেসব ‘তত্ত্বাবধায়ক’ ও ‘তত্ত্বাবধায়ক সামরিক সরকার’ হলো সবগুলোই ছিল কীভাবে আওয়ামী লীগ দমন করা যায়। ১৯৪৯ থেকে ১৯৭৫ পর্যন্ত ছিলেন বঙ্গবন্ধু টার্গেট। ১৯৭৫ থেকে এখন পর্যন্ত তার কন্যা শেখ হাসিনা টার্গেট।
এ-কথাটা আওয়ামী সমর্থক বা নেতাকর্মীরা কেউ বলেন না, এত বিরুদ্ধতা সত্ত্বেও আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় এসেছে তখনই মানুষ কিছু পেয়েছে। ১৯৫৬-৫৮ সালে অনেক কাজ করেছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার, বিশেষ করে দুর্ভিক্ষ নিবারণ করেছে, সে-কথা কেউ বলেন না। বঙ্গবন্ধু যে আজকের বাংলাদেশের ভিত গড়ে দিয়েছিলেন, সে-কথা কারও স্মরণে নেই। হাসিনা তার আমলে যা করেছেন তার ফিরিস্তি দিতে গেলে কয়েক’শ পাতার বই হবে। সব আওয়ামী লীগ আমলে দেশের প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি পেয়েছে। সব আওয়ামী-বিরোধী আমলে প্রবৃদ্ধির অবনতি ঘটেছে; কিন্তু সন্ত্রাস-দুর্নীতির প্রবৃদ্ধি হয়েছে। ২০০১ এবং ২০০৫ সালে বিএনপি-জামাত আমলের কিছু চিত্র তুলে ধরেছি। বিএনপি-জামাতের কৃতিত্ব জিয়া আমল থেকে ঐ পর্যন্ত তাদের শাসনের একটা ধারাবাহিকতা আছে, বিচ্যুতি নেই।
(২)
২০০২ সালে জামাত-বিএনপি ক্ষমতায় এলো। তাদের শাসনের মাত্র ৫০ দিন পর মনে হলো, ‘মানুষ তা-ই পায় যা সে করে।’ এ মন্তব্য আমার নয়। পবিত্র কোরআনের আয়াত, সুরার নাম নজ্ম। একদিকে আছে জোট সরকারের অতি দৃঢ়ভাবে দখল সংস্কৃতির প্রচলন। অন্যদিকে দেশদ্রোহী খোঁজা বা শুদ্ধিকরণ। অর্থাৎ বিএনপি-জামাত আদেশ না মানা মানেই দেশদ্রোহিতা। কয়েকটি উদাহরণ- ‘মোটর গ্যারেজে হামলাকালে যুবদল নেতা : খালেদা জিয়া আমার নেত্রী, আমি সবকিছু দখল করে নেবো।’ [সংবাদ, ২২.১১.২০০১] না, এ-ধরনের শিরোনামের সংবাদ ঐ সময় তিন-চারটি পত্রিকা ছাড়া অন্য পত্রিকা করেনি। কারণ, সৎ সাংবাদিকতার বিষয়টি আপেক্ষিক। যে মালিক বা সম্পাদক যা সৎ মনে করেন, তা-ই সৎ সাংবাদিকতা। একসময় যেসব কাগজের সম্পাদকরা চোখ খুললেই আওয়ামী লীগের সন্ত্রাস এবং বিএনপি-জামাতের শান্তি দেখতেন, তাদের কাছে তখন দু-মাসের পুরনো আফগান সংকট প্রধান বিষয়। তাদের কাছে হিন্দু ও রাজনৈতিক কর্মী নির্যাতন অতিরঞ্জন। শাহরিয়ার কবির ঠিক ঠিকই ‘র’-এর এজেন্ট, দেশে গিজগিজ করছে দেশদ্রোহী। আর সন্ত্রাস, ধর্ষণ তো এক-আধটু থাকবেই। নিউইয়র্কে নেই?
যাক, যা বলছিলাম। এই যুবদল নেতা রাজনীতি বোঝে না। তাহলে সে বেগম জিয়ার নাম ধরে এ-কথা বলত না। বরং বলত, শেখ হাসিনা আমার নেত্রী। সে জানে, তার নেত্রী ক্ষমতায় এসেছেন এবং ক্ষমতায় যাওয়া মানেই দখল, লুট- প্রয়োজনে খুন। সে আরও দেখছে, শৌচাগার থেকে এমপি হোস্টেল সব দখল হয়ে যাচ্ছে। তার কী হবে? দখলের তো কিছু থাকছে না। সবাই দখলের জিনিস খুঁজছে। নেতাকর্মীরা সকাল হলেই ভ্রমণে বেরিয়ে পড়ছেন। দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অথচ সংসদে কোরাম হয় না। গ্রামাঞ্চলে হিন্দু, আওয়ামী লীগ সমর্থকদের ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ করা হয়ে গেছে। হয়তো অচিরেই এরা তাদের নেতা-নেত্রীদের সম্পদের দিকে হাত বাড়াবে। এ-কারণে কি পবিত্র কোরআনে আছে- “মন্দের প্রতিফল অনুরূপ মন্দ। অত্যাচারিত হওয়ার পর যারা প্রতিশোধ গ্রহণ করে, তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না।” [সুরা : শুরা]
বিএনপি-জামাতের বিজয়কে অনেকে বিচার করেছেন আওয়ামী ‘সন্ত্রাসের’ বিরুদ্ধে জনগণের ‘রায়’ হিসেবে। মেনে নিলাম সে-কথা। কিন্তু পত্রিকাগুলো তাহলে তখনও কেন লিখছে :
১. ‘বিপজ্জনক হয়ে উঠছে রাজধানীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। নভেম্বর মাসে রাজধানীতে ৪৯ খুন। ৩০০ ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের ঘটনায় দেড় কোটি টাকার মালামাল লুট।’ [আজকের কাগজ, ০১.১২.২০০১]
২. ‘জোট সরকারের ক্যাডারদের চাঁদাবাজি সন্ত্রাসের কাছে দুই সহস্রাধিক গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠান জিম্মি।’ [জনকণ্ঠ, ০১.১২.২০০১]
৩. ‘চট্টগ্রামের কুখ্যাত সন্ত্রাসীরা জামিন পেয়ে যাচ্ছে। এই সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে খুন, সন্ত্রাস, ডাকাতি, ছিনতাই, অস্ত্র ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে মামলা থাকলেও তারা আইনের ফাঁকফোকর গড়ে দিব্যি জেলখানা থেকে জামিনে বেরিয়ে আসছে।’ [ভোরের কাগজ, ২৮.১১.২০০১]
সে-জন্যই কি প্রতিদিন পত্রিকায় দেখেছি খুন আর ধর্ষণের কাহিনি? সমাজে বিএনপি-জামাত আমলে এই যে ফিৎনা বা চরম বিশৃক্সক্ষলার সৃষ্টি হয়েছে তার কী হবে? আল্লাহ ফরমায়েছেন, ‘ফিৎনা হত্যার চেয়েও মারাত্মক।’ [সুরা : বাকারা] তাদের ভাষায়, মানুষের ম্যান্ডেট কি ছিল এই ফিৎনা সৃষ্টির জন্য?
জামাত-বিএনপি তখন ক্ষমতায়। সুতরাং বাংলাদেশে আর কোনো মতাদর্শ থাকতে পারে না। এ আদর্শ সামনে রেখে শুরু হয়েছে শুদ্ধিকরণ, বিশেষ করে প্রশাসনে। সংবাদপত্রেই প্রকাশিত হয়েছে :
১. ‘পুলিশের ৩১ জন ওএসডি।’ [ভোরের কাগজ, ২৯.১১.২০০১]
২. ‘ওরা সংখ্যালঘু ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, তাই বাতিল করা হচ্ছে এনএসআইয়ের ৬৫ উপ-সহকারী পরিচালকের নিয়োগ।’ [জনকণ্ঠ, ২৭.১১.২০০১]
৩. ‘বিদেশে উচ্চশিক্ষারত ৬৯ জনকে পাঠানো হয়েছিল পরিকল্পনা প্রণয়নের সামর্থ্য বৃদ্ধি প্রকল্পের অধীনে।’ এখন তাদের ফেরত আনা হচ্ছে উচ্চশিক্ষা জলাঞ্জলি দিয়ে।’ [ঐ]
৪. ‘দেড় মাসে ৭ শতাধিক বদলি।’ [ভোরের কাগজ, ২৫.১১.২০০১]
৫. ‘৭৩ ব্যাচের সকল মুক্তিযোদ্ধা কর্মকর্তাকে বিদায় দেয়া হবে।’ [সংবাদ, ২২.১১.২০০১] এবং ইতোমধ্যে ১৯ জনকে বিদায় দেয়া হয়েছে।
এছাড়া ডিসির মতো সব ভিসি বদল করা হয়েছে। এমনকি পিতা আওয়ামী লীগের হওয়ার কারণে ক্রিকেট দলের ম্যানেজারও বাদ পড়েছেন। গত পাঁচ বছরে স্থাপিত ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধেও পরোক্ষ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বাকি আছে ফকির-ফাকরারা।
প্রথম ব্যাচের (৭৩) সিভিল সার্ভিসে যোগ দেওয়া কি অপরাধ ছিল? এখন দেখা যাচ্ছে স্বাধীনতা চাওয়াটাই ছিল মুখ্য অপরাধ। মধ্যযুগের পাকিস্তান ছিল ঢের ভালো। আওয়ামী লীগের আমলে যাদের চাকরি হয়েছে, সবাই আওয়ামী লীগার? বিএনপি আমলের কর্মকর্তারা বিএনপির? এ তো উন্মাদের মতো আচরণ। এ যুক্তি অনুসারে কেবিনেট সচিব আকবর আলী খান থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগ আমলে যারা সচিব হয়েছিলেন, তারা আওয়ামী লীগার। বিএনপি আমলেও তারা আছেন। এর অর্থ কি বিএনপির সঙ্গে তাদের কোনো লেনদেন হয়েছিল? এ-রকম যুক্তি তৈরি হলে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস বলে কিছু থাকবে না। সব চাকরিই চুক্তিভিত্তিক হতে হবে। যাদের আজ বিভিন্ন জায়গায় বসানো হচ্ছে, তারা চিহ্নিত হচ্ছেন হাওয়া ভবনের খাস লোক হিসেবে। এভাবে তাদের ক্যারিয়ার বিনষ্ট হয়ে যাবে। বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসকে একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে ধ্বংস করে দিচ্ছে উচ্চপদস্থ কয়েকজন সচিব। এরা কয়েকদিন পর চলে যাবেন। যারা থাকবেন তারা পড়বেন প্রতিহিংসার কবলে। আমি মনে করি না সিভিল সার্ভিসে যারা যোগ দিয়েছেন তাদের সবার রাজনৈতিক মতাদর্শ আছে বা সবাই চাকরিতে থেকে রাজনীতি করেন। যারা উল্লসিত সাড়ে সাতশ’ ওএসডি বা চাকরিচ্যুত হওয়াতে, তাদের অনুরোধ কোরআনের এ আয়াতটি স্মরণ করতে- “পবিত্র মাসের বদলে পবিত্র মাস ও সকল পবিত্র জিনিসের জন্য এমন বিনিময়। সুতরাং যে তোমাদের আক্রমণ করবে, তোমরাও তাকে অনুরূপ আক্রমণ করবে।” [সুরা : বাকারা] অণুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে তখন দেশদ্রোহী খোঁজা হয়েছে। পত্রিকার ভাষায়- “এবারের টার্গেট মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়।… তালিকাভুক্তদের হত্যা, গুম থেকে শুরু করে মিথ্যা মামলায় জড়ানোসহ বিভিন্নভাবে হয়রানি করার জন্য নীলনকশা তৈরি করা হয়েছে।” [জনকণ্ঠ, ০১.১২.২০০১]
এই নীলনকশার প্রথম শিকার শাহরিয়ার কবির। দেশদ্রোহী হিসেবে দ্বিতীয়বার যার বিরুদ্ধে মামলা করা হলো, তার সম্পর্কে এক চিঠি লিখেছে নেদারল্যান্ডসের রয়াল একাডেমির সঙ্গে যুক্ত ইনস্টিটিউট অব সোশ্যাল হিস্ট্রি। বেগম জিয়াকে পাঠানো চিঠিতে তারা উল্লেখ করেছে- “মি. কবির ডিজার্ভস হিজ কান্ট্রিস রেসপেক্ট রাদার দ্যান সেনশিউর ফর হিজ অ্যাক্টিভিটিজ ইন সাপোর্ট অব জাস্টিস, ফ্রিডম অব স্পিচ অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস…’ আর এদেশের কুৎসা রটনাকারী, জেনারেল এরশাদের সেই ‘দাড়িঅলা খচ্চর’র পত্রিকা ইনকিলাবে প্রতিদিন তখন গীবত গাওয়া হয়েছে শাহরিয়ারের এবং অন্যান্যের। এসব সংস্কৃতিসেবী না-কি সব ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা থেকে মাসোহারা পায়। এ চরিত্র হননের বিরুদ্ধে কোনো বিচার নেই। সাংবাদিকরাও কখনও এ-ধরনের সংবাদ প্রচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হননি। আমরা অসহায় ছিলাম এ-কারণে যে, আমাদের পিছনে রাজনীতিবিদ, ভণ্ড মওলানা, ঋণখেলাপি শিল্পপতি, সামরিক-বেসামরিক আমলাতন্ত্র ছিল না।
অবশ্য আল্লাহ ঘোষণা করেছেন- “মোনাফেকরা ও যাদের অন্তরে ব্যাধি আছে আর যারা নগরে গুজব রটনা করে, তারা বিরত না হলে আমি নিশ্চয়ই তাদের বিরুদ্ধে তোমাকে প্রবল করবো, এরপর এ শহরে তারা তোমার প্রতিবেশীরূপে কমই থাকতে পারবে। তারা হবে অভিশপ্ত, ওদের যেখানেই পাওয়া যাবে সেখানেই পাকড়াও করা হবে ও নির্মমভাবে হত্যা করা হবে।” [সুরা : আহসাব] আল্লাহ মেহেরবান। আমরা তার দিকে তাকিয়ে আছি, যাতে ইবলিশের হাত থেকে তিনি আমাদের রক্ষা করেন।
লতিফুর মুয়ীদ গং হিন্দু আওয়ামী লীগ সমর্থক নিশ্চিহ্নকরণে যে প্রোগ্রাম শুরু করেছিল, তা পরিপূর্ণতা পেয়েছে চার জোটের আমলে। বিচারপতি হিসেবে পরিচিত লতিফুর রহমানের সময় নির্বাচনের একটি ঘটনা ছেপেছে ইন্ডিয়া টুডে। দিনাজপুর-২ নির্বাচনী এলাকায় প্রার্থী ছিলেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী সতীশচন্দ্র রায়, যিনি এর আগে চারবার জিতেছিলেন। প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির জেনারেল মাহবুবুর রহমান, প্রাক্তন সেনাপতি। নির্বাচনের দিন জেনারেল তার সমর্থকদের দিয়ে রাজবংশীদের গ্রাম ঘিরে ফেলেন এবং ঘোষণা করেন, পুলিয়ারা (হিন্দু রাজবংশীদের এ নামে ডাকা হয়) ভোট দিতে গেলে কল্লা ফেলে দেওয়া হবে। পুলিয়ারা এ-কথা শুনে পগারপার। বিএনপির মাহবুবুর রহমান জয়ী। অবশ্য আমাদের জেনারেলরা সব সময় নিরস্ত্রদের ওপর স্টিম রোলার চালিয়েই জিতেছে। নির্বাচনে এমএ সাঈদের দুষ্টু ছেলেরা তো ছিলই আর আর্মিরা। মাহবুবুর রহমান এ কাজ করতে পারেন ভাবতে পারি না। তার উচিত এ খবরের প্রতিবাদ করা এবং ইন্ডিয়া টুডের সম্পাদককে ৫৪ ধারায় গ্রেফতারের আদেশ দেওয়া। বাংলাদেশে ও ভারতে তো তখন খুব একটা তফাত ছিল না। ভারত এ অনুরোধ রাখত।
তা লতিফুর-মুয়ীদ-সাঈদের পর এসেছেন তেনারা এবং গ্রামবাংলা আজ ১৯৭১। আগে ছিল খানসেনারা ও রাজাকাররা। এখন বিএনপি ও রাজাকাররা। ইয়াহিয়া খান বলেছিল, কতল কর হিন্দু আর আওয়ামী লীগকে। বিএনপিও বলছে, কতল কর হিন্দু আওয়ামী লীগারদের। পার্থক্য মাত্র ৩০ বছরের। চারদিকে এখন ধর্ষিত রমণীর আর্তনাদ, ঘরছাড়া গৃহস্থের হাহাকার, আহত-নিহত পরিবার-পরিজনের আহাজারি। জানি না আল্লাহর আরশে তাদের কান্না পৌঁছায় কি-না। আল্লাহ বলেছেন, “আর তাদের জন্য তার মধ্যে (তওরাত) বিধান দিয়েছিলাম যে, প্রাণের বদলে প্রাণ, চোখের বদলে চোখ, কানের বদলে কান, দাঁতের বদলে দাঁত আর জখমের সমান জখম।” [সুরা : মায়িদা] তখন আমরা বলেছি, আল্লাহর কথা মনে রেখে ধৈর্য ধরুন। যিনি বলেছেন, “অবশ্যই অত্যাচারীদের জন্য আছে কঠিন শাস্তি।” [সুরা : আল-ই-ইমরান] “… আল্লাহ অত্যাচারীদের পছন্দ করেন না।” [ঐ] যেসব ঘটনার উল্লেখ করলাম, এগুলো সবই উদাহরণ প্রতিহিংসার। “ধীরে ধীরে এটা স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সরকার ১০০ দিনের ঘোষিত কর্মসূচির পরিবর্তে প্রতিশোধস্পৃহায় অঘোষিত কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে ঝড়ো গতিতে।” [জনকণ্ঠ, ০১.১২.২০০১] প্রতিহিংসা প্রতিহিংসাই ডেকে আনে। যারা অত্যাচারিত হচ্ছে, একসময় তাদের মধ্যে প্রতিহিংসা জেগে উঠতে পারে। এ প্রসঙ্গে স্বৈরাচারী এরশাদ আমলের কথা মনে পড়ছে। একজন রাজনীতিবিদ বলেছিলেন, সেনাবাহিনী দিয়ে আমাদের দমন করা হচ্ছে, তারা সংখ্যায় কয়জন? তাদের পরিবারের সবাই কি আর্মির? মানুষ ক্ষিপ্ত হলে তাদের ওপর হামলা হবে না কে বলল? তো মানুষ তো মানুষ। প্রতিশোধস্পৃহা জেগে উঠলে কী হবে? এ-ধরনের হামলা প্রতিহামলা শুরু হলে তা গড়াবে গৃহযুদ্ধে। এই ফিৎনার জন্য কে দায়ী হবে? চার-দলীয় জোটের পর যারা ক্ষমতায় আসবে, তারা কি পারবে তাদের অনুসারীদের দমাতে? চেষ্টা করলেও পারবে কী না সন্দেহ। আমাদের অনেকেও হয়তো বলি হব সেই গৃহযুদ্ধে। ওই পরিস্থিতিতে আমরা শুধু স্মরণ করেছি আল্লাহকে, যিনি বলেছেন- “আর যারা অত্যাচারিত হলে প্রতিশোধ গ্রহণ করে, মন্দের প্রতিফল মন্দ আর যে ক্ষমা করে দেয় ও আপোস নিষ্পত্তি করেন, তার পুরস্কার আল্লাহর কাছে রয়েছে। নিশ্চয়ই আল্লাহ সীমা লঙ্ঘনকারীদের পছন্দ করেন না।… কেউ ধৈর্য ধারণ করলে আর ক্ষমা করলে, তা হবে স্থৈর্যের কাজ।’ [সুরা : শুরা]
এ তো গেল ২০০১ সালের ৫০ দিনের ঘটনা; কিন্তু চার বছরে কি তাদের খাসলতের বদল হয়েছিল? হয়নি; বরং, গৃহযুদ্ধের আবহাওয়া তৈরি হয়েছিল। তখন আমরা বলেছিলাম- প্রতিরোধ করুন অথবা দেশ ছাড়ুন, নয়তো মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত থাকবেন। খালেদার পার্টনার নিজামীর দল পর্যন্ত বিএনপির অত্যাচারে বিহ্বল হয়ে একটি স্মারকলিপি তৈরি করে দলের নেতাদের জন্য। এই স্মারকটি ফাঁস হয়ে যায় এবং আবু সাঈদের একটি বইয়ে ছাপা হয়। তখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বাবরের বাহিনী সাঈদের বাসায় ঢুকে বইগুলো জব্দ করে। তারা ভয় পাচ্ছে এই ভেবে যে, বইটি বাজারে গেলে যদি গোলাম আযম বা নিজামী চটে যায়। সেই মেমোতে উল্লেখ করা হয়, “দেশের শাসনে জোট সরকারের চরম ব্যর্থতা, জোটভুক্ত সংগঠনসমূহের প্রতি চরম অনীহা এবং অসদাচরণের তীব্র নিন্দা করা হয় (জামাতের সভায়)। সভায় প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার অনৈসলামিক কার্যকলাপ, লাগামহীন কথাবার্তা, কথা ও কাজে অমিল এবং মন্ত্রী মান্নান ভূঁইয়া, মির্জা আব্বাস, ব্যারিস্টার মওদুদ, ড. মোশাররফ হোসেন, সাইফুর রহমানসহ প্রায় সব মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর সমালোচনা করা হয়। এমনকি মন্ত্রিপরিষদের জামায়াতি দুই মন্ত্রীর ব্যর্থতা ও অসচেতনতার ব্যাপারে সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানানো হয়।”
প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে যেসব মন্তব্য করেছে নিজামীরা তা আমরা করব না, নিজামীরা সরকারে আছে তারা ভালো জানে। কিন্তু যে ভাষায় এটি বলা হয়েছে সেটি বেয়াদবি। দুঃখ এই যে, এর চেয়ে সাধারণ ব্যাপার নিয়ে সংসদে, হ্যাঁ, সংসদে বেগম জিয়া আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যদের বলেছিলেন, ‘চোপ বেয়াদব’। অথচ এত বড় বেয়াদবির বিরুদ্ধে তখন একবারও বললেন না তিনি ‘খামোশ’।
আমরা নিশ্চিত নিজামীরা বলবে, এটি সর্বৈব মিথ্যা। একসময় নিজামীরাই তো বলেছে, নারী নেতৃত্ব হারাম। এখন সেই হারাম যদি হালাল হয়, তাহলে যা উদ্ধৃত হয়েছে তাও সত্যি। ধরে নিলাম, সেটি মিথ্যা কিন্তু শাহরিয়ার কবির ‘মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা-বিরোধী দক্ষিণ এশীয় গণসম্মিলনের’ ১৩ ফেব্রুয়ারির গোলটেবিলে যেসব দলিল উপস্থাপন করেছে সেগুলো? সেগুলো তো তাদের কন্ট্রোলার পাকিদের লেখা।
জমিয়তে তালাবা ইসলামিয়ার মুখপত্র ‘হাম কাদাম’-এ অক্টোবর ২০০৪ সংখ্যায় মুনিম জাফর খানের একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যরা ঐ সময় বাংলাদেশ সফর করেন। যুদ্ধাপরাধী মন্ত্রী মুহাম্মদ মুজাহিদের সঙ্গে তারা দেখা করে। মুজাহিদ তাদের জানান, “বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবেশ ও পরিস্থিতির আলোকে আমরা এ কাজটি বাধ্য হয়ে করি নাই বরং এটার প্রয়োজন ছিল। সরকারের মধ্য থেকে নিজেদের অনুকূল পরিবেশ এবং পরিস্থিতি সৃষ্টি করা এবং বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর যে সমস্যার সম্মুখীন হয়েছি সেগুলোকে দূর করার জন্য এ পদক্ষেপ গ্রহণ আবশ্যক ছিল। আমাদের হাতে দুটি মন্ত্রণালয় আছে, একটি সমাজকল্যাণ অপরটি শিল্প। আর আগে কৃষি মন্ত্রণালয় আমাদের হাতে ছিল। সেটা ফেরত নেওয়ার একমাত্র কারণ হলো, আমরা এর মাধ্যমে কৃষকদের মাঝে নিজেদের প্রভাব বিস্তার করতে যথেষ্ট সফলতা লাভ করেছিলাম। আলহামদুলিল্লাহ।”
ছাত্রদের মাঝে প্রভাব বিস্তারের জন্য তারা বিভিন্ন কোচিং সেন্টার স্থাপন করেছে। এ-রকম দুটি সেন্টার হলো ‘রেটিনা’ ও ‘কনক্রিট’। জামাতের আরেকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা হলেন সাবেক সচিব শাহ আবদুল হান্নান, যিনি ইসলামি ব্যাংক পরিচালনা করেছেন। জামাতের গোপন মেমোতে জামায়াতি আরেকটি ব্যাংকের নাম পাওয়া যায়- আল আরাফাহ।
এটা তখন পরিষ্কার যে জামাত একটি অর্থনৈতিক ভিত্তি গড়ে তুলেছে। প্রশাসনের সবখানে তাদের লোক ঘাপটি মেরে আছে। ক্ষমতায় আসার পর তারা তাদের খুঁটি পাকাপোক্ত করেছে। তখন তারা ও তাদের সেকেন্ড ফ্রন্ট অন্য জঙ্গি গ্রুপগুলো সক্রিয় হয়ে উঠছিল। তারা সারাদেশে গ্রেনেড ও বোমা ছুড়ে অরাজকতা সৃষ্টি করছে, যাতে খুব সহজেই ক্ষমতা দখল করতে পারে। অন্যদিকে সজীব বাঙালি সংস্কৃতির ওপর প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে হামলা চালাচ্ছে। ঐ সময়ের খবরের কাগজ থেকেই কিছু উদাহরণ দিচ্ছি-
১. সংগ্রামের রিপোর্টার বোমা হামলায় নিহত হওয়ার পর এএসপি মোফাজ্জেল গ্রেফতার। বোমা রাখা হয়েছিল যুগান্তরের সাংবাদিকের জন্য। লক্ষণীয়, মোফাজ্জেল এসব কাজকর্ম বহুদিন করে আসছে। প্রায় পুলিশ কর্মচারী তাই করে এবং সরকারের অনেক লোক তা থেকে বখরা পায়। জামাতের কর্মী মারা যাওয়ায় মোফাজ্জেলকে গ্রেফতার করা হয়। তাকে সম্পূর্ণ সরকারি সুবিধায় হেলিকপ্টারে এনে চিকিৎসা করা হয়। অন্যদিকে জনাব কিবরিয়া যাতে বিনা চিকিৎসায় মারা যান, সে-ব্যাপারে জামাতের নিজামী ও খালেদা ফ্যাকশন একমত ছিল এবং এখনও পর্যন্ত অন্যান্য সাংবাদিক হত্যাকারী কাউকে ধরা যায়নি।
২. লক্ষ্মীকানা গ্রামে নাট্যানুষ্ঠানে বোমা হামলায় জাগ্রত মুসলিম জনতা বাংলাদেশের বোমা স্কোয়াড সদস্যদের বিরুদ্ধে নথি গায়েব। [সংবাদ, ১৮.০৫.২০০৫]
৩. আহলে হাদিস নেতা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. গালিব যিনি বাংলাভাইদের নেতা। তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। প্রতিদিনই তার কার্যকলাপের খবর ছাপা হচ্ছে পত্রিকায়।
৪. সবচেয়ে বেশি সরকারি বিজ্ঞাপন পেয়েছে কথিত পাকি ও গোয়েন্দা প্রভাবিত দৈনিক ইনকিলাব, জামাতের নিজামী ফ্যাকশনের পত্রিকা দৈনিক সংগ্রাম, জামাতের খালেদা ফ্যাকশনের, তারেক জিয়ার মালিকানাধীন দৈনিক দিনকাল। এগুলোর সার্কুলেশন, সর্বমোট ১ লাখও হবে কি না সন্দেহ। সরকারি টাকা দিয়ে এদের ভিত্তি মজুবত করা হচ্ছে।
৫. বাংলাভাইয়ের হাতে নির্যাতিত তিনজন আবার পুলিশের ক্রসফায়ারে নিহত [ভোরের কাগজ, ০৯.০২.২০০৫]। ক্রসফায়ারে আজ পর্যন্ত কোনো জঙ্গি সংগঠনের নেতা নিহত হয়নি।
৬. বাগমারার বাংলাভাই ক্যাডারদের সমাবেশ [সংবাদ, ৩০.০১.০৫]। মন্ত্রী থেকে শুরু করে পুলিশ সবাই বলছে, বাংলাভাই বলে কেউ নেই। সুতরাং তাকে পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।
৭. চট্টগ্রামে ব্রাশফায়ারে ইউপি চেয়ারম্যান খুন। বিএনপি বলছে খুন করেছে জামায়াত [সংবাদ, ০৫.০২.০৫]। এ ধরনের খুন হরদম হচ্ছে।
৮. একই দিনের টাঙ্গাইলে বোমা, কুড়িগ্রামে গ্রেনেড, ঠাকুরগাঁয়ে বোমা সরঞ্জাম উদ্ধার [ভোরের কাগজ, ১৯.০২.২০০৫]।
৯. হাসিনার সফরের পর টুঙ্গিপাড়ায় ৬০টি বোমা উদ্ধারের কথা সরকার গোপন করেছে [ভোরের কাগজ, ১৯.০২.২০০৫]।
১০. জামালপুরের গ্রামে এখনও জঙ্গিরা তৎপর [ভোরের কাগজ, ১৯.০২.২০০৫]।
১১. ১৪ ফেব্রুয়ারিতে ভ্যালেনটাইন ডে’তে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বোমা হামলা এবং এর পরপরই আলামত সব ধুয়েমুছে সাফ। তখন র্যাব ও পুলিশ এলাকাটি পাহারা দিচ্ছিল।
১২. সরকার সমর্থক ব্র্যাক, গ্রামীণ ব্যাংক প্রভৃতি এনজিওতে বোমা হামলা।
১৩ চট্টগ্রামের কালী মন্দিরের সামনে বোমা বিস্ফোরণ [ভোরের কাগজ, ২০.০২.২০০৫]।
কয়েকটি উদাহরণ দিলাম মাত্র, শুধু বোঝার জন্য। প্রতিদিনই এসব ঘটনা ঘটছে এবং ঘটাবে। এই নিবন্ধ লেখার সময় খবর পেলাম মৌলভীবাজারে আশুরার মিছিলে বোমা হামলা হয়েছে। প্যাটার্নটি হচ্ছে- এসব ঘটনা ঘটবে, কাউকে গ্রেফতার করা হবে না। একই কারণে হাইকোর্টের বিচারকরা বঙ্গবন্ধু-হত্যার বিচার করতে চাননি। আষ্টেপৃষ্ঠে রাষ্ট্রকে তারা বেঁধে ফেলেছে এবং এখন ক্ষমতায় বসার আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।
জামাতের গোপন মেমোতে বলা হয়েছে, মহিলাদের ঘরে ঢোকাতে হবে এবং সরকারবিরোধী আন্দোলন তীব্র হলে তারা খালেদা ফ্যাকশনকে পরিত্যাগ করবে এবং ভারতের আগ্রাসী তৎপরতা জনগণের সামনে তুলে ধরতে হবে এবং ভারতবিরোধী বক্তব্য যুক্তিসহকারে অব্যাহত রাখতে হবে। প্রচারণার কৌশল হিসেবে বলা হয়, জামাত ক্ষমতায় গেলে যা করবে : সংবিধানের সাংবিধানিক নাম হবে গণপ্রজাতন্ত্রের স্থলে ইসলামি প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ। বাংলাদেশের সংবিধান পরিবর্তন করে কোরআন-সুন্নাহর ভিত্তিতে ইসলামি সংবিধান বাস্তবায়ন করা হবে। আর তা সম্ভব শুধু জামাত ক্ষমতাসীন হলে। কাজেই স্বাভাবিক পন্থায় ক্ষমতাসীন না হতে পারলে বিকল্প ব্যবস্থা সশস্ত্র আন্দোলনের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী ক্ষমতায়নের পরিকল্পনায় বাংলাদেশকে শীর্ষস্থান দিয়ে কার্যক্রম ও পরিকল্পনা কার্যকর করা হবে। সংবিধানে ইসলামি সমাজব্যবস্থা সংযোজন করতে হবে। সংবিধানের ৪নং অনুচ্ছেদের পরিবর্তন করে জাতীয় সংগীত ‘আমার সোনার বাংলা’র হলে ‘সুরা ফাতিহা’ সংযোজন করতে হবে। জাতীয় জীবনের সবক্ষেত্রে ইসলামি অনুশাসন অনুযায়ী মহিলাদের চলতে হবে।
সাতক্ষীরা জেলায় অবস্থিত দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপ হাড়িয়াভাঙা নদীর মোহনায়, যা ভারতে পূর্বাশা নামে পরিচিত (৮ বর্গকিলোমিটার), যা ভারতীয় নৌবাহিনী ১৯৮১ সালে জোরপূর্বক দখল করে নেয়, তা অবশ্যই মুক্ত বাংলাদেশের অখণ্ডতা রক্ষা করতে হবে। [সংবাদ, ১৯.০২.২০০৫]
খালেদা ফ্যাকশনও এ বিষয়ে একমত। সার্ক স্থগিত হওয়ার পর থেকে তার ফ্যাকশনের সবাই এ ধরনের কথা বলে যাচ্ছেন। তিনি নিজেও কয়েকদিন আগে আওয়ামী লীগকে ইঙ্গিত করে বলেছেন, “… যারা আল্লাহ খোদা বিশ্বাস করে না, তারাই ইসলামের বিরুদ্ধে ধর্মের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র করছে। তারা দেশের উন্নয়ন চায় না। আমরা যাতে উন্নয়ন করতে না পারি সে-জন্য পরিকল্পিতভাবে হরতাল এবং জ্বালাও-পোড়াও কর্মসূচি দিচ্ছে। তারা বিদেশিদের সহায়তায় ষড়যন্ত্র করে ক্ষমতায় আসতে চায়।” [জনকণ্ঠ, ১৮.০২.২০০৫] অর্থাৎ, ভারতের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে।
ঐ সময় বাইচান্স গ্রেফতারকৃত জঙ্গি শফিকুল্লাহ বলেছে, “তাদের একটি যুব সংগঠন রয়েছে, তার নাম মুজাহিদীন যুব সংঘ। দেশের বিভিন্ন স্থানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে এবং এনজিওদের সভা-সমিতিতে বোমা হামলা করাই এই সংগঠনের কাজ এবং তাদের একটি বোমা স্কোয়াড রয়েছে। তারা এই হামলাকে ইসলামি জেহাদ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।” [ইত্তেফাক, ১৭.০২.২০০৫]
সরকারের সেকেন্ড ফ্রন্ট হিসেবে কাজ করছে এমন জঙ্গি সংগঠনের সংখ্যা তখন ছিল ৪৫। শাহরিয়ার ৪৩টি নাম উল্লেখ করেছেন। তারা এখন পাকিস্তানের সঙ্গে একত্রিত হওয়ার জন্য কাজ করছে। শাহরিয়ার নেজামে ইসলামের একটি দলিলের উল্লেখ করেছেন। যেখানে আওয়ামী লীগ থেকে ইয়াহিয়া খানকে উত্তম বলে ঘোষণা করা হয়েছে এবং বলা হয়েছে, “যে অবস্থা থেকে বাঁচার জন্য একদিন এদেশের মানুষ পাকিস্তান চেয়েছিল এবং ভোট ও রক্তের বিনিময়ে হাসিল করেছিল, আজ দেশ সেই অবস্থানের দিকে দ্রুত ফিরে যাচ্ছে। এই মুহূর্তে আমাদের বাঁচার পথ একটাই, আর তাহলে যারা উপমহাদেশের মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ হওয়া। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে হলে একমুহূর্ত দেরি না করে দুই দেশ এক জাতি হিসেবে পাকিস্তানের সঙ্গে সামরিক চুক্তি করা। পাকিস্তান-বাংলাদেশ দুটি দেশ কিন্তু মুসলিম হিসেবে এক জাতি।” [০৯.০২.২০০৫] ইতোমধ্যে জয়পুরহাটে জামাতের মিছিল থেকে সেøাগান দেওয়া হয়েছে ‘পাকিস্তানি বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’। [সংবাদ, ১৬.০২.২০০৫] মার্কিন রাষ্ট্রদূত জামাতের একটু সমালোচনা করায় যুদ্ধাপরাধী জামায়াত তখন নেতা সাঈদী তখন পল্টনে পরিষ্কার ভাষায় বলেছে, “ধর্মনিরপেক্ষতা হলো শয়তানের বিধান। সাঈদী ঘোষণা করে আমেরিকা ‘বাংলাদেশকে নাস্তিকতা শেখাতে চায়।’ সমাবেশ থেকে স্লোগান ওঠে, ‘বাংলার আকাশে তালেবান পতাকা তুলবই’ ও এর ওপর ভিত্তি করে গজল পরিবেশনা করা হয়। সমাবেশে খালেদা ফ্যাকশনের আখতার হামিদ সিদ্দিকী উপস্থিত ছিলেন। তিনি সংসদের ডেপুটি স্পিকার।” [জনকণ্ঠ, ২০.০২.২০০৫] এরপর মার্কিন রাষ্ট্রদূত একদম নিশ্চুপ হয়ে গেছেন ভয় পেয়ে।
এসব যে নতুন খবর, তা নয়। তবুও এই বিস্তৃত প্রবন্ধটি লিখলাম একটি কারণে। তিনটি বিষয় স্পষ্ট করার জন্য-
১. জামায়াত সরকারকে ক্ষমতায় এনেছে তখন লতিফুর রহমান নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার, বিগ বিজনেস (হরতালের কথা শুনলে অর্থাৎ বিরোধীদের প্রতিবাদের কথা শুনলে যারা ক্ষিপ্ত হয়ে যান), এনজিও এবং গণমাধ্যমের একটি বড় অংশ, সেনাবাহিনী, পুলিশ ও প্রশাসনের বড় অংশ এতে সহায়তা করেছে। এরা অত্যন্ত আগ্রহী এবং এসব কার্যকলাপ সে-লক্ষে পৌঁছার প্রক্রিয়া মাত্র।
এদের লক্ষ্য পাকিস্তানি বাংলাদেশ স্থাপন করা। এ কারণে তারা যাদের শেষ করে দিতে চাইছে, তারা হলো-
১. সেকুলার ও বাম প্রগতিবাদী বুদ্ধিজীবীদের ২. আওয়ামী লীগ, সিপিবি, ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ, বাসদ প্রভৃতি রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী-সমর্থকদের ৩. সংখ্যালঘু ধর্মীয় ও এথনিক সম্প্রদায় ৪. আহমদীয়া মুসলিম জামায়াত ৫. এনজিও (যারা জোটের পক্ষ নয়) মানবাধিকার আন্দোলনের নেতাকর্মী ৬. গ্রামাঞ্চলের নারী এবং ৭. বাংলাদেশের লোকায়ত শিল্প-সংস্কৃতিসহ যা কিছু বাঙালিত্ব এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও চেতনার সমর্থক। [শাহরিয়ার কবিরের ধারণাপত্র]
এ লক্ষ্যে জোট সরকার সব ব্যবস্থা নিয়েছিল। যে-কারণে কেউ গ্রেফতার হয় না, ভুল করে কাউকে গ্রেফতার এবং সব দোষ আওয়ামী লীগের কাঁধে চাপিয়ে আওয়ামী লীগ কর্মীদের গ্রেফতার করা হয়। পুলিশ এক্ষেত্রে সব ধরনের সহায়তা করছে। যাদের শেষ করে ফেলতে হবে। তারা অসহায় এবং অস্ত্রহীন। অন্যপক্ষ সশস্ত্র-ওপরের উদাহরণগুলো বা প্রমাণ করে। শুধু তাই নয়, জামাতের ডকুমেন্ট আছে ‘বিকল্প’ [অর্থাৎ সশস্ত্র] পন্থা অবলম্বনে। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রের তিনটি স্তম্ভও সর্বতোভাবে এদের সহায়তা করবে। এখন মানববন্ধন, হরতাল করে কোনো লাভ নেই।
(৩)
ঐ আমলের এগুলো বড় কোনো উদাহরণ নয়। শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য গ্রেনেড হামলা, দশ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালান, এ-রকম অজস্র ঘটনা আছে। দেশদ্রোহিতার জন্য শাহরিয়ার কবির আর ময়মনসিংহে বোমা হামলার জন্য আমাকে গ্রেফতার আর রিমান্ডে অত্যাচারের কথা নাইবা তুললাম। মির্জা ফখরুল, আমি খসরু চৌধুরী তখন মন্ত্রী।
এখন বিএনপি সেই একই মিথ্যাচার করছে, যাদের বয়স ৩০-এর নিচে তাদের বিভ্রান্ত করছে।
গণতন্ত্রে নির্বাচন হবে। নির্বাচনে যারা জিতবে তারা ক্ষমতায় আসবে। আমরা চাই শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকুন। এবার যদি বিএনপি ক্ষমতায় আসে, তাহলে অনেককে দেশ ছেড়ে যেতে হবে, না-হলে নিহত হবেন।
কারণ, বিএনপি-জামাতের [এরা একই ভাবধারার, সাইন বোর্ড শুধু দুটি] কাজের ধারাবাহিকতা আছে। আওয়ামী লীগ আমলেই তারা যে ভাষায় হুমকি হুঙ্কার দিচ্ছে, ক্ষমতায় এলে যে কী হবে আল্লাহই জানেন।
এ পরিপ্রেক্ষিতে বক্তব্য একটিই। যদি দেশে থাকতে চান এবং শান্তিতে পরিবারসহ গণতান্ত্রিক পরিবেশে থাকতে চান, তবে আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে প্রতিরোধে, প্রতিবাদে। যদি ভাবেন, আমার কিছু হবে না, আমি নিরপেক্ষ বা যদি ভাবেন, আমি আওয়ামী লীগ করি না, কিছু হবে না বা যদি ভাবেন, আমি জামাতের খালেদা ফ্যাকশনের অনুগামী বা যদি ভাবেন রাজনীতিবিদরা সব করে দেবে, তবে বোকার স্বর্গে বাস করছেন। খালেদা ফ্যাকশনের অনুরাগীদের বলি, নিজামী ফ্যাকশনের ডকুমেন্টটির কথা ভাবুন। জামাতিরা ধৈর্য ধরে তাদের পরিকল্পনা কার্যকর করে। নিজামী আমলের ডকুমেন্টটির কথা তারা ভোলেনি। বিএনপি এলে তারাও ক্ষমতায় যাবে এবং সেই কর্মসূচিগুলো সম্পন্ন করবে। নেতারা সব অর্থশালী, বিপদে আপনাদের ছেড়ে যেতে কসুর করবেন না। যদি ভাবেন, প্রতিবাদ প্রতিরোধ না করলেও বেঁচে যাবেন, তবে বলব ভুল করছেন। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ছাড়া শান্তির লক্ষ্যে পৌঁছানো যায়নি। আর যদি তা না করেন, তবে মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত থাকুন।
এটুকু বলার পর বলব, এত কিছুর পরও শেষ হাসিটা আমাদেরই থাকবে। যেসব ব্যবসায়ী, এনজিও কর্তা, প্রশাসনিক কর্মকর্তা-কর্মচারী উৎসাহভরে তাদের সমর্থন করেন এবং জামাতের খালেদা ফ্যাকশনের তরুণ-তরুণী- কেউই এদেশ ছেড়ে যেতে পারবেন না। ওরা ক্ষমতায় এলে বাংলাদেশ তালেবানি রাষ্ট্রে পরিচিতি পাবে। আর যা হোক, তালেবানি বাংলাদেশের পাসপোর্ট পৃথিবীর সব দেশেই অগ্রহণযোগ্য হবে। আমরা শুধু মারা যাব। আর বাকিরা সব সারাবছর ভ্যালেন্টাইন দিবস পালন করবে, সেটি হবে না। যেহেতু আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। তাই বলব, আমাদের প্রতিরোধ হবে ভোটের মাধ্যমে নৌকাকে এগিয়ে নেওয়া।
লেখক : অধ্যাপক ও ইতিহাসবিদ