Monday, December 4, 2023
বাড়িSlider‘ভালো বীজে ভালো ফসল, উৎপাদনে বীজই আসল’

‘ভালো বীজে ভালো ফসল, উৎপাদনে বীজই আসল’

এদেশের কৃষি এখন সারাবিশে^র কাছে দৃষ্টান্তস্বরূপ। বিশেষ করে করোনাকালে বাংলাদেশ কৃষি উৎপাদনে বিরল রেকর্ড গড়েছে। আমাদের আবাদি জমির পরিমাণ নির্ধারিত; বরং কমছে প্রতিনিয়ত। বাড়ছে জনসংখ্যা। ফলে কম জমিতে সর্বোচ্চ ফসল উপাদনের জন্য মানসম্পন্ন বীজের বিকল্প নেই।

রাজিয়া সুলতানা: কৃষিনির্ভর বাংলাদেশে কৃষকের কল্যাণ ছাড়া সার্বিক উন্নয়ন অসম্ভব। কৃষির উন্নতি-উন্নয়নই দেশের উন্নয়ন নিশ্চিত করে। প্রাথমিকভাবে কৃষির উন্নতি নির্ভর করে ফসল উৎপাদনের ওপর। মানসম্পন্ন ফসল উৎপাদন নির্ভর করে যথোপযুক্ত বীজ ব্যবহারের ওপর। গবেষকরা নিশ্চিত করেছেন, শুদ্ধ চাষরীতি অনুসরণ করে মানসম্পন্ন বীজ ব্যবহার করলে ফসল উৎপাদন ১৫-২০ শতাংশ বৃদ্ধি পায়।
‘ভালো বীজে ভালো ফসল, উৎপাদনে বীজই আসল’- আর এই চিরায়ত সেøাগানকে সামনে রেখে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘বাংলাদেশ সীড কংগ্রেস ২০২৩’। কৃষি মন্ত্রণালয়ের সার্বিক সহযোগিতায় বাংলাদেশ সীড এসোসিয়েশন (বিএসএ) এই ব্যতিক্রমী আয়োজন করে। তিন দিনব্যাপী এই কংগ্রেসের উদ্বোধন করেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক এমপি। অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষি সচিব ওয়াহিদা আক্তার, ইন্টারন্যাশনাল সীড ফেডারেশনের সেক্রেটারি জেনারেল মাইকেল কেলার, এশিয়া অ্যান্ড প্যাসিফিক সীড অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ড. মানিশ প্যাটেল এবং জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার বাংলাদেশ প্রতিনিধি রবার্ট ডি. সিমসনসহ অনেকে। এই কংগ্রেসে প্রায় ৫০ জন বিদেশি প্রতিনিধি অংশ নিয়েছেন। সবমিলিয়ে প্রায় ১ হাজার প্রতিনিধি কংগ্রেসের বিভিন্ন সেশনে অংশ নিয়েছেন। তাদের মধ্যে দেশি-বিদেশি বিজ্ঞানী, কৃষি সম্প্রসারণ কর্মী, বীজ ডিলার, বীজ ব্যবসায়ী, বীজ শিল্প প্রতিষ্ঠান, কৃষিবিদ, প্রযুক্তিবিদ ও নীতি-নির্ধারক, ব্যাংকার, শিক্ষক ও তৃণমূলের কৃষক প্রমুখ উল্লেখযোগ্য।
১১-১৩ ফেব্রুয়ারি ‘বাংলাদেশ সীড কংগ্রেস ২০২৩’ অনুষ্ঠিত হয় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র, ঢাকা। কংগ্রেসে দেশ-বিদেশের সুনামধন্য বীজ কোম্পানি, গবেষণা প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন দেশের সীড এসোসিয়েশন, আন্তর্জাতিক উন্নয়ন­­­­­­ সংস্থা, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা মন্ত্রাণালয়সহ ৬০টি স্টল ও ১৩টি প্যাভিলিয়ন সাজিয়েছিল। এর মধ্যে ১০টি ছিল বিদেশি স্টল। স্টল ও প্যাভিলিয়নে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানসমূহের গবেষণা, উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, সংরক্ষণ, সীড টেস্টিং ল্যাব, সীড হেলথ ল্যাব, বায়োটেক ল্যাব, টিস্যু কালচার ল্যাবের কলাকৌশল ও প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবিত জাতের বীজ মোড়কীকরণ ও বাজারজাতকরণ প্রদর্শিত হয়েছে।
কংগ্রেস সাজানো হয়েছিল জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ৪টি কারিগরি (টেকনিক্যাল) সেশনের সেমিনার দিয়ে। সেমিনারে বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ, আধুনিক প্রজনন কৌশল, বিভিন্ন দেশের ফসলের রোগবালাই ও পোকামাকড়ের প্রাদুর্ভাব, কৌলিতাত্ত্বিক সম্পদ সংরক্ষণ, মেধাস্বত্ব অধিকার সংরক্ষণ, হাইব্রিড ধান, ভুট্টা, বীজ আলু, সবজি বীজ, পাবলিক ও প্রাইভেট পার্টনারশিপ-এর আওতায় বিভিন্ন উন্নয়নমূলক উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন, বীজ রপ্তানি ও আন্তর্জাতিক বাজারে বীজের নিরাপদ সরবরাহ নিশ্চিতকরণে সরকারি বেসরকারি উদ্যোগ, দেশি-বিদেশি কোম্পানিগুলোর মধ্যে যৌথ উদ্যোগে বীজ শিল্প গড়ে তোলার সম্ভাবনা ও প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণ, ভবিষ্যৎ বীজ শিল্পের উন্নয়নসহায়ক নীতি, আইন, বিধিমালা প্রণয়ন ও সংশোধন বিষয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপনসহ ফসলভিত্তিক দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞদের প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়।
বিএসএ নির্দিষ্ট কতগুলো লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে এই সীড কংগ্রেসের আয়োজন করে। বিশেষ করে দেশে বীজ শিল্পের টেকসই এবং জুঁতসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সরকারি-বেসরকারি পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের কৌশল নির্ধারণ, ক্রমহ্রাসমান চাষযোগ্য জমি, দ্রুত পরিবর্তনশীল বৈরী জলবায়ুর ক্ষতিকর প্রভাব, ক্ষতিকর পোকামাকড় ও রোগবালাইয়ের প্রাদুর্ভাব, ভূ-রাজনীতির প্রভাব মোকাবিলা করে মানসম্পন্ন বীজের মাধ্যমে কৃষির উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ উদ্যোগকে উৎসাহিত করা ও এর আওতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করা। তাছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে বীজের নিরাপদ সরবরাহ ও প্রাপ্যতা নিশ্চিতকরণে বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণ, দেশীয়, আঞ্চলিক, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গবেষণা ও উন্নয়ন সহায়তা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে সমঝোতা এবং সহায়তা বৃদ্ধি, বীজ শিল্পে বিভিন্ন বিদেশি কোম্পানিকে যৌথ উদ্যোগে গবেষণা, উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণে বিনিয়োগের লক্ষ্যে উৎসাহিত করা। ‘সুবংশে সুসন্তান সর্বলোকে কয়, ভালো বীজে ভালো ফসল জানিবে নিশ্চয়’- এই প্রবাদকে ধারণ ও লালন করে ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ সীড গ্রোয়ার্স ডিলারস অ্যান্ড মার্চেন্টস এসোসিয়েশন [বিএসজিডিএমএ] প্রতিষ্ঠা লাভ করে। যা ছিল বাংলাদেশের বেসরকারি খাতের কৃষি ব্যবসা কোম্পানিগুলোর বৃহত্তম ও নেতৃস্থানীয় বীজ সমিতি। কৃষিবান্ধব বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালে বিএসজিডিএমএ পরিবর্তিত হয়ে বাংলাদেশ সীড এসোসিয়েশনে [বিএসএ] পরিণত হয়। এই সংগঠনের প্রধান লক্ষ্য ছিল ভালোমানের বীজ উৎপাদন করা ও তা কৃষকদের মাঝে সাশ্রয়ী মূল্যে সরবরাহ নিশ্চিত করা। বিএসএ প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই বীজ সেক্টরের উন্নতির জন্য বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করে। একটি সুস্থ, স্থিতিশীল এবং টেকসই ক্রমবর্ধমান পরিবেশে বীজ শিল্পের বিকাশের জন্য সবার মধ্যে একটি সহযোগিতার মনোভাব জাগিয়ে তোলে। এক কথায়, একপর্যায়ে এ সংগঠনটি সরকার ও বেসরকারি বীজ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একটি সেতুবন্ধন রচনা করে। বাংলাদেশ বীজ শিল্পের নীতিমালা, আইন, বিধিমালা, বিভিন্ন নিয়মাবলি পর্যালোচনা করে সরকারের সাথে যোগাযোগের মাধ্যমে সকল সদস্যের স্বার্থ সুরক্ষায় যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করে। অভ্যন্তরীণ ও বিদেশি বাজারে কৃষকদের উচ্চমানের বীজের ভিত্তি প্রসারিত করার জন্য ব্যবস্থাপনা, বিপণন, সম্মিলিত প্রচারসহ তথ্য আদান-প্রদান, নতুন বীজ প্রযুক্তির প্রস্তাব ও ব্যবহার বৃদ্ধির জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করে। নতুন জাতের উন্নয়ন ও প্রজননের জন্য তৃণমূল পর্যন্ত প্রচার ও প্রসারের কাজ পরিচালনা করে।
বীজ সেক্টরের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ভালো বীজের বিপণন, সরবরাহ ও ব্যবহার শুরু হয় ষাটের দশকে। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের [বিএডিসি] প্রতিষ্ঠা সেই সময়ে। বিএডিসি সর্বপ্রথম বীজ উৎপাদন ও বিপণন শুরু করে। ফলে বাংলাদেশের কৃষিতে ব্যাপক উন্নয়ন নিশ্চিত হওয়ার ক্ষেত্র তৈরি হয়। এর মাধ্যমে কৃষিতে আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তির সূত্রপাতও নিশ্চিত হয়। সেই সময় থেকে কিছু কিছু ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী নানাভাবে বীজ সংগ্রহ করে খোলাবাজারে তা বিক্রি শুরু করে। স্বাধীনতার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেন। ডাক দেন- সবুজ বিপ্লবের। কৃষি উৎপাদন বাড়াতে সবাইকে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানান। ১৯৭৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি কৃষিবিদদের কারিগরি মর্যাদা ও প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত করেন। পুনর্গঠন করেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (BARI), বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (BRRI), বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (BINA), বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটসহ (BJRI) বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান। সরকারি কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের এপেক্স বডি হিসেবে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (BARC) প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ এবং উন্নয়ন বাজেটে কৃষি গবেষণায় বরাদ্দ বৃদ্ধি করেন। সীড ভ্যালোয়েশন চেইন ও সীড সাপ্লাই চেইন গতিশীল হয়। ফলে স্বাধীন বাংলাদেশে উৎপাদন বাড়াতে ব্যাপকভাবে বীজ নিয়ে গবেষণার শুরু হয়। সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে প্রসারিত হয় বীজ ব্যবসার। বঙ্গবন্ধু ১৯৭৩ সালে প্রবর্তন করেন ‘রাষ্ট্রপতি কৃষি পুরস্কার’। তার উদ্যোগেই কৃষি উৎপাদনের সূত্রমূল বীজের গুণগতমান নিশ্চিত করতে ১৯৭৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সি। আশির দশকে বাংলাদেশে বিপুল সমারহে বীজ ব্যবসা বিকশিত হয়। তবে বীজ ব্যবসায় আধুনিকতার বিকাশ ঘটে নব্বইয়ের দশক হতে। ১৯৯৮ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনা খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে সর্বপ্রথম দেশে উন্নতমানের হাইব্রিড ধান বীজের অনুমতি দেন। যা ছিল কৃষির জন্য এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। ফলে বর্তমানে ৭০-৮০ শতাংশ হাইব্রিড ধান বীজ দেশেই উৎপাদিত হচ্ছে। আর এখন দেশে উৎপাদিত হাইব্রিড বীজই দেশের চাহিদা পূরণ করছে। এক্ষেত্রে অবশ্য সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করছে বেসরকারি খাত। দেশের মোট সরবরাহের প্রায় ৫৩% বীজ সরবরাহ করে বেসরকারি খাত। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ধান বীজের ৪৪%, হাইব্রিড ধানের ৯৭%, ভুট্টার ৯৯%, সবজি বীজের ৮৬%, আলু বীজের ৭৪%, পাট বীজের ৮৩% সরবরাহ করছে বেসরকারি খাতগুলো (বিএসএ সীড কংগ্রেস ২০২৩)। জমজমাট সীড কংগ্রেসে কৃষি খাতে অনন্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক এমপি বিএসএ সংগঠনকে আজীবন সম্মামনা প্রদান করেন। তাদের উদ্যোগকে স্বাগত জানান। এ ধরনের আয়োজনে সরকারের সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন। প্রধান অতিথির বক্তৃতা কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক এমপি বলেন- ‘সাম্প্রতিক বেসরকারি খাতে বীজ ব্যবসায়ের সাফল্য বিশেষ করে হাইব্রিড ধান বীজ, আলু বীজ, সবজি বীজ, ভুট্টা বীজ ইত্যাদি ক্ষেত্রে বেসরকারি খাত মুখ্য ভূমিকা রাখছে। কৃষি উৎপাদনের মূল উপকরণই হলো বীজ। ভালো ফলন ও উৎপাদনশীলতার জন্য মানসম্পন্ন বীজ অপরিহার্য। এ কারণে বীজের গুণগতমান রক্ষা করতে হবে। বীজের মান রক্ষার জন্য বাজারজাতকরণে মনিটরিং ব্যবস্থা আরও জোরদার করতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘কৃষক যাতে শতভাগ আস্থার সাথে বীজ ব্যবহার করতে পারে, সেটি নিশ্চিত করতে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে একযোগে কাজ করতে হবে। তাছাড়া বিদেশ থেকে যেসব নতুন ফসলের বীজ দেশে আসছে সে-বিষয়েও সচেতন থাকতে হবে। এসব জাত দেশের জন্য কতটুকু উপযোগী, কোনো রোগব্যাধি বা জীবাণু আছে কী না, কৃষককে ক্ষতিগ্রস্ত করবে কী না- এসব বিষয়ে গভীরভারে খতিয়ে দেখতে হবে।’ তিনি জাতির জনকের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘স্বাধীনতার পর মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্যশস্য উৎপাদনে গুরুত্ব দিয়েছিলেন। ফলে কৃষি উন্নয়নের ধারা তৈরি হয়েছে। বর্তমান সরকারও সার, বীজসহ কৃষি উপকরণে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করেছে। বিগত ১৪ বছরে সার-বীজের কোনো সংকট হয়নি। সরকারের সীড প্রত্যয়ন সংস্থার সহায়তায় দেশে বিভিন্ন ধরনের বীজ অবমুক্তকরণ হচ্ছে। ইতোমধ্যে অধিক উৎপাদনশীল বীজ ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছে। খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে কাজ চলছে।’
‘সীড কংগ্রেস ২০২৩’ উপলক্ষে মহামান্য রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এক বার্তায় আশা প্রকাশ করেন যে, ‘বাংলাদেশ সীড কংগ্রেস, কৃষিতে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে কৃষকদের উৎসাহিত করবে। উন্নতমানের বীজ ও বীজভিত্তিক প্রযুক্তি কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বলেন, ‘কৃষি মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ সীড অ্যাসোসিয়েশন যৌথভাবে আয়োজিত তিন দিনব্যাপী সীড কংগ্রেস ২০২৩’ বর্তমান প্রেক্ষাপটে একটি সময়োপযোগী উদ্যোগ। বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তন, পরিবেশ বিপর্যয় ও দেশের ক্রমহ্রাসমান জমি হতে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কৃষির একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় টেকসই কৃষি উন্নয়নের মাধ্যমে সরকারি বীজ প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বেসরকারি বীজ প্রতিষ্ঠানকেও এগিয়ে আসতে হবে।’
কংগ্রেসের সমাপনী আয়োজনে বীজ শিল্প বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার জন্য ২০ জন সেরা বীজ ব্যবসায়ীকে মরণোত্তর সম্মাননা প্রদান করা হয়। কংগ্রেসের সরকারি প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, প্যাভিলিয়ন ও স্টল এই চার ক্যাটাগরিতে মূল্যায়ন করে পুরস্কৃত করা হয়। এ পর্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম। আরও উপস্থিত ছিলেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক, বীজ অণুবিভাগ, মো. আবু জুবায়ের হোসেন বাবলু, কংগ্রেসের প্রধান সমন্বয়ক এবং সাবেক কৃষিসচিব আনোয়ার ফারুক, বার্কের নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার, বিএসএ-র সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ড. আলী আফজাল, বিএসএ-র সাধারণ সম্পাদক এএইচএম হুমায়ুন কবির। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন বিএসএ-র সভাপতি এম আনিস উদ দৌলা।
এদেশের কৃষি এখন সারাবিশ্বের কাছে দৃষ্টান্তস্বরূপ। বিশেষ করে করোনাকালে বাংলাদেশ কৃষি উৎপাদনের বিরল রেকর্ড গড়েছে। আমাদের আবাদি জমির পরিমাণ সীমিত; বরং কমছে প্রতিনিয়ত। বাড়ছে জনসংখ্যা। ফলে কম জমিতে সর্বোচ্চ ফসল উপাদনের জন্য মানসম্পন্ন বীজের বিকল্প নেই। দেরিতে হলেও সেই বীজ নিয়েই কংগ্রেস; বাংলাদেশে এটি একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। জমকালো আয়োজন বিপুল উপস্থিতি এবং অভ্যাগতদের মধ্যে ব্যাপক সাড়ায় ‘সীড কংগ্রেস’ নিশ্চিতভাবে সাফল্যমণ্ডিত হয়েছে।
দেশরত্ন কৃষিবান্ধব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দুটি বাক্য দিয়ে উপসংহার টানছি-
এক. একটি বাড়ি, একটি খামার;
দুই. এক ইঞ্চি জমিও খালি রাখা যাবে না।
কৃষিবোদ্ধা কৃষিঋদ্ধ প্রধানমন্ত্রীর এ দুটি বাক্যের সঠিক প্রয়োগ বাংলাদেশের কৃষিতে বিপ্লব এনে দেবে। কোথাও কোথাও দিচ্ছেও। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নিজেই তার রোলমডেল। গণভবনের মতো বিশেষায়িত জায়গায়ও তিনি একটি বাড়ি, একটি খামার সাজিয়ে তা প্রমাণ করেছেন। আর এক ইঞ্চি জমি ফাঁকা রাখা যাবে না। গণভবনের সব ফাঁকা জায়গাই এখন বিপুল সবুজের সমারোহ। প্রধানমন্ত্রী এখানেও জমি সাজিয়েছেন মানসম্পন্ন বীজ দিয়ে। প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষক হতে শুরু করে শহরের সাধারণ জনতা সীড কংগ্রেস থেকে ব্যাপকভাবে উপকৃত হয়েছে। তবে এই সীড কংগ্রেসের গাইডলাইন ধরে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে প্রতিটি জেলায়; সম্ভব হলে উপজেলা পর্যায়ে বীজমেলা, সেমিনারের আয়োজন করে বীজ ও বীজ প্রযুক্তিবিষয়ক আধুনিক ধারণা তৃণমূলে কৃষকের অবহিত করা প্রয়োজন; তাহলেই বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার স্বপ্ন সার্থক হবে।

আরও পড়ুন
spot_img

জনপ্রিয় সংবাদ

মন্তব্য