‘জনগণ নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে দেশসেবার সুযোগ দেওয়ায় এগুলো করা গেছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে দেশের মানুষের যে উন্নতি হয়, সেটা আজ প্রমাণিত সত্য।’
আরিফ সোহেল: স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার ঘোষণার তিন দিন না পেরুতেই মেট্রোরেল যুগে প্রবেশ করল বাংলাদেশ। পদ্মা সেতুর পর এবার বাঙালি জাতির আরও একটি অবিশ্বাস্য স্বপ্ন পূরণ হলো। যানজটের নগরী ঢাকায় মেট্রোরেল এক নতুন দিগন্তের সূচনা করল। বিদ্যুৎগতির মেট্রোরেল নাগরিক জীবনে এক অনন্য সংযোজন; এক নতুন মাইলফলক। বাংলাদেশের গণপরিবহন নতুন যুগে প্রবেশ করা মেট্রোরেল চলবে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত। আধুনিক বিশ্বে দেড়শ’ বছরের পুরনো হলেও মেট্রোরেল বাংলাদেশে এক নতুন বিস্ময়ের নাম। পদ্মা সেতুর পর মেট্রোরেল বাংলাদেশের গণপরিবহন রাজ্যে স্মরণকালের এক অভিনব সংযোজন।
গত ২৮ ডিসেম্বর সকালে মেট্রোরেলের উদ্বোধনী ফলক উন্মোচন করার পর মেশিন ব্যবহার করে টিকিট কেনেন সরকারপ্রধান বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তৃতীয় তলার প্ল্যাটফর্মে প্রধানমন্ত্রী সবুজ পতাকা নেড়ে বাংলাদেশের প্রথম মেট্রোরেল চলাচলের সূচনা করেন। এ সময় তার পাশে ছিলেন ছোটবোন শেখ রেহানা ও চাচাতো ভাই শেখ হেলাল। ছিলেন বর্ষীয়ান নেত্রী মতিয়া চৌধুরী। এরপর ২০০ জন আমন্ত্রিত অতিথিকে সঙ্গে নিয়ে মেট্রোরেলে চেপে তিনি আগারগাঁও প্রান্তে রওনা হন। মাত্র ১৮ মিনিটে দিয়াবাড়ি থেকে আগারগাঁওয়ে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী।
বিশ্বে প্রথম মেট্রোরেল চালু হয়েছে দেড়শ’ বছর আগে। ২০২১ সাল পর্যন্ত বিশ্বের ৬১টি দেশের দুই শতাধিক শহরে গণপরিবহন হিসেবে মেট্রোরেল চালু রয়েছে। যুক্তরাজ্যের লন্ডনে ১৮৬৩ সালের জানুয়ারিতে প্রথম লোকোমোটিভ রেল চালু হয়। ১৮৯০ সালে সেখানে যুক্ত হয় ইলেকট্রিক রেল। কাছাকাছি সময়ে হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্টে মেট্রোরেল চালু হয় ১৮৯৬ সালে। আর ভারতে ১৯৮৪ সালে এবং পাকিস্তানে মেট্রোরেল চালু হয় ২০২০ সালের অক্টোবরে।
২০১২ সালের ডিসেম্বরে ‘ঢাকা মাস র্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট’ বা মেট্রোরেল প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) অনুমোদিত হয়। প্রকল্পের জন্য মোট ৫টি রুট লাইন প্রস্তাব করা হয়। যার মধ্যে রয়েছে এমআরটি লাইন ১, ২, ৪, ৫ এবং ৬। ‘দ্য ঢাকা আরবান ট্রান্সপোর্ট নেটওয়ার্ক ডেভেলপমেন্ট সার্ভে (ডিএইচইউটিএস-১)’ মূল্যায়নের ভিত্তিতে ‘এমআরটি লাইন-৬’ নামে মেট্রোরেলের জন্য প্রথম এমআরটি রুট নির্বাচন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জুন ২০১৬ সালে নির্মাণ কাজের সূচনা করেন। এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালে। এ প্রকল্পের উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে আর্থিক ঋণ অনুদান দিয়েছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)। তাদের সিংহভাগ অর্থায়নে এই প্রকল্পের কাজ চলছে। প্রকল্পের বাজেট ৩৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাইকা দিচ্ছে ১৯ হাজার ৭১৯ কোটি টাকা। আর সরকার এই প্রকল্পে খরচ করছে ১৩ হাজার ৭৫৩ কোটি টাকা।
উত্তরা-মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেলের মোট দৈর্ঘ্য ২০ দশমিক ১০ কিলোমিটার। ইতোমধ্যে উত্তরা-আগারগাঁও অংশ চালু হয়েছে। দূরত্ব ১১.৭৫ কিলোমিটার। উত্তরা-আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেলের ৯টি স্টেশন রয়েছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ১০ মিনিট ১০ সেকেন্ড সময় লাগবে উত্তরা-আগারগাঁও। প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত চলবে মেট্রোরেল। ২০২১ সালের ২৯ আগস্ট প্রথম ট্রায়াল রান দিয়াবাড়ি থেকে উত্তরা পর্যন্ত পরিচালিত হয়েছিল। আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত রুটের কাজ ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হবে। আর মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত অংশের কাজ ২০২৫ সালের মধ্যে শেষ হবে।
মেট্রোরেলের প্রতিটি ট্রেনে ৬টি কোচ রয়েছে। এর মধ্যে দুই প্রান্তের দুটি কোচকে বলা হচ্ছে ট্রেইলর কার। এতে চালক থাকবেন। ট্রেন অপারেটরদের পাশাপাশি স্টেশন কন্ট্রোলারও মেট্রোরেল চালাতে পারবেন। তবে তাদের মূল দায়িত্ব থাকবে স্টেশন থেকে ট্রেন পরিচালনায় যুক্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে সমন্বয় করা। মেট্রোরেলের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান জাপানের মিতসুবিশি-কাওয়াসাকি কোম্পানির বিশেষজ্ঞরা ট্রেন পরিচালনার কারিগরি ও প্রায়োগিক নানা প্রশিক্ষণ দিয়েছে বাংলাদেশের অপারেটরদের। মেট্রোরেলের এক একটি কোচে ৪৮ জন করে যাত্রী বসতে পারবেন। মাঝখানের ৪টি কোচ হচ্ছে মোটরকার। এতে বসার ব্যবস্থা আছে ৫৪ জনের। সব মিলিয়ে একটি ট্রেনে বসে যেতে পারবেন ৩০৬ জন। প্রতিটি কোচ সাড়ে ৯ ফুট চওড়া। মাঝখানের প্রশস্ত জায়গায় যাত্রীরা দাঁড়িয়ে ভ্রমণ করবেন। পুরোদমে চালুর পর মেট্রোরেল ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী পরিবহন করবে।
সরকার মেট্রোরেলের সর্বনিম্ন ভাড়া ঠিক করেছে ২০ টাকা। আর উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ভাড়া হবে ১০০ টাকা। প্রথম পর্যায়ে মেট্রোরেল যে অংশে চলাচল শুরু করবে, সেই উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে আগারগাঁও স্টেশনের ভাড়া হবে ৬০ টাকা। উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে উত্তরা সেন্টার (মধ্য) ও উত্তরা দক্ষিণ স্টেশনের ভাড়া একই- ২০ টাকা। এছাড়া প্রথম স্টেশন (উত্তরা উত্তর) থেকে পল্লবী ও মিরপুর-১১ স্টেশনের ভাড়া ৩০ টাকা, মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়া স্টেশনের ভাড়া ৪০ টাকা এবং শেওড়াপাড়া স্টেশনের ভাড়া ৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
উদ্বোধনী ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
ঘটা আয়োজনে আপ্লুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু বাংলাদেশ এবং বাঙালি জাতি সারাবিশ্বে মর্যাদা পেয়েছে। আজ আমরা মেট্রোরেল যুক্ত করে বাংলাদেশের জনগণের মাথার মুকুটে নতুন অহংকারের পালক সংযোজিত করলাম। এমআরটি লাইন-৬ এর বাকি অংশ খুব তাড়াতাড়ি উদ্বোধন করব ইনশাআল্লাহ্।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মেট্রোরেল উদ্বোধনের ফলে একই সঙ্গে প্রযুক্তিতে ৪টি মাইলফলক ছুঁলো বাংলাদেশ। প্রথমত; মেট্রোরেল নিজেই একটি মাইলফলক। দ্বিতীয়ত; বাংলাদেশে প্রথম বৈদ্যুতিক যানের যুগে প্রবেশ করল। তৃতীয়ত; ডিজিটাল রিমোট কন্ট্রোল যান এটি, যেটি স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের একটি ধাপ। চতুর্থত; বাংলাদেশ দ্রুতগতিসম্পন্ন যানের যুগে প্রবেশ করল। ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১১০ কিলোমিটার গতিতে চলবে মেট্রোরেল।’
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘মেট্রোরেলের কারণে অর্থনীতিতে গতি সঞ্চারিত হবে। দৈনিক যাতায়াতে যে সময় নষ্ট হয়, টাকা-পয়সা নষ্ট হয়, তা আর হবে না। আধুনিক পরিবহন ব্যবস্থা হবে এই মেট্রোরেল। মেট্রোরেল পরিচালনায় চার গুণ নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।’
মেট্রোরেল পরিবেশবান্ধব উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘এটা ইলেকট্রিক ট্রেন। এতে পরিবেশের কোনো ক্ষতি হবে না। পাতাল মেট্রোরেলের টানেল সংলগ্ন মাটির শব্দ প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করবে। ফলে মেট্রোরেলে শব্দ ও কম্পন দূষণ মাত্রার মানদণ্ড সীমার অনেক নিচে থাকবে।’ মেট্রোরেলের সবগুলো রুট চালু হলে ঢাকাবাসীকে আর যানজটে কষ্ট পেতে হবে না জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘পরিকল্পনা পুরোপুরি বাস্তবায়ন হলে আমি মনে করি আমাদের দেশের মানুষের কর্মক্ষমতা বাড়বে। আমাদের জিডিপিতেও যথেষ্ট অবদান রাখবে। যারা ঢাকায় আসবেন, কমলাপুর রেলস্টেশনে নেমে উত্তরা পর্যন্ত যেতে হলে কিন্তু আর যানজটে পড়তে হবে না। এভাবে যানজট নিরসন হবে।’
ঢাকাকে যানজটমুক্ত করা আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার ছিল বলে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা মেট্রোরেল রুটের মাধ্যমে ব্যাপক পরিকল্পনা নিয়েছি, যা ২০৩০ সালের মধ্যে সম্পন্ন হবে বলে আমি আশা করি। ৪টি মেট্রোরেল নির্মাণকাজ বিভিন্ন পর্যায়ে বাস্তবায়নাধীন। দুটি মেট্রোরেলের সমীক্ষা চলছে।’
আওয়ামী লীগ সরকারের সময়কার নানা উন্নয়নের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জনগণ নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে দেশসেবার সুযোগ দেওয়ায় এগুলো করা গেছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে দেশের মানুষের যে উন্নতি হয়, সেটা আজ প্রমাণিত সত্য।’
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা আবৃত্তি করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘অসম সাহসে আমরা অসীম সম্ভাবনার পথে/ছুটিয়া চলেছি, সময় কোথায়/পিছে চাব কোন মতে!’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে বাঙালির দুর্বার গতিতে। গড়ে তুলব সব বাধা অতিক্রম করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলাদেশ, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলব।’
হলি আর্টিজানে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত মেট্রোরেলের নির্মাণকাজে সম্পৃক্ত সাত জাপানি নাগরিকের প্রতি শ্রদ্ধা জানান প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নিহতদের স্মরণে বাংলাদেশ ও জাপান সরকারের যৌথ উদ্যোগে উত্তরা দিয়াবাড়ীতে মেট্রোরেল প্রদর্শনী ও তথ্যকেন্দ্রে স্মৃতিস্মারক স্থাপন করা হয়েছে।’ তিনি এমআরটি-৬ লাইনের নির্মাণের সময় ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির মালিক ও ব্যবসায়ীদের প্রতি এবং এতদিন কষ্ট সহ্য করার জন্য ঢাকাবাসীকে কৃতজ্ঞতা জানান।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী মেট্রোরেলের উদ্বোধন উপলক্ষে স্মারক ডাকটিকিট, ৫০ টাকার স্মারক নোট, খাম ও ডাটাকার্ড অবমুক্ত করেন। প্রধান অতিথির ভাষণে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যে কোনো কাজ করতে গেলে অবশ্যই সাহসের প্রয়োজন হয়, সিদ্ধান্তের প্রয়োজন হয়। আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর থেকে প্রতিটি কাজ পরিকল্পনা নিয়ে সম্পন্ন করেছে, যে কারণে মাত্র ১৪ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে। দেশের উন্নয়ন কার্যক্রম নিয়ে আমরা এগিয়ে যাব। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে দেশের মানুষের উন্নয়ন হয়, আজ এটা আবারও প্রমাণ হলো। আমরা দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাব।’
মেট্রোরেল যুগ সূচনার সন্ধিক্ষণের গল্প
বেলা ১টা ৩৩ মিনিটে দিয়াবাড়ী স্টেশনের ১ নম্বর টিকিট কাউন্টার থেকে মূল্য পরিশোধ করে টিকিট (কার্ড) কাটেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন শেখ রেহানা। তিনিও টিকিট (কার্ড) কাটেন। ১টা ৩৭ মিনিটে কার্ড পাঞ্চ করেন প্রধানমন্ত্রী ও তার ছোটবোন। চলন্ত সিঁড়িতে চড়ে প্ল্যাটফর্মে যান তারা। পরে সবুজ রঙের পতাকা নেড়ে মেট্রো ট্রেন চলাচলের সবুজ সংকেত দেন তিনি। তারপর সেই পতাকায় স্বাক্ষরও করেন প্রধানমন্ত্রী। বেলা ১টা ৪৫ মিনিটে ট্রেনে প্রবেশ করেন প্রধানমন্ত্রী। মেট্রোরেলে প্রধানমন্ত্রী ও তার বোন শেখ রেহানার মাঝের আসনে বসেছিলেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী। যাত্রাপথে আসন থেকে উঠে অতিথিদের সঙ্গে কুশলবিনিময় করেন প্রধানমন্ত্রী। বেলা ১টা ৫৩ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীদের বহনকারী ট্রেনটি আগারগাঁওয়ের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। আর আগারগাঁও পৌঁছায় দুপুর ২টা ১১ মিনিটে। স্বাভাবিক নয়; ধীরগতিতে চলে ১৮ মিনিটে গন্তব্যে পৌঁছায় প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী দেশের প্রথম মেট্রোরেল। আগারগাঁও স্টেশনে পৌঁছানোর পর মেট্রোরেল থেকে হাসিমুখে নেমে আসেন প্রধানমন্ত্রী ও অন্য যাত্রীরা। প্রধানমন্ত্রী নেমে আসার সময় উপস্থিত সবাই ‘জয় বাংলা’ বলে সেøাগান দেন। সেখানে অপেক্ষমাণ গাড়িতে চড়ে প্রধানমন্ত্রী চলে যান গণভবনে। দেশের প্রথম মেট্রোরেলের উদ্বোধন করার পর উত্তরা উত্তর স্টেশন ঘুরে দেখেন প্রধানমন্ত্রী। এই স্টেশনে একটি তেঁতুল গাছের চারা রোপণ করেন তিনি।
‘ইয়েস উই ক্যান’
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এমপি বলেছেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার সরকারের সাফল্যের মুকুটে মেট্রোরেল আরেকটি হিরণ¥য় পালক। গত ২৮ ডিসেম্বর রাজধানীর উত্তরার ১৫ নম্বর সেক্টরের ‘সি’ ব্লকের মাঠে মেট্রোরেল উদ্বোধনের পর সুধী সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘মেট্রোরেলের উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে সরকারের সাফল্যের মুকুটে যোগ হলো আরেকটি হিরণ্ময় পালক।’
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, আজ বাংলাদেশের জনগণের জন্য একটি আনন্দের দিন, রাজধানীবাসীর দীর্ঘ প্রতীক্ষিত স্বপ্ন পূরণের দিন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য ও সুদক্ষ নেতৃত্বে দেশের মানুষ একের পর এক অর্জন করছে স্বাধীনতার সুবর্ণ ফসল। আজ মেট্রোরেল স্বপ্ন নয়, মেট্রোরেল দৃশ্যমান বাস্তবতা। ওবায়দুল কাদের বলেন, সবই তো আমরাই করেছি। মেট্রোরেল ঢাকায় প্রথম, চট্টগ্রামে বঙ্গবন্ধু টানেল প্রথম, সামনের বছর ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে আসছে, এটাও প্রথম। ঢাকা থেকে গাজীপুর বাস র্যাপিড ট্রানজিটও প্রথম- আগামী বছর এটির উদ্বোধন আপনিই (শেখ হাসিনা) করবেন আমরা আশা করে আছি। সবই শেখ হাসিনা করছেন। তিনি বলেন, মানুষ বলে- শেখের বেটি বিশ্বব্যাংকের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে যে, আমরাও পারি। ইয়েস, উই ক্যান। মেট্রোরেল করে তিনি আবারও প্রমাণ করেছেন, ইয়েস! উই ক্যান। কেন আমরা পারব না! আমরা বীরের জাতি। বিশ্বব্যাংক অপবাদ দিয়েছে, আমি বলতে চাই, আমরা বীরের জাতি, চোরের জাতি নই।
মেট্রোরেল করে শেখ হাসিনা সরকার আবারও প্রমাণ করেছেন, ইয়েসÑ উই ক্যান। সড়ক পরিবহনমন্ত্রী বলেন, এই কঠিন পরিস্থিতিতেও বাংলাদেশ অনেক উন্নত দেশের চেয়ে ভালো আছে। শেখ হাসিনার মতো নেতৃত্ব আছে বলেই আমরা ভালো আছি। বাংলাদেশ ভালো আছে। মেট্রোরেলে নারীদের জন্য স্পেশাল বগি থাকবে। মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ফ্রি সার্ভিস থাকবে বলেও জানান কাদের। মেট্রোরেল উদ্বোধনের অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা-ধন্যবাদ জানানোর পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর ছোটকন্যা শেখ রেহানাকে বিশেষভাবে সম্বোধন করেন এবং পরিচয় করিয়ে দেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, আমাদের আজকের অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনার পাশে বিশেষ অতিথি হিসেবে বসে আছেন, তিনি বঙ্গবন্ধুর আরেক কন্যা। বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা মুজিব যেমন সংকটে বঙ্গবন্ধুর পরিবার ও পার্টিকে সামলিয়েছেন, তেমনি সংকটে শেখ হাসিনার পাশে সাহসী সহযোদ্ধার নাম শেখ রেহানা। এ সময় শেখ রেহানা চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে সবাইকে হাত উঁচিয়ে শুভেচ্ছা জানান। একই সময়ে শেখ রেহানার বড়বোন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হাততালি দেন। শেখ রেহানা সম্পর্কে ওবায়দুল কাদের বলেন, তিনি সাদাসিধে জীবনযাপন করেন। লন্ডন সিটিতে চাকরি করেন। বাসে চড়ে যাতায়াত করেন। ওবায়দুল কাদের বলেন, যতদিন এ বাংলায় চন্দ্র-সূর্য উদয় হবে, পাখি গান গাইবে, ততদিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম এ বাংলায় মুছবে না।
লেখক : সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য, উত্তরণ