অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন: সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর দুই মাহেন্দ্রক্ষণের গৌরবদীপ্ত সাক্ষী আজ বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু-কন্যা দেশরতœ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার ইতিহাসের এই তাৎপর্যময় সময়টিকে আড়ম্বরপূর্ণভাবে উদযাপনের জন্য নানা অনুষ্ঠানমালার উদ্যোগ নিলেও করোনাভাইরাস মহামারির কারণে অনুষ্ঠানমালাকে পুনর্বিন্যাস করা হয়। মুজিববর্ষের কর্মপরিকল্পনা সম্পন্ন করতে অনুষ্ঠান আয়োজনের সময়সীমা বৃদ্ধি করা হয়।
জাতির পিতার সংগ্রামী জীবন ও দেশ গড়ার সংগ্রাম বাঙালি জাতির নিরন্তর প্রেরণার উৎস। অসীম সাহসী প্রজ্ঞাবান, দূরদৃষ্টিসম্পন্ন মানবদরদি এ নেতা এই জনপদের মানুষকে মুক্তির পথ দেখিয়েছেন। পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্তির জয়গান গেয়ে তিনিই মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করেছেন। বাল্যকাল থেকেই সমাজ ও রাজনীতি সচেতন ছিলেন। কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে অধ্যয়নকালে সক্রিয় রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন তিনি। ১৯৪৩ ও ১৯৪৬ সালে কলকাতায় দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়লে তিনি সহপাঠীদের নিয়ে দাঙ্গা উপদ্রুত এলাকায় আর্তমানবতার সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করেন। দেশভাগের পর সদ্য স্বাধীন পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীর বিমাতাসুলভ আচরণে ক্ষুব্ধ ও প্রতিবাদী হয়ে ওঠেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। ১৯৪৮ সালে রাষ্ট্রভাষার দাবিতে আন্দোলন করতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু গ্রেফতারবরণ করেন। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি রক্তাক্ত ঘটনার সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কারাভ্যন্তরে থাকা অবস্থায় অনশন করেন।
ভাষা আন্দোলনের ধারাবাহিকাতায় ’৫৪-র যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ’৬২-র আইয়ুব খানের সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন, ’৬২-র শিক্ষা আন্দোলন, ’৬৬-র ৬-দফা আন্দোলন, ’৬৮-র আগরতলা যড়ষন্ত্র মামলা, ’৬৯-র গণ-অভ্যুত্থান, ’৭০-এর নির্বাচন এবং ’৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধসহ বাঙালির জাতির সকল গৌরবের মূল কারিগর ছিলেন বঙ্গবন্ধু।
স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতার লড়াইয়ে বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সাড়া দিয়েই ৩০ লাখ মানুষ জীবন দিয়েছে। সম্ভ্রম হারিয়েছে অগণিত নারী। বঙ্গবন্ধুর সারা জীবনের সংগ্রামের ফলেই অর্জিত হয়েছে স্বাধীন, সার্বভৌম গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ।
জনগণের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুর আত্মত্যাগের ইতিহাস পৃথিবীতে বিরল। বিশ্বের নিপীড়িত, শোষিত-বঞ্চিত মানুষের মুক্তির অগ্রদূত ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। গণমানুষের অধিকার আদায়ের জন্য বিভিন্ন মেয়াদে ব্রিটিশ ও পাকিস্তানের কারাগারে বঙ্গবন্ধুর কেটেছে অন্তত ৩,০৫৩ দিন। বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ আজ ইউনেস্কোর তালিকায় বিশ্ব ঐতিহ্যের দলিল। বিশ্ব শান্তিতে অনবদ্য ভূমিকা রাখার কারণে ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধুকে ‘জুলিও কুরি’ পদক দেওয়া হয়। মাত্র সাড়ে তিন বছরে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে বঙ্গবন্ধু স্বল্পোন্নত দেশের কাতারে নিয়ে আসেন। সকল প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে বঙ্গবন্ধু যখন সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলেন, স্বাধীনতাবিরোধী ঘাতক যুদ্ধাপরাধী চক্র ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে পরিবারের সদস্যসহ নৃশংসভাবে হত্যা করে।
দেশ গড়ার সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুর অবদান
* বঙ্গবন্ধুর ক্যারিশম্যাটিক নেতৃত্বে বিজয়ী জাতি বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে দেশ গড়ার সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে। বঙ্গবন্ধু যুদ্ধবিধ্বস্ত জাতিকে সম্মিলিত উদ্যোগে সোনার বাংলা গড়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন।
* অসাম্প্রদায়িক জাতীয়তাবাদী নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাষ্ট্রের মৌলিক কাঠামো নির্ধারণে সব সময় সংসদীয় গণতন্ত্রের পক্ষে ছিলেন। তাই মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বঙ্গবন্ধুকে রাষ্ট্রপতি করা হলেও তিনি রাষ্ট্রপতির পদ ত্যাগ করে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন।
* একটি পূর্ণাঙ্গ সরকার ও জাতীয় প্রশাসনিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়। সরকার পরিচালনার জন্য নতুন প্রতিষ্ঠান গঠন, নতুন কর্মকর্তা নিয়োগের ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা গ্রহণ করেন।
* মাত্র এক বছরের মধ্যে একটি সুলিখিত ও বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত সংবিধান তৈরি করে বঙ্গবন্ধু ইতিহাস সৃষ্টি করেন। গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, জাতীয়তাবাদ ও সমাজতন্ত্রকে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি করে সংবিধানে যুক্ত করা হয়।
* জাতির পিতার বিচক্ষণ নেতৃত্বে মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে ভারতীয় মিত্রবাহিনী স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করে।
* ১২৬টি রাষ্ট্র স্বাধীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়।
* বঙ্গবন্ধু সুদূরপ্রসারী চিন্তা নিয়ে সমুদ্রসীমা আইনসহ রাষ্ট্র পরিচালনার নানা আইন ও অধ্যাদেশ জারি করেন।
* ভারতের সাথে স্থলসীমানা সমস্যা সমাধানে সীমান্ত চুক্তি করেন।
* যুদ্ধাপরাধের বিচার কাজ শুরু করা।
* সেনা, নৌ, বিমান বাহিনী ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে দ্রুত সংগঠিত করে দেশের সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত করা।
* ১ কোটি উদ্বাস্তু পুনর্বাসন ও পাকিস্তানি বাহিনী কর্তৃক নির্যাতিত ৩ কোটি অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু মানুষের জীবন স্থিতিশীল করা।
* বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বেই বাংলাদেশ জাতিসংঘ, বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)), আংটাড (UNCTAD), কমনওয়েলথ, জোটনিরপেক্ষ আন্দোলন এবং ওআইসি-সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সদস্যপদ লাভ করে।
* কৃষিপ্রধান বাংলাদেশে গ্রামীণ অর্থনৈতিক উন্নয়নে জোর দেওয়া হয়। ক্ষেতে-খামারে উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। অর্থনীতিতে গতি সঞ্চারিত হয়। প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশে উন্নীত হয়।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট থেকে ১৯৯০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত দীর্ঘ ১৬ বছর জেনারেল জিয়া ও জেনারেল এরশাদের সামরিক শাসনের জাঁতাকলে নিষ্পেষিত হয় বাংলাদেশ। সামরিক শাসকরা জনগণের মৌলিক অধিকার হরণ এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে। স্বাধীনতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধী, সাম্প্রদায়িক শক্তিগুলোকে রাজনৈতিক, সামাজিক ও প্রশাসনিক ক্ষেত্রে পুনর্বাসিত করা হয়। হত্যা, ক্যু-পাল্টা ক্যু হয় ক্ষমতাবদলের হাতিয়ার। জনগণের ভোটাধিকার ও নির্বাচন ব্যবস্থাকে প্রহসনে পরিণত করা হয়। দুর্নীতি, দুঃশাসন ও লুটপাটের কারণে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে। স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে জনগণের বিরোচিত সংগ্রামে নেতৃত্বে দেয় দেশরত্ন শেখ হাসিনা। দীর্ঘ ২১ বছর পর জনগণের রায়ে আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের পর সূচিত স্বৈরতান্ত্রিক ধারার অবসান হয়। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আলোকোজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে পা বাড়ায় বাংলাদেশ। এ সরকারের সময় দৃশ্যমান পরিবর্তনগুলো হলোÑ
* ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশের মতো কালাকানুন বাতিল করে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের কার্যক্রম শুরু করে।
* জাতীয় জীবনের সর্বক্ষেত্রে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পূর্ণ প্রতিষ্ঠা করা হয়।
* গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার লক্ষ্যে সংসদকে সকল কর্মকা-ের কেন্দ্রবিন্দু করা হয়।
* ভারতের সঙ্গে ৩০ বছর মেয়াদি গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি স্বাক্ষর ও পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি সম্পাদন করে দুই যুগের ভ্রাতৃঘাতি হানাহানি বন্ধ করা হয়।
* বিএনপি আমলের ৪৪ শতাংশ সাক্ষরতার হার বেড়ে আওয়ামী লীগ আমলে ৬৫ শতাংশে উন্নীত হয়।
* দারিদ্র্য বিমোচনে বয়স্ক ভাতা, বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তা ভাতা, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, আশ্রয়ণ প্রকল্প, একটি বাড়ি একটি খামারের মতো বহু সৃজনশীল কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়।
* প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রচেষ্টায় মহান ২১ ফেব্রুয়ারি অর্জন করে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের গৌরব।
* বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম একটি নির্বাচিত সরকার তার পাঁচ বছর পূর্ণ মেয়াদ শেষ করে শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তর করে।
জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকারের পাঁচ বছরের শাসনামলে যে অমিত সম্ভাবনার সৃষ্টি হয়েছিল, বিএনপি-জামাত জোটের শাসনামলে সে সম্ভাবনার অপমৃত্যু হয়। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট খালেদা জিয়া সরকারের মদদে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার লক্ষ্যে গ্রেনেড হামলায় নারীনেত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন। পাঁচ শতাধিক মানুষ গুরুতর আহত হয়। সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া, শ্রমিক নেতা আহসানউল্লাহ মাস্টার, অ্যাডভোকেট মঞ্জুরুল ইমাম ও মমতাজউদ্দিন-সহ ২১ হাজার নেতাকর্মীকে বিএনপি-জামাত জোট হত্যা করে। খালেদা জিয়ার সন্তানদের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা ‘হাওয়া ভবন’কে রাষ্ট্র ক্ষমতার সমান্তরাল কেন্দ্রে পরিণত করা হয়। বিএনপি-জামাত জোট সংসদকে অকার্যকর ও সকল গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে। বিএনপি-জামাতের ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার মানসিকতার কারণেই ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি পটপরিবর্তন হয়। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর সকল দলের অংশগ্রহণে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ প্রায় ৯০ শতাংশ আসনে নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করে। এই নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশে গণতন্ত্রের উত্তরণ ও দিনবদলের শুভ সূচনা হয়।
২০০৯ সালে থেকে ধারাবাহিকভাবে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ সরকার দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন করতে সক্ষম হয়েছে। সেই সাফল্যের কিছু চিত্র নিম্নে উল্লেখ করা হলোÑ
* স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে শামিল হয়েছে।
* ২০০৯ সালে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতা ছিল ৪,২০০ মেগাওয়াট, বর্তমানে দৈনিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা ২৫,২৩৫ মেগাওয়াট।
* খাদ্য উৎপাদনে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ। বর্তমানে দানাদার খাদ্য উৎপাদনের পরিমাণ ৪ কোটি ৫৫ লাখ মেট্রিক টন।
* ‘আমার গ্রাম আমার শহর’ এই প্রতিপাদ্য সামনে রেখে গ্রামে আধুনিক নাগরিক সুবিধার সৃষ্টি হচ্ছে।
* শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার কমেছে, গড় আয়ু বেড়ে ৭৩ বছর হয়েছে।
* যুবসমাজের হাতে অস্ত্র ও মাদকের পরিবর্তে কম্পিউটার ও প্রযুক্তি তুলে দেওয়া হয়েছে।
* নারী শিক্ষার প্রসার এবং নারীর ক্ষমতায়ন করা হয়েছে।
* সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ দমন করে দেশকে স্থিতিশীল ও শান্তিময় করা হয়েছে।
* ভারত ও মিয়ানমারের সাথে সমুদ্রসীমায় অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ভারতের সাথে দীর্ঘ প্রতীক্ষিত সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়িত হয়েছে।
* ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল, বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট, গভীর সমুদ্রবন্দর, পদ্মাসেতু, মেট্রোরেল, পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ বিভিন্ন মেগা প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে।
স্বাধীনতার এই ৫০ বছরে বাঙালি জাতির যা কিছু মহৎ অর্জন, যা কিছু কল্যাণকরÑ সবই এসেছে বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে, নয় তো তার যোগ্য কন্যা নন্দিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে।
স্বাধীন জাতিরাষ্ট্র বাংলাদেশের পাঁচ দশকের পথ চলায় বঙ্গবন্ধু নির্দেশিত পথেই আমাদের মুক্তি এসেছে। বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু মূলত এক সূত্রে গাঁথা। বঙ্গবন্ধুর নীতি-আদর্শ থেকে বাংলাদেশ যখন দূরে সরে গেছে তখনই অমানিশার অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়েছে জাতি। অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক রাজনীতির দর্শনে বঙ্গবন্ধু এই জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছেন। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকা-ের পর আমরা বিভাজিত হয়েছি। সামরিক শাসনের গর্ভে জন্ম নেওয়া রাজনৈতিক দলগুলো সুকৌশলে বিকৃত মিথ্যা ইতিহাস প্রচার করে বিকৃত মানসিকতার প্রজন্ম গড়ার চেষ্টা করেছে। এক্ষেত্রে তারা কিছুটা সফলও হয়েছে। বঙ্গবন্ধু-কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা সকল ষড়যন্ত্র প্রতিহত করে পিতার আদর্শের পতাকাকে শক্ত হাতে ধারণ করে এগিয়ে যাচ্ছেন সম্মুখপানে। অতীতের সরকারপ্রধানরা এডহক ভিত্তিতে রাষ্ট্র পরিচালনা করেছেন। ছিল না কোনো সুদূরপ্রসারী লক্ষ্য। বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারণ করে একটা উন্নত আধুনিক কল্যাণমুখী বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় শামিল হয়েছে দেশবাসী। লক্ষ্য নির্দিষ্ট এবং স্পষ্ট। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নত দেশের কাতারে শামিল হবে।
বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের মহাসড়কে। এক সময়ের ক্ষুধা-দারিদ্র্যের বাংলাদেশ আজ বিশ্ব দরবারে উন্নয়নের রোল মডেল। সবই সম্ভব হচ্ছে বঙ্গবন্ধু-কন্যার সাহস, প্রজ্ঞা ও মেধাবী নেতৃত্বের গুণে।
নতুন প্রজন্মের জন্য একটি সম্ভাবনাময় ভবিষ্যৎ নির্মাণই বঙ্গবন্ধু-কন্যার লক্ষ্য। আমাদের বিশ্বাস, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর নানা আয়োজনে আমরা ফিরে গেছি আমাদের শৌর্যবীর্যের কাছে। এ ভূখ-ে অসাম্প্রদায়িক মানবতাবাদী রাজনীতির চূড়ান্ত বিকাশ হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর জাদুকরি নেতৃত্বে। আমাদের বিশ্বাস, মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বঙ্গবন্ধুর জীবনাদর্শ থেকে শিক্ষা নিয়ে বর্তমান প্রজন্ম এগিয়ে যাবে সম্মুখপানে।
লেখক : সাংগঠনিক সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য, উত্তরণ