উত্তরণ প্রতিবেদন: দেশের মানুষের মাছ, মাংস আর ফলমূল খাওয়া বেড়েছে। তার বিপরীতে ভাত খাওয়া কমিয়ে দিয়েছে মানুষ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) সর্বশেষ খানা আয়-ব্যয় জরিপ-২০২২-এর প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। গত ১২ এপ্রিল বিবিএস এই জরিপের ফলাফল প্রকাশ করেছে।
বিবিএস-এর জরিপের তথ্য অনুযায়ী, এখন একজন মানুষ গড়ে প্রতিদিন ৪০ গ্রাম মাংস গ্রহণ করে। ২০১৬ সালের জরিপে এ পরিমাণ ছিল ২৫ দশমিক ৪ শতাংশ। সেই হিসাবে ছয় বছরের ব্যবধানে মানুষের প্রতিদিনের মাংস গ্রহণের পরিমাণ বেড়েছে গড়ে প্রায় সাড়ে ১৪ গ্রাম।
একইভাবে ২০২২ সালের জরিপ অনুযায়ী, দেশের একজন মানুষ গড়ে প্রতিদিন ৬৭ দশমিক ৮০ গ্রাম মাছ গ্রহণ করে। ২০১৬ সালের জরিপে যার পরিমাণ ছিল ৬২ দশমিক ৬০ গ্রাম। আবার ছয় বছরের ব্যবধানে মানুষের প্রতিদিনের ফলমূল গ্রহণের পরিমাণ প্রায় ৩ গুণ বেড়েছে। ২০১৬ সালের হিসাবে একজন মানুষের প্রতিদিন গড়ে ফলমূল গ্রহণের পরিমাণ ছিল ৩৫ দশমিক ৮০ গ্রাম।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, মানুষের খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা রেখেছে দুটি বিষয়। প্রথমত মানুষের আয় বৃদ্ধি, দ্বিতীয়ত নগরায়ণ। এ দুটি কারণে খাদ্যাভ্যাসেও বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে গত কয়েক বছরে। বিবিএস-এর জরিপেও মাছ, মাংস, ফলমূল ও ভাত গ্রহণের মতো খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তনের চিত্র উঠে এসেছে।
বিবিএস-এর খানার আয়-ব্যয় জরিপ-২০২২-এর জরিপে ৯টি খাদ্যপণ্য গ্রহণের প্রবণতা তুলে ধরা হয়েছে। খাদ্যপণ্যগুলো হচ্ছে- ভাত, গম, ডাল, সবজি, মাছ, মাংস, দুধ ও দুগ্ধ-জাতীয় পণ্য, ডিম ও ফলমূল।
জরিপের প্রাথমিক ফলাফল অনুযায়ী, এ ৯টি খাদ্যপণ্যের মধ্যে ৭টি গ্রহণের ক্ষেত্রে ২০১৬ সালের তুলনায় ২০২২ সালে এসে যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে মানুষের। আর দুটিতে কমেছে। ২০১৬ সালের চেয়ে ২০২২ সালে এসে যেসব খাবার খাওয়া মানুষ বাড়িয়েছে সেগুলো হলো- গম, ডাল, সবজি, দুধ ও দুগ্ধ-জাতীয় পণ্য, মাছ, মাংস ও ফলমূল। তার বিপরীতে ভাত ও ডিম খাওয়া কমেছে মানুষের।
মানুষের খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের প্রভাব দেখা যায় ক্যালরি গ্রহণের পরিমাণের ক্ষেত্রেও। ২০১৬ সালের তুলনায় মানুষের দৈনিক জনপ্রতি ক্যালরি গ্রহণের পরিমাণ বেড়েছে ২০২২ সালে এসে। জরিপের তথ্য বলছে, ২০২২ সালে এসে জনপ্রতি দৈনিক গড়ে ২ হাজার ৩৯৩ কিলোক্যালরি খাবার গ্রহণ করেছে। ২০১৬ সালে যার পরিমাণ ছিল ২ হাজার ২১০ কিলোক্যালরি।
গ্রাম ও শহরাঞ্চল উভয় ক্ষেত্রে এই ক্যালরি গ্রহণের পরিমাণ বেড়েছে। ২০১৬ সালে গ্রামাঞ্চলে একজন মানুষ দৈনিক গড়ে ২ হাজার ২৪০ কিলোক্যালরির খাবার গ্রহণ করতেন। ২০২২ সালে এসে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৪২৪ কিলোক্যালরিতে। একইভাবে ২০১৬ সালে শহরাঞ্চলে একজন মানুষ দৈনিক গড়ে ২ হাজার ১৩০ কিলোক্যালরির খাবার গ্রহণ করতেন। ২০২২ সালে এসে সেই পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ২ হাজার ৩২৫ কিলোক্যালরিতে।
এদিকে বিবিএসের খানার আয়-ব্যয় জরিপ যে ফলাফল ১২ এপ্রিল প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে দেশে অতিদারিদ্র্যের হার অর্ধেকের বেশি কমে ৫ দশমিক ৬ শতাংশে নেমে এসেছে। ছয় বছর আগে যা ছিল ১২ দশমিক ৯ শতাংশ। একইসঙ্গে কমেছে সার্বিক দারিদ্র্যের হারও। সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী, দেশে সার্বিক দারিদ্র্য কমে দাঁড়িয়েছে ১৮ দশমিক ৭ শতাংশে। ছয় বছর আগে অর্থাৎ ২০১৬ সালে এ হার ছিল ২৪ দশমিক ৩ শতাংশ।
করোনার অভিঘাতে গড় আয়ু সামান্য কমেছে
দেশের মানুষের গড় আয়ু আগের চেয়ে কমেছে বলে জানিয়েছে পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। পরিসংখ্যান ব্যুরোর এক জরিপ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে আসে।
বিবিএস বলছে, গড় আয়ু কমার কারণ করোনাভাইরাস। করোনার কারণে মৃত্যু বেড়েছে। মাতৃমৃত্যুসহ অন্যান্য মৃত্যু বৃদ্ধির কারণও করোনা। এ-কারণে গড় আয়ু কম হতে পারে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক আলমগীর হোসেন। বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিক্স ২০২১ শিরোনামের প্রতিবেদনটি গত ১৭ এপ্রিল প্রকাশ করা হয়।
গড় আয়ু কমার কারণ জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক এবং বিবিএস-এর অন্যান্য কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেন, করোনার কারণে মৃত্যু বেড়েছে। মাতৃমৃত্যুসহ অন্যান্য মৃত্যু বৃদ্ধির কারণও করোনা। এ-কারণে গড় আয়ু কম হতে পারে।
তারা বলেন, করোনাকাল হিসেবে ২০২১ একটি অস্বাভাবিক বছর ছিল। সে-কারণে ওই বছরের উপাত্তের সঙ্গে আগের বছরগুলোর তুলনা করা ঠিক হবে না। পরবর্তী প্রতিবেদনে সূচকগুলোতে পরিবর্তন আসতে পারে বলেও জানান তারা। বিবিএস-এর প্রতিবেদনে দেখা যায়, করোনাকালের দুই বছর অর্থাৎ ২০২০ ও ২০২১ সালের মৃত্যুহার অন্য বছরগুলোর চেয়ে বেশি। ২০২১ সালে মৃত্যুহার প্রতি হাজারে বেড়ে ৫ দশমিক ৭ জন হয়েছে, যা আগের বছর ছিল ৫ দশমিক ১ জন। পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, ২০২১ সাল শেষে একজন মানুষের গড় আয়ু কমে ৭২ বছর ৩ মাসে দাঁড়িয়েছে। ২০২০ সালে যা ছিল ৭২ বছর ৮ মাস।
গত বছর নারী ও পুরুষের উভয়ের গড় আয়ুই কমেছে। ৭১ বছর ২ মাস থেকে কমে পুরুষের গড় আয়ু ৭০ বছর ৬ মাসে নেমে এসেছে। এছাড়া নারীর গড় আয়ু ৭৪ বছর ১ মাস, যা আগের বছর ছিল ৭৪ দশমিক ৫ মাস।
বিগত বছরগুলোতে বিবিএস-এর উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বেশ কয়েক বছর ধরে গড় আয়ু বাড়ছিল। ২০১৭ সালে প্রত্যাশিত গড় আয়ু ছিল ৭২ বছর। পরের বছর হয় ৭২ বছর ৩ মাস। ২০১৯ সালে গড় আয়ু দাঁড়ায় ৭২ বছর ৬ মাস। ২০২০ সালে আরও বেড়ে হয় ৭২ বছর ৮ মাস। কিন্তু ২০২১ সালে এসে তা কমে গেছে।