Monday, December 4, 2023

মেগা প্রকল্পের বাংলাদেশ

বাংলাদেশ আজ শেখ হাসিনার আলোয় আলোকিত। সেই সাথে ‘মেগা প্রজেক্ট’গুলো সম্পন্ন হলে বাংলাদেশের আগামীর ইতিহাস নতুন ছন্দে রচিত হবে। সেই ছন্দের অদ্বিতীয় অপরাজেয় কবি শেখ হাসিনা। মেগা প্রজেক্টগুলো বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্ম একটি সুন্দর, সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী অর্থনীতির দেশে তাদের ক্যারিয়ার গড়ে তুলবে। তারা এই প্রজেক্টগুলো থেকে সর্বোচ্চ লাভবান হবে, স্মার্ট বাংলাদেশের আগামী তো তারাই। আসুন জেনে নিই মেগা প্রকল্পগুলো নিয়ে কী ভাবছে নতুন প্রজন্ম। তাদের ভাবনাগুলো লেখার অক্ষরে সাজিয়েছেন- আশেক মাহমুদ সোহান

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র
স্বাধীনতার পরে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণের উদ্যোগ নেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের সরকার। এরপর নানা সীমাবদ্ধতায় এর কাজ আর বেশিদূর না এগোলেও, ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা প্রথমবার ক্ষমতায় এলে গতি পায় প্রকল্পে। ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার ছিল রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ। ২০১৩ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে স্বপ্নের রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প এখন বাস্তবে রূপ নিয়েছে। দেশের সবচেয়ে ব্যয়বহুল এ প্রকল্প নির্মাণের ফলে আওয়ামী লীগ সরকার তার আরও একটি নির্বাচনী ইশতেহার পূরণ করল। দীর্ঘকাল পর পদ্মা তীরের ওই জনপদে আবারও উন্নয়ন ও অগ্রগতির বারতা নিয়ে নির্মিত হচ্ছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জ্বালানি হিসেবে আসা ইউরেনিয়ামের প্রথম চালান আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করেছে রাশিয়া।

মাত্র এক যুগের মধ্যে দেশে শতভাগ বিদ্যুতায়ন নিশ্চিত করতে সমর্থ হয় সরকার। আজকের বাংলাদেশের এসব অগ্রগতি শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বের কারণে সম্ভব হয়েছে।

রাশিয়ার কাছ থেকে জ্বালানি ফ্রেশ ফুয়েল ইউরেনিয়াম গ্রহণের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে পারমাণবিক স্থাপনার স্বীকৃতি পেয়েছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। এর মাধ্যমে ৩৩তম দেশ হিসেবে নিউক্লিয়ার ক্লাবের সদস্য হয়েছে বাংলাদেশ। ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা যখন দায়িত্ব নেন তখন দেশের মাত্র ৪৭ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা পেত। নিয়মিত লোডশেডিংয়ে জনজীবন বিপর্যস্ত ছিল। বিদ্যুৎ খাতের এ করুণ অবস্থার কারণে বৃহৎ শিল্পগুলো যেমন একদিকে ধুঁকছিল, তেমনিভাবে ক্ষুদ্র ও মাঝারি পর্যায়েও কোনো উদ্যোগ নেওয়া সম্ভব ছিল না। কিন্তু মাত্র এক যুগের মধ্যে দেশে শতভাগ বিদ্যুতায়ন নিশ্চিত করতে সমর্থ হয় সরকার। আজকের বাংলাদেশের এসব অগ্রগতি শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বের কারণে সম্ভব হয়েছে।
রাগীব হাসান অনু, কালাচাঁদপাড়া, সদর, পাবনা

পদ্মা সেতু
পদ্মা সেতুর মাধ্যমে সরকার দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ২৩টি জেলার সাথে ঢাকার দ্রুত যোগাযোগের জন্য সড়ক ও ট্রেন উভয় ব্যবস্থার উন্মোচন করেছে। ফলে এখন বৃহত্তর ফরিদপুর, খুলনা, বরিশাল বিভাগের জেলাসহ, যশোরের সাথে ঢাকা যোগাযোগব্যবস্থা আরও দ্রুতগামী ও সাচ্ছন্দ্যময় হয়েছে। এখানকার জনগণ এখন বিভিন্ন উচ্চসেবার জন্য সহজে ঢাকায় আসা-যাওয়া করতে পারে। এখনও দেশের দক্ষিণাঞ্চলের কয়েকটি জেলায় ভালো উচ্চপর্যায়ের চিকিৎসাব্যবস্থা নেই। পদ্মা সেতুর মাধ্যমে তারা কিছু সময়ের মধ্যে ঢাকায় এসে উন্নতমানের চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করতে পারছে। পদ্মা সেতুর উন্মোচনের পর দেশের দক্ষিণাঞ্চলের দ্রব্যসামগ্রী সহজে দেশের অন্যান্য অঞ্চলে পরিবহন করা সম্ভব হচ্ছে। এখন দক্ষিণাঞ্চলে বিভিন্ন প্রকার শিল্প-কারখানা তৈরি হওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এই মেগা প্রকল্পের মাধ্যমে মোংলা সমুদ্রবন্দরের সাথে দেশের দ্রব্যসামগ্রী আমদানি-রপ্তানির গতিশীলতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। পায়রা বন্দর, সাবমেরিন কেবল ল্যান্ডিং স্টেশন, ঢাকা-বরিশাল চার-লেন সড়ক, শেরে বাংলা নৌঘাঁটি ও ইপিজেড স্থাপিত হলে পুরো দক্ষিণাঞ্চল গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক জোনে পরিণত হবে। দক্ষিণাঞ্চলকে বলা হয়, দেশের প্রধান খাদ্য ভাণ্ডার। পদ্মা সেতুর ফলে এখানের শস্যদ্রব্য সহজে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে যাচ্ছে। পদ্মা সেতু ঘিরেই উদ্যোক্তারা দেশের দক্ষিণাঞ্চলে বিনিয়োগের ডালা খুলে বসেছেন। এই সেতুর ফলে বিভিন্ন পর্যটক বাগেরহাটের ষাট গম্বুজ মসজিদ, কুয়াকাটা, সুন্দরবন ইত্যাদি দর্শনীয় স্থানের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছে। পদ্মা সেতুর ফলে দেশের জিডিপির মান অনেকাংশে বৃদ্ধি পাবে। পদ্মা সেতু সম্পূর্ণ আমাদের নিজস্ব অর্থায়নে তৈরি করা হয়েছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের এমন সুদূরপ্রসারী মেগাপ্রকল্প দেশের অর্থনৈতিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বিস্তার করেছে বলে আমি মনে করি।
গৌরব কুমার সাহা, ভাঙা, ফরিদপুর

কক্সবাজারে রেলসংযোগ
দেশের ইতিহাসে প্রথম রেলপথ যোগ হচ্ছে পর্যটন নগরী কক্সবাজারে। হুইসেল বাজিয়ে রেল যাবে সমুদ্রের শহরে। বাস ও বিমানের পর রেলযোগে কক্সবাজার যেতে পারবেন পর্যটকরা। রেলপথ চালু হলে ঢাকা থেকে কক্সবাজার যাতায়াত অধিকতর সহজ হবে। রেলপথে যাতায়াত শুরু হলে কমবে ভোগান্তি, বাঁচবে সময় ও টাকা। বাড়বে পর্যটক সমাগম। পর্যটন শিল্প বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে রেলপথ। এছাড়া সামুদ্রিক পণ্য মাছ, লবণ, কাঁচামালসহ নানা দ্রব্যাদি পরিবহণে খরচ কমবে। গতিশীল হবে দেশের রাজস্ব খাতও। রেলপথকে কেন্দ্র করে কক্সবাজার সদর উপজেলার ঝিলংজা ইউনিয়নের চান্দেরপাড়ায় ২৯ একর জায়গায় নির্মাণ হয়েছে চোখ ধাঁধানো রেলস্টেশন। সমুদ্র শহরের ঐতিহ্য ঝিনুক। সেই ঝিনুকের আদলে নির্মাণ হয়েছে রেলস্টেশন। ১ লাখ ৮৭ হাজার বর্গফুট আয়তনের রেলস্টেশনে থাকবে আন্তর্জাতিকমানের সুযোগ-সুবিধা। পর্যটকরা স্টেশনের লকারে লাগেজ রেখে সারাদিন সমুদ্র সৈকতে ঘুরতে পারবেন। ছয়তলা ভবনের নিচতলায় থাকবে যাত্রীদের টিকিট কাটার ব্যবস্থা। এছাড়া ক্যান্টিন, হোটেল, মার্কেটসহ ৫ হাজার মানুষের ধারণক্ষমতার কনভেনশন সেন্টার থাকবে কক্সবাজার আইকনিক রেলস্টেশনে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী সিদ্ধান্তে ঢাকা থেকে কক্সবাজার রেলপথ চালু হতে যাচ্ছে। রেলপথ চালু হলে কক্সবাজারে পর্যটকদের আগমন বাড়বে। এলাকার ব্যবসা-বাণিজ্যের ব্যাপক উন্নয়ন হবে। আমাদের কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে। রেল চালু হলে ঢাকা থেকে কক্সবাজার যেতে সময় লাগবে সাড়ে ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা। কক্সবাজার হচ্ছে পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্রবন্দরের অন্যতম একটি। দেশের একমাত্র আইকনিক স্টেশন হচ্ছে কক্সবাজারে। যাত্রীরা এখানে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা পাবেন। রেলপথ চালুর পর কক্সবাজারকে নতুন করে চিনবেন পর্যটকরা।
এম শাকিলুর রহমান, মহেশখালী, কক্সবাজার

বঙ্গবন্ধু রেলসেতু
বর্তমানে চলমান মেগা প্রকল্পের মাধ্যমে উন্নয়নের যে ধারা অব্যাহত রয়েছে, বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে আমরা সবাই অবগত রয়েছি। এই মেগা প্রকল্পগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বঙ্গবন্ধু রেলসেতু। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২০ সালের ২৯ নভেম্বর বঙ্গবন্ধু রেলসেতু নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২০২৪ সালের মধ্যে সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধু রেলসেতু চালু হলে আমার নিজ শহর সিরাজগঞ্জসহ উত্তরাঞ্চলের সাথে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন ঘটবে, যা উত্তরাঞ্চলের মানুষের আর্থ-সামাজিকসহ সকল ক্ষেত্রে পরিবর্তন নিয়ে আসবে। বঙ্গবন্ধু রেলসেতু চালু হলে ঢাকার সাথে উত্তরাঞ্চলের সকল জেলার রেল যোগাযোগব্যবস্থায় নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে। রাজধানী ঢাকার সাথে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের ট্রেনগুলোর গন্তব্যে পৌঁছার সময় গড়ে ২ ঘণ্টা কমে যাবে। পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী দেশগুলো থেকে রেলপথে পণ্য পরিবহণের সুবিধা বৃদ্ধি পাবে। উত্তরাঞ্চলের কৃষকদের উৎপাদিত শস্যাদি, শাক-সবজি, ফলমূল স্বল্প সময়ের মধ্যে সারাদেশে পৌঁছবে। ফলে এ অঞ্চলের অর্থনীতির বিকাশ আরও তরান্বিত হবে, যা এ অঞ্চলের পাশাপাশি দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
আতিকুল ইসলাম
সদর, সিরাজগঞ্জ

আরও পড়ুন
spot_img

জনপ্রিয় সংবাদ

মন্তব্য