- আরিফ সোহেল
ফুটবল বিশ্বকাপের উন্মাদনা নিয়ে বাঙালিদেরও উচ্ছ্বাস আকাশচুম্বি। সেই উৎসাহ-উদ্দীপনার বাইরে কখনও ছিলেন না ফুটবলপ্রেমী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও। গত ৮ জুন জাতীয় সংসদ ভবনের লবিতে ফিফা ট্রফি উন্মোচনের পর বিশ্বকাপ ফুটবল হাতে নিয়ে; ট্রফি স্পর্শ করে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন তিনি। এ সময়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ফিফা বিশ্বকাপ ফুটবল ২০২২-এর ট্রফির বাংলাদেশ ভ্রমণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের ক্রীড়াপ্রেমীরা, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম উৎসাহিত হবে।’
বাস্তবতা হচ্ছে বিশ্বকাপের দল হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান অনেক পেছনে। কিন্তু আয়োজন-উদ্যোগে বাংলাদেশ অনেক দেশের চেয়েও এগিয়ে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীকে সামনে রেখে বাফুফের সভাপতি কাজী সালাহউদ্দিন আগেই ঘোষণা করেছিলেন, ২০২২ সালে কাতার বিশ্বকাপের বিশ্বকাপ ট্রফি বাংলাদেশে আনা হবে। বাফুফের সেই ঘোষণার ফলপ্রসূ উদ্যোগে বাংলাদেশ মাতিয়ে গেল বিশ্বকাপ ট্রফি। নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী বাংলাদেশে আনা হয়েছিল বিশ্বকাপ ট্রফি। ট্রফি নেওয়া হয়েছিল রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের বাসভবনেও। ৮ জুন বিশ্বকাপ ট্রফির প্রতিনিধি দলসহ বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) একটি প্রতিনিধি দল বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সঙ্গে দেখা করে এবং ফিফা বিশ্বকাপ ট্রফিটি প্রদর্শন করেন। সে-সময় ফুটবলের গৌরবোজ্জ্বল এই ট্রফিকে স্বাগত জানান রাষ্ট্রপতি নিজেই। ছবি তোলেন পাশে দাঁড়িয়ে। এ সময় রাষ্ট্রপতির সহধর্মিণী রাশিদা খানম, রাষ্ট্রপতির ছেলে রেজওয়ান আহমেদ তৌফিকসহ প্রতিনিধি দল উপস্থিত ছিলেন। রাষ্ট্রপতি ফিফাসহ সংশ্লিষ্ট সকল কর্মকর্তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, বিশ্বকাপ ট্রফি আসার ফলে খেলোয়াড়, সংগঠক ও সমর্থকরা ফুটবলের প্রতি আরও বেশি উৎসাহিত হবে এবং বাংলাদেশের ফুটবল আগামীতে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আরও এগিয়ে যাবে।
প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে রাষ্ট্রপতির বাসভবনের পর রাতে ট্রফি আনা হয়েছিল সংসদ লবিতে। সেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বকাপ ট্রফি স্পর্শ করে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন। স্মৃতিচারণ করেন নিজ পরিবার সদস্যদের ফুটবলপ্রেমের ইত্যকার ইতিবৃত্তান্ত। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একজন ফুটবলার ছিলেন, সে-কথাও গর্ব নিয়ে বলেন তিনি। এ সময় যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল এমপি, মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম, যুব ও ক্রীড়া সচিব মেজবাহ উদ্দিন, ট্রফির সঙ্গে ঢাকা সফররত ১৯৯৮ সালে ফ্রান্সের বিশ্বকাপজয়ী দলের মিডফিল্ডার ক্রিস্টিয়ান কারেম্বু, বাফুফে সভাপতি কাজী মো. সালাউদ্দিন, বাফুফে সাধারণ সম্পাদক মো. আবু নাইম সোহাগসহ ফিফা, কোকা-কোলা কোম্পানির ভারত ও দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ার সভাপতি শংকেত রায় এবং বাফুফের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
প্রতিনিধি দলের সঙ্গে কুশলবিনিময় শেষে প্রধানমন্ত্রী তার পরিবারের সদস্যদের খেলাধুলায়, বিশেষ করে ফুটবলের সঙ্গে সম্পৃক্ততার ওপর স্মৃতিচারণ করেন। নিজের পিতামহ, পিতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, ভাই, সন্তান এমন কী নাতি-নাতনিরাও অত্যন্ত ক্রীড়ামোদী এবং ক্রীড়ানুরাগী বলেও উল্লেখ করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ফুটবল বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা। আমরা আমাদের ছেলে-মেয়েদের খেলাধুলায় সম্পৃক্ত করতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছি।’ বাংলাদেশের ফুটবলের স্বর্ণালি দিনের স্বপ্নের কথা বলেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী তার পরিবারের ফুটবলপ্রীতি ও দেশবাসীর ফুটবল সমর্থন নিয়ে কথা বলেন। পরে তিনি ট্রফির পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তোলেন।
কাতার বিশ্বকাপ সামনে রেখে গত ১২ মে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই থেকে শুরু হয় বিশ্বকাপ ট্রফির বিশ্বভ্রমণ। ৫৬টি দেশে যাবে সোনায় মোড়ানো এ ট্রফি। ৯ জুন রাতে বাংলাদেশের পর বিশ্বকাপ ট্রফিকে নেওয়া হয়েছে পূর্ব তিমুরে।
২০১৩ সালেও বাংলাদেশে বিশ্বকাপ ট্রফি এসেছিল, তবে সেটি ছিল রেপ্লিকা। এবার এসেছে ২০২২ সালের কাতার বিশ্বকাপজয়ী দলের হাতে উঠতে যাওয়া আসল ট্রফি। প্রায় ৩৬ ঘণ্টা বাংলাদেশে বিশ্বকাপ ট্রফিটি রাখা হয়েছিল। ট্রফিটি ঢাকায় এসেছিল একটি বিশেষ বিমানে। বিশ্বকাপ ট্রফিটি বিমানবন্দরে নামতেই কাপটি পাশে রেখে ছবি তোলেন বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনসহ ফুটবল ফেডারেশনের কর্মকর্তারা।
৯ জুন বিশ্বকাপ ট্রফি সরাসরি দেখার সুযোগ পেয়েছিলেন ভাগ্যবান ফুটবলপ্রেমীরা। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত আড়াই হাজার নির্বাচিত দর্শকের জন্য হোটেলে বিশ্বকাপ দেখার সুযোগ রাখা হয়েছিল। ছবিও তুলেছেন অনেকে। পরে ওইদিন বিকালে স্পন্সর প্রতিষ্ঠান কোকা-কোলার উদ্যোগে আর্মি স্টেডিয়ামের কনসার্টে ফুটবলপ্রেমীদের জন্য ট্রফি প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছিল। কিন্তু প্রতিকূল আবহাওয়ার জন্য তা প্রায় ভেস্তে যেতে বসেছিল। ঝড়ো-বৃষ্টিতে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল কনসার্ট। এক পর্যায়ে স্থগিতও ঘোষণা করেছিল। তবে সন্ধ্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মঞ্চ ঠিকঠাক করে রাত সোয়া ৮টায় ফের কনসার্ট শুরু হয়েছিল। সেখানে আনা হয়েছে স্বপ্নের বিশ্বকাপ ট্রফিও।
১৮ ক্যারেট স্বর্ণের তৈরি এই বিশ্বকাপ ট্রফির উচ্চতা ৩৬.৮ সেন্টিমিটার। ওজন ৬.১৭৫ কেজি। ট্রফিতে চুমু এঁকে দেওয়া বিশ্বের সব ফুটবলারের আজন্ম আরাধ্য স্বপ্ন। এই ট্রফির জন্য লড়াই করে বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশ। এবারও যেমন বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে অংশ নিয়েছে ২০৭টি দেশ। সেই লড়াইয়ে ছিল বাংলাদেশও। অথচ জাতিসংঘের সদস্য কিন্তু ১৯৩টি। অর্থাৎ বিশ্বকাপে অংশ নেয় জাতিসংঘের সদস্যের চেয়েও বেশি দেশ। সে-কারণে এই আসরের নাম বিশ্বকাপ ফুটবল।
লেখক : সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য, উত্তরণ