উত্তরণ প্রতিবেদন: বাংলাদেশ টেলিভিশনের (বিটিভি) ভারতে আনুষ্ঠানিক সম্প্রচার শুরু হয় গত ২ সেপ্টেম্বর বিকেলে। ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত চ্যানেল দূরদর্শনের ডিরেক্ট টু হোম (ডিটিএইচ) প্ল্যাটফর্ম ডিডি ফ্রি ডিশের মাধ্যমে দেশটিতে বিটিভির এ সম্প্রচার কার্যক্রম পরিচালিত হবে। দূরদর্শন ডিটিএইচের মাধ্যমে বিটিভির রামপুরা ভবন থেকে বিটিভির আনুষ্ঠানিক সম্প্রচার উদ্বোধন করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এমপি। বিশেষ অতিথি ছিলেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী ড. মুরাদ হাসান এমপি ও ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার রিভা গাঙ্গুলী দাশ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন তথ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব আবদুল মালেক।
বিটিভির সম্প্রচারের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়ে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ভারতীয় সময় সকাল ৯টা এবং বাংলাদেশ সময় সাড়ে ৯টায় ভারতে বিটিভির সম্প্রচার শুরু হয়। এখন এর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিচ্ছি। ২০১৫ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের সময় ভারতীয় প্রচার মাধ্যমে সেখানে বিটিভি সম্প্রচারের যৌথ ঘোষণা দেওয়া হয়। তারই পরিপ্রেক্ষিতে এ বছর জুলাইয়ের মধ্যেই সব প্রস্তুতি শেষ হয়। আগস্ট মাস শেষ হওয়ার অপেক্ষায় ছিলাম। পৃথিবী যখন গ্লোবাল ভিলেজে পরিণত হয়েছে তখন টিভি চ্যানেলগুলো সীমানায় বাঁধা থাকতে পারে না। দুদেশের সম্পর্কে নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিগত ১০ বছরে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে। আর তার সঙ্গে নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে ভারতে বিটিভির এই সম্প্রচার। দুদেশের মানুষে মানুষের সম্পর্ক আরও দৃঢ় হবে।
তথ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান এ দিনটিকে ঐতিহাসিক উল্লেখ করে বলেন, এটা আমাদের জন্য এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ডিজিটাল বাংলাদেশ আজ বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। একদিন এমন সময় আসবে যখন সমগ্র বিশ্বে বিটিভি সম্প্রচার হবে। আর এমন স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে।
ভারতীয় হাইকমিশনার রিভা গাঙ্গুলী দাশ বলেন, এমন পদক্ষেপের ফলে দুদেশের মধ্যকার সাংস্কৃতিক বন্ধুত্ব আরও দৃঢ় হবে। দুদেশের মধ্যকার তথ্য বিনিময়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে আজকের এ পদক্ষেপ। মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক বন্ধনে মূলভিত্তি হবে এটি। ভারতের ৩ কোটি মানুষের ঘরে পৌঁছাবে বিটিভি, যা দুদেশের মানুষের আরও কাছে নিয়ে আসবে। আমি এই যাত্রা সফল হোক এই শুভ কামনা জানাই।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিটিভির মহাপরিচালক এসএম হারুন অর রশীদ। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেডের চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ।
বিভাগে হবে ১০০ শয্যার পূর্ণাঙ্গ ক্যানসার কেন্দ্র
দেশের প্রতিটি বিভাগীয় শহরের সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১০০ শয্যার পূর্ণাঙ্গ ক্যানসার চিকিৎসা কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। এ লক্ষ্যে ২,৩৮৮ কোটি ৩৯ লাখ টাকা ব্যয়ের একটি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে গত ১৭ সেপ্টেম্বর শেরেবাংলা নগরস্থ এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এর অনুমোদন দেওয়া হয়। সভা শেষে প্রকল্পগুলোর বিষয়ে সাংবাদিকদের অবহিত করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান। তিনি বলেন, ভেজাল খাবারসহ নানা কারণে দেশে ক্যানসার রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। একে প্রতিরোধ করা জরুরি। এ কারণে প্রতিটি বিভাগে ক্যানসার চিকিৎসাকেন্দ্র তৈরি করা হচ্ছে।
সভায় জানানো হয়, আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যানসার (আইএআরসি)-এর সম্প্রতি প্রকাশিত তথ্যানুযায়ী বাংলাদেশে প্রতি বছর দেড় লাখ মানুষ নতুন করে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়। এর মধ্যে মারা যায় ১ লাখ ৮ হাজার মানুষ। প্রতিবছর এই সংখ্যা বেড়েই চলেছে। দেশের পুরাতন ৮টি বিভাগীয় মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সবগুলোতে পূর্ণাঙ্গভাবে ক্যানসার চিকিৎসা, কেমোথেরাপির ব্যবস্থা চালু নেই। একমাত্র জাতীয় ক্যানসার হাসপাতালটি রাজধানীকেন্দ্রিক। বেসরকারি খাতে বড় কিছু হাসপাতালে ক্যানসারের চিকিৎসা থাকলেও এর খরচ সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রতি ১০ লাখ জনগোষ্ঠীর জন্য একটি রেডিওথেরাপি চিকিৎসা সুবিধা সংবলিত ক্যানসারসেবা কেন্দ্রের প্রয়োজন। অর্থাৎ বাংলাদেশের ১৬ কোটি জনগোষ্ঠীর জন্য দেশে ১৬০টি ক্যানসার চিকিৎসাকেন্দ্রের প্রয়োজন।
আলোচ্য প্রকল্পটির মাধ্যমে বিভাগীয় ৮টি মেডিকেল কলেজে দুই তলা বেজমেন্ট ও ১৫ তলা ফাউন্ডেশনসহ ১৭ তলা ভবন নির্মাণ করা হবে। সেই সঙ্গে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জাম সংগ্রহ করা হবে। চলতি অর্থবছর শুরু করে ২০২২ সালের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
একনেক সভায় ৮,৯৬৮ কোটি ৮ লাখ টাকা ব্যয় সংবলিত মোট ৮টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৩টি সংশোধিত। সভায় ২২৫ কোটি ৪৯ লাখ টাকা ব্যয়ে ভারতের ঝাড়খন্ড হতে বাংলাদেশে ১৪৯৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করার লক্ষ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার রহনপুর থেকে মনাকষা সীমান্ত পর্যন্ত ২৮ কিলোমিটার ৪০০ কেভি সঞ্চালন লাইন নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।