Thursday, November 30, 2023
বাড়িSliderবিবিধ ব্যঞ্জনে অন্নাহার পিঠেপুলি

বিবিধ ব্যঞ্জনে অন্নাহার পিঠেপুলি

সোহাগ ফকির: হেমন্তের আগমন। হিমেল হাওয়ায় বাংলাদেশ। হিমহিম বাতাস নিয়ে আসে নতুন ধানের গন্ধ। আনন্দে গ্রামের কৃষাণ কৃষাণী।
‘অগ্র’ মানে ‘প্রথম’। আর ‘হায়ণ’ অর্থ ‘মাস’। বাংলাদেশের লৌকিক ইতিহাস থেকে জানা যায়, অতীতে বাংলাদেশে নবান্ন উৎসব পালন একটি প্রাচীন রীতি। বিশেষ করে হেমন্তে আমন ধান কাটার পর অগ্রহায়ণ কিংবা পৌষ মাসে গ্রামের কৃষকরা এ উৎসব পালনে মেতে উঠত। আদিগন্ত মাঠজুড়ে এখন হলুদে-সবুজে একাকার নয়নাভিরাম অপরূপ প্রকৃতির চিরাচরিত রূপ। মাঠে মাঠে সোনালি ধানের প্রাচুর্য। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে আনন্দধারায় ভাসছে কৃষকের মন-প্রাণ। গ্রামের বাড়ির উঠান ভরে উঠবে নতুন ধান সিদ্ধ করার গন্ধে। হিমহিম হেমন্ত দিন। হেমন্তের প্রাণ-নবান্ন। বাঙালির প্রধান অন্ন, আমন ধান কাটার মাহেন্দ্র সময়। কৃষিভিত্তিক সভ্যতার পুরোভাগে থাকা এই নবান্ন উৎসব অনাদিকাল হতে বাঙালির জীবন অধিকার করে আছে। নতুন ধান থেকে পাওয়া চালে হয় নবান্ন উৎসব। সনাতন পঞ্জিকায় এদিনকে বলা হয়ে থাকে বাৎসরিক মাঙ্গোলিক দিন। নতুন আমন চালের ভাত বিবিধ ব্যঞ্জনে অন্নাহার, পিঠেপুলির উৎসবের আনন্দে মুখর হয় জনপদ।
বিশেষ করে গ্রামে ছোট ছেলেমেয়েদের আয়োজনটা মুক্ত হয়ে ওঠে তাদের চড়ুইভাতি, মেহেদি রাঙা হাত, গান, কিচ্ছা, শেষরাতে সবার ঘুম ভাঙিয়ে হৈচৈ ইত্যাদি হয়ে ওঠা গ্রামের বড় আয়োজন। নবান্নের উৎসবে শিশু-কিশোরদের বাঁধভাঙা এই আয়োজন-আনন্দ নজর কাড়ে সবার। বাংলাদেশে হেমন্তে প্রকৃতির বিচিত্র রূপের বর্ণনা আর স্তুতিতে মুখর কবি-সাহিত্যিকরা। কবি জীবনানন্দ দাশের কবিতায় উঠে এসেছে : “আবার আসিব ফিরে ধান সিঁড়িটির তীরে এই বাংলায়/হয়তো মানুষ নয় হয়তো শঙ্খচিল শালিখের বেশে;/হয়তো ভোরের কাক হয়ে এই কার্তিকের নবান্নের দেশে।” হেমন্তের প্রকৃতিতে বিভোর কবি বর্ণনা করেছেন : “চারিদিকে নুয়ে পড়ে ফলেছে ফসল/তাদের স্তনের থেকে ফোঁটা ফোঁটা পড়িতেছে শিশিরের জল,/প্রচুর শস্যের গন্ধ থেকে-থেকে আসিতেছে ভেসে/পেঁচা আর ইঁদুরের ঘ্রাণে ভরা আমাদের ভাড়ারের দেশে।”
হেমন্তের প্রাণ নবান্ন উৎসব উপলক্ষে পহেলা অগ্রহায়ণ (১৬ নভেম্বর) সকালে রাজধানীর বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মুক্তমঞ্চে জাতীয় নবান্নোৎসব উদযাপন পর্ষদ কর্তৃক আয়োজিত জাতীয় নবান্নোৎসব ১৪২৯-এর উদ্বোধন করা হয়।
জাতীয় নবান্নোৎসব ১৪২৯-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সংস্কৃতিবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ এমপি বলেছেন, কৃষিভিত্তিক সভ্যতার অন্যতম নিদর্শন নবান্ন। নবান্ন বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী শস্য উৎসব। এ উৎসব বাঙালিকে ঐক্য, ভ্রাতৃত্ব ও আত্মীয়তার বন্ধনে দৃঢ় করে। নবান্নের উৎসব বাঙালির জনজীবনে নিয়ে আসে অনাবিল সুখ, শান্তি আর সমৃদ্ধির বার্তা।
বর্তমানে দেশে চলছে আগাম আমন ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ। মেয়েকে নাইয়র আনা হয় বাপের বাড়ি। নতুন ধানের ভাত মুখে দেওয়ার আগে কোথাও কোথাও দোয়া, মসজিদে শিন্নি দেওয়ার রেওয়াজ আছে। সনাতন কৃষকের ঘরে পূজার আয়োজন চলে ধুমধামে। নবান্নকে ঘিরে তাদের বারো পূজার প্রচলন আছে। বাঙালি সনাতনদের বারো মাসের তেরো পার্বণের বড় পার্বণ হলো এই নবান্ন। তারা নতুন অন্ন পিতৃপুরুষ, দেবতা, কাক প্রভৃতি প্রাণীকে উৎসর্গ করে এবং আত্মীয়স্বজনকে পরিবেশন করার পর গৃহকর্তা ও পরিবারবর্গ নতুন খেজুর রসের গুড়সহ নতুন নবান্ন গ্রহণ করেন। সনাতন লোকবিশ্বাসে কাকের মাধ্যমে ঐ খাদ্য মৃতের আত্মার কাছে পৌঁছে যায়। এই নৈবদ্যকে বলে ‘কাকবলী’। রাজধানীসহ সারাদেশে বিভিন্ন জায়গায় বসেছে গ্রামীণ মেলা। এই মেলা হয়ে ওঠে মানুষের মিলন মেলায়। বাঙালির আবেগ ও আনন্দের অন্যতম আয়োজন নবান্ন উৎসব।

আরও পড়ুন
spot_img

জনপ্রিয় সংবাদ

মন্তব্য