Monday, December 4, 2023

বিড়াল তপস্বী বিএনপির কাণ্ড

বিএনপি-জামাত জোট এবারে জনগণকে ধোঁকা দিতে ‘অহিংসতার মুখোশ’ নিয়ে বাজার মাত করতে চেয়েছিল; কিন্তু পারেনি। পারার কথাও নয়। খেতে বসে শাক দিয়ে তো আর মাছ ঢাকা যায় না।

শেখর দত্ত: বিএনপি যে ধরনের দল এবং ওই দলের যা করা মজ্জাগত, তা-ই করেছে দলটি। গণতান্ত্রিক অধিকার ও আন্দোলনের নামে অতীতের মতোই হত্যা-খুন, জ্বালাও-পোড়াও তথা অরাজকতা সৃষ্টি করার পথ নিয়েছে। এমন পথ যে নেবে তা আগেই দলটি জানান দিয়েছিল। গত ৭ অক্টোবর শিক্ষকদের এক মহাসম্মেলনে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছিলেন, ‘সরকার পতনে যা কিছু করা দরকার তাই করতে হবে।’ দলের সবাইকে ‘সর্বাত্মক প্রস্তুতি’ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন তিনি।
এরই ধারাবাহিকতায় ১৬ অক্টোবর তিনি বলেছেন, ‘ঢাকায় ১৮ অক্টোবরের সমাবেশ থেকে সরকারকে পদত্যাগের সময়সীমা বেঁধে দেবে বিএনপি। ২৮ অক্টোবর সমাবেশ করে চূড়ান্ত আন্দোলনে নামবে দলটি।’ ইতোমধ্যে ‘রাজপথে ফয়সালা’, ‘রাজপথ নিয়ন্ত্রণ’, ‘রাজপথ দখল’, ‘শক্তিমত্তা প্রদর্শন’, ‘আটঘাট বেঁধে রাস্তায় নামা’ প্রভৃতি কথাগুলো বলে যাচ্ছিলেন বিএনপির নেতারা। ২৭ অক্টোবর বিএনপির দপ্তর শাখার বরাত দিয়ে পরিবেশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, হাইকমান্ড একদিকে ‘ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল’ আর ‘অন্যদিকে মেহনতি ও শ্রমিকদের সংগঠিত করতে শ্রমিক দল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।’
উল্লিখিত বয়ানগুলোর সঙ্গে যদি ২৮ অক্টোবর ও পরবর্তী দিনগুলোতে বিএনপির হত্যা-খুন ও আগুন সন্ত্রাসের ঘটনাগুলো মিলিয়ে দেখা যায়, তবে বুঝা যাবে দলটি কতটাই না সুপরিকল্পিতভাবে নীলনকশা ধরে অগ্রসর হয়েছে। শ্রমিক দলের ‘গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা’র ফলাফলও হঠাৎ দেশবাসী প্রত্যক্ষ করেছে। কেবল কি তাই! সবকিছু গুছিয়ে তোলার পরপরই নীলনকশার ছক অনুযায়ী ‘আত্মার আত্মীয়’ জামাতকেও সঙ্গী করে নিয়েছে। তাতেই আগুন সন্ত্রাসের ষোলোকলা পূর্ণ হয়েছে। বিগত বছর ডিসেম্বরে জনগণকে বিভ্রন্তি করতে মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধী দল জামাতের সঙ্গে জোট ভাঙে বিএনপি। একসময় শামিল হয় ১০-দফার যুগপৎ আন্দোলনে। ‘যা কিছু করার তার সবকিছু গুছিয়ে’ ওঠার পর ২৬ অক্টোবর বিএনপির সঙ্গে ‘এক-দফা আন্দোলনে’ যোগ দেয় জামাত।
জাতে মাতাল তালে ঠিক কিংবা নিতান্তই যারা ‘পাগল ও শিশু’ নয়, অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে তারা ছাড়া সকলেই বুঝতে পারবেন, একসঙ্গে জন্ম ও পুনর্জন্ম পাওয়া এই দু-দলের যুগলবন্দি মানে মন মথিত করা সুরের জগৎ সৃষ্টি করা নয়, তা হচ্ছে, রক্ত-হত্যা-খুন, জ্বালাও-পোড়াও। তবে ২০১৪ সালের নির্বাচন-পূর্ব সময়ে নির্বিবাদে হত্যা-খুন ও আগুন সন্ত্রাস চালানোর ভেতর দিয়ে এই দু-দলের যে সর্বনাশ হয়েছিল, সেই অভিজ্ঞতা থেকে এবারে তারা ‘বিড়াল তপস্বী’ ভাব সব সময়েই সামনে রাখে। বড় গলায় বলতে থাকে, বিএনপি ‘সংঘাতে জড়াবে না’। সমাবেশ হবে ‘শান্তিপূর্ণ’।
তবে প্রবাদ বলে, ‘মুখে শেখ ফরিদ, বগলে ইট’ রাখলেও হাবে-ভাবে বুঝতে পারা যাবে ইট আছেই। বাস্তবে বড় গলায় শান্তির কথা বলে দেশবাসীকে বিভ্রান্ত করতে চেয়েছিল; কিন্তু তা পারেনি। থলের বিড়াল বের হয়ে এসেছে। স্বরূপে মাঠে নেমেছে এবারের বিএনপি-জামাতের অঘোষিত জোট। সাথে রয়েছে ‘ঢাল নেই তলয়ার নেই’-এর মতো সাত হালিরও বেশি ‘ভক্স ওয়াগন পার্টি’, যেসব দলের নেতাদের কেউ কেউ ‘বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র’ কায়েমের জন্য ‘বিপ্লব’ করতে মাঠে নেমেছিল, পরবর্তীতে আওয়ামী লীগের নেতা-মন্ত্রী হয়েছিলেন, এখন গেছে বিএনপিতে।

হত্যা-খুনের রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে
গণতন্ত্রকে বারোটা বাজিয়েছে বিএনপি
বিএনপি-জামাত জোট এবারে জনগণকে ধোঁকা দিতে ‘অহিংসতার মুখোশ’ নিয়ে বাজার মাত করতে চেয়েছিল; কিন্তু পারেনি। পারার কথাও নয়। খেতে বসে শাক দিয়ে তো আর মাছ ঢাকা যায় না। সর্বোপরি দলটি জন্মকালের পাওয়া চরিত্র বদলাবে কীভাবে? হত্যা-ক্যু-পাল্টা ক্যু-সামরিক শাসনের মধ্যে সামরিক কর্তার ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করতে রক্তাপ্লুত পথে বিএনপির জন্ম। এই দল গঠনের পটভূমিতে রয়েছে পৃথিবীর জঘন্যতম নৃশংস ১৫ আগস্ট ও ৩ নভেম্বরের হত্যাকাণ্ড।
এ দুই হত্যাকাণ্ডের স্বঘোষিত খুনিরা বিদেশে চাকরি পেয়ে বহাল তবিয়তে থাকা, ইনডেমনিটি বিল পাস ও সামরিক ফরমানে বঙ্গবন্ধু ও চার জাতীয় নেতার নাম নিয়ে দল করা যাবে না নির্দেশের ভেতর দিয়ে প্রমাণিত হয়, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়ার আশ্রয়-প্রশ্রয়-আশীর্বাদ ছিল খুনিদের প্রতি। কেবল তখনই নয়, পরবর্তীতে ধারাবাহিকভাবে বঙ্গবন্ধু-হত্যাকারীদের বিচারের বিরোধিতা করে বিএনপি প্রমাণ রেখেছে, ওই দুই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে এই দলের হর্তাকর্তারা প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে জড়িত ছিল।
বিএনপি দল জন্মের পটভূমিতে কেবল ওই দুই হত্যাকাণ্ড ছিল না, ক্যু-পাল্টা ক্যুর ২৬ বা ২১টি ঘটনা ঘটিয়ে নির্বিবাদে বা হুকুমের বিচারে গণহত্যা ও গণফাঁসি দিয়ে ১১০০ বা ১৪০০ মুক্তিযোদ্ধা সেনা অফিসার বা জওয়ানকে হত্যা করা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর আমলের শেষদিকে সূর্যসেন হলের সাত খুনের আসামি জেলে আটক শফিউল আলম প্রধানকে জিয়া ছেড়ে দিয়েছিলেন হত্যার রাজনীতিকে উৎসাহিত করতে। নির্বিবাদে হত্যা ও হত্যাকারীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে নিজের গদি যখন নিষ্কণ্টক, তখনই হত্যা-ক্যুয়ের রাজনীতিকে চিরস্থায়ী করতে মুক্তিযুদ্ধের সময়ের গণহত্যাকারী জামাতকে পুনর্জন্ম দিয়ে তিনি গঠন করেন বিএনপি দলটি। এর আগেই পাল্টা ক্যুয়ের খেলা খেলতে খেলতে তিনি হুকুমের নির্বাচন তথা ‘হাঁ-না’ ভোট করে নিজের গদিকে সুরক্ষিত করেছিলেন।
প্রকৃত বিচারে হত্যা ও খুনের রাজনীতির সঙ্গে তখন থেকেই দেশের নির্বাচন জড়িয়ে যায়। রাজনীতি হয় ক্যান্টনমেন্টে বন্দি। বাস্তবে হত্যা-খুনের রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে গণতন্ত্রের বারোটা বাজিয়েছে বিএনপি। এরই ধারাবাহিকতায় হত্যা-খুনের ধারা চালু থাকে বিএনপির নেতা বিচারপতি সাত্তার ও পররবর্তীতে খালেদা জিয়ার শাসনামলে। সাত্তার আমলে ৪০ নম্বর মিন্টো রোডে যুবমন্ত্রী কাশেমের বাড়ি থেকে বহু খুন ও গুমের আসামি ইমদুকে গ্রেফতার করা কিংবা ১৯৯১-৯৬ খালেদা জিয়ার শাসনামলে সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনের পর লালবাগের হত্যাকাণ্ডের কথা এখনও ভুলে যায়নি দেশবাসী।
বিস্মিত হতে হয় এই ভেবে যে, যারা সপরিবারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর হত্যা দিবসে নেত্রী খালেদা জিয়ার জন্মদিন পালন করে, যারা বাংলাভাই বা মুফতি গংদের বোমা-গ্রেনেড বিস্ফোরণে লেলিয়ে দেয় মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষের ব্যক্তি ও সংগঠনের বিরুদ্ধে, যারা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে কোটালিপাড়ায় জনসভার স্থানে বোমা পুঁতে রাখে কিংবা বঙ্গবন্ধু এভিনিউর জনসভায় অসংখ্য গ্রেনেড বিস্ফোরণ ঘটায়; তারাই এখন গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের জন্য মায়াকান্না করছেন। তবে ওই মুখোশ উন্মোচিত হয়ে হত্যা-খুনের চেহারা ইতোমধ্যে প্রকাশ পেয়ে গেছে।
২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশের নামে অরাজকতা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে, হত্যা-খুনের রাজনীতির ধারায় আবারও ফিরে গেছে জামাতকে সাথে নিয়ে বিএনপি। ২০১৪ সালের নির্বাচন-পূর্ব সময়ের মতো হত্যা-খুন-আগুন সন্ত্রাসের মধ্যে দেশকে ফেলে দিতে চাইছে। বাস্তবে প্রবাদটা সত্য, ‘কয়লা ধুলেও ময়লা যায় না।’ দেশের গণতান্ত্রিক ধারার রাজনীতিকে যারা হত্যা-ক্যু-পাল্টা ক্যু-সামরিক ফরমানের শাসনের মধ্যে নিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা লুটেছিল, তাদের পক্ষে সম্ভব নয় নিজেদের ওই নর্দমার রাজনীতি থেকে তুলে আনা। দেশকে তুলে আনা তো দূরের কথা। ইতিহাস বিচারে জন্মই ওই দলের জন্য আজন্ম পাপ।

সিসি ক্যামেরা ও ড্রোনে তোলা ফুটেজে সব
থাকলেও তা নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টির অপচেষ্টা
২৮ অক্টোবর এবং তারপরে বিএনপি ও জামাত হত্যা-খুন-অগ্নিসন্ত্রাস কতটুকু কী করেছে, তা নিয়ে বর্তমান ডিজিটাল যুগে আড়াল করার কারও পক্ষেই সম্ভব নয়। ঘটনার পরপর কিছু ভাইরাল ছবি দেখার সুযোগ দেশবাসীর হয়েছে। কয়েকজনের ছবিসহ নামও প্রকাশ পেয়েছে। ইতোমধ্যে পুলিশ সদস্যকে কুপিয়ে হত্যা, প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা, একাধিক পুলিশ বক্সে আগুন দেওয়া, রাজারবাগ পুলিশ লাইনে হামলা ও অগ্নিসংযোগ এবং তিন পুলিশের কাছ থেকে অস্ত্র ছিনিয়ে নেওয়া প্রভৃতি ঘটনার ভিডিও ফুটেজ দেখে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী শতাধিক চিহ্নিত করেছে বলে জানা গেছে।
সিসি ক্যামেরা ও ড্রোন দিয়ে তোলা ফুটেজ রাজধানীসহ দেশের সব থানায় পাঠানো হয়েছে। সন্ত্রাসীদের শনাক্ত করতে দেশবাসীরও সাহায্য নেওয়া হচ্ছে। যাতে অপরাধীরা দেশ ছেড়ে পালাতে না পারে, সে-ব্যবস্থাও সরকার নিয়েছে। জানা যায় ফুটেজ যাচাই করে দেখা গেছে, হামলাকারীদের মধ্যে রয়েছে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সহ-সাধারণ সম্পাদক বছিরুল ইসলাম খান রানা, বনানী থানা ছাত্রদলের সহ-সভাপতি লুৎফর রহমান বাবর ও মিরপুর যুবদলের আহ্বায়ক তুহিন মিয়া। তাছাড়া তাণ্ডবে জড়িত নারায়ণগঞ্জ বিএনপির নেতা মাসকুল ইসলাম রাজীবসহ আড়াইহাজার থানার কয়েকজন নেতাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
প্রশ্ন হলো- ছবিসহ সুনির্দিষ্ট সব প্রমাণ থাকতেও কীভাবে বিএনপি সরকারি সংস্থা ও আওয়ামী লীগের ওপর দোষ চাপাতে সক্ষম হচ্ছে? এ প্রশ্নের উত্তর সামনে রেখে আলেকজান্ডার-সেলুকাসের গল্প স্মরণ করে বলতে হয়, বিচিত্র এই দেশ! সত্যিই ত্রিশ লক্ষ শহিদ, দুই লক্ষ মা-বোনের ইজ্জত ও জনগণের ত্যাগের মহিমায় উজ্জ্বল আমাদের দেশকে মুশতাক-জিয়া-এরশাদের সামরিক শাসন এক অদ্ভুত দেশে পরিণত করেছে।
জনগণ মুক্তিযুদ্ধ করেছিল জাতীয় চারনীতি জাতীয়তাবাদ-ধর্মনিরপেক্ষতা-গণতন্ত্র-সমাজতন্ত্র কায়েমের জন্য। কিন্তু স্বাধীনতার মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যে হত্যা-ক্যু-সামরিক শাসন গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে বন্দি করল ক্যান্টনমেন্টের মধ্যে। রাষ্ট্র ও সমাজ-জীবনে সেনাকর্তারা নিয়ে এলো পাকিস্তানি আমলের প্রত্যাখ্যাত সাম্প্রদায়িক জাতীয়তাবাদকে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুসহ স্বাধীনতা সংগ্রামের নায়ক জাতীয় বীরদের করতে চাইল নির্বাসিত। জাতির ইতিহাস-ঐতিহ্যকে করা হলো বিকৃত। কালক্রমে একজন সেক্টর কমান্ডার মেজর জিয়া হয়ে গেলেন ‘স্বাধীনতার ঘোষক’। সবই যেন আমাদের গা-সওয়া হতে থাকল। কালক্রমে এমন হলো, পার্শ্ববর্তী দেশের বিদ্রোহীদের সাহায্যের জন্য দশ ট্রাক অস্ত্র এনে আমাদের স্বাধীনতা-স্বার্বভৌমত্বকে চরম বিপদের মুখে ফেলে দিল ওরা। তাও যেন সাত খুনের মতোই গা-সওয়া করে নেওয়া হয়।
এখনও মনে পড়ে সেই শব্দটি : ব্লেইম গেম। ২১ আগস্ট ২০০৪ গ্রেনেড হামলার কথা। ওই ঘটনার পর একটুও অস্পষ্ট ছিল না, বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যেই গ্রেনেড ছোড়া হয়েছিল। দোষীদের পালিয়ে যাওয়া, আলামত সব দ্রুত সরিয়ে নেওয়া এবং পূর্বাপর বোমা-গ্রেনেড বিস্ফোরণ প্রভৃতিতে বুঝতে একটুও অসুবিধা হচ্ছিল না, সরকারের মদদ ও সহায়তা ছাড়া এ-ধরনের ঘটনা ঘটা অসম্ভব। ‘বাংলাভাই মিডিয়ার সৃষ্টি’ উক্তিও জনগণ ভুলেনি। ‘হাওয়া ভবন’ কিংবা ‘ভাইয়া’ তারেক ও তার সাগরেদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বাবরের কাণ্ডকীর্তিও কম-বেশি প্রকাশ্যে ছিল। কিন্তু বোমা-গ্রেনেড বিস্ফোরিত হলেই ক্ষমতাসীন বিএনপি-জামাত জোট আওয়ামী লীগের ওপর দোষ চাপিয়ে কলের গানের সুরে বলতে লাগল, গ্রেনেডবাজি আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-সংঘাতের ফল কিংবা তা আওয়ামী লীগ করেছে।
তখন কে বা কারা এবং সরকারি মদদ ছাড়া যে এমন ঘটনা ঘটতে পারে না, তা ইস্যু না করে নিরপেক্ষ দাবিদার সুশীল সমাজ ও তাদের প্রভাবিত পত্র-পত্রিকাগুলোও মাতল ‘ব্লেইম গেইম’ শব্দটি নিয়ে। যেন দু-দলেই গ্রেনেড বিস্ফোরণের জন্য সমভাবে দোষী। সমদূরত্বের নীতি সামনে আনা হলো। এটা ঠিক, তদন্ত ও বিচার ছাড়া কাউকে দোষী বলা যাবে না। কিন্তু সত্যের অনুসন্ধান ও তা বলার দায়িত্ব তো জাতির বিবেক সুশীল সমাজেরই। তারা হতে চাইলেন না। এরই ধারাবাহিকতায় এলো সমদূরত্ববাদী আর্মি ও সুশীল সমাজ ব্যাকড ১/১১-র জরুরি আইনের শাসন। ‘মাইনাস টু ফর্মুলা’ সামনে রেখে কিংস পার্টি গঠনের মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে নামল ওই সরকার।
নোবেল জয়ী ড. ইউনূসের ‘নাগরিক শক্তি’ নাম নিয়ে মাঠে নামার কথা দেশবাসী এখনও ভুলেনি। কিন্তু প্রবাদ বলে, ‘গায়ে না মানলে মোড়ল থাকা যায় না।’ ফলে যা হওয়ার তা-ই হয়েছে। কিন্তু ২৮ অক্টোবরের পরও কিন্তু দেখা গেল নতুন রূপে সমদূরত্বের নীতি ফিরে এসেছে। ফুটেজে সব ছবি থাকলেও সরকার ও সরকারি দলকেও দোষীর কাঠগড়ায় তোলা হচ্ছে। ফলে লাভবান হচ্ছে দেশি-বিদেশি কায়েমি স্বার্থের প্রতিভুরা; বিশেষত বৃহৎ শক্তি, যারা আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিকে ভূ-রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক খপ্পরে ফেলে রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক ফায়দা লুটতে চায়। ২৮ অক্টোবরের ঘটনার পর জাতিসংঘের বিবৃতি হচ্ছে এর প্রমাণ।

কিসিঞ্জারের ভূমিকায় কি পিটার হাস!
বাংলাদেশ চায় না কোনো বিদেশি শক্তি অসম্মানিত হোক
হত্যা-ক্যুর ভেতর দিয়ে পঁচাত্তরের পটপরিবর্তনের পর দেশের রাজনীতিতে একটা প্রশ্ন ঘুরে-ফিরে আসছে যে, দেশে গণতান্ত্রিক ধারা রাজনীতির ঘাত-প্রতিঘাত ও টানাপড়েনের ভেতর দিয়ে চললে ভালো, না-কি রাজনীতির বাইরের দেশের অবৈধ শক্তি এসে দখল করা ভালো? বিদেশিদের নাক গলানো কি ভালো? ২০১১ সালে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীদের রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে অভিযুক্ত করার বিধি সংযুক্ত হয়েছে। এখন পর্যন্ত ওই সংশোধনীর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ধ্বনীত হয়নি। এর ভেতর দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, দেশের ভেতরের কোনো অশুভ শক্তি ক্ষমতা দখল করুক- এমনটা দেশবাসী চায় না এবং তা দেশের জন্য চরম ক্ষতিকর।
তবু কেন জানি না, বাতাসে এমন কথাও ভাসে, বিদেশিদের নাক গলানোর সুযোগে এখনকার অরাজকতা-অনিশ্চয়তা সৃষ্টির উদ্দেশ্য হচ্ছে আবারও ওই পথে দেশকে ঠেলে দেওয়া। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে এগিয়ে আসার কারণে গুরুত্ব বাড়ায় এখন দেশি-বিদেশি কায়েমি স্বার্থবাদীদের বাংলাদেশের পিছে লেগেছে। বহুকেন্দ্রিক বিশ্বব্যবস্থায় দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতির জন্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ভারসাম্যমূলক অবস্থান নিয়ে চলা যখন অপরিহার্য তখন সেই অবস্থান নিতে বাধা সৃষ্টি করে চলেছে। আমেরিকার রাষ্ট্রদূত পিটার হাস সরাসরি প্রতিদিনকার রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ায় দেশবাসী ঘর পোড়া গরুর মতো শঙ্কাগ্রস্ত হচ্ছে।
আমেরিকার এই তৎপরতা যে বাড়ি-বাড়ি পর্যায়ে গেছে তা অনুধাবন করা যাবে, আমেরিকান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের তথাকথিত উপদেষ্টা মিয়া জাহিদুর ইসলাম ওরফে আরেফি নাটকে। এই নাটক হতোই না যদি পিটার হাস দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে এতটা নাক না গলাতেন। অর্থাৎ এই নাটক সৃষ্টির দায় প্রধানত পিটার হাসের। নাটক শুরু হয় ২৮ অক্টোবর সন্ধ্যার পর ওই ব্যক্তির বিএনপি অফিসে যাওয়া, বিএনপি নেতাদের গদগদ হওয়া ও বিএনপি নেতাদের সঙ্গে সাংবাদিক সম্মেলন করার ভেতর দিয়ে।
আর নাটক শেষ হয়, পালানোর সময় বিমানবন্দরে আরেফির গ্রেফতার ও স্বীকারোক্তি এবং বিএনপি নেতা অবসরপ্রাপ্ত সেনা অফিসার চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দীর গ্রেফতারের ভেতর দিয়ে। বিএনপি নেতাদের বিএনপি অফিস ব্যবহার করে সংবাদ সম্মেলন করাকে এখন পর্যন্ত অবশ্য কেউ সাজানো নাটক বলেনি। বাস্তবে বিএনপি এই নাটকে ধরা খেয়েছে। অবশ্য ধরা খাচ্ছে বিশ্বের এক নম্বর পরাশক্তি আমেরিকাও। বাংলাদেশ অবশ্য চায় না, বিশ্বের কোনো দেশ বিশেষত বৃহৎ শক্তি, যারা আমাদের উন্নয়ন-অগ্রগতির পার্টনার বা সাহায্যকারী, তারা দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে নাক গলিয়ে সম্মান ও মর্যাদা বিনষ্ট করুক।
বাংলাদেশ পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু অনুসৃত নীতি ‘সকলের সাথে বন্ধুত্ব কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়’ নীতি অনুসরণ করে চলছে। একটু খেয়াল করলে দেখা যাবে, যেসব দেশ মুক্তিযুদ্ধের চরম বিরোধিতা করেছে, যার মধ্যে আমেরিকাও রয়েছে, স্বাধীন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশ সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে তৎপর ছিল। কিন্তু বৃহৎ শক্তি এমনি যে, বাস্তবতার কারণে কখনও কখনও পিছিয়ে এলেও সুযোগ বুঝে বাগে ফেলে প্রতিশোধ নিতে ছাড়ে না।
১৯৭৪ সালের ভয়াবহ বন্যার পর কিউবার কাছে পাট রপ্তানি করার অজুহাতে চুক্তি অনুযায়ী খাবার পাঠায়নি। যদিও এসব ক্ষেত্রে অন্য অনেক দেশকে ছাড় দেয়; কিন্তু একাত্তরের পরাজয়ে প্রতিশোধ নিতে চুয়াত্তরে বাংলাদেশকে ছাড় দেয় না। তদুপরি বাংলাদেশকে বলেছে ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’। বাস্তবে কিসিঞ্জার তখন যা করেছিলেন, এখন সেই ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন পিটার হাস। তখন ছিল খাদ্য, বিশেষত অর্থনীতির ইস্যু, ভেতরে ভেতরে ছিল রাজনীতি, ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ। আর এখন সরাসরি রাজনীতি হয়েছে ইস্যু, তবে ভূ-রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক স্বার্থ আমেরিকা গোপন রাখছে না।

ভোট ও ভাতের সংগ্রাম সমুন্নত রাখবে আওয়ামী লীগ
এটা তো কারও অজানা নয় যে, কোনো সুনির্দিষ্ট সময়ে কোনো দেশের মৌলিক কাঠামো (বেসিক স্ট্রাকচার) যদি উপরি কাঠামো (সুপার স্ট্রাকচার)-র সঙ্গে সংগতিপূর্ণ না হয় কিংবা অন্তত গতি যদি সংগতিপূর্ণ না হওয়ার দিকে যায়, তবে সেই দেশ মুখ থুবড়ে পড়ে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর আমলে হয়েছে এক ধরনের সমস্যা আর বর্তমানে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার আমলে রয়েছে ঠিক উল্টো ধরনের সমস্যা। কারণ বঙ্গবন্ধু পেয়েছিলেন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের অর্থনীতি আর তার কন্যা পেয়েছেন সামরিক কর্তা, জাত বিএনপি ও এর সঙ্গী যুদ্ধাপরাধী জামাতের মতো বিরোধী দল।
স্বাধীনতার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু জনগণের আকাক্সক্ষা ও তার অঙ্গীকার অনুযায়ী সংবিধান রচনা করেন এবং দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো জাতীয় চারনীতি সামনে রেখে সংসদীয় গণতন্ত্র চালু করেন এবং সেøাগান তোলেন, ‘গণতন্ত্রের পথে সমাজতন্ত্র’। অর্থাৎ তিনি রাজনীতি ও অর্থনীতিকে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে অগ্রসর করতে সচেষ্টা থাকেন। একটু খেয়াল করলে দেখা যাবে, বঙ্গবন্ধু রাজনীতির দিক থেকে বাংলাদেশকে বিশ্ব পরিমণ্ডলে সামনের সারিতে চলে আসে। কিন্তু যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে অর্থনীতি ছিল পিছিয়ে। ছিল না অর্থ-খাদ্য। এক্ষেত্রে রাজনীতি এগিয়ে যায়, অর্থনীতি থাকে সংকটের মধ্যে পিছিয়ে।
একটু খেয়াল করলে দেখা যাবে, বঙ্গবন্ধু কথিত ‘চাটার দল’-এর কর্মকাণ্ড অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতাকে আরও বাড়িয়ে দেয়। আর ‘রাতের বাহিনী’ অর্থনীতিকে আরও আঘাত করার জন্য বিভিন্ন বাহিনী গড়ে তোলে এবং বাজার-হাট-থানা-ফাঁড়ি লুট করতে নামে। এর মধ্যেই আসে ভয়াবহ বন্যা। সাথে সাথে শুরু হয় কিসিঞ্জারি কূটনীতি। তখন পিছিয়ে থাকা অর্থনীতিকে পুঁজি করে রাজনীতি তথা সংসদীয় গণতন্ত্রকে আঘাত করা হয়। ইচ্ছেকৃত না অনিচ্ছেকৃত জানা কষ্ট হলেও বলতে হয়, এ প্রশ্ন অনেকে করতে চান না, ‘চাটার দল’ ও ‘রাতের বাহিনী’র তৎপরতার বাড়বাড়ন্ত না হলে কি সংসদীয় গণতন্ত্রের স্থলে একদল হতো? আসলে হতো না।
ইতোমধ্যে বুড়িগঙ্গা দিয়ে গড়িয়ে গেছে অনেক পানি। ১৯৮১ সালে দেশ যখন হত্যা-খুন আর প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ সামরিক শাসনের ঘূর্ণাবর্তে, তখন জীবনকে হাতের মুঠোয় রেখে দেশের বৃহত্তম দল নেতৃত্বশূন্য আওয়ামী লীগের হাল ধরেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। তিনি প্রথম থেকেই ‘ভোট ও ভাতের’ অধিকারের দাবি তোলেন। এটা ছিল বঙ্গবন্ধুর চিন্তার ধারাবাহিকতা, দূরদৃষ্টিরই পরিচায়ক। তিনি রাজনীতি ও অর্থনীতিকে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে অগ্রসর করার স্বপ্ন তখন সামনে রাখেন।
এই স্বপ্ন বাস্তবায়নের পরীক্ষা-নিরীক্ষাই হয় ১৯৯৬-২০০১ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে জাতীয় ঐকমত্যের সরকার প্রতিষ্ঠার ভেতর দিয়ে। কিসিঞ্জারি কূটনীতির প্রধান অস্ত্র খাদ্য নিয়ে রাজনীতির জবাব তখন দেওয়া হয় খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করে। ভাত সুনিশ্চিত করে ভোটের রাজনীতিকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরতে তিনি দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সংবিধান অনুযায়ী ক্ষমতা ছেড়ে দেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে। কিন্তু কী করেছিল তখন বিএনপি-জামাতের পুতুল তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান বিচারপতি লতিফুর রহমান! সা-ল-শা সরকারের ভোট ডাকাতির নির্বাচনের কথা দেশবাসী কখনও ভুলে যাবে না।
এর পরিণতিতে ২০০১ থেকে ২০০৮ প্রথমে খালেদা-নিজামী ও পরে ফখরুদ্দীন-মঈনউদ্দিনের শাসনামল ছিল ভোট ও ভাতের অধিকার সুরক্ষার ক্ষেত্রে স্বপ্নভঙ্গেরই সময়কাল। কেবল স্বপ্নভঙ্গের নয়, দুঃস্বপ্নেরও। কারণ প্রথম আমলে গ্রেনেডবাজি আর পরের আমলে ‘মাইনাস টু’ ফর্মুলার প্রধান টার্গেট ছিলেন আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনা। জাতি সেই সময়কাল পার হয়ে এসেছে। পরের ১৫ বছরে দেশ এখন আবারও সেই ভোট ও ভাতের স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে অগ্রসর হচ্ছে।
কিন্তু বর্তমানের বাস্তবতা হলো এই যে, বঙ্গবন্ধুর সময়ের ঠিক বিপরীতভাবে দেশ এগিয়ে গেছে অর্থনৈতিকভাবে আর রাজনৈতিকভাবে আছে পিছিয়ে। বিএনপি-জামাত যদি হয় প্রতিপক্ষ, তবে জাতির কপালে তা ভিন্ন আর কী থাকতে পারে! তত্ত্বাধায়ক সরকার-ব্যবস্থায় শেষ পেরেক পুঁতেছিল যে দুই দল, সেই দু-দলই এখন ওই দাবি তুলে জনমতকে বিভ্রান্ত করার সুযোগ খোঁজে। আদালতের রায়ে সংশোধিত সংবিধানও মানে না।
এ-কারণে এখন সুযোগ পাচ্ছেন পিটার হাস। কিসিঞ্জার পিছিয়ে থাকা অর্থনীতিতে পুঁজি করে রাজনীতিকে আঘাত করেছিলেন। আর তার চেয়ে পদমর্যাদায় ক্ষুদ্র পিটার হাস রাজনীতিকে পুঁজি করে দেশের অগ্রযাত্রাকে করতে চাচ্ছে আঘাত। আঘাতে আঘাতে দেশ এখন ইস্পাতের মতো শক্ত। এবারে কূটনীতির কাছে হেরে যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। ঘোলা পানিতে কাউকে মৎস্য শিকার করতে দেবে না জনগণ।

যতই ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত হোক পথ হারাতে পারে না
মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী বাঙালি জাতি
বিংশ শতকের সত্তরের দশক আর একবিংশ শতাব্দীর বিশের দশক সম্পূর্ণ ভিন্ন। তবে একটা মিল রয়েছে। তখনও ছিল ‘আনসিন ফ্যাক্টর’, চুয়াত্তরের বন্যা। আর এখন কোভিড দুর্যোগের পর রাশিয়া-ইউক্রেন ও ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ। প্রকৃতসৃষ্ট দৈব দুর্বিপাকে পড়ায় তখন হেরে গিয়েছিল বাংলাদেশ; কিন্তু এখনকার প্রকৃতি ও মানুষ্যসৃষ্ট মূল্যবৃদ্ধির দুর্বিপাকের মধ্যে রয়েছে বিশ্বসমাজের মধ্যে আমাদের দেশও। প্রশ্ন হলো, এবার হারবে না জিতবে বাংলাদেশ?
বিজয়ী হতেই হবে বিশ্বের ৩৫তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ বাংলাদেশকে। ‘তলাবিহীন ঝুঁড়ি’র অবজ্ঞার জবাব এখন দিচ্ছে বাংলাদেশ। এই জবাবে দেশ-বিদেশের কোন্ কোন্ শক্তির আঁতে ঘা লাগছে, জনগণ তা শত লক্ষ চোখ দিয়ে দেখছে, কান দিয়ে শুনছে, হৃদয় দিয়ে অনুভব করছে। প্রবাদ বলে, ‘শকুনের অভিশাপে গরু মরে না।’ প্রস্তুত হচ্ছে বাংলাদেশ গণতন্ত্র ও মানবাধিকার নিয়ে উত্থাপিত প্রশ্নের জবাব দিতেও। আর তা যে দিতেই হবে জন্মলগ্নের মর্মবাণীকে সুরক্ষা করতে। রাজনীতিকে অর্থনীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতেই হবে।
এর জন্য প্রয়োজন অরাজকতা-বিশৃঙ্খলা বন্ধ করা। নির্বাচন কমিশন সব রাজনৈতিক দলকে আলোচনায় আহ্বান জানিয়েছিল। তা বয়কট করেছে বিএনপি, জামাতসহ কতক বামদল। এতদসত্ত্বেও নির্বাচন কমিশন বলেছে, যেসব দল সংলাপে যোগ দেয়নি, সেসব দল যে-কোনো সময় নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপে বসতে পারবে। সংলাপে যাব না, সব বয়কট করব, আগুন সন্ত্রাস চলবেÑ এই অনঢ় অবস্থান সব সময় হয় আত্মঘাতি। সময় চলে যাচ্ছে। নির্বাচনের দিন সামনে আসছে। ভুল ট্রেনে উঠলে যত দ্রুত নামা যায়, ততই মঙ্গল। নামবে কি বিএনপি! সাংবিধানিক পথে আসবে কি!
বিএনপি এগিয়ে আসুক আর না আসুক, বাংলাদেশ এগিয়ে যাবেই। ‘ভোট ও ভাতের পথ’ থেকে বিচ্যুত হতে পারে না বাংলাদেশ। যেমনÑ পদ্মা সেতুতে রেল আর মেট্রোরেল চলছে, ঢাকা-কক্সবাজার রেল চলবে; সেভাবেই সঠিক ট্রেনে চলতে থাকবে বাংলাদেশ। কর্ণফুলি ট্যানেল বন্ধ হবে না। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ জ্বলবে। খাদ্যাভাবে মানুষ মরবে না, গৃহহীন মানুষ আশ্রয়ণ প্রকল্পে মাথা গুঁজে নিতে পারবে। ডিজিটাল বাংলাদেশ হবে স্মার্ট বাংলাদেশ।
স্বপ্ন বাস্তবায়নে অগ্রযাত্রার মধ্যে থাকাটাই হচ্ছে এখনকার অঙ্গীকার ও প্রতীজ্ঞা। এটাই চ্যালেঞ্জ। যতই ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত হোক, পিছনে হটবে না, হটতে পারে না, পথ হারাতে পারে না মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী বাঙালি জাতি। এখন ‘জয় বাংলা’ ধ্বনী তুলে অগ্রসর, কেবলই অগ্রসর হওয়ার পালা। অতীত অভিজ্ঞতা সামনে রেখে জাতীয় পুনর্জাগরণের লক্ষ্যে এখন বিরামহীনভাবে এগিয়ে যাওয়ার পালা। সবাই এগিয়ে আসুন, ‘সবার পরশে’ পবিত্র হোক বাংলার মাটি। সবাই মিলে গড়ে তুলি সোনার বাংলা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিএনপি-জামাত ক্যাডারদের পাশবিকতা
পরবর্তী নিবন্ধকবিতা
আরও পড়ুন
spot_img

জনপ্রিয় সংবাদ

মন্তব্য