Monday, October 2, 2023
বাড়িদশম বর্ষ, দ্বিতীয় সংখ্যা-জানুয়ারি-২০২০বাংলাদেশে উচ্চ শিক্ষার গুণগত পরিবর্তন এবং বিশ্ববিদ্যালয় র‌্যাংকিং উন্নয়নে প্রস্তাবনা

বাংলাদেশে উচ্চ শিক্ষার গুণগত পরিবর্তন এবং বিশ্ববিদ্যালয় র‌্যাংকিং উন্নয়নে প্রস্তাবনা

বপ্রফেসর ড. মো. সাজ্জাদ হোসেন: াংলাদেশে উচ্চ শিক্ষার রয়েছে এক সুদীর্ঘ ইতিহাস। বলা যায়, আধুনিক চিন্তা-চেতনা ও ধ্যান-ধারণার ভিত্তিতে ১৯২১ সালে ব্রিটিশ আমলে বাংলাদেশ নামক এই ভূখ-ে একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে উচ্চ শিক্ষার যাত্রা শুরু। তবে ১৪০০-২০০০ বছর পূর্বের এ অঞ্চলের পু-্রনগর (বর্তমান মহাস্থানগড়), পাহাড়পুর ও ময়নামতির বৌদ্ধবিহারগুলোতে আন্তর্জাতিকমানের উচ্চ শিক্ষার নিদর্শন পাওয়া যায়। প্রখ্যাত নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান বাংলাদেশ থেকে বেশি দূরে নয় এবং সপ্তম শতাব্দীতে এই বিশ^বিদ্যালয়ের আচার্য ছিলেন শীলাভদ্র নামক একজন বাঙালি। বর্তমানে বাংলাদেশে আমরা উচ্চ শিক্ষা বা বিশ্ববিদ্যালয়ের মহান ঐতিহ্যের গর্বিত উত্তরাধিকারী। তবে, এই ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতা রক্ষা হয়নি। এদেশকে একটি মেধাসম্পন্ন ও জ্ঞান-বিজ্ঞানে সমৃদ্ধ উন্নত জাতি হিসেবে গড়ার লক্ষ্যে স্বাধীনতা লাভের পরপরই ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর (প্রথম বিজয় দিবস) বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন প্রতিষ্ঠা করেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তিনি উচ্চ শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি জাতির সামনে তুলে ধরেন। উচ্চ শিক্ষার প্রসার ও মানসম্মত উন্নয়নই প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক ঘোষিত ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত বিশ্বের কাতারে আসীন করার পথকে সুগম করবে। বাংলাদেশে উচ্চ শিক্ষা স্তরে ২০০৯ সালের ১.৬ মিলিয়ন শিক্ষার্থী বৃদ্ধি পেয়ে ২০১৯ সালে ৩.৮ মিলিয়ন শিক্ষার্থীতে উন্নীত হয়েছে, যা একটি কোয়ান্টাম জাম্প। এটি স্পষ্ট যে, উচ্চ শিক্ষাক্ষেত্রে এদেশের উদীয়মান বৈশ্বিক অর্থনীতি ও সমৃদ্ধি পূর্ব এশিয়া এবং নর্ডিক অঞ্চলের দেশসমূহে দৃশ্যমান। এদেশের শিক্ষা বিশেষ করে উচ্চ শিক্ষায় গুণগতমান বৃদ্ধির জন্য একটি পদ্ধতিগত বিশ্ববিদ্যালয় র‌্যাংকিং ব্যবস্থার গুরুত্ব অপরিসীম।
বিশ^বিদ্যালয় র‌্যাংকিং-এর গুরুত্ব
বিগত কয়েক দশকে বিশ্বব্যাপী উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে এসব প্রতিষ্ঠানের পদ্ধতিগত র‌্যাংকিং শিক্ষার গুণগতমান উন্নয়নের জন্য অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়েছে। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উচ্চ শিক্ষার বিস্তার ও সম্প্রসারণ ঘটেছে, যা অতীতে কখনোই ঘটেনি। নতুন নতুন বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, সম্প্রসারণ, উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণার মানোন্নয়ন, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষার চাহিদা নিরূপণ, উচ্চ শিক্ষার উন্নয়ন ও সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা প্রণয়নের লক্ষ্যে ১৬ ডিসেম্বর (প্রথম বিজয় দিবস) ১৯৭২ সালে প্রথম বিজয় দিবসে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক ১৯৭৩ সালের রাষ্ট্রপতির ১০নং আদেশে বাংলাদেশ বিশ^বিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন প্রতিষ্ঠিত হয়। জাতির ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে উচ্চ শিক্ষা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যদি শিক্ষা-ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে, তাহলে সমগ্র জাতির জীবনে দুর্ভোগ নেমে আসে। কাজেই দেশের শিক্ষা-ব্যবস্থায় যথার্থ র‌্যাংকিং পদ্ধতি অত্যাবশ্যক। সর্বমহলে গৃহীত র‌্যাংকিং পদ্ধতি শিক্ষার্থীদের উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন, সঠিক প্রতিষ্ঠান নির্বাচন, আর্থিক সুবিধা অর্জন, নতুন গবেষকদের গবেষণা কর্মকা- পরিচালনায় সহায়তা এবং প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে গঠনমূলক প্রতিযোগিতা গড়ে তুলতে সহায়তা করে। বিশ্বে একাধিক র‌্যাংকিং পদ্ধতি চালু রয়েছে। যেমনÑ দি টাইমস হায়ার এডুকেশন সাপ্লিমেন্ট, ‘ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি র‌্যাংকিংস (দি র‌্যাংকিং)’, কোয়াককোয়ারেলি সিমন্ডস (কিউএস), ‘ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি র‌্যাংকিংস’, দি সাংহাই জিয়াও টং ইউনিভার্সিটি, ‘একাডেমিক র‌্যাংকিং অব ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটিজ (এআরডব্লিউইউ)’, ওয়েবোমেট্রিকস র‌্যাংকিং অব ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটিজ, ওয়েবোমেট্রিকস র‌্যাংকিং (স্প্যানিস ন্যাশনাল রিসার্চ কাউন্সিল কর্তৃক প্রকাশিত), দি গার্ডিয়ান হায়ার এডুকেশন নেটওয়ার্ক, ইউনেস্কো র‌্যাংকিংস অ্যান্ড একাউন্টেবিলিটি ইন হায়ার এডুকেশন, ইউএস নিউজ এডুকেশন, ইউনিভার্সিটাস ২১ এবং এনটিইউ র‌্যাংকিং। সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণেও কাজ করে চলেছে। তবে বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত বিশ^বিদ্যালয় পর্যায়ে র‌্যাংকিং পদ্ধতি চালু হয়নি। কাজেই বাংলাদেশে একটি যথোপযুক্ত র‌্যাংকিং পদ্ধতির প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করা যায় না। গুণগত মানসম্পন্ন পাঠদান নিশ্চিতসহ শিক্ষার অন্যান্য ক্ষেত্রে মান বজায় রাখতে র‌্যাংকিং পদ্ধতি জরুরি। এই র‌্যাংকিং পদ্ধতি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের মধ্যে সুষম প্রতিযোগিতা গড়ে তুলতে সহায়তা করবে। একটি দেশে যথার্থ র‌্যাংকিং পদ্ধতি না থাকলে উচ্চ শিক্ষাকে এগিয়ে নেওয়া যায় না। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন এবং সদ্য প্রতিষ্ঠিত অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিল যৌথভাবে র‌্যাংকিং পদ্ধতি চালু করতে পারে। অনেকগুলো মানদ-ের ভিত্তিতে র‌্যাংকিং পদ্ধতি হওয়া উচিত।

বিশ্ববিদ্যালয় র‌্যাংকিং উন্নয়নের জন্য প্রস্তাব
১. আন্তর্জাতিক র‌্যাংকিং পদ্ধতির প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী, তথ্য ও ডকুমেন্টেশন ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে প্রতিটি বিশ^বিদ্যালয়কে প্রশিক্ষণের জন্য নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে এবং তা সময়মতো আন্তর্জাতিক র‌্যাংকিং কর্তৃপক্ষ, ইউজিসি’র নিকট পেশ করতে হবে। একইসাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট হালনাগাদ করতে হবে। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইকিইউএসি (ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স সেল) এ-লক্ষ্যে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করবে।
ক. আন্তর্জাতিক র‌্যাংকিং নির্ধারণে যে সূচক ব্যবহৃত হয় তার সাথে সংগতি রেখে শিক্ষা ও গবেষণা-সংক্রান্ত অভিন্ন তথ্যাদি সংবলিত ডাটাবেজ তৈরি করতে হবে।
খ. প্রতিটি বিশ^বিদ্যালয় কেন্দ্রীয় গবেষণা ব্যবস্থাপনা এবং বাণিজ্যিক কেন্দ্র চালু করতে পারে।
গ. সমন্বিতভাবে গবেষণা কার্যক্রম এগিয়ে নিতে জাতীয় গবেষণা কাউন্সিল গঠন করা যেতে পারে।
ঘ. আন্তর্জাতিক র‌্যাংকিং পদ্ধতির চ্যালেঞ্জসমূহ শনাক্তকরণ।
ঙ. শীর্ষ স্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের র‌্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে সুনাম একটি সূচক হতে পারে, কারণ একই ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলোকে এর মাধ্যমে পৃথক করা খুবই সহজ।
চ. শিল্পপ্রতিষ্ঠানের চাহিদা পূরণে উচ্চমানসম্পন্ন গ্রাজুয়েট তৈরিতে বিশ^বিদ্যালয়কে কাজ করতে হবে।
ছ. প্রতিটি বিশ^বিদ্যালয়ের পারফরমেন্সের ভিত্তিতে র‌্যাংকিং নির্ধারিত হবে। কাজেই প্রতিষ্ঠানসমূহকে তাদের স্ব-স্ব অবস্থান থেকে সর্বোচ্চ সেবা প্রদান করতে হবে।
জ. বর্তমানে বিশ্ব প্রযুক্তিনির্ভর হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে আরও দক্ষতার সঙ্গে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়কে উচ্চমানসম্পন্ন তথ্যপ্রযুক্তি সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।

অভ্যন্তরীণ র‌্যাংকিং পদ্ধতি
ক. প্রতিটি বিশ^বিদ্যালয় অভ্যন্তরীণ র‌্যাংকিং পদ্ধতি প্রতিষ্ঠা করবে, যার মাধ্যমে তারা প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব গড়ে তুলবে।
খ. বাংলাদেশের বিশ^বিদ্যালয়ে র‌্যাংকিং পদ্ধতি চালুর লক্ষ্যে কোয়ালিটি ম্যাট্রিক্স অ্যান্ড মেথডস ক্রাইটেরিয়া শনাক্ত করতে হবে। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় এই পদ্ধতিতে অবশ্যই মূল্যায়িত হবে।
গ. বিশ^বিদ্যালয়ের সার্বিক অবস্থা নিশ্চিতকল্পে বিভিন্ন মানদ- এবং কৌশল শনাক্ত করতে হবে।
ঘ. দেশের বাইরে যেসব শিক্ষাবিদ কাজ করছেন, তাদের শিক্ষা-সংক্রান্ত কাজে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। তাদের প্রকাশনা ও উপস্থাপনা এদেশের শিক্ষা-ব্যবস্থার সাথে সংযুক্ত করতে হবে।
ঙ. প্রবাসী বাংলাদেশিদের গবেষণা ও উন্নয়নের জন্য শ্রেণিভুক্ত করা যেতে পারে।
চ. সাইটেশন বা উদ্ধৃতিকরণ র‌্যাংকিং-এর ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। শিক্ষকগণের আন্তর্জাতিকমানের মৌলিক গবেষণা বিভিন্ন দেশি-বিদেশি জার্নালে প্রকাশিত হলেও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত জার্নাল সিস্টেম, যেমনÑ স্কোপাস, ওয়েব অব সাইন্স, আইআইসি, গুগোল স্কলার বা রিসার্চগেটে অন্তর্ভুক্ত না করায় মৌলিক গবেষণাকর্ম হওয়া সত্ত্বেও এর সাইটেশনের পরিমাণ তুলনামূলকভাবে অনেক কম। র‌্যাংকিং-এর ক্ষেত্রে এই সূচকে গবেষক/বিশ্ববিদ্যালয় পর্যাপ্ত ক্রেডিট থেকে বঞ্চিত হয়। এ-বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় এবং শিক্ষকগণকে আরও সচেষ্ট হতে হবে।

উচ্চ শিক্ষার গুণগতমান বৃদ্ধি
শিক্ষাই জাতির মেরুদ-। আর উচ্চ শিক্ষা একটি জাতির অর্থনীতির চালিকাশক্তি। উদীয়মান অর্থনীতির দেশ হিসেবে বাংলাদেশে গুণগত মানসম্পন্ন গ্রাজুয়েট বড়ই প্রয়োজন। গুণগত মানসম্পন্ন উচ্চ শিক্ষা শিক্ষার্থীদের মানসম্পন্ন কর্মসংস্থান ও উন্নত জীবন-ব্যবস্থা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে সহায়তা করে। বাংলাদেশে অধিকাংশ উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকার কর্তৃক পরিচালিত হয়ে আসছে। উচ্চ শিক্ষায় ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের চাহিদা পূরণে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা অপ্রতুল হওয়ায় পরবর্তীতে দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। বিগত দশকগুলোতে এই ধারা ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলেছে। র‌্যাংকিং পদ্ধতি শিক্ষার্থী এবং গবেষকদের বিশ^বিদ্যালয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে দিক-নির্দেশনা প্রদানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

উচ্চ শিক্ষা উন্নয়নের জন্য প্রস্তাবিত উদ্যোগ
ক. গবেষণা ও উন্নয়নের সংস্কৃতি অভিযোজনের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে নতুন নতুন জ্ঞান সৃষ্টি করতে হবে।
খ. ইউজিসি মানসম্পন্ন পাঠদান, গবেষণা ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানে প্রয়োজনীয় দক্ষ গ্রাজুয়েট তৈরির ক্ষেত্রে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে লক্ষ্যভিত্তিক এ্যাপ্রোচ চালু করবে। এই লক্ষ্যভিত্তিক এ্যাপ্রোচকে প্রতি বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মদক্ষতা ও তহবিল বরাদ্দের সাথে সংযুক্ত করতে হবে।
গ. গবেষণার ফলাফল নির্দিষ্ট ক্রাইটেরিয়ার (প্রকাশিত জার্নাল, কনফারেন্স, হাই ইমপ্যাক্ট জার্নালস ও কমার্শিয়ালাইজেশন ইত্যাদি) ভিত্তিতে মূল্যায়ন করা।
ঘ. গ্রাজুয়েটদের চাকরির বাজারে প্রবেশের জন্য কোর্স-কারিকুলাম, জ্ঞান, দক্ষতার উন্নয়নের লক্ষ্যে কাঠামোবদ্ধ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে সহযোগিতা স্থাপন করতে হবে। চার-ছয় মাসের বাধ্যতামূলক ও কার্যকরি ইন্টার্নশিপ চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে গ্রাজুয়েটদের দক্ষতা বৃদ্ধি করতে পারে।
ঙ. শিক্ষার মানোন্নয়নে শিক্ষকদের জন্য ধারাবাহিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, নতুন পাঠদান পদ্ধতি, বিষয়ভিত্তিক দক্ষতা এবং প্রশিক্ষণের ফলাফল নিয়মিত মূল্যায়ন ও তদারকি করতে হবে।
চ. কাক্সিক্ষত উচ্চ শিক্ষা ও শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ার গঠনের জন্য যোগ্যতা অনুযায়ী তাদের পরিচালনার লক্ষ্যে বুদ্ধিবৃত্তিক পদ্ধতি গ্রহণ করতে হবে।
ছ. ফলাফলভিত্তিক শিক্ষা (আউটকাম বেজড এডুকেশন)-এর আলোকে বিভিন্ন ডিগ্রির যোগ্যতা শনাক্তকরণের জন্য পদ্ধতি চালু করতে হবে।
জ. প্রয়োজনীয় শর্তারোপ করে স্থায়ী সনদপ্রাপ্ত প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে চয.উ প্রোগ্রাম চালু করা যেতে পারে। যে-বিষয়ে চয.উ প্রদান করা হবে সে-বিষয়ে কমপক্ষে পাঁচজন চয.উ ডিগ্রিধারী পূর্ণকালীন অধ্যাপক থাকতে হবে এবং প্রত্যেক অধ্যাপকের ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টর জার্নালে অন্তত ১০টি প্রকাশনা থাকতে হবে (এটি প্রতি বছর প্রযোজ্য হবে)।
ঝ. গবেষণা, উন্নয়ন ও এর বাজারজাতকরণের জন্য ওছঅঈ-এর মতো প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইউনিভার্সিটি ইনোভেশন অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার (ইউআইআইসি) চালু করা যেতে পারে।
ঞ. পুরস্কার, স্বীকৃতি ও আর্থিক প্রণোদনার মাধ্যমে গবেষণা ও এর বাজারজাতকরণের সংস্কৃতি ত্বরান্বিত করা।
ট. শিক্ষকদের গবেষণালব্ধ ফলাফল আন্তর্জাতিকমানের জার্নালে (হাই ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টর জার্নাল/ইনডেক্স জার্নালে) প্রকাশিত হলে গবেষক এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগকে আর্থিক প্রণোদনা প্রদান করা যেতে পারে।
ঠ. শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সাথে দুই-পাঁচ বছরের কাজের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ প্রদান করা যেতে পারে।
ড. একাডেমিক এক্সিলেন্সের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বজনবিদিত সুনাম বৃদ্ধি করতে হবে।
ঢ. যোগ্য প্রার্থীদের নিয়োগ প্রদানের মাধ্যমে গবেষণা ও শিক্ষার মান বৃদ্ধি করতে হবে।
ণ. জাপানের আদলে বাংলাদেশের শিল্পনীতিতে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনতে হবে, যাতে শিল্পপ্রতিষ্ঠানসমূহ বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের গবেষণায় একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ ব্যয় করবে।

দেশের তরুণ প্রজন্মকে দক্ষ মানবসম্পদ এবং উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলার জন্য সরকার ইতোমধ্যেই কয়েকটি বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনির্ভাসিটি ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনির্ভাসিটি ২০১৬ সালে যাত্রা শুরু করে এবং বঙ্গবন্ধু এভিয়েশন অ্যান্ড এ্যারো স্পেস ইউনির্ভাসিটি প্রতিষ্ঠা বিল ২০১৯ সালের ২ ফেব্রুয়ারি মহান জাতীয় সংসদে পাস হয়। বর্তমানে বাংলাদেশ তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে এক বিকাশমান দেশ। অদূর ভবিষ্যতে এর র‌্যাংকিং আরও উচ্চমানে উন্নীত করা এবং তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবস্থাকে আরও বেশি গতিশীল করার পর্যাপ্ত সুযোগ রয়েছে। আন্তর্জাতিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের র‌্যাংকিংয়ের বিষয়ে বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য কোনো অবস্থান সৃষ্টি করতে পারেনি। এমন কী র‌্যাংকিং আপগ্রেড করার জন্য যথোপযুক্ত মেথোডলজি তৈরি করা সম্ভবপর হয়নি। এ প্রস্তাবটি প্রথমবারের মতো একটি প্রাথমিক কাঠামোর অবতারণা করেছে, যা যে কোনো র‌্যাংকিং পদ্ধতির জন্য ব্যবহারোপযোগী হতে পারে এবং উচ্চ শিক্ষার গুণগত পরিবর্তন আনতে পারে।

লেখক : সদস্য, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন

আরও পড়ুন
spot_img

জনপ্রিয় সংবাদ

মন্তব্য