Monday, December 4, 2023
বাড়িউত্তরণ ডেস্কব্রাসেলসে প্রশংসা কুড়িয়েছেন প্রধানমন্ত্রী

ব্রাসেলসে প্রশংসা কুড়িয়েছেন প্রধানমন্ত্রী

শেখ হাসিনার নেতৃত্ব এবং বৈশ্বিক সংকটে দেশের অবস্থান বাংলাদেশকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। নতুনভাবে দেশকে চিনিয়েছে, যা দেশ ও জাতির জন্য গৌরবের।

উত্তরণ ডেস্ক: ইউরোপীয় কমিশনের (ইসি) প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেইনের আমন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ২৪ অক্টোবর ‘গ্লোবাল গেটওয়ে ফোরাম’-এ যোগদানের উদ্দেশ্যে ব্রাসেলস সফরে করেন। সফরকালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ইসি প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেইন ও এর নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট, ইউরোপীয় বাণিজ্য কমিশনার ভালদিস ডোমব্রোভস্কিসের সাথে আলাদা আলাদাভাবে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন। ফোরামের সাইডলাইনে ইউরোপীয় দেশগুলোর নেতাদের সঙ্গেও বেশ কয়েকটি বৈঠক করেন শেখ হাসিনা।
দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পর বাংলাদেশ সরকারের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) এবং ইউরোপীয় ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের সাথে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে ৩৫০ মিলিয়ন ইউরোর একটি ঋণ সহায়তা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ইউরোপীয় কমিশন ও ইউরোপিয়ান ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের মধ্যে বাংলাদেশের নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে ৪৫ মিলিয়ন ইউরোর একটি অনুদান চুক্তিও স্বাক্ষরিত হয়েছে। একইসঙ্গে বাংলাদেশের নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতের জন্য বাংলাদেশ সরকার ও ইসির মধ্যে একটি ১২ মিলিয়ন ইউরোর অনুদান চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এছাড়াও সফরকালে বাংলাদেশ সরকার এবং ইসি বাংলাদেশের সামাজিক খাতে ৭০ মিলিয়ন ইউরোর ৫টি ভিন্ন অনুদান চুক্তি স্বাক্ষর করে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘গ্লোবাল গেটওয়ে ফোরাম’-এর উদ্বোধনী পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে যোগ দেন এবং ভাষণ দেন। ভাষণে বৈশ্বিক সংকটে দেশের অবস্থান এবং তার টানা ১৫ বছরের শাসনামলে দেশের অর্জন তুলে ধরেন, যা অংশগ্রহণকারী সকলে মুহুর্মুহু করতালির মাধ্যমে সাধুবাদ জানান।
২৬ অক্টোবর সকালে তিনি বেলজিয়ামের প্রধানমন্ত্রী আলেকজান্ডার ডি ক্রু এবং লুক্সেমবার্গের প্রধানমন্ত্রী জেভিয়ার বেটেলের সাথে পৃথক দুটি দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন। বৈঠকে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ ২০২৬ সালে এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হতে যাচ্ছে এবং বাংলাদেশ কোভিড-১৯ মহামারি ও যুদ্ধের জন্য সমস্যায় রয়েছে। সুতরাং, আমরা চাই আপনাদের দুটি দেশই ২০২৯ থেকে আরও তিন বছরের জন্য ইবিএ সুবিধা অব্যাহত রাখুন। কারণ ইউরোপীয় ইউনিয়নের এই সুবিধা আমাদের উন্নয়নের জন্য সহায়ক হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বেলজিয়ামকে বাংলাদেশে বিশেষ করে ওষুধ, নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও জাহাজ নির্মাণে বৃহত্তর বিনিয়োগের অনুরোধ জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আপনি নবায়নযোগ্য শক্তির পাশাপাশি জাহাজ নির্মাণ খাতে আমাদের সঙ্গে কাজ করতে পারেন। আমরা এখন জাহাজ তৈরি করছি, আপনি আমাদের কাছ থেকে উচ্চমানের জাহাজ তৈরি করিয়ে নিতে পারেন।’ ফার্মাসিউটিক্যালস খাতে একটি অংশীদারি চুক্তি স্বাক্ষরেরও কথা হয়। জানা যায়, দুদেশের মাঝে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও ব্যবসা বাড়াতে শিগগিরই বাংলাদেশ ও লুক্সেমবার্গের মধ্যে একটি এয়ার সার্ভিস চুক্তি স্বাক্ষরিত হতে হবে। এছাড়া আইসিটি ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে সহযোগিতার বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গ্লোবাল গেটওয়ে ফোরামের সমাপনী পূর্ণাঙ্গ অধিবেশন শেষে বেলজিয়ামে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের দেওয়া সংবর্ধনায় যোগ দেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কেউ যাতে পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন ভণ্ডুল ও প্রশ্নবিদ্ধ করতে না পারে, সে-বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘অপপ্রচারের যথার্থ জবাব হিসেবে গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ সরকার বাংলাদেশে যে উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড করেছে, তা জনগণের কাছে তুলে ধরুন।’ বিএনপি-জামাতকে জনগণের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে দেওয়া হবে না।
প্রধানমন্ত্রীর মিরাকেল সাকসেস ও উন্নয়ন বাস্তবনা সম্পর্কে উচ্ছ্বসিত হয়ে টিভি চ্যানেল ‘ইউরো নিউজ’ এবং ‘পলিটিকো’ যথাক্রমে ২৫ ও ২৬ অক্টোবর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎকার নেয়। অর্থাৎ বিশ্ববাসীর কাছে শেখ হাসিনার উন্নয়ন অগ্রযাত্রা শেখ হাসিনা মডেল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে সাময়িকভাবে ১২ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছেন, এখনো মানবিক সহায়তা দিয়ে যাচ্ছেন। এ বিষয়ে ইইউ জোরালোভাবে সহযোগিতা করে যাচ্ছে, এজন্য শেখ হাসিনা ইইউ-কে ধন্যবাদ জানান। সাথে তিনি এও বলেন, ‘আমি দ্রুত এই সংকটের একটি টেকসই সমাধানের সঙ্গে যুক্ত থাকতে ইইউয়ের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’ সফরকালে শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘আমরা গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও আইনের শাসন- এই অভিন্ন মূল্যবোধের কথা পুনর্ব্যক্ত করেছি।’
বিশ্বে শান্তি ও অগ্রগতি নিশ্চিত করার জন্য যুদ্ধ বন্ধ এবং দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা পুনরুদ্ধারে বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘মানবসংযোগ শান্তি ও অগ্রগতির লাইফলাইন। আমাদের অবশ্যই যুদ্ধ, সংঘাত ও অস্ত্র প্রতিযোগিতার অবসান ঘটাতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্রাসেলসের জিজিএফ কনফারেন্সে এলডিসি উত্তরণে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) অব্যাহত বাণিজ্য অগ্রাধিকারের কথা জানিয়েছেন। শেখ হাসিনা ইইউকে বাংলাদেশের জন্য একটি বিশ্বস্ত বাণিজ্য, উন্নয়ন ও মানবিক অংশীদার হিসেবে বর্ণনা করে বলেন, ‘আমরা আমাদের মসৃণ এলডিসি উত্তরণে ইইউয়ের অব্যাহত বাণিজ্য অগ্রাধিকার চাই।’
প্রধানমন্ত্রী ইইউভুক্ত দেশগুলোকে বাংলাদেশে বিশেষ করে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং দেশজুড়ে হাই-টেক পার্ক নির্মাণে বৃহত্তর বিনিয়োগের আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী গ্লোবাল গেটওয়ে ফোরাম ২০২৩-এর সর্বাত্মক সাফল্য কামনা করে দীর্ঘস্থায়ী শান্তি ও টেকসই উন্নয়নের জন্য এটি এক মহান সংযোগ হিসেবে কাজ করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, সবুজ হাইড্রোজেন উন্নয়নে বাংলাদেশ ইইউয়ের সঙ্গে যোগ দিতে ইচ্ছুক।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, গ্লোবাল গেটওয়ে ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি বাস্তবায়নে সহায়তা করবে।’ বাংলাদেশ-ইইউ সম্পর্কের এই ৫০তম বার্ষিকীতে তিনি বলেন, ‘আমি আমাদের কৌশলগত সম্পৃক্ততা আরও জোরদার করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করছি।’ অর্থাৎ, শেখ হাসিনার নেতৃত্ব এবং বৈশ্বিক সংকটে দেশের অবস্থান বংলাদেশকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। নতুনভাবে দেশকে চিনিয়েছে, যা দেশ ও জাতির জন্য গৌরবের।

হায়দার মোহাম্মদ জিতু
সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও রাজনৈতিক কর্মী

আরও পড়ুন
spot_img

জনপ্রিয় সংবাদ

মন্তব্য