উত্তরণ প্রতিবেদন: বিজয়ের শোভাযাত্রার শুরু থাকলেও যেন শেষ নেই। একাত্তরের মতোই বিজয়ের আনন্দে মেতেছিল আওয়ামী লীগের লাখো নেতাকর্মী, সমর্থক ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে গত ১৮ ডিসেম্বর বিজয় শোভাযাত্রায় রাজধানীতে লাখো মানুষের অংশগ্রহণ ছিল সাম্প্রতিককালে একটি ব্যতিক্রম ঘটনা। ৫০ বছর আগে যে স্থানটিতে পাকহানাদাররা বাংলার দামাল ছেলেদের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিল, বিজয়ের ৫০ বছর পর সেই ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সামনে এক অন্যরকম বিজয়োৎসবে মেতে উঠেছিল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীসহ সর্বস্তরের মানুষ। বিজয় শোভাযাত্রায় তীব্র জনস্রোতে রীতিমতো জনসমুদ্রে রূপ নেয় পুরো এলাকা।
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রকে এবং দেশের উন্নয়নবিরোধী অগণতান্ত্রিক ও সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করার শপথ এসেছে আওয়ামী লীগের সুবিশাল ‘বিজয় শোভাযাত্রা’ থেকে। দলটির নীতি-নির্ধারক নেতারা একাত্তরের পরাজিত শত্রু, সাম্প্রদায়িক অপশক্তি এবং গণতন্ত্রের শত্রুদের রাজপথেই আবার পরাজিত করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উন্নত-সমৃদ্ধ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণের দৃঢ় শপথের কথা ব্যক্ত করেছেন। শুধু রাজধানীই নয়, একযোগে সারাদেশেই বিজয় শোভাযাত্রা করেছে আওয়ামী লীগ।
মহান বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে রাজধানীর ‘ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে ৩২ নম্বর ধানমন্ডি’Ñ দীর্ঘ প্রায় তিন কিলোমিটার পথে আওয়ামী লীগের বর্ণাঢ্য ও মনোলোভা বিজয় শোভাযাত্রায় নেমেছিল লাখো মানুষের ঢল। পুরো রাজধানীই যেন পরিণত হয়েছিল মিছিলের নগরীতে। বলা চলে বিজয়ের আলপনায় বর্ণিল সাজে গোটা রাজধানীই ছিল ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ সেøাগানে মুখরিত। বিজয় মিছিলপূর্ব বিশাল সমাবেশ থেকে ঐক্যবদ্ধভাবে রাজপথে থেকেই জঙ্গি-সাম্প্রদায়িক অপশক্তির সকল ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণের ঘোষণা দেন দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা।
দূর-দূরান্ত থেকে ‘জয় বাংলা’ সেøাগান তুলে বাস-ট্রাকে চড়ে মিছিলে এসেছে বিজয়-আনন্দে উচ্ছল মানুষ। কোনো ট্রাকে আবার বানানো হয়েছে বিজয় মঞ্চ। আবার মিছিলে অনেকে সঙ্গে নিয়ে এসেছে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতীক বিশাল বিশাল আসল নৌকা, হাতি-ঘোড়া, বাদ্য-বাজনার তালে তালে নেচে-গেয়ে হাজার হাজার মিছিলের স্রোত মিলেছিল ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সামনে। মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যবহৃত অসংখ্য কাগজের কামান, ট্যাংক, যুদ্ধাস্ত্র হাতে নিয়েও শামিল হয়েছিল বিজয় শোভাযাত্রায়। মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে পাকিস্তানি হানাদার ও রাজাকারদের আত্মসমর্পণের ডামি দৃশ্যও ফুটিয়ে তোলা হয়েছে শোভাযাত্রায়। রাজাকার-স্বাধীনতাবিরোধী মুক্ত সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয়ের এ বিজয় মিছিল শেষ হওয়ার কথা ধানমন্ডির বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে। যখন সেখানে পৌঁছে মিছিলের অগ্রভাগ, তখনও শাহবাগ থেকে বের হতে পারেনি মিছিলের অন্যপ্রান্ত, হাজারও মুখ। মাঝখানে মিছিলের ব্যাপ্তি ছিল তাবৎ রাজধানী ঢাকাজুড়েই।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সামনে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের মোড়ে দুটি ট্রাকে অস্থায়ী মঞ্চ বানিয়ে শুরু হয় বিজয় শোভাযাত্রাপূর্ব সমাবেশ। রাস্তায় তীব্র জনস্রোতের সামনে দাঁড়িয়ে বিজয় শোভাযাত্রার উদ্বোধনকালে বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু এমপি সকল গণতন্ত্রের লেবাসধারী অগণতান্ত্রিক ও সাম্প্রদায়িক শক্তিকে পরাজিত করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করার আহ্বান জানান।
বঙ্গবন্ধুর মতো মৃত্যুভয়কে উপেক্ষা করে তার কন্যা শেখ হাসিনা জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের এই প্রবীণ নেতা বলেন, বঙ্গবন্ধুর মতোই মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে তিনি দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। ১৯ বার মৃত্যু পথযাত্রী শেখ হাসিনা জীবিত আছেন বলেই বঙ্গবন্ধুর সেই অসমাপ্ত কাজ পূরণ করে বাঙালি জাতিকে পৃথিবীর বুকে একটি মর্যাদাশীল জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তিনি বলেন, ষড়যন্ত্র থেমে নেই, এখনও ষড়যন্ত্র চলছে। এখনও সাম্প্রদায়িকতা সৃষ্টির মাধ্যমে বাঙালির ঐক্যে ফাটল ধরানোর চেষ্টা করা হচ্ছে, গণতন্ত্রের নামে অগণতান্ত্রিক শক্তি গণতন্ত্রকে নস্যাৎ করার চেষ্টা করছে। আজকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সকল ষড়যন্ত্রকে পদদলিত করে যেমন করে বঙ্গবন্ধু-কন্যা পদ্মাসেতুসহ এদেশের উন্নয়ন পরিকল্পনা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, সেভাবে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই গড়ে উঠবে। প্রবীণ নেতা আমির হোসেন আমু এমপির সভাপতিত্বে বিজয় শোভযাত্রাপূর্ব সমাবেশে আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।