Monday, October 2, 2023
বাড়িউত্তরণ প্রতিবেদনবিদ্যুৎ উৎপাদন ২২ হাজার মেগা. : লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম

বিদ্যুৎ উৎপাদন ২২ হাজার মেগা. : লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম

উত্তরণ প্রতিবেদন: ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্য স্থির হয়েছিল ২১ হাজার মেগাওয়াট। কিন্তু ইতোমধ্যেই সেই লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করেছে বাংলাদেশ। দেশের একমাত্র জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র কাপ্তাইয়ে এবার যোগ হলো ৭ দশমিক ৪ মেগাওয়াটের একটি সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড পিডিবি কেন্দ্রটির মালিক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১১ সেপ্টেম্বর সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্রটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। এর বাইরে আরও চার বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং দশ উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুতায়ন উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এ নিয়ে দেশে মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা দাঁড়াল ২২৩২৯ মেগাওয়াট। একই সঙ্গে শতভাগ বিদ্যুতায়িত উপজেলার সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে হলো ২১১। শেখ হাসিনা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সাধারণ মানুষকে বিদ্যুৎ ব্যবহারে মিতব্যয়ী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার অনুরোধ থাকবে যারা বিদ্যুৎ ব্যবহার করবেন তারা সাশ্রয়ী হোন, অতিরিক্ত বিদ্যুৎ যেন নষ্ট না হয়। বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হলে বিলটাও কম আসবে, সেটা মাথায় রাখতে হবে। কাজেই প্রত্যেকে বিদ্যুৎ ব্যবহারে মিতব্যয়ী ও সাশ্রয়ী হবেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা যত টাকা দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করি, তার চেয়ে অর্ধেকের কম দামে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে যাচ্ছি। বিদ্যুতে এভাবে ভর্তুকি দেয়া ঠিক নয়। তারপরও মানুষের কল্যাণে, মানুষের সুবিধার জন্য- আপনারা বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হবেন সেই আশা করছি। সরকারে আসার পর বেসরকারি খাতে বিদ্যুৎ উৎপাদনে আইন করার কথা অনুষ্ঠানে তুলে ধরে তিনি বলেন, আমরা রাস্তাঘাট, অবকাঠামোগত উন্নয়ন করি। সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুৎটা অত্যন্ত জরুরি।
সরকারপ্রধান বলেন, বিদ্যুৎ যখন গ্রামে-গঞ্জে মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে যায় তখন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়। আমাদের লক্ষ্য প্রতিটা গ্রামে উন্নয়নের ছোঁয়া পৌঁছে দেয়া আর বাংলাদেশের দারিদ্র্য বিমোচন করা। আমরা কিন্তু সেই লক্ষ্য নিয়েই কাজ করে যাচ্ছি। তিনি বলেন, প্রতিটা উপজেলা যেন সম্পূর্ণভাবে বিদ্যুৎ পায় সেজন্য আমরা ঘোষণা দিয়েছি, যেন মানুষের মধ্যে একটা উৎসাহ আসে। শতভাগ বিদ্যুৎ ধীরে ধীরে বাংলাদেশের প্রতিটি উপজেলা, উপজেলা থেকে ইউনিয়নে পৌঁছে যাবে, সেটা আমরা পৌঁছাতে পারব।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের ৯৩ শতাংশ বাড়িতে আওয়ামী লীগ সরকার বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন ২২০০০ মেগাওয়াট ছাড়িয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার ২০০১ সালে যে ৪০০০ মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ রেখে গিয়েছিল সেটা বিএনপি ৩২০০ মেগাওয়াটে নামিয়ে এনেছিল। দেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের উন্নয়নে তার সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে গ্যাস বিক্রির জন্য একসময় চাপ আসার কথাও তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আগে গ্যাসের স্বল্পতা ছিল। গ্যাস বিক্রি করার জন্য ২০০১ সালে আমাদের ওপর প্রচণ্ড চাপ ছিল। গ্যাস আমাদের। আমরাই ১৯৯৬ সালে সরকারে এসে আন্তর্জাতিক টেন্ডার দেই। বিদেশিরা এসে গ্যাস উত্তোলনে কাজ শুরু করে। সেই সময় চাপ এলো যে, গ্যাস বিক্রি করতে হবে।
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র বলছে, কাপ্তাই দেশের প্রথম এবং একমাত্র সরকারি সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র। এর আগে বেসরকারি খাতে আরও ৩টি গ্রিড সংযুক্ত সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র উৎপাদনে আসে। তবে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনে বেসরকারি খাত থেকে সরকারি খাত পিছিয়ে ছিল। সরকার পিডিবির অনুক‚লে বড় জমি দিলেও সেখানে সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে প্রতিষ্ঠানটি কোনো অগ্রগতি দেখাতে পারেনি। উল্টো পিডিবি তহবিল সংকটের কথা বলে আসছে। কিন্তু সম্প্রতি সরকার অলস টাকা পড়ে থাকার যে তালিকা দিয়েছে, তাতে পিডিবিতে ১৩ হাজার কোটি টাকা অলস পড়ে রয়েছে বলে দেখা গেছে।
এর আগে বেসরকারি খাতে টেকনাফ ২০ মেগাওয়াট, পঞ্চগড় ৮ মেগাওয়াট এবং জামালপুর ৩ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে। তবে সম্প্রতি রাষ্ট্রীয় কোম্পানি নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি (এনডাব্লিউপিজিসিএল) এবং চীনের ন্যাশনাল মেশিনারি এক্সপোর্ট অ্যান্ড ইমপোর্ট কর্পোরেশন (সিএমসি) দেশে ৫০০ মেগাওয়াট নবায়নযোগ্য জ্বালানির বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য সমঝোতা স্মারক সই করেছে। সরকারের এই উদ্যোগ সফল হলে ২০২২ সালের মধ্যে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে। যার ৪৫০ মেগাওয়াট সৌর এবং ৫০ মেগাওয়াট বায়ুবিদ্যুৎ।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এছাড়াও ৪২৮ মেগাওয়াট তরল জ্বালানির্ভর বিদ্যুৎকেন্দ্রের যাত্রা শুরুর ঘোষণা দেওয়া হয়। সবকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু করেছে। কেন্দ্রগুলো হচ্ছে প্যারামাউন্ট বিট্রাক এনার্জি লিমিটেডের বাঘাবাড়ি ২০০ মেগাওয়াট, ইউনাইটেড পাওয়ারের জামালপুর ১১৫ মেগাওয়াট এবং কনফিডেন্স পাওয়ার লিমিটেডের বগুড়া ১১৩ মেগাওয়াট। ৩টি কেন্দ্রই তেলচালিত। কেন্দ্রগুলো পিক আওয়ার বা সর্বোচ্চ চাহিদার সময় এবং গ্রীষ্মের সংকট সামাল দিতে নির্মাণ করা হয়েছে।
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র বলছে, গত ১০ বছরে বিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতা ৫ গুণ বেড়ে ২২৩২৯ মেগাওয়াট দাঁড়িয়েছে। এখন সারাদেশে আরও ৪৮টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন রয়েছে। যে কেন্দ্রগুলোর মোট উৎপাদন ক্ষমতা ১৬১৩৮ মেগাওয়াট। এখন ৮টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের দরপত্র প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। যার মোট উৎপাদন ক্ষমতা ১১৫০ মেগাওয়াট।

আরও পড়ুন
spot_img

জনপ্রিয় সংবাদ

মন্তব্য