এটিএম নজরুল আলম : ১৯৭২ সালে তখনকার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি আখ্যায়িত করেছিলেন। স্বাধীনতা-পরবর্তী চরম সংকটজনক অর্থনৈতিক অবস্থা কটিয়ে বাংলাদেশ এখন এশিয়ার উদীয়মান অর্থনৈতিক শক্তি। স্বল্পোন্নত দেশের পরিচয় ঝেড়ে ফেলে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ। বাংলাদেশ বিশ্বের ৪১তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ।
গ্রেট ব্রিটেনের অর্থনৈতিক গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর ইকোনোমিক্স অ্যান্ড বিজনেস রিসার্চ বলেছে, বাংলাদেশের অর্থনীতির বিকাশ অব্যাহত থাকলে ২০৩৫ সাল নাগাদ বিশ্বের ২৫তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশে পরিণত হবে।
পরিসংখ্যান ব্যুরো এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ১৯৭৩-৭৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় ছিল ২৯৭ মিলিয়ন ডলার। আজ তা দাঁড়িয়ে ৩৪ বিলিয়ন ডলারে। জাতীয় মাথাপিছু আয় ৭৭০ ডলার থেকে ২ হাজার ২২৭ ডলার হয়েছে। দারিদ্র্যের হার ৪২.৫ থেকে ২০.৫ শতাংশ হয়েছে। খাদ্য উৎপাদন ১ কোটি টন থেকে ৩ কোটি ৮৫ লাখ টনে উন্নীত হয়ে খাদ্যে উদ্বৃত্তের দেশে পরিণত হয়েছে।
ধান ও শাক-সবজি উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে তৃতীয়, চা উৎপাদনে চতুর্থ, মাছে তৃতীয়, আম ও আলুতে সপ্তম, দেশের কোটি লোক ইন্টারনেট ব্যবহার করে ততোধিক লোক মোবাইল ব্যবহার করে।
২০২০-২১ অর্থবছরে ভারত ও পাকিস্তানের প্রবৃদ্ধি নেই, সেখানে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ৫.২ শতাংশ। বাংলাদেশের ৯৬ শতাংশ গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছে গেছে। নাগরিক সুবিধা গ্রামবাসীর দ্বারপ্রান্তে।
বাংলাদেশে গড় আয়ু ৭৪, পাকিস্তানের ৬৭ বছর, শিশুমৃত্যু বাংলাদেশে হাজারে ২৫, পাকিস্তানে ৫৯ শতাংশ। বাংলাদেশে প্রাথমিক শিক্ষায় ভর্তির হার ৯৮ শতাংশ, পাকিস্তানে ৭২ শতাংশ।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক মেডিকেল জার্নাল ল্যানসেটের গবেষণায় দেখা গেছে, ১৯৫টি দেশে স্বাস্থ্যসেবা খাতের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৫২তম।
মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে ৮ লাখ ৮৫ হাজার ৬২২ গৃহহীনকে ঘর প্রদানের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। ১৯৯৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৯ লাখ ৯৮ হাজার ৩৪৬ পরিবারের বাসস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক বিশ্বে নিয়ে গেছেন। ২১শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের কালজয়ী ভাষণ ইউনেস্কোর ঐতিহাসিক প্রামাণিক দলিলে সংরক্ষিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেও অনেকগুলো আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করেছেন। মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ খেতাবে ভূষিত হয়েছেন, যা বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করেছে। বিশেষ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত হয়েছে।
মিয়ানমার ও ভারতের সাথে সমুদ্রসীমা বিরোধের শান্তিপূর্ণ নিষ্পত্তির মাধ্যমে বঙ্গোপসাগরে বিশাল এলাকার ওপর বাংলাদেশের সার্বভৌম প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশ-ভারত সীমানা চুক্তির বাস্তবায়নে ছিটমহলবাসীর দীর্ঘদিনের মানবেতর জীবনের অবসান হয়েছে।
দুই
বঙ্গবন্ধু-কন্যা সুদূরপ্রসারী উন্নয়নবান্ধব নীতি গ্রহণ করেছেন। একের পর এক ডিজিটাল প্রশাসনিক ও আর্থিক সেবা দেশের আনাছে-কানাছে পৌঁছে গেছে প্রযুক্তির কল্যাণে। দীর্ঘ ১২ বছরে পদ্মা সেতু, মহাকাশে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট, মেট্রোরেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ, পটুয়াখালীর মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর, এলিভিয়েটড এক্সপ্রেসওয়ে, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণসহ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো আজ দৃশ্যমান।
পুলিৎজার পুরস্কার বিজয়ী সাংবাদিক নিকোলাস ক্রিসটক মনে করেন দারিদ্র্য কী করে নিরসন করা যায় বাইডেন প্রশাসন ও সারাবিশ্ব বাংলাদেশের কাছ থেকে তা শিখতে পারে। ওয়ালস্ট্রট জার্নাল বলেছে, বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে গতিময় রানিং বুল ফেইস। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত বাংলাদেশ যদি এ ধারাবাহিকতায় চলতে পারে, তাহলে আগামী ২০৪১ সালে আগেই উন্নত দেশের তালিকায় নাম লেখাতে সক্ষম হবে, তা এখনই বলা যায়।
লেখক : সহকারী জেনারেল ম্যানেজার, টি/এ ডিভিশন, জীবন বীমা কর্পোরেশন