Tuesday, June 6, 2023
spot_img
বাড়িউত্তরণ-২০২২দ্বাদশ বর্ষ, চতুর্থ সংখ্যা, মার্চ-২০২২বাংলাদেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা বঙ্গবন্ধু থেকে বঙ্গবন্ধু-কন্যা

বাংলাদেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা বঙ্গবন্ধু থেকে বঙ্গবন্ধু-কন্যা

অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান

সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার রাজনৈতিক জীবনের শুরুতে একটি লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিলেন ‘বাংলার দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানো’। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন- একটি স্বাধীন, সার্বভৌম, সুখী, সমৃদ্ধ, গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার। বাংলার মানুষের সাংবিধানিক, রাষ্ট্রীয় এবং রাজনৈতিক অধিকার হিসেবে প্রাধান্য দিয়েছেন অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য। এ বিষয়গুলোকে অগ্রাধিকার দিয়ে তিনি গ্রহণ করেছিলেন সকল রাজনৈতিক কর্মসূচি এবং রাষ্ট্রীয় নীতিমালা। বঙ্গবন্ধু ভেবেছিলেন একটি সুখী সমৃদ্ধ দেশ গড়তে হলে চাই একটি স্বাস্থ্যবান জাতি। এ জন্য তিনি স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে যেমন গুরুত্ব দিয়েছেন তেমনি গ্রহণ করেছেন সময়োপযোগী পদক্ষেপ। মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা ও চিকিৎসাবিজ্ঞানের সকল ক্ষেত্রে একটি শক্ত নীতিমালা, পরিকল্পনা, অবকাঠামো রেখে গেছেন, যার ওপরে গড়ে উঠেছে আজকের বিশ্বনন্দিত অনেক কার্যক্রম।
সদ্য স্বাধীন বিধ্বস্ত, কপর্দকহীন দেশে বঙ্গবন্ধু যখন দেশ ও দেশের মানুষকে বাঁচানোর জন্য অহর্নিশ দেশে-বিদেশে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, পরিশ্রম করে চলেছেন, তখন স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা শিক্ষাক্ষেত্রকে প্রাধান্য দিতে ভোলেননি। শত ব্যস্ততার মধ্যে বিদেশ থেকে ফিরে এসে চিকিৎসকদের আপত্তি সত্ত্বেও ১৯৭২-এর ৮ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু তৎকালীন আইপিজিএমআর (বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়)-এ কেন্দ্রীয় রক্ত পরিসঞ্চালন বিভাগ ও নতুন মহিলা ওয়ার্ড উদ্বোধন করতে এসে তিনি দেশের স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা শিক্ষা নিয়ে এক ঐতিহাসিক ভাষণ দেন। তার সেই ভাষণে সদ্য স্বাধীন দেশের স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা নিয়ে এক দিক-নির্দেশনা প্রদান করেন। সেই ভাষণে তিনি দেশের স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা শিক্ষার পরিকল্পনা, ব্যবস্থাপনা, ভাবনা মন খুলে বলেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর ধ্যান-জ্ঞান-কর্মে সব সময় ছিল গরিব-দুঃখী মানুষ। তিনি চিকিৎসাসেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে গরিব রোগীদের মমতা দিয়ে চিকিৎসা প্রদানের নির্দেশ প্রদান করেন। বঙ্গবন্ধু সেদিন পিজি হাসপাতালের বক্তৃতায় বলেছিলেন, “এক টিভি সাংবাদিক আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, আপনার কোয়ালিফিকেশন কী? আমি হাসতে হাসতে বলেছি- আই লাভ মাই পিপল। What is your disqualification? ? জবাবে তিনি বলেছিলেন- I love them too much.” বঙ্গবন্ধু তার বক্তৃতার শুরুতেই মুক্তিযুদ্ধে চিকিৎসকদের ভূমিকা নিয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং শহিদ চিকিৎসকদের গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। শহিদ চিকিৎসকদের তালিকা পিজি হাসপাতালের দেয়ালে লিপিবদ্ধ রাখার জন্য তৎকালীন পরিচালক ডা. নূরুল ইসলামকে নির্দেশ প্রদান করেন। বঙ্গবন্ধু সেদিন যে নির্দেশনা দিয়েছিলেন, তার মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্যÑ
১. চিকিৎসা পেশার সঙ্গে যুক্ত সবাইকে মানবতাবোধ, মনুষত্ব ও সৎ থাকার জন্য পরামর্শ দেন।
২. ওষুধে ভেজাল দেওয়ার বিরুদ্ধে সোচ্চার কণ্ঠে ওষুধের মান নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে গুরুত্ব প্রদান করেন।
৩. সবাইকে নিয়মকানুন মেনে সম্মিলিতভাবে সুষ্ঠু গণমুখী স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা প্রচলনের আহ্বান জানান।
৪. প্রত্যেক থানায় এক বছরের মধ্যে ২৫ বেডের হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করার ঘোষণা দেন।
৫. পরিবার-পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
৬. ডাক্তার-নার্স-কর্মচারীদের সেবার মনোভাব গ্রহণ করে স্বাধীন বাংলাদেশে মানসিক পরিবর্তনের আহ্বান জানান।
৭. বিত্তবান লোকদের হাসপাতালে ওয়ার্ড তৈরি করার জন্য আর্থিক সহযোগিতা প্রদানের আহ্বান জানান।
৮. চিকিৎসক-নার্সদের দরিদ্র, সুবিধাবঞ্চিত রোগীদের চিকিৎসা প্রদানে আন্তরিক হওয়ার জন্য বারবার তাগিদ দেন।
৯. নার্সিং শিক্ষার সুযোগ ও মান বৃদ্ধির জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশ প্রদান করেন। নার্সদের প্রতি সম্মান দেখিয়ে সবাইকে দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের অনুরোধ জানান।

চিকিৎসা একটি সম্মিলিত ব্যবস্থাÑ সেখানে সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিকভাবে মানবিক দায়িত্ব হিসেবে কাজ করার অনুরোধ জানান। দেশের গরিব-মেহনতি মানুষ যেন সাধ্যের মধ্যে সর্বোচ্চ চিকিৎসাসেবা পায় সেদিকে সংশ্লিষ্ট সবাইকে বিশেষ দৃষ্টি রাখার জন্য নির্দেশনা প্রদান করেন।
বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের সংবিধানের ১০(ক) ধারায় চিকিৎসাকে মৌলিক অধিকার এবং ১৮(১) ধারায় জনগণের পুষ্টি ও জনস্বাস্থ্যকে রাষ্ট্রের কর্তব্য হিসেবে সন্নিবেশিত করেন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার সকল স্বাস্থ্য-ভাবনা বাংলাদেশের প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় স্বাস্থ্য ব্যবস্থার বাস্তবায়ন ও উন্নয়নের জন্য গ্রহণ করেছিলেন, যা আজও আমাদের জন্য বড় পাথেয় এবং বর্তমান সময়ের জন্য প্রযোজ্যÑ
১. অনুন্নত অঞ্চলসমূহে স্বাস্থ্য অবকাঠামো নির্মাণের মাধ্যমে থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ইউনিয়ন সাব-সেন্টারের দ্বারা সমন্বিত ও ব্যাপক আকারে চিকিৎসাসেবা প্রদান।
২. তৃণমূল পর্যায়ে পরিবার পরিকল্পনা ও স্বাস্থ্য কার্যক্রমসমূহের মধ্যে সমন্বয় নিশ্চিত করার মাধ্যমে থানা স্বাস্থ্য প্রশাসকের নেতৃত্বে অনুন্নত অঞ্চলসমূহে সর্বাধিক জন্মনিয়ন্ত্রণ অর্জন করা।
৩. নবজাতক ও মাতৃমৃত্যু হার কমানোর লক্ষ্যে মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্যসেবা জোরদার করার মাধ্যমে নবজাতক, শিশু ও মায়েদের যথাযথ স্বাস্থ্যসেবা প্রদান।
৪. সংক্রামক ব্যাধির নিয়ন্ত্রণ ও দূরীকরণ নিশ্চিত করা এবং জনস্বাস্থ্য গবেষণাগার কর্তৃক সমর্থিত মহামারি পরিসেবার মাধ্যমে সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করা।
৫. শিল্প-কারখানায় কর্মরত শ্রমিকদের তাদের পেশাগত স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকে রক্ষার জন্য যথাযথ চিকিৎসাসেবা প্রদানের ব্যবস্থা করা এবং তাদের জন্য একটি স্বাস্থ্যসম্মত কর্মপরিবেশ তৈরি করা। শিল্প শ্রমিক ও তাদের পরিবারের সদস্যদের চিকিৎসাসেবা প্রদান নিশ্চিত করা।
৬. বর্তমানে যেসব হাসপাতাল আছে সেগুলোর সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা এবং অধিকতর গুরুত্বের সহিত হাসপাতাল বেড বৃদ্ধির ব্যবস্থা করা। পরিকল্পনার সময়কালের মধ্যে প্রতিটি অনুন্নত থানায় কমপক্ষে একটি ২৫ বেডের হাসপাতাল নির্মাণ করার মাধ্যমে প্রতি ৩ হাজার ৫০০ জনের জন্য একটি করে হাসপাতাল বেডের লক্ষ্য অর্জন করা।
৭. মুক্তিযুদ্ধে আহত মুক্তিবাহিনীর সদস্যদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের জন্য বিশেষায়িত হাসপাতাল সুবিধা প্রদান এবং যক্ষ্মা, কুষ্ঠ, ক্যানসার, মানসিক রোগের বিশেষায়িত চিকিৎসার জন্য অতিরিক্ত হাসপাতাল বেডের ব্যবস্থা করা।
৮. স্নাতকোত্তর ও স্নাতক অধ্যয়নরত মেডিকেল, প্যারা মেডিকেল এবং নার্সিং কর্মীদের জন্য যথাযথ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা এবং পরবর্তীতে তাদের যথাযথভাবে কাজে লাগানোর জন্য সঠিক পরিসেবা শর্ত নিশ্চিত করা।
৯. অসুস্থ রোগীদের চিকিৎসার জন্য জীবন রক্ষাকারী ওষুধের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা এবং সংক্রামক ব্যাধির নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ করার উদ্দেশ্যে টিকাদান কর্মী নিয়োগ করা।
১০. প্রত্যেক জনগণের জন্য তাদের বাসস্থান ও কর্মস্থলে পরিবেশসম্মত পায়খানা, পানযোগ্য পানির সরবরাহ, বাসস্থানের সুযোগ-সুবিধাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে অভ্যন্তরীণ বিভাগগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা এবং সমন্বয় নিশ্চিত করা।

বঙ্গবন্ধু সংবিধান ও পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা অনুযায়ী স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়ন শুরু করেন।
বঙ্গবন্ধুর তৃণমূল পর্যায়ে চিকিৎসাসেবার জন্য থানা স্বাস্থ্য প্রকল্প আজও বিশ্বে প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিচর্যার এক সমাদৃত মডেল। বঙ্গবন্ধুর পদক্ষেপের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য রয়েছেÑ
১. ইউনিয়ন স্বাস্থকেন্দ্র অন্তর্ভুক্তিসহ থানা পর্যায়ে হাসপাতাল সম্প্রসারণ। নতুন নতুন স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্থাপন।
২. সচিব পদে চিকিৎসক নিয়োগ প্রধান।
৩. আইপিজিএমআর (পিজি হাসপাতাল)-কে শাহবাগে পূর্ণাঙ্গ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল হিসেবে স্থাপন।
৪. বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিল (বিএমআরসি) প্রতিষ্ঠা।
৫. বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ান অ্যান্ড সার্জন্স (বিসিপিএস) প্রতিষ্ঠা।
৬. স্যার সলিমুল্লা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল স্থাপন।
৭. ১৯৭৩ সালে প্রণীত প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনাকে অধিকতর গুরুত্ব প্রদান।
৮. চিকিৎসকদের সরকারি চাকরিতে প্রথম শ্রেণির মর্যাদা প্রদান।
৯. নার্সিংসেবা এবং টেকনোলজির উন্নয়নে সংশ্লিষ্ট ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা ও নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ।
১০. উন্নয়শীল দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার মূলনীতি হলো- Prevention is better than cure। এ নীতিকে বাস্তবায়ন করার জন্য তিনি স্থাপন করেছিলেন নিপসম (ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব প্রিভেন্টিভ ও সোশ্যাল মেডিসিন)।
১১. যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বিদেশে চিকিৎসার ব্যবস্থা।
১২. জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান স্থাপন। মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসার জন্য ডা. আর জে গার্ষটের নেতৃতে একদল চিকিৎসক বিদেশ থেকে এ প্রতিষ্ঠানে নিয়ে আসেন।
১৩. ঢাকা শিশু হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা।
১৪. পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর স্থাপন।

১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যা করার পর সুদীর্ঘ ২১ বছর চলেছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিপরীত ধারায়, পাকিস্তানি ভাবধারা অনুসরণ করে। যে কারণে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সকল উন্নয়ন ব্যাহত হয়, বঞ্চিত হয় সাধারণ মানুষ।
সুদীর্ঘ ২১ বছর লড়াই সংগ্রাম নির্যাতনের পর ১৯৯৬ সালের ২৩ জুন জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা বাবার আজীবন লালিত স্বপ্ন সোনার বাংলা গড়ার কর্মসূচি বাস্তবায়নের লক্ষ্য নিয়ে সরকার পরিচালনায়ও স্বাস্থ্যব্যবস্থা অগ্রগণ্য থাকে। তিনি উদ্যোগ গ্রহণ করেন দেশে একটি গণমুখী স্বাস্থ্য ব্যবস্থার কার্যকর বাস্তবায়ন।
জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে ১৯৯৬ থেকে ২০০১ এবং ২০০৯ থেকে অদ্যাবধি প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু-কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা ও মেডিকেল শিক্ষার সকল ক্ষেত্রে যুগান্তকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করায় আজকে তিনি বিশ্বের দরবারে সমাদৃত এবং সম্প্রসারিত হচ্ছে মানুষের স্বাস্থ্য চাহিদার সুযোগ।
দেশের চিকিৎসকরা এখন আর বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে যায় না, দেশেই সৃষ্টি হয়েছে উচ্চশিক্ষার চাহিদামতো সুযোগ। প্রতিটি ছাত্র মেডিকেলে ভর্তি হওয়ার সময় মানবসেবার ব্রত হৃদয়ে ধারণ করে। এর আগে সুযোগের অভাব ছিল। গোটা বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু-কন্যা স্বাস্থ্য ব্যবস্থার গ্রাম পর্যন্ত অভূত সম্প্রসারণ করে আমাদের সেই ব্রত পালন করার সুযোগ করে দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর ঋণ আমরা কখন শোধ করতে পারব না। আমরা যদি বঙ্গবন্ধুর প্রতি দায়বদ্ধ থেকে যার যার দায়িত্ব পালন করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাই, তবেই বঙ্গবন্ধুর প্রতি যথাযথ শ্রদ্ধা জানানো হবে। আমরা এদেশের চিকিৎসকরা বাংলাদেশে চিকিৎসার সকল সুযোগের সর্বোচ্চ প্রয়োগ করে যেন দেশের গরিব-দুখি মানুষের সেবা করিÑ এই হোক এদেশের চিকিৎসকদের বঙ্গবন্ধুর প্রতি যথাযথ শ্রদ্ধা জানানোর সর্বশ্রেষ্ঠ উপায়।

বাংলাদেশের মেডিকেল শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থায়
জননেত্রী শেখ হাসিনার অবদান
বঙ্গবন্ধু-কন্যা, দেশরতœ শেখ হাসিনার চার-দফায় দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে দেশের মেডিকেল শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলো হচ্ছে-
১. কমিউনিটি ক্লিনিক : প্রতি ৬ হাজার গ্রামীণ জনগণের জন্য একটি করে ক্লিনিক প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয় ১৯৯৬ এবং ১৯৯৮-২০০১-এর মধ্যে ১০ হাজারের অধিক চালু করা হয়েছিল, যার সফল জনগণ পেতে শুরু করেছিল। কিন্তু ২০০১ সালে সরকার পরিবর্তনের পর কেবলমাত্র রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে জনগণের অতি প্রয়োজনীয় এ সুবিধা বন্ধ করে দেয় তৎকালীন বিএনপি-জামাত জোট সরকার। ২০০৯ সালে জননেত্রী শেখ হাসিনা সরকার বিপুল ভোটে জাতীয় নির্বাচনে জয়যুক্ত হয়ে দায়িত্ব গ্রহণের পর কমিউনিটি ক্লিনিক পুনরায় চালু করেন। বর্তমানে ১ হাজার ৮০০টি ক্লিনিক চালু আছে। যেখান থেকে ৩০ রকমের ওষুধ বিনামূল্যে প্রদান, স্বাভাবিক প্রসব ব্যবস্থা, টীকাদান কর্মসূচিসহ নানা ধরনের স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হয়। গ্রামাঞ্চলে কমিউনিটি ক্লিনিক এখন বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় একটি অতি জনপ্রিয় স্বাস্থ্য পরিচর্যা।
২. মেডিকেল বিশ্বিদ্যালয় : দেশের চিকিৎসকদের তিন দশকের দাবি ছিল মেডিকেল বিশ্বিদ্যালয় স্থাপনের। এর আগে অনেক সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েও বাস্তবায়ন করেনি। কিন্তু বঙ্গবন্ধু-কন্যা ১৯৯৬ সালে দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই ১৯৯৭ সালের ৩১ জুলাই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্বিদ্যালয় স্থাপনের সরকারি আদেশ প্রদান করেন, যার কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৯৮ সালের ৩০ এপ্রিল। এ বিশ্বিদ্যালয় উচ্চ মেডিকেল শিক্ষা, সেবা এবং গবেষণায় বিশ্ব সেরা তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এবার ক্ষমতায় এসে আরও ৪টি মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয় স্থাপন করেছেন চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেট এবং খুলনায়।
৩. জাতীয় স্বাস্থ্যনীতি : ১৯৯৬ সালের আগে এদেশে কোনো সুনির্দিষ্ট স্বাস্থ্যনীতি ছিল না। জাতীয় স্বাস্থ্যনীতির দাবিতে অনেক আন্দোলন হয়েছে, যড়যন্ত্র হয়েছে, এমনকি ডা. মিলন শহিদ হয়েছেন। জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে দেশবাসীর আকাক্সক্ষা পূরণ করে ১৯৯৬-এ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, সর্বদলীয় কমিটি এবং সাধারণ মানুষের মতামতের ভিত্তিতে সর্বজন গ্রহণযোগ্য জাতীয় স্বাস্থ্যনীতি ২০০০ প্রণীত হয়। এ স্বাস্থ্যনীতি ২০১১ সালে আবার যুগোপযোগী করা হয়।
৪. মেডিকেল শিক্ষা : ২০১০-২০২১ পর্যন্ত সরকারি/ বেসরকারি মেডিকেল কলেজ সংখ্যা এখন ১১২ (এর মধ্যে ৫টি সামরিক বাহিনীর অধীনে), সরকারি ডেন্টাল কলেজ এবং মেডিকেল কলেজে ডেন্টাল ইউনিটের সংখ্যা ৩৫, বিশ্ববিদ্যালয়সহ মেডিকাল উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ৩৯টি। সরকারি/বেসরকারি নার্সিং কলেজ/ইনস্টিটিউশন সব মিলিয়ে প্রায় ৩০০টি। নতুন ১৬টি বেসরকারি হোমিওপ্যাথি মেডিকেল এবং ৪টি ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক মেডিকেল কলেজের প্রশাসনিক অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, ইনস্টিটিউট হেলথ টেকনোলোজি ১০৮টি।
৫. জাতীয় ঔষধনীতি : ঔষধ শিল্প এখন বাংলাদেশের গৌরবের শিল্প। দেশের ৯৮ শতাংশ চাহিদা পূরণ করে ১৫১টি দেশে রপ্তানি করছে। ঔষধের মান এবং মূল্য নিয়ন্ত্রণ করার জন্য জাতীয় ঔষধনীতি যুগোপযোগী করা হয়েছে।
৬. অটিজম ও স্নায়ু বিকাশজনিত সমস্যা : এ-ধরনের রোগে আক্রান্ত শিশু এবং শিশুর অভিভাবকরা এক অসহায় দুর্বিষহ জীবনযাপন করছিলেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর কন্যা সায়মা ওয়াজেদের বিশেষ উদ্যোগে দেশে অটিজম বিষয়ে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে ওঠে এবং এই শিশুদের পুনর্বাসনের নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। এখন এই শিশুরা আর অবহেলিত নয় এবং এদের অভিভাবকরা অসহায় নয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ইনস্টিটিউট ফর পেডিয়াট্রিক নিউরো-ডিজঅর্ডার অ্যান্ড অটিজম (ইপনা) প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ২২টি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে শিশু বিকাশ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সায়মা ওয়াজেদ পুতুল অটিজমে বিশ্ব আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন এবং সম্প্রতি ইউনেস্কো জুরি বোর্ডের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন।
৭. ক্লিনিক্যাল সেবা : (ক) ১৯৯৬-২০০১ সালে (১) শেরে বাংলা নগর ৪০০ শয্যার শহিদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল, ৪০০ শয্যার জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট, কিডনি হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউট, মানসিক হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউট, ঢাকার আজিমপুরে ১৭৫ শয্যার মা ও শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউট, ঢাকার মাতুয়াইলে ২০০ শয্যার শিশু হাসপাতাল ও মাতৃ-স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, ৬০০ শয্যার ডিএমসিএইচ-২ ভবন নির্মাণের ব্যবস্থা, যা এ-সময়ে বাস্তবায়ন হয়েছে, ২০ তলা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা ভবন নির্মাণের কাজে হাত দেওয়া, যা বর্তমানে বাস্তবায়িত হয়েছে। (২) ঢাকার মিরপুরে ২০০ শয্যা বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ ঢাকা ডেন্টাল কলেজের কার্যক্রম উদ্বোধন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
(খ) ২০০৯ থেকে অধ্যাবধি- (১) এ-সময়ে ১৩টি নতুন হাসপাতাল এবং ১০ হাজার ৬৬২টি নতুন হাসপাতাল শয্যা যুক্ত হয়েছে। কুর্মিটোলা ও মুগদার ৫০০ শয্যার হাসপাতাল, ৩০০ শয্যার ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্স, তেজগাঁওয়ে ৩০০ শয্যার নাক-কান-গলা ইনস্টিটিউট, গোপালগঞ্জে শেখ সায়েরা খাতুন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, শেখ ফজিলাতুন্নেছা চক্ষু হাসপাতাল। (২) প্রধানমন্ত্রী গত ২৪ অক্টোবর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের কার্যক্রম উদ্বোধন করেছেন। ৫০০ বেডের এই হাসপাতাল বিশ্বের অন্যতম বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি হাসপাতাল। (৩) বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে কোরিয়ান সরকারের সহযোগিতায় ১ হাজার শয্যার সুপার স্পেশালাইসড হাসাপাতাল নির্মাণাধীন।
৮. চিকিৎসক নিয়োগ ও পদোন্নতি : (ক) বিসিএসের মাধ্যমে ৯ হাজার ৯৪৪ জন চিকিৎসকসহ এই সরকারের আমলে ১৪ হাজার ৭৭ জন চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ১০ হাজার চিকিৎসক নিয়োগের চূড়ান্ত প্রক্রিয়া চলছে, যাতে তৃণমূল পর্যায়ে চিকিৎসক সংকট না থাকে। (খ) পিএসসির দীর্ঘসূত্রতার পরিবর্তে মেডিকেল শিক্ষকদের পদোন্নতি ডিপিসি এবং এসএসবি’র মাধ্যমে নেওয়া এ সরকারের জন্য একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত ছিল। ইতোমধ্যে অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক এবং কনসালট্যান্ট হিসেবে ৫ হাজার ৯০০ চিকিৎসককে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। (গ) চিকিৎসকদের প্রশাসনিক পদে ২ হাজার ২০০ জনকে এবং স্কেলের মাধ্যমে ৮ হাজার জনকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে।
৯. নার্সিং পেশা : (ক) নার্সদের মর্যাদা বৃদ্ধির লক্ষ্যে তৃতীয় শ্রেণি থেকে দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নীত করা হয়েছে। (খ) ১৫ হাজার নতুন নার্স নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। (গ) নার্সিং জনশক্তি বৃদ্ধির জন্য ১২টি নতুন নার্সিং ইনস্টিটিউটে শিক্ষা কার্যক্রম চালু করেছে। ৭টি ইনস্টিটিউটকে কলেজে উন্নীত করা হয়েছে। (ঘ) নার্সদের উচ্চ শিক্ষার জন্য মুগদায় কোরিয়ান সরকারের সহযোগিতায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে National Institute of Advanced Nursing education and Research (NIANER) যেখানে ইতোমধ্যে মাস্টার্স কোর্স চালু হয়েছে। (ঙ) নতুন করে জনবল কাঠামোসহ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তর সৃষ্টি করা হয়েছে। (চ) বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিল আইন, ২০১৬ প্রণয়ন করা হয়েছে।
১০. ডিজিটাল স্বাস্থ্য : (ক) ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপকল্প ২০২১-এর আলোকে গ্রাম পর্যায়ের মাঠকর্মী থেকে শুরু করে কমিউনিটি ক্লিনিক, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং উপজেলা, জেলা ও আঞ্চলিক এবং জাতীয় পর্যায়ের সকল হাসপাতাল ইন্টারনেট সংযোগ প্রদান করা হয়েছে। (খ) স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কাগজনির্ভর তথ্য ব্যবস্থাপনা বাদ দিয়ে ডিজিটাল পদ্ধতি চালু হয়েছে। (গ) ই-টেন্ডারিং চালু হয়েছে। (ঘ) টেলিমেডিসিন সেবা কেন্দ্র ৯৫টিতে উন্নীত হয়েছে। (ঙ) স্বাস্থ্য ও মেডিকেল শিক্ষা ব্যবস্থার সকল পর্যায়ে অটোমেশনসহ ডিজিটাল পদ্ধতি চালু হয়েছে।
১১. বৃহৎ কর্মসূচি গ্রহণ এবং বাস্তবায়ন : (ক) ১৯৯৮-২০০৩ সালের জন্য পঞ্চম স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা পর্যায়ে পরিকল্পনা (এইচপিএসপি) গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হয়। (খ) ২০০৯-অদ্যাবধি : তৃতীয় ‘স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও জনসংখ্যা কর্মসূচি ২০১১-২০১৬ প্রণয়ন করে বাস্তবায়ন করা হয়েছে। (গ) চতুর্থ ‘স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও জনসংখ্যা কর্মসূচি ২০১৬-২০২১’ প্রণয়ন করে বাস্তবায়নাধীন আছে।
১২. হাসপাতাল শয্যাসংখ্যা বৃদ্ধি : ৩৩২টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীতকরণ করা হয়েছে। ৫০ শয্যাবিশিষ্ট উপজেলা হাসপাতাল এখন ৪৪১টি, মেডিকেল কলেজ ও জেলা হাসপাতালগুলোতে প্রায় ২ হাজার ৫০০ শয্যাসংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে।
১৩. অন্যান্য প্রতিষ্ঠান : (ক) ১৭১টি মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল ও ৫৪টি হেলথ টেকনোলজি ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। (খ) সাভার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ ম্যানেজমেন্ট ভবন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
১৪. জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ : বর্তমান জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে ১.৩৭, যা ২০০৮ সালে ছিল ১.৪১। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে সরকারের পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মাধ্যমে যাবতীয় কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
১৫. মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি : ৭২.৮ বছর।
১৬. জরুরি স্বাস্থ্যসেবা ও অ্যাম্বুলেন্স : বর্তমান সরকারের আমলে বিভিন্ন হাসপাতালে প্রায় ৪০০টি অ্যাম্বুলেন্স প্রদান করা হয়েছে। এর মধ্যে দুর্গম হাওড়াঞ্চলের জন্য ১০টি নৌ অ্যাম্বুলেন্স সরবরাহ করা হয়েছে।
১৭. স্বাস্থ্য সুরক্ষা কর্মসূচি : দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী পরিবারসমূহকে বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের লক্ষ্যে টাঙ্গাইল জেলার ৩টি উপজেলায় স্বাস্থ্য সুরক্ষা শীর্ষক পাইলট প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে এবং সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা অর্জনের জন্য কোয়ালিটি ইমপ্রুভমেন্ট সেক্রেটারিয়েট স্থাপন ও কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
১৮. নীতি কাঠামো ও আইন : (ক) বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল আইন ২০১১। (খ) ধূমপান নিবারণে ধূমপান এবং তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১২। (গ) শতাব্দী পুরাতন আমানবিক কুষ্ঠ আইন (লেপ্রসি অ্যাক্ট) ১৮৯৮ বাতিল। (ঘ) রোগী ও চিকিৎসক সুরক্ষা আইন প্রণয়ন ও বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক আইন হালনাগাদ করা প্রক্রিয়াধীন। (ঙ) মানবদেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন (সংশোধন) আইন ২০১৭। (চ) বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস এবং সার্জনস (বিসিপিএস) আইন ২০১৭।
১৯. বেসরকারি খাত : (ক) দেশের চিকিৎসা জনবলের অভাব পূরণে বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, নার্সিং ইনস্টিটিউট, হেলথ টেকনোলজি ইনস্টিটিউট, মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল ও মিডওয়াইফারি ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। (খ) বেসরকারি পর্যায়ে হাসপাতাল, ক্লিনিক ও রোগ নির্ণয় কেন্দ্রের সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। (গ) সরকারি-বেসরকারি যৌথ অংশীদারিত্ব প্রকল্প চালু হয়েছে।
২০. আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাÑ (ক) জাতিসংঘের ২০১০ সালে এমডিজি-৪ এবং ২০১১ সালে ‘ডিজিটাল হেলথ ফর ডিজিটাল ডেভেলপমেন্ট’ শীর্ষক সাউথ সাউথ পুরস্কার গ্রহণ করেন। (খ) টিকাদান কর্মসূচি সাফল্যের জন্য দুবার গ্যাভি অ্যাওয়ার্ড গ্রহণ। (গ) সায়মা ওয়াজেদকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় আঞ্চলিক কার্যালয় অটিজম বিষয়ে অবদানের জন্য ‘এক্সলেন্স ইন পাবলিক হেলথ’ পুরস্কার প্রদান করে।
এ প্রবন্ধে দেশের মেডিকেল শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থার কিছু মৌলিক চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। এছাড়া মেডিকেল শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের সকল ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ করে কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। আমাদের রয়েছে নানা সীমাবদ্ধতাÑ বাজেটের স্বল্পতা, দক্ষ মানবসম্পদের অভাব, ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা। এরপরও প্রধানমন্ত্রী দেশরতœ শেখ হাসিনার দূরদৃষ্টি নেতৃত্বের জন্য বাংলাদেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা ও মেডিকেল শিক্ষার অনেক সূচকই ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে। বিশ্ব ব্যাংকের ২০১৮ সালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে অর্থনৈতিক, মানবসম্পদ, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য উন্নয়নে বাংলাদেশ ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে (বিশ্ব ব্যাংক প্রতিবেদন ১১ অক্টোবর ২০১৮)। এখন প্রয়োজন (১) দুর্নীতি দমন (২) দক্ষ, সৎ, দেশপ্রেমিক মানবসম্পদ গড়ে তোলা (৩) আধুনিক সময়োপযোগী স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা বাস্তবায়ন করা। মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ। এত সীমাবদ্ধতা নিয়ে আধুনিক বিশ্বের মতো ব্যবস্থা সম্ভব নয়। এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ, এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা। এ উন্নয়নের ধারা সৃষ্টি হয়েছে জননেত্রী শেখ হাসিনার সুপরিকল্পিত নেতৃত্বের জন্য। এ ধারা দেশের মানুষের প্রয়োজনে অব্যাহত রাখতে হলে বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনার বিকল্প নেই। দেশের এবং দেশের মানুষের স্বার্থে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃতে এ উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার জন্য দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।

লেখক : সাবেক উপাচার্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়

পূর্ববর্তী নিবন্ধকবিতা
পরবর্তী নিবন্ধভাষা আন্দোলনের ৭০ বছরে কোথায় আছে বাংলা
আরও পড়ুন
spot_img

জনপ্রিয় সংবাদ

মন্তব্য