Sunday, September 24, 2023
বাড়িদশম বর্ষ,তৃতীয় সংখ্যা,ফেব্রুয়ারি-২০২০বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে ভাষা-আন্দোলনের বহিঃপ্রকাশ

বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে ভাষা-আন্দোলনের বহিঃপ্রকাশ

ড. সাজেদুল আউয়াল:

ভূমিকা
বর্তমান রচনার মূল লক্ষ্য হচ্ছে ভাষা-আন্দোলনের একপর্যায়ে ১৯৫২ সালের ৮ই ফাল্গুন (২১শে ফেব্রুয়ারি) পুলিশের গুলিতে নিহত শহিদদের কথা বা ভাষা-আন্দোলনের নানাদিক বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে ‘বিষয়’ হিসেবে কতটা প্রতিফলিত হয়েছে তা নির্ণয় করা। এ-কাজটি করার জন্য বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ও ভাষা-আন্দোলনের পটভূমি-বিস্তার ও এর প্রভাব আমাদের সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক তথা বাঙালির সার্বিক মুক্তি আন্দোলনের ক্ষেত্রে কীভাবে-কতটা পড়েছিল তা আলোচনা করা হয়েছে। এ-আলোচনার প্রেক্ষিতেই বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে ভাষা-আন্দোলনের নানাদিক কতটা প্রতিফলিত হয়েছে তা জানার চেষ্টা করা হয়েছে।

বাংলাদেশের চলচ্চিত্র
আমরা জানি যে, ১৯৫৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর আতাউর রহমান খানের নেতৃত্বে পূর্ব পাকিস্তানে নতুন মন্ত্রিসভা গঠিত হয়। শেখ মুজিবুর রহমান এই মন্ত্রিসভার শিল্প, বাণিজ্য, শ্রম ও দুর্নীতি দমন বিভাগের মন্ত্রী ছিলেন। তিনি মন্ত্রী থাকাকালে ১৯৫৭ সালের ৩ এপ্রিল পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদে The East Pakistan Film Development Bill, 1957 উপস্থাপন করেন, যার ভিত্তিতে ‘ইস্ট পাকিস্তান ফিল্ম ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন’ প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এ-অঞ্চলে চলচ্চিত্রশিল্পের প্রাতিষ্ঠানিক প্রসার ঘটে।
চলচ্চিত্রশিল্পের বিকাশের ক্ষেত্রে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান সম্পর্কে জ্ঞাত হওয়া এবং ভাষা-আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতেই যে এখানে চলচ্চিত্র নির্মাণের সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন ফিল্ম স্টুডিও তৈরির দাবি ওঠে, সে-বিষয়ে ধারণা পাওয়া যায় নিচের উদ্ধৃতিটি থেকে :
বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের পর এখানে পূর্ণাঙ্গ ফিল্ম স্টুডিও স্থাপনের দাবি ওঠে। … এরকম অবস্থায় ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগ সরকারের পরাজয় ঘটে। যুক্তফ্রন্ট সরকার গঠন করে এবং পূর্ব পাকিস্তানের জন্য নীতিনির্ধারণের ক্ষমতা অর্জন করে।… বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক বিলটি পেশ করার সময় অনেকগুলো ‘পূর্বশর্ত’ তৈরি হয়েই ছিল… বিলটির ওপর কিছু সংশোধনী প্রস্তাব আনেন পরিষদের মাননীয় সদস্য মো. আবদুল মতিন, মো. ইমদাদ আলী, মুনীন্দ্র নাথ ভট্টাচার্য। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সবগুলো সংশোধনী-প্রস্তাবই মেনে নেন। তিনি এমনই ছিলেন, কেউ ন্যায্য কথা বললে তা মেনে নিতেন। মাননীয় সদস্য আবু হোসেন সরকার বিলটিতে কোনো সংশোধনী না-আনলেও বিলটি সম্পর্কে বলেন : So far as the Film Development Corporation Bill is concerned, there may not be any controversy (p.116)। মাননীয় সদস্য মো. আবদুল মতিন বিলটিকে Crying need of the day (p.117) বলে আখ্যায়িত করেছিলেন।

ইপিএফডিসি প্রতিষ্ঠার পর স্টুডিওভিত্তিক বাণিজ্যিক ধারার চলচ্চিত্র নির্মাণের প্রবণতা বেড়ে গিয়েছিল। এর ফলে গোড়ার দিকে বিশ^সংস্কৃতির একটি আঙ্গিক হিসেবে এখানে যে-কয়েকটি ‘শিল্পসম্মত ও জীবনঘনিষ্ঠ’ চলচ্চিত্র নির্মিত হতে দেখা গিয়েছিল, সেই ধারাটি ধীরে ধীরে বাণিজ্যলিপ্সার কারণে ক্ষীয়মাণ হয়ে পড়ে। এর কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায় চলচ্চিত্রবিষয়ক গবেষকের রচনা থেকে :
বাংলাদেশে চলচ্চিত্র-শিল্পের গোড়াপত্তন হয় ১৯৫৬ সালে, মুখ ও মুখোশ নির্মাণের মধ্য দিয়ে। এর পরেই এই সময়কালে তৈরী হয় ফতেহ লোহানী পরিচালিত আসিয়া (১৯৬০), জহির রায়হানের কখনো আসেনি (১৯৬১), সালাহউদ্দিনের সূর্যস্নান (১৯৬২), সাদেক খানের নদী ও নারী (১৯৬৫) ইত্যাদি চলচ্চিত্র। এই ছবিগুলো নির্মাণের পেছনে শিল্প সৃষ্টির তাগিদ ছিল প্রবল এটা অস্বীকার করা যায় না। তাই এসব ছবি শিল্পসম্মত ও জীবনঘনিষ্ঠ হিসেবে স্বীকৃতি পায়। (কাদের, ১৯৯৫ : ১৩) কিন্তু এসবের বেশিরভাগই বাণিজ্যিক সাফল্য লাভে ব্যর্থ হয়। কেননা, বিনোদন উপকরণে ভরপুর উর্দু ও হিন্দি ছবির দাপটে বাংলা ছবি তখন টিকতে পারছিল না। অথচ চলচ্চিত্রভাষার গভীরতা অনুধাবনে সক্ষম এসব চলচ্চিত্র-নির্মাতা তাদের চলচ্চিত্রে প্রাধান্য দিয়েছিলেন শিল্প ও জীবনকে। বাণিজ্যিক সাফল্যের প্রত্যাশা তাদেরকে তখনো সর্বগ্রাসী করে তোলেনি। কিন্তু দৃশ্যপট বদলে যায় খুব দ্রুত। ঢাকার কয়েকজন চলচ্চিত্র-নির্মাতা পশ্চিম পাকিস্তানে বাজার সৃষ্টি ও বেশি মুনাফার আশায় ‘নাচে-গানে ভরপুর’ উর্দু ছবি নির্মাণ আরম্ভ করলেন। এভাবে বাণিজ্যের কাছে, পুঁজির কাছে, চলচ্চিত্র-নির্মাতারা নিজেদের সঁপে দিয়ে চলচ্চিত্রকে যেভাবে নিছক পণ্যে পরিণত করলেন, সেই নিগড় থেকে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র আজও মুক্ত হতে পারেনি।

বঙ্গবন্ধু কর্তৃক ১৯৫৭ সালে প্রাদেশিক পরিষদে বিলটি উত্থাপনের সময়ই এই শিল্পটির বয়স বাষট্টি (১৮৯৫-১৯৫৭) এবং বিশ^ব্যাপী পুঁজিবর্ধনের কারখানা হয়ে গেছে। রীতিমতো একটি ইন্ডাস্ট্রিতে পরিণত হয়েছে বলা চলে। শুধু চলচ্চিত্র নয়, শিল্পের নানা আঙ্গিকই তখন ইন্ডাস্ট্রি হিসেবে পুঁজির দাসত্ব মেনে চর্চিত হতে শুরু করে। তাই পূর্ব পাকিস্তান এবং বাংলাদেশÑ উভয় পর্বেই স্টুডিওভিত্তিক বাণিজ্যিক ধারার চলচ্চিত্র মুনাফা করার জন্যই প্রধানত নির্মিত হয়েছে-হচ্ছে-হবে Ñ এ-সত্যকে অস্বীকার করার উপায় নেই। এ-অবস্থায় ভাষা-আন্দোলনভিত্তিক কাহিনি ঐ ধারার ‘বিষয়’ হয়ে না-আসাটাই স্বাভাবিক, কারণ এই বিষয়ের বাজারমূল্য কম। তাছাড়া, এই ধারার ফর্মুলাফিল্মের উপাদানও ভাষা-আন্দোলনভিত্তিক চলচ্চিত্রে গুঁজে দেওয়া সম্ভব নয়। মুক্তিযুদ্ধকেন্দ্রিক কিছু চলচ্চিত্রে ফর্মুলাফিল্মের উপাদান যুক্ত করার ফল কি হয়েছিল তা সবাই দেখেছেন।

ভাষা আন্দোলন
এ-পর্যায়ে ভাষা-আন্দোলনের সংক্ষিপ্ত একটি রূপরেখা দেওয়া দরকার বলে মনে করছি। কেননা এই আন্দোলন কতটা আমাদের চলচ্চিত্রে চিত্রিত হয়েছে, তা-ই আমাদের দেখার বিষয়। এ-বিষয়ে গবেষক লিখেছেন :
১৯৪৭ সালে দেশভাগ পরবর্তী সময়ে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী প্রথমত এদেশের মানুষের ভাষার অধিকার-হরণ করতে চায়। শাসকগোষ্ঠী ঘোষণা করে ‘একমাত্র উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা’। কিন্তু এদেশের সচেতন ছাত্র-সমাজ ও বুদ্ধিজীবী মহল এই মতের বিরুদ্ধে সক্রিয় হয়ে ওঠে। তারা মাতৃভাষার অধিকার রক্ষায় শাসকগোষ্ঠীর রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে আন্দোলন চালিয়ে যায়। সেই আন্দোলনে শহিদ হন অনেকে। বলা যায়, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে আবদুস সালাম (১৯২৫-১৯৫২), আবুল বরকত (১৯২৭-১৯৫২), রফিক উদ্দীন আহমদ (১৯২৬-১৯৫২), আবদুল জব্বার (১৯১৯-১৯৫২), শফিউর রহমান (১৯১৮-১৯৫২), আবদুল আউয়াল (আনুমানিক ১৯৩৪-১৯৫২), অহিউল্লাহ (আনুমানিক ১৯৪১-১৯৫২) প্রমুখের আত্মত্যাগ বাঙালির অস্তিত্ব অন্বেষায় নবমাত্রা যোগ করে। ফলে বাঙালির অপরাজেয় মনোভাবের কাছে নতি-স্বীকারে বাধ্য হয় পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠী। … ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের বিপুল বিজয়ে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের চেতনাগত প্রভাবই মুখ্য ভূমিকা পালন করে। সেই সাথে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন ক্রমেই বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনে রূপান্তরিত হতে থাকে পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠীর রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে।

উদ্ধৃতিটি স্ব-ব্যাখ্যাত বলে এর বিস্তার ঘটানো থেকে বিরত থাকছি। ১৯৪৭-৪৮ সালে উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার চেষ্টা হলে বাঙালিরা প্রতিবাদ জানায়। এই আন্দোলনের শুরু ও বিস্তার সম্পর্কে সাঈদ-উর রহমান লিখেছেন :
উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার চিন্তা শুরু হয়েছিল দেশবিভাগের পূর্বেই। ১৯৪৭ সালের ১৮ই মে নিখিল-ভারত মুসলিম লীগের প্রভাবশালী নেতা চৌধুরী খালিকুজ্জামান (১৮৯৫-১৯৬৪) পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা উর্দু হবে বলে হায়দারাবাদে ঘোষণা করেন। [Serajuddin Hussain : 33] ঐ সময় এর কোনো প্রতিবাদ হয়নি। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর বিভিন্ন ঘটনায় দেখা যায় যে, পাকিস্তান সরকারের লক্ষ্যও তাই। ফলে প্রতিবাদ শুরু হয় বিভিন্ন তরফ থেকে। গণতান্ত্রিক যুবলীগ ১৯৪৭ সালের ৭ই সেপ্টেম্বর তাদের সম্মেলনে বাংলাকে ‘পূর্ব পাকিস্তানের শিক্ষার বাহন ও আইন আদালতের ভাষা’ করার দাবি জানায়। [বদরুদ্দিন উমর, ১৯৭০ : ১২] ১৫ই সেপ্টেম্বর তমদ্দুন মজলিস ‘পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা বাংলা Ñ না উর্দু’ শীর্ষক পুস্তিকায় বাংলাকে পূর্ব বাংলায় শিক্ষার বাহন ও আইন-আদালত-অফিসাদির ভাষা করার এবং উর্দুকে আন্তঃপ্রাদেশিক ভাষা ও ইংরেজিকে আন্তর্জাতিক ভাষা হিসাবে শিক্ষা দিবার দাবি করে। [ঐ : ১৪-১৭] ড. মুহম্মদ এনামুল হক (১৯০৩-৮১) একটি প্রবন্ধে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেন যে, উর্দু প্রচলিত হলে পূর্ব বাংলার রাজনৈতিক-রাষ্ট্রিক-সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক ধ্বংস ঘনিয়ে আসবে এবং ‘সর্ববিষয়ে পূর্ব পাকিস্তান হবে উত্তর ভারতীয় পশ্চিম-পাকিস্তানী উর্দু ওয়ালাদের শাসন ও শোষণের যন্ত্র।’ [মাসিক কৃষ্টি, ১৯৪৭] এতসব প্রতিবাদ সত্ত্বেও ৫ই ডিসেম্বর করাচীতে অনুষ্ঠিত শিক্ষা-সম্মেলনে লিঙ্গুয়া ফ্রাঙ্কার আবরণে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার সুপারিশ করা হয়। বদরুদ্দিন উমর, ১৯৭০ : ২০] এই সংবাদ পেয়ে ঢাকার ছাত্ররা বিশ^বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে প্রতিবাদ সভা করে এবং প্রস্তাব নেয়Ñ ক. বাংলাকে পাকিস্তান ডমিনিয়নের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা এবং পূর্ব পাকিস্তানের সরকারি ভাষা ও শিক্ষার বাহন করা হোক; খ. রাষ্ট্রভাষা ও লিঙ্গুয়া ফ্রাঙ্কা নিয়ে যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা হচ্ছে তার মূল উদ্দেশ্য আসল সমস্যাকে ধামাচাপা দেওয়া এবং বাংলা ভাষা ও পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের প্রতি বিশ^াসঘাতকতা করা। [ঐ : ২০-২১] এভাবে ছাত্রদের আন্দোলন আরম্ভ হলে বিভিন্ন স্তরের লোকজনও একে যোগ দেয় এবং ভাষা সংগ্রাম রাজনৈতিক স্তরে উন্নীত হয়।

বঙ্গবন্ধুর স্ব-কথনেও ভাষাভিত্তিক সংগ্রামের চরিত্র ধরা পড়ে। পূর্ববাংলার অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক অধিকার আদায়ের আন্দোলনে এই সংগ্রামের অভিঘাত যে সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলবে তা বুঝতে তার অসুবিধা হয়নি। এ-ব্যাপারে তার আত্মজীবনীতে তিনি লিখেছেন :
২১শে ফেব্রুয়ারি আমরা উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা নিয়ে দিন কাটালাম, রাতে সিপাহীরা ডিউটিতে এসে খবর দিল, ঢাকায় ভীষণ গোলমাল হয়েছে, ছাত্র-ছাত্রীরা শোভাযাত্রা করে জেলগেটে এসেছিল। তারা বিভিন্ন সেøাগান দিচ্ছিল, ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’, ‘বাঙালিদের শোষণ করা চলবে না’, ‘শেখ মুজিবের মুক্তি চাই’, ‘রাজবন্দিদের মুক্তি চাই’, আরও অনেক সেøাগান।… রাতে যখন ঢাকার খবর পেলাম তখন ভীষণ চিন্তাযুক্ত হয়ে পড়লাম। কত লোক মারা গেছে বলা কষ্টকর। তবে অনেক লোক গুলি খেয়ে মারা গেছে শুনেছি।… মাতৃভাষা আন্দোলনে পৃথিবীতে এই প্রথম বাঙালিরাই রক্ত দিল। দুনিয়ার কোথাও ভাষা অন্দোলন করার জন্য গুলি করে হত্যা করা হয় নাই। জনাব নূরুল আমিন বুঝতে পারলেন না, আমলাতন্ত্র তাঁকে কোথায় নিয়ে গেল। গুলি হল মেডিকেল কলেজ হোস্টেলের এরিয়ার ভেতরে, রাস্তায়ও নয়। ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করলেও গুলি না করে গ্রেফতার করলেই তো চলত। আমি ভাবলাম, দেখব কি না জানি না, তবে রক্ত যখন আমাদের ছেলেরা দিয়েছে তখন বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা না করে আর উপায় নাই। মানুষের যখন পতন আসে তখন পদে পদে ভুল হতে থাকে। বাংলাদেশের মুসলিম লীগ নেতারা বুঝলেন না, কে বা কারা খাজা সাহেবকে উর্দুর কথা বলালেন, আর কেনই বা তিনি বললেন! তাঁরা তো জানতেন, উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার কথা বলে মিস্টার জিন্নাহর মত নেতাও বাধা না পেয়ে ফিরে যেতে পারেন নাই।

শেখ মুজিব বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনাকে জনমানসে রোপণ করার জন্য শুধু রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক দফাভিত্তিক আন্দোলনের ওপরই জোর দেননি, এই আন্দোলনকে টেনে নিয়ে গিয়ে বাঙালিদের জন্য স্বাধীন জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাকল্পে বাংলাভাষা ও সংস্কৃতিকেন্দ্রিক উদ্দীপনা সৃষ্টির প্রয়োজনীয়তার কথাও নানা সময়ে তার ভাষণ-বিবৃতিতে বলেছেন। তার ধর্মনিরপেক্ষ ভাবনা, ‘জাতিসত্তার স্বতন্ত্র মর্যাদা’ ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে নূহ-উল-আলম লেনিন লিখেছেন :
পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর জাতিগত নিপীড়ন, পূর্ব বাঙলার সম্পদ দোহন করে পশ্চিম পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উল্লম্ফন এবং দুই অঞ্চলের মধ্যে সৃষ্ট পর্বতপ্রমাণ বৈষম্য, সর্বোপরি গণতন্ত্রের অনুপস্থিতি পাকিস্তান সম্পর্কে বাঙালি মুসলমানের মোহমুক্তি ঘটাতে সাহায্য করে। পূর্ব বাংলার মানুষের মনে পাকিস্তানের কাঠামোর মধ্যে তাদের আর্থ-সামাজিক অধিকার ও উন্নয়ন, গণতন্ত্র, ভাষা-সংস্কৃতি ও জাতিসত্তার স্বতন্ত্র মর্যাদা এবং বিকাশের সম্ভাবনা সম্পর্কে সন্দেহ-সংশয় যত গভীরতর হতে থাকে, পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীও ততই জোরেসোরে ধর্মের ঢাক পেটাতে থাকে। প্রকৃতপক্ষে ধর্ম ছাড়া পূর্ব বাংলার সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের সঙ্গে পাকিস্তানের জনগোষ্ঠীর মেল-বন্ধনের আর কোনও অভিন্ন সূত্র ছিল না। কিন্তু পাকিস্তানি শাসকরা যত বেশি ধর্মের দোহাই দিতে থাকে, সাম্প্রদায়িক ভেদ-বুদ্ধি জাগিয়ে তুলে শেষ রক্ষা করতে চায়, ততই বাঙালির সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক আলগা হতে থাকে এবং পরিণতিতে সূত্রটি ছিঁড়ে যায়। বাঙালি মুসলমানের মধ্যবিত্তের মনে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র-চিন্তা ও অসাম্প্রদায়িক বাঙালি জাতীয়তাবোধ বেগবান হতে থাকে। নিপুণ কারিগরের মতো বঙ্গবন্ধু ধাপে ধাপে ধর্মাশ্রয়ী জাতি-চেতনায় আচ্ছন্ন এক পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠীকে হিন্দু-মুসলমানের সমন্বিত সেকুলার জাতি-চেতনায় উজ্জীবিত, সংহত এবং অগ্রসর করে দেন। ১৯৭১-এ বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয় এরই যৌক্তিক পরিণতি।

উপরিস্থ উদ্ধৃতিতে দেখা যায় পাকিস্তান সৃষ্টির পরপরই পশ্চিম পাকিস্তানিরা পূর্ববাংলার ওপর শোষণ চালায়, এই শোষণের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক নেতাসহ সর্বস্তরের জনগণ রুখে দাঁড়ায়। তখন সবাই ভাষাভিত্তিক জাতিসত্তার পক্ষ নেয়Ñ এ-সূত্রেই ‘জাতিসত্তার স্বতন্ত্র মর্যাদা’ দাবি করে। দুই প্রদেশের ধর্ম এক, এ-কথাকে সামনে এনে পূর্ব পাকিস্তানকে শাসন-শোষণ করার চেষ্টাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়।
শেখ মুজিবের চিন্তাকাঠামোতে যে দুটি বিষয় বড় হয়ে দেখা দিয়েছিল, তা হচ্ছে ‘ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র-চিন্তা’, ‘অসাম্প্রদায়িক বাঙালি জাতীয়তাবোধ’। সঠিকভাবেই তিনি অনুধাবন করেছিলেন যে, সমগ্র জাতিকে এ-চিন্তাসূত্রে একত্র করতে না-পারলে জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে না। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় এই একত্র করার কাজে বঙ্গবন্ধু জাতীয়তাবাদ, বাঙালি জাতীয়তাবাদÑ উভয় ধারণাকে ব্যবহার করেছিলেন। আমরা দেখেছি যে, পরবর্তীকালে চলচ্চিত্রসহ সংস্কৃতির নানা আঙ্গিকে বাঙালি জাতীয়তাবাদের প্রকাশ ঘটতে, বাঙালির স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার আকাক্সক্ষা প্রকাশিত হতে।

বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে ভাষা-আন্দোলনের উপস্থাপন
ভারত ভাগ হয়ে হয়েছে ১৯৪৭ সালে দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে। প্রধানত এই তত্ত্বই পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার ভিত্তি যুগিয়েছে, যদিও অন্যান্য অনেক কারণ এর পেছনে সক্রিয় ছিল। আমাদের রচনার মুখ্য পরিধির কারণে সে-আলোচনা থেকে বিরত থাকছি। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর আমরা দুটি রাজনৈতিক পর্ব বা পর্যায় পেয়েছি। একটি ১৯৪৭ থেকে ১৯৭০ পর্যন্ত যা পূর্ব পাকিস্তান পর্ব, অন্যটি ১৯৭১ থেকে এখনও চলমান যা বাংলাদেশ পর্ব। ভাষা-আন্দোলন সংঘটিত হয়েছিল পূর্ব পাকিস্তান পর্বে। প্রথম সশব্দ পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রও নির্মিত হয়েছিল ঐ পর্বেই। কিন্তু এই পর্বে জহির রায়হান পরিচালিত ‘জীবন থেকে নেয়া’ (১৯৭০) ছাড়া আর কোনো চলচ্চিত্রেই ভাষা-আন্দোলনের প্রতিফলন ঘটতে দেখা যায় না। এমনকি দ্বিতীয় পর্বেও শহীদুল ইসলাম খোকন পরিচালিত ‘বাঙলা’ (২০০৬) ও তৌকির আহমেদ নির্মিত ‘ফাগুন হাওয়ায়’ (২০১৯) ব্যতীত আর কোনো চলচ্চিত্র ঐ আন্দোলনকে কেন্দ্র করে নির্মিত হয়নি। অথচ এই আন্দোলনই বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনের আরম্ভরেখা!
তবে স্থিরচিত্র-কবিতা-গান-চিত্রকলা-গল্প-উপন্যাস-প্রবন্ধে ভাষা-আন্দোলন বিষয় হয়ে এসেছে দুই পর্বেই। এ-বিষয়টিরও বিস্তার ঘটানো থেকে বিরত থাকছি কারণ আমাদের রচনায় তা অন্বেষণের বিষয় নয়। তবে দুটি তথ্য দেওয়া দরকার যে, জহির রায়হান ‘একুশে ফেব্রুয়ারি’ বলে একটি চলচ্চিত্র ১৯৬৫ সালের দিকে তৈরি করার পরিকল্পনা করেছিলেন। এর চিত্রনাট্য তৈরি করেছিলেন চিত্রশিল্পী মুর্তজা বশীর। কিন্তু তৎকালীন ইস্ট পাকিস্তান ফিল্ম ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন (ইপিএফডিসি) চলচ্চিত্রিটি নির্মাণের অনুমতি দেয়নিÑ তখন ওখানে পা-ুলিপি জমা দিয়ে অনুমতিসাপেক্ষে চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে হতো। আমজাদ হোসেনও পূর্ব পাকিস্তান পর্বেই ‘শহীদ আসাদ’ শীর্ষক ভাষা-আন্দোলনভিত্তিক একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তৎকালীন পাকিস্তানি স্বৈর-সরকার তা তৈরির অনুমতি দেয়নি।
আমরা ইতোমধ্যে জেনেছি যে, পূর্ব বাংলায় ১৯৫৬ সালে প্রথম সশব্দ পূর্ণদৈর্ঘ্য বাংলা চলচ্চিত্র তৈরি করেন আবদুল জব্বার খাঁ। এদেশের আবহাওয়া চলচ্চিত্র নির্মাণের উপযুক্ত নয় বলে পশ্চিম পাকিস্তানিরা মনে করতেন। আসলে পশ্চিমা চলচ্চিত্র প্রযোজক-পরিবেশকরা তাদের বাজার হারানোর ভয়েই এসব কথা প্রচার করে। জব্বার সাহেব এ-কথা মানতে রাজি হননিÑ তাই তিনি চলচ্চিত্র নির্মাণ করে দেখিয়ে দিলেন যে, এদের কথা ভুল। সত্য হচ্ছে এই যে, এই অঞ্চলে ১৯২৭-২৮ সালে নিঃশব্দ স্বল্পদৈর্ঘ্যরে চলচ্চিত্র ‘সুকুমারী’ নির্মাণ করেছিলেন অম্বুজ প্রসন্ন গুপ্ত। একইজন ১৯৩১ সালে নির্মাণ করেন পূর্ণদৈর্ঘ্য কাহিনিচিত্র ‘দ্য লাস্ট কিস’। তৎকালীন মুকুল সিনেমাহলে এটি মুক্তিও পেয়েছিল। তাহলে ইতিহাসের খাতিরে আমাদের বলতেই হবে যে, আবদুল জব্বার খাঁ নন, পূর্ববাংলা বা পূর্ব পাকিস্তানÑ যাই বলি না কেন, এ-অঞ্চলের প্রথম চলচ্চিত্র নির্মাতা অম্বুজ প্রসন্ন গুপ্ত-ই। হতে পারে তাতে শব্দ ছিল না, তবু তিনিই প্রথম। উল্লেখ্য যে, চলচ্চিত্র মাধ্যমে শব্দ যুক্তই হয় ১৯২৭ সালে।
যাই হোক, ১৯৫৬ সালে সংস্কৃতিকর্মী হিসেবে (আবদুল জব্বার খাঁ নাটকের মানুষ ছিলেন, নাটক তো তখন সংস্কৃতির একটি বেগবান শাখাই ছিল) চলচ্চিত্র নির্মাণে এগিয়ে এসেছিলেন। এই এগিয়ে আমার পেছনে ১৯৫২ সালে সংঘটিত ভাষা-আন্দোলন থেকে উৎসারিত বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনা যে সক্রিয় ছিল তা সহজেই অনুমেয়। এই আন্দোলনের প্রতিক্রিয়াতে অনেক সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানেরও জন্ম হয়েছে। যেমন ‘ছায়ানট’ (১৯৬১), ‘পাকিস্তান চলচ্চিত্র সংসদ’ (১৯৬৩) প্রভৃতি।
অন্যান্য শিল্পাঙ্গিকে ভাষা-আন্দোলনের প্রতিফলন কিছুটা ঘটলেও চলচ্চিত্রশিল্পে কাক্সিক্ষতমাত্রায় ঘটেনি। মঞ্চ ও টেলিভিশন-নাটকে ভাষা-আন্দোলন বিষয় হিসেবে এসেছে বহুবার। তারপরও দেখা গেছে যে, স্বাধীনতার পূর্বে ও পরে বাঙালির ভাষা-আন্দোলনের প্রকাশ চলচ্চিত্রে স্বল্পমাত্রায় হলেও ঘটেছে। এ-প্রসঙ্গে চলচ্চিত্রশিল্প বিষয়ক গবেষক লিখেছেন :
চলচ্চিত্রে তুলনামূলকভাবে কমই প্রতিফলিত হয়েছে বাঙালির ‘স্বাধিকার’ চেতনা। তদুপরি, ১৯৫২-র ভাষা আন্দোলন, ১৯৬৬ সালে শেখ মুজিবুর রহমানের ৬-দফা, ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থান কয়েকটি চলচ্চিত্রে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে চিত্রায়িত হয়েছে। এই বিবেচনায়, খান আতাউর রহমান (১৯২৮-১৯৯৭) পরিচালিত ‘নবাব সিরাজউদ্দৌলা’ (১৯৬৭), জহির রায়হান (১৯৩৫-১৯৭২) পরিচালিত ‘জীবন থেকে নেয়া’ (১৯৭০), ফখরুল আলম পরিচালিত ‘জয় বাংলা’ (১৯৭২), আলমগীর কবির (১৯৩৮-১৯৮৯) পরিচালিত ‘রুপালী সৈকতে’ (১৯৭৯), নির্মলেন্দু গুণ-এর (জন্ম : ১৯৪৫) ‘হুলিয়া’ কবিতা আশ্রয়ে তানভীর মোকাম্মেল (জন্ম : ১৯৫৫) পরিচালিত ‘হুলিয়া’ (১৯৮৫), তারেক মাসুদ (১৯৫৬-২০১১) পরিচালিত ‘মাটির ময়না’ (২০০২), আহমদ ছফা-র (১৯৪৩-২০০১) ‘ওঙ্কার’ আশ্রয়ে শহীদুল ইসলাম খোকন (১৯৫৭-২০১৬) পরিচালিত ‘বাঙলা’ (২০০৬), টিটো রহমানের ‘বউ কথা কও’ গল্পের আশ্রয়ে তৌকির আহমেদ (জন্ম : ১৯৬৬) নির্মিত ‘ফাগুন হাওয়ায়’ (২০১৯) প্রভৃতি চলচ্চিত্রসমূহে বাঙালির ‘স্বাধিকার’ চেতনার প্রবাহধারায় বিবেচনা করা যায়।

উদ্ধৃত অংশের আলোকে বলা যায়, ‘নবাব সিরাজউদ্দৌলা’য় ভাষা-আন্দোলন সরাসরি না-এলেও ঐ আন্দোলনের ফলে জাগ্রত বাঙালি জাতীয়তাবাদ, স্বাধিকার চেতনা প্রভৃতি জায়গা করে নিয়েছে। স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে কথা বলেছে ‘জীবন থেকে নেয়া’Ñ এতে ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ গানটির চিত্রায়নও ঘটেছে। ‘বাঙলা’য় ব্যক্তিজীবনে ভাষা-আন্দোলনের প্রভাব ধরা হয়েছে। তবে ‘ফাগুন হাওয়ায়’ই এদেশে নির্মিত প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্যরে কাহিনিধর্মী চলচ্চিত্র যাতে এই আন্দোলনের প্রেক্ষিতটি বেশ ভালোভাবেই পাওয়া যায়। ভাষা-আন্দোলন নিয়ে কয়েকটি স্বল্পদৈর্ঘ্যরে প্রামাণ্যচিত্রও নির্মিত হয়েছে। এগুলোর মধ্যে রফিকউদ্দিন আহমেদ নির্মিত ‘হৃদয়ে একুশ’, শবনম ফেরদৌসী নির্মিত ‘ভাষা জয়িতা’ ও রোকেয়া প্রাচী-র ‘বায়ান্ন’র মিছিল’ অন্যতম।

উপসংহার
যে-উর্দু ভাষা পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকরা আমাদের ওপর চাপিয়ে দিতে চেয়েছিল তা কিন্তু পাকিস্তানের কোনো প্রদেশেরই ভাষা নয়। এটি উত্তর-ভারতের একটি ভাষা। তাই এটি স্বাভাবিক যে একে যখন সর্বপাকিস্তানীয় রাষ্ট্রভাষা করার কথা বলা হয় তখন বাঙালিরা এর বিরোধিতা করবেই। এই বিরোধিতাই বাঙালিদের নিজস্ব একটি পরিচয় দেয়, দেয় একটি জাতিরাষ্ট্র, যা এদের কখনই ছিল না। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এই ভাষার জন্য যে আন্দোলন হলো তা নিয়ে এত কম চলচ্চিত্র কেন তৈরি হলো? এই আন্দোলন করতে গিয়ে যারা শহিদ হলেন তাদের নিয়ে চলচ্চিত্র-করিয়েরা চলচ্চিত্র নির্মাণে উৎসাহী হলেন না কেন? না পূর্ণদৈর্ঘ্য, না স্বল্পদৈর্ঘ্য, না প্রামাণ্যচিত্রÑ কোনো ধরনের চলচ্চিত্রই বেশি মাত্রায় হয়নিÑ ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কো কর্তৃক ২১শে ফেব্রুয়ারিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে ঘোষণা দেওয়ার পরও?
আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে সকল ধরনের চলচ্চিত্রই নির্মিত হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে, সামনে রেখে যদি চলচ্চিত্র নির্মিত হতে পারে, তাহলে ভাষা-আন্দোলন নিয়ে কেন নয়! নতুর প্রজন্মের নির্মাতারা বিষয়টি ভেবে দেখবেন, আশা করি। সরকার থেকেও পূর্ণদৈর্ঘ্য, স্বল্পদৈর্ঘ্য ও প্রামাণ্যচিত্রÑ তিন ধরনের চলচ্চিত্রের জন্যই অনুদান দেওয়া হয়। আমরা তো তথ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে এই প্রস্তাব রাখতেই পারি যে, এবার থেকে ভাষা-আন্দোলনভিত্তিক তিন ধরনের চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য অন্তত একটি করে প্রস্তাবকে অনুদান যেন দেওয়া হয়। সংস্কৃতিবান্ধব বর্তমান সরকারের কাছে এটুকু প্রত্যাশা দূরাশা নয় নিশ্চয়।

আরও পড়ুন
spot_img

জনপ্রিয় সংবাদ

মন্তব্য