বাংলাদেশকে আবার খাবলে খায় অগ্নিসন্ত্রাস এবং জ্বালাও-পোড়াও। দেশি-বিদেশি চক্রান্তের মহাবাধা ও ভয়ভীতিও থাকছে। এসব সরিয়ে; বিপত্তি পায়ে দলে অতীতে এগিয়ে যেতে হয়েছে; যেতে হচ্ছে।
আরিফ সোহেল: বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল। এটা সম্ভব হয়েছে আমরা ক্ষমতায় আছি বলে, সরকারের ধারাবাহিকতা রয়েছে বলে। বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের মহাসড়কে। এদেশের মানুষ যেন উন্নত জীবন নিয়ে বাঁচতে পারে। আমরা বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাব। এদেশের অপ্রতিরোধ্য অগ্রগতি আর কেউ থামাতে পারবে না।’ – শেখ হাসিনা
নিরবচ্ছিন্নভাবে এগিয়ে চলছে বাংলাদেশ। বেড়েছে মানুষের আয়-রোজগার। মান বেড়েছে জীবনযাত্রার। বেড়েছে গড় আয়ু। কমেছে শিশুমৃত্যু, মাতৃমৃত্যু এবং অপমৃত্যু। শিক্ষার হার, প্রযুক্তির ব্যবহার সবটাই বেড়েছে। যোগাযোগব্যবস্থা হয়েছে ঈর্ষণীয়ভাবে উন্নত। থরেথরে মেগাপ্রকল্পগুলো হাসছে। বিদ্যুৎ আজ ঘরে ঘরে। সাধারণ মানুষের মনে স্বপ্রতিভ হচ্ছে আশা। দুই চোখে জ্বলজ্বল করছে প্রত্যাশিত স্বপ্ন। বাংলাদেশের সেই স্বপ্ন-আশার সঞ্চার করেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। যাকে ঘিরে বাংলাদেশ ছুটছে উল্কাবেগে।
বাংলাদেশকে আবার খাবলে খায় অগ্নিসন্ত্রাস এবং জ্বালাও-পোড়াও। দেশি-বিদেশি চক্রান্তের মহাবাধা ও ভয়ভীতিও থাকছে। এসব সরিয়ে; বিপত্তি পায়ে দলে অতীতে এগিয়ে যেতে হয়েছে; যেতে হচ্ছে। তবে কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা বিদেশপ্রভূদের চোখ রাঙানিতে বাংলাদেশ থমকে দাঁড়ায়নি। বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়া থেমে থাকেনি। বরং উল্টো স্রোতে জীবনবাজি রেখে জননেত্রী শেখ হাসিনা ছুটে চলেছেন নিজ গন্তব্যাভিমুখে। তার সাহসী এবং ইস্পাতদৃঢ় পদক্ষেপ, সুচিন্তিত দিক-নির্দেশনায় বাংলাদেশ এখন সমৃদ্ধ উন্নত দেশ হিসেবে বিশ্বে রোল মডেল। অব্যাহত উন্নয়ন ধারার রথে চড়ে স্মার্ট সম্মুজ্জ্বল বাংলাদেশ ছুটে চলছে আপন মহিমায়। এগিয়ে চলছে দুরন্ত দুর্বার গতিতে। দেশ রূপান্তরে অভিযাত্রায় একের পর এক মেগাপ্রকল্প নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করে দিচ্ছে। দেশের ভিত আরও টেকসই মজবুত করছে। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর হাত ছুঁয়ে উন্নয়নের পালকে নতুন করে সুশোভিত হয়েছে শাহজালাল বিমানবন্দর তৃতীয় টার্মিনাল, গৌরবের পদ্মা সেতুতে রেলপথের উদ্বোধন, চট্টগ্রামে কর্ণফুলি নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু টানেল, উত্তরা-মতিঝিল মেট্রোরেল, আখাউড়া-আগরতলার ও মোংলা-খুলনা রেলপথ এবং মৈত্রী থার্মাল পাওয়ার প্লান্ট-২। বাহ; কী দারুণ খবর- এক মাসের মধ্যে এতগুলো প্রকল্পের পরিষেবা পৌঁছে যাচ্ছে সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায়।
উত্তরা-মতিঝিল মেট্রোরেল : খুলে গেল কাক্সিক্ষত স্বপ্নদুয়ার
নগরবাসীর জীবনে খুলে গেল প্রার্থিত এবং বহুল কাক্সিক্ষত স্বপ্নদুয়ার। এবার মতিঝিলে এসে গেল মেট্রোরেল। মুঠোবন্দি হয়ে গেল পুরো শহর। জট নেই। ধোঁয়া নেই। শব্দ নেই। বাদুরঝোলা করে গাড়িতে ওঠা নেই। এখন নিমিষেই একজন কর্মজীবী উত্তরা থেকে মতিঝিলে আসতে পারবেন। পারবেন নানা অঞ্চল থেকে। উত্তরা থেকে মতিঝিল- মেট্রোতে সময় লাগবে মাত্র আধাঘণ্টা। প্রতিদিন সকালে নতুন সূর্য ওঠার সাথে সাথে এভাবে মেট্রোরেলে চড়ে লাখ লাখ চাকরিজীবী নির্বিঘ্নে পৌঁছে যেতে পারবেন নিজ কর্মস্থলে। মতিঝিল-উত্তরাকে একসুতোয় বাঁধার আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেছেন জনবান্ধব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এতদিন কত বাধা, কত বিপদ, কষ্ট পেরিয়ে, বাসে-ট্রেনে-গাড়িতে চড়ে; গাদাগাদি করে যানজটের অমানবিক যাতনা সহ্য করে অফিসে আসা-যাওয়া করতে হয়েছে। গত ৫ নভেম্বর থেকে অনেকের মিটে যাচ্ছে সেই কষ্ট আর দুর্ভোগ। অকাজে লাগাতারভাবে নষ্ট হবে না কর্মঘণ্টা। কর্মজীবী মানুষের স্বপ্ন দেখানো পথিকৃৎ শেখ হাসিনা তাদের কষ্ট লাঘব করলেন। উন্নয়ন-অগ্রগতি সমৃদ্ধ বাংলাদেশকে সাজাতে আরেকটি প্রতিশ্রুতির সফল বাস্তবায়ন করল শেখ হাসিনার সরকার।
৪ নভেম্বর স্নিগ্ধ রোদ ঝলমলে বিকালে আনন্দময় দিনে রাজধানীবাসীর বহুল কাক্সিক্ষত আগারগাঁও-মতিঝিল মেট্রোরেল উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মেট্রোরেলের পরিষেবার দ্বিতীয় পর্যায়ে উত্তরার সঙ্গে মেলবন্ধনে সংযুক্ত হলো শহরের ব্যস্ততম এলাকা মতিঝিল। প্রধানমন্ত্রী আগারগাঁও স্টেশনে সবুজ পতাকা নেড়ে মতিঝিল স্টেশন অভিমুখে মেট্রোরেল চলাচলের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেন। লাল-সবুজ সেই পতাকাতে স্বাক্ষর করেছেন স্মারক হিসেবে। পরে ফিতা কেটে ট্রেনে উঠে দুপুর ২টা ৪০ মিনিটে মতিঝিলের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন।
উদ্বোধনী যাত্রায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার অনুভূতি ব্যক্ত করে বলেন, ‘সরকার মেট্রোরেল চালুর এই উদ্যোগ নিয়েছে যাতে সবাই সহজে যাতায়াত করতে পারে, কাজের সময় বাঁচাতে পারে। যানজট থেকে মুক্তি পেতে পারে এবং অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হতে পারে। আজ উত্তরা এবং মতিঝিলের মধ্যে মেট্রোরেল চলাচলের সূচনা হওয়ায় আমরা খুবই আনন্দিত। আমরা এটি কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত প্রসারিত করব।’
প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী ট্রেনটি মতিঝিল স্টেশনে পৌঁছায় বেলা ৩.০৬ মিনিটে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আগারগাঁও স্টেশনে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান। প্রধানমন্ত্রী আগারগাঁও স্টেশনে ভেন্ডিং মেশিন থেকে টিকিট সংগ্রহ করেন। মতিঝিল স্টেশনে, তিনি এমআরটি লাইন-৫ (উত্তর রুট) নির্মাণ কাজেরও উদ্বোধন করেন, যা হেমায়েতপুর থেকে ভাটারা হয়ে গাবতলী, মিরপুর-১০, গুলশান পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার লাইন হবে। ৪১,২৩৯ কোটি টাকা ব্যয় হবে এই প্রকল্পে। সময়সীমা ২০২৮ সাল। পাশাপাশি তিনি আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল সার্ভিস এবং এমআরটি লাইন-৫ (উত্তর রুট) নির্মাণ কাজের দুটি নামফলক উন্মোচন করেন। এমআরটি লাইন-৫ (উত্তর রুট) হলো ৬টি পরিকল্পিত মেট্রোলাইনের তৃতীয়, সরকার যানজট ও দূষণ কমাতে ঢাকা ও এর সংলগ্ন এলাকায় ১৪০ কিলোমিটার নেটওয়ার্ক স্থাপন করতে যাচ্ছে।
আগারগাঁও-মতিঝিল অংশে ৩টি স্টেশনে মেট্রোরেল থামবে। আগারগাঁও থেকে মতিঝিল সেকশনের দৈর্ঘ্য ৮.৭২ কিলোমিটার। ফার্মগেট-সচিবালয়-মতিঝিল স্টেশনে মেট্রোরেল থামবে। উত্তরা-মতিঝিল রুটে ৫ নভেম্বর থেকে প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৭টা থেকে সকাল সাড়ে ১১টা পর্যন্ত মেট্রো চলাচল করছে। সকাল সাড়ে ১১টার পর মতিঝিল-আগারগাঁও রুটে মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ থাকবে এবং উত্তরা-আগারগাঁও সেকশনে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত চলবে। জনগণের সুবিধার কথা বিবেচনা করে মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ১.১৬ কিলোমিটার পথ বাড়ানো হয়েছে। বর্ধিত অংশ ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে শেষ হবে। মেট্রোরেল প্রতি ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী এবং প্রতিদিন ৫ লাখ যাত্রী বহন করতে সক্ষম হবে। প্রতি ৪ মিনিটে প্রতিটি স্টেশনে একটি ট্রেন আসবে।
৪ নভেম্বর বিকাল ৪টার দিকে মেট্রোরেলের মতিঝিল-আগারগাঁও অংশের উদ্বোধনকালে আরামবাগে আয়োজিত জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল উদ্বোধন করলাম। এ মেট্রোরেল ঢাকাবাসীর জন্য উপহার। তবে মেট্রোরেল ব্যবহারে আমাদের যত্নবান হতে হবে, যাতে এটির ক্ষতি না হয়। ঢাকার মানুষের জন্য আমরা মেট্রোরেল নিয়ে এসেছি। যারা উত্তরায় বসবাস করেন তারা মাত্র ৪০ মিনিটে প্রতিদিন উত্তরা থেকে মতিঝিল আসা-যাওয়া করতে পারবেন। ইতোমধ্যে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত প্রতিদিন গড়ে ২৫ হাজার যাত্রী চলাচল করছেন। আমি মতিঝিল থেকে কমলাপুর রেলস্টেশন পর্যন্ত এ মেট্রোরেল বর্ধিত করেছি। সেটার কাজও চলছে।’
তিনি বলেন, ‘সাভারের হেমায়েতপুর থেকে ভাটারা পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ পাতালরেল হবে। আকাশরেল দেখলাম, এখন পাতালরেল আমরা করব। সেটা নিয়েও আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এমআরটি লাইন ফাইভ, অর্থাৎ পাতালরেলের কাজ উদ্বোধন করে দিয়েছি। এটাও ঢাকাবাসীর জন্য উপহার আমি দিয়ে গেলাম। এমআরটি লাইন-৬ উত্তরা থেকে টঙ্গী পর্যন্ত বর্ধিত করা হবে। এটার সমীক্ষা চলছে। মেট্রোরেল নির্মাণের জন্য ১২ হাজার প্রকৌশলীর চাকরির ব্যবস্থা হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সোনার বাংলাদেশ আমি গড়তে চাই। এ ঢাকার মানুষের জন্য আজকে আমরা নিয়ে এসেছি মেট্রোরেল। যানজটে কষ্ট পেতে হবে না, রাস্তায় আটকে থাকতে হবে না। যারা চাকরিজীবী, যারা কর্মজীবী, ছাত্র-শিক্ষক সকলে; বিশেষ করে আমার মেয়েরা, নারীরা, নিরাপদে চলাচল করতে পারবে এই মেট্রোরেলে।’
প্রধানমন্ত্রীর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে উত্তরা-আগারগাঁও পর্যন্ত যে স্বপ্নের যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০২২ সালের ২৮ ডিসেম্বর; ১০ মাস সাত দিনের মাথায় তা পূর্ণতা পেয়েছে। মেট্রোরেল স্পর্শ করল মতিঝিল। উদ্বোধনের একদিন পর থেকেই শুরু হয়েছে উত্তরা-মতিঝিল মেট্রোরেলের বাণিজ্যিক যাত্রা। আগারগাঁও থেকে মতিঝিলে মোট ১৬টি স্টেশন থাকছে। আপাতত তিন স্টেশনে মেট্রো থামবে। উত্তরা থেকে ফার্মগেট ভাড়া ৭০ টাকা, সচিবালয় ৯০ টাকা আর মতিঝিল পর্যন্ত ভাড়া ১০০ টাকা। পরবর্তীতে বিজয় সরণি, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশন খুলে দেওয়া হবে।
ঢাকায় যানজট নিয়ন্ত্রণে বিশ্ব ব্যাংকের সহযোগিতায় ২০০৫ সালে কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা (এসটিপি) প্রণয়ন করে বাংলাদেশ সরকার। ২০ বছর মেয়াদি (২০০৪-২০২৪) ওই পরিকল্পনায় মেট্রোরেল, বাসভিত্তিক উন্নত গণপরিবহন ব্যবস্থা-বিআরটিসহ নানা প্রকল্প বাস্তবায়নের পরামর্শ আসে। তারই ধারাবাহিকতায় মেট্রোরেল চালু হয়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে রাজধানীতে আরও ৫টি লাইন চালু করার আশা সরকারের। জাইকার কাছ থেকে কারিগরি ও অর্থায়নের প্রাথমিক প্রতিশ্রুতির পর ২০১১ সালে ‘ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) লাইন-৬ নির্মাণ প্রকল্প’ গ্রহণ করে সরকার। পরের বছর একনেক সভায় প্রকল্পটির চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ২৬ জুন প্রধানমন্ত্রী এ প্রকল্পের নির্মাণকাজ উদ্বোধন করেছিলেন। আর এই প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন ৩১ অক্টোবর ২০১৩।
উত্তরা-কমলাপুর এই প্রকল্পের মোট ব্যয় হবে ৩৩ হাজার ৪৭১ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে জাইকা সহায়তা দিচ্ছে ১৯ হাজার ৭১৮ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। প্রকল্পের বাকি ১৩ হাজার ৭৫৩ কোটি ৫২ লাখ টাকা সরকার প্রদান করবে। সংশোধনী প্রস্তাব অনুযায়ী মতিঝিল থেকে কমলাপুর রেলস্টেশন পর্যন্ত আরও ১ দশমিক ১৬ কিলোমিটার মেট্রোরেল বাড়ানো হয়েছে। ফলে প্রকল্প মেয়াদ ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
আরেকটি স্বপ্ন পূরণ : পদ্মা রেলসেতু চালু
প্রমত্তা নদীর বুকে পদ্মা সেতু নির্মাণ করতে গিয়ে বাংলাদেশকে বন্ধুর পথ পাড়ি দিতে হয়েছে। প্রতিবন্ধকতা সরিয়ে ২০২২ সালের ২৫ জুন নিজেদের অর্থায়নে নির্মিত পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করেন স্বপ্নদ্রষ্টা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরদিন সবার জন্য খুলে দেওয়া হয় দক্ষিণের এ দুয়ার। সেই দ্বিতল সেতুর নিচতলা দিয়ে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমে যশোর পর্যন্ত নির্মিত হয়েছে রেলপথ। ১০ অক্টোবর ঢাকা থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত ৮২ কিলোমিটারের রেলপথ উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিন সপ্তাহ পর শুরু হয়েছে বাণিজ্যিকভাবে ট্রেন চলাচল। আগামী বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে ভাঙ্গা থেকে যশোর পর্যন্ত আরও ৮৭ কিলোমিটার রেলপথ চালু হবে।
২০১৬ সালের ৩ মে একনেক সভায় পদ্মা সেতুর ওপর রেললাইন স্থাপনে ৩৪ হাজার ৯৮৯ কোটি টাকায় প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। ২০১৮ সালের এপ্রিলে বাংলাদেশ সরকারের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) চীনের এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে ২৬৭ কোটি ডলার বা ২১ হাজার ৩৬ কোটি টাকার ঋণচুক্তি করে। ২২ মে একনেকে প্রকল্পটির ব্যয় ৪ হাজার ২৫৭ কোটি টাকা বাড়িয়ে প্রায় ৩৯ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা করা হয়। কোভিড মহামারিতে কাজের অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হওয়ায় সময়সীমা নির্ধারণ করা হয় ২০২৪ সাল পর্যন্ত।
পদ্মা সেতুর কল্যাণে বাসযোগে দক্ষিণের পথে চলার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে সোয়া এক বছর আগেই। সেই পথে এবার ট্রেনযোগে বাড়ি ফেরার স্বপ্নও পূরণ হলো পদ্মাপাড় ও দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের। খুলনা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা চলাচল করছে আন্তঃনগর খুলনা এক্সপ্রেস ট্রেন। যাত্রী নিয়ে ফের পদ্মা সেতু হয়ে দক্ষিণের পথে চলে গেছে ট্রেনটি। প্রমত্তা পদ্মার ওপর দিয়ে বাসে-ট্রেনে সাঁইসাঁই করে আসা-যাওয়া করছে মানুষ। ব্যবসা-বাণিজ্যে খুলেছে সম্ভাবনার নতুন দুয়ার। অবসান হয়েছে ফেরি পারাপারের দীর্ঘ যুগের ভোগান্তি; জীবনযাত্রা আর অর্থনীতিতেও এসেছে প্রাণ-চাঞ্চল্যের গতি।
ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেন খুলনায় পৌঁছতে সময় লাগবে কম-বেশি ৮ ঘণ্টা। বাংলাদেশ রেলওয়ে পদ্মা সেতুরেল সংযোগ প্রকল্পের আওতায় ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটার দীর্ঘ নতুন রেল ট্র্যাক নির্মাণ করা হচ্ছে। এর ৮২ কিলোমিটার অংশ খুলে দেওয়া হয়েছে। যশোরকে সংযোগকারী অবশিষ্ট অংশটি আগামী বছরের জুনে চালু হওয়ার সম্ভাবনা আছে। প্রকল্প সমাপ্ত হওয়ার পর দেশের মধ্য ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সাথে রাজধানী শহরের প্রবেশপথ আরও বর্ধিত হবে, যা মুন্সিগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর এবং নড়াইল জেলার নতুন এলাকাকে যুক্ত করবে।
পদ্মা সেতু হয়ে দেশের দক্ষিণের পথে রেলপথ চালু হতে যাচ্ছে। নতুন রেলপথটি ঢাকার গেণ্ডারিয়া, কেরানীগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ থেকে পদ্মা সেতু হয়ে মাদারীপুর-ফরিদপুর গেছে। আগামী বছর এই রেলপথের বাকি অংশ ভাঙ্গা থেকে যশোর পর্যন্ত চালুর লক্ষ্য রয়েছে সরকারের। তিন অংশে ভাগ করে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। প্রথম অংশ ঢাকা-মাওয়ার দৈর্ঘ্য প্রায় ৩৮ কিলোমিটার। এই অংশে কেরানীগঞ্জে একটি নতুন স্টেশন তৈরি হয়েছে। মাওয়া-ভাঙ্গা অংশের দৈর্ঘ্য প্রায় ৩৩ কিলোমিটার। এই অংশে নতুন স্টেশন ভবন রয়েছে ৫টি। প্রকল্পের শেষ অংশ ভাঙ্গা থেকে যশোর। এই অংশের দৈর্ঘ্য প্রায় ৮৩ কিলোমিটার। স্টেশনের সংখ্যা ১৪। প্রকল্পের মেয়াদ অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত পুরো রেলপথটি চালুর লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।
পদ্মা সেতুতে রেলপথের উদ্বোধনের পর প্রধানমন্ত্রী মাওয়া স্টেশন থেকে একটি বিশেষ ট্রেনে ফরিদপুরের ভাঙ্গা স্টেশনে যান। এর আগে তিনি সকাল ১০টা ১০ মিনিটে সড়ক পথে গণভবন থেকে মাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে ১০টা ৫৮ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী মাওয়া পৌঁছান। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন ছোট বোন শেখ রেহানা। উদ্বোধনের আনুষ্ঠানিকতা শেষে প্রধানমন্ত্রী দুপুর পৌনে ১টায় বিশেষ ট্রেনে মাওয়া থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা স্টেশনে পৌঁছান।
বঙ্গবন্ধু টানেল : কর্ণফুলী নদীর তলদেশে গাড়িপথ
বন্দরনগরী চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত হয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল’। গত ২৮ অক্টোবর ফলক উন্মোচন করে এই টানেলের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর পতেঙ্গা প্রান্ত থেকে ১১টা ৫০ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী গাড়িবহর নিয়ে টানেলে প্রবেশ করেন। মাত্র ১০ মিনিটে দুপুর ১২টায় টানেলের অপরপ্রান্ত আনোয়ারায় পৌঁছান এবং টোল পরিশোধ করেন। এ সময় তিনি টোল প্লাজা কমপ্লেক্স ও টানেলের স্মার্ট মনিটরিং রুম পরিদর্শন করেন।
টানেল উদ্বোধনকে ঘিরে দুই প্রান্তের সাধারণ মানুষের মধ্যে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করেছে। পরে কর্ণফুলী উপজেলার কেইপিজেড মাঠে গিয়ে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় বক্তব্য রেখেছেন। অনুষ্ঠানে আরও ছিলেন জাতীয় সংসদের উপনেতা মতিয়া চৌধুরী এমপি, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোশাররফ হোসেন, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি, তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ এমপি ও ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী এমপি প্রমুখ।
বঙ্গবন্ধু টানেলটি কক্সবাজারের সঙ্গে সারাদেশের যোগাযোগকে সহজতর করেছে। চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের দূরত্ব কমিয়েছে প্রায় ৪০ কিলোমিটার। টানেল দিয়ে পণ্যবাহী যানবাহনসহ অন্যান্য যানবাহন চলাচল করবে। তবে মোটরসাইকেল, বাইসাইকেলসহ দুই চাকা ও তিন চাকার যানবাহন চলতে দেওয়া হবে না। ইতোমধ্যে যানবাহনে টোল নির্ধারণ করা হয়েছে। টানেল পারাপারে সর্বনিম্ন টোল ২০০ টাকা। ধারণা করা হচ্ছে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল দিয়ে প্রতিদিন কম-বেশি ১৭ হাজার যানবাহন চলাচল করবে।
টানেলের সংযোগ সড়কসহ মোট দৈর্ঘ্য ৯ দশমিক ৩৯ কিলোমিটার। প্রধান টানেলের দৈর্ঘ্য ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার। এছাড়া সংযোগ সড়ক ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার লম্বা। আনোয়ারা প্রান্তে থাকা একমাত্র ভায়াডাক্ট বা ওভারপাস ৭২৭ মিটার দীর্ঘ। টানেলের ভেতরে থাকা দুটি টিউব বা সুড়ঙ্গের প্রতিটির দৈর্ঘ্য ২ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার। প্রতিটি টিউবে দুটি করে মোট ৪টি লেন রয়েছে। ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারিতে বঙ্গবন্ধু টানেলের নির্মাণকাজের উদ্বোধন করা হয়। প্রকল্পের সর্বশেষ ব্যয় ১০ হাজার ৩৭৪.৪২ কোটি টাকা। এর মধ্যে চীনের এক্সিম ব্যাংক ২ শতাংশ সুদে ৫ হাজার ৯১৩.১৯ কোটি টাকা দিচ্ছে। বাকি টাকা দিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার।
শুধু বাংলাদেশেই নয়; দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম টানেল নির্মিত হয়েছে বাংলাদেশ। আগামী পাঁচ বছরের জন্য টানেলের রক্ষণাবেক্ষণ ও টোল আদায়ের দায়িত্ব পেয়েছে প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না কমিউনিকেশন কনস্ট্রাকশন কোম্পানি (সিসিসিসি) লিমিটেড। এ-জন্য এ প্রতিষ্ঠানকে দিতে হবে ৯৮৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৩০০ কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে ৪টি স্ক্যানার কেনা ও স্থাপনের কাজে।
২০০৮ সালের ডিসেম্বরে চট্টগ্রামে এক নির্বাচনী জনসভায় কর্ণফুলী নদীর নিচে টানেল নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর টানেল নির্মাণে উদ্যোগ নেওয়া হয়। ২০১৫ সালের জুনে চীনের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে প্রকল্প বাস্তবায়নে চুক্তি হয়। আনুষ্ঠানিকভাবে নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি। ওইদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানেলের উত্তর টিউবের পতেঙ্গা থেকে আনোয়ারামুখী অংশের খননকাজ উদ্বোধন করেন। দ্বিতীয় টিউবের আনোয়ারা থেকে পতেঙ্গামুখী খননকাজ শুরু হয় ২০২০ সালের ১২ ডিসেম্বর। উদ্বোধন করেছিলেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। প্রায় ৯ বছর লেগেছে সম্পূর্ণ টানেলের নির্মাণকাজ শেষ হতে। এই টানেল আওয়ামী লীগ সরকারের সাফল্যের মুকুটে যোগ করেছে আরেকটি পালক। একসময় যে স্বপ্ন মনে হতো অসম্ভব, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে সেই বঙ্গবন্ধু টানেলই আজ বাস্তব। কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণের জন্য ২০১৪ সালের ১০ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে বেইজিংয়ে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছিল।
নয়নাভিরাম তৃতীয় টার্মিনাল
দৃষ্টিনন্দন ঢাকা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, আমি প্রত্যাশা করছি ঢাকা ও কক্সবাজারের দুটি বিমানবন্দরের মাধ্যমে বাংলাদেশ ভবিষ্যতে এ অঞ্চলের এভিয়েশন হাবে পরিণত হবে। ৭ অক্টোবর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের আংশিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনের পর থেকেই টার্মিনাল ব্যবহার করে বিমান চলাচল শুরু করেছে। তবে পুরোপুরি ব্যবহার সম্ভব হবে আগামী বছরের শেষদিকে। জাপানের আর্থিক সহযোগিতায় নির্মিত এই টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিংয়ের কাজও জাপানকে দেওয়া হয়েছে।
প্রখ্যাত স্থপতি রোহানি বাহারিনের নকশায় বিমানবন্দরের নতুন এই টার্মিনালের নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিল ২০১৯ সালের ২৮ ডিসেম্বর। করোনার সময়েও এ প্রকল্পের কাজ চলমান রাখা হয়েছিল। ২১ হাজার ৩৯৯ কোটি টাকায় জাপানের মিৎসুবিশি, ফুজিটা ও দক্ষিণ কোরিয়ার স্যামসাং যৌথভাবে টার্মিনালের নির্মাণকাজ করেছে। জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) ১৬ হাজার ১৪১ কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে এবং বাকি ৫ হাজার ২৫৭ কোটি টাকা বাংলাদেশ সরকার দিচ্ছে। এ টার্মিনালকে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ও মেট্রোরেলের একটি রুটের সাথে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। আধুনিক প্রযুক্তির রাডারসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় আকাশ নিরাপত্তা ব্যবস্থা সংযোজন করা হয়েছে। টানেলের মাধ্যমে এই টার্মিনাল থেকে সরাসরি হজ ক্যাম্প ও বিমানবন্দর রেলস্টেশনের সাথে যাতায়াতের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
পুরোপুরি চালু হলে টার্মিনালে যাত্রী সক্ষমতা হবে ১ কোটি ৬০ লাখ। এখন যে দুটি টার্মিনালে আছে তার সক্ষমতা আছে ৮০ লাখ যাত্রী। টার্মিনালটির ফ্লোর আয়তন ২ লাখ ৩০ হাজার বর্গমিটার। তৃতীয় টার্মিনালে মোট বোর্ডিং ব্রিজ থাকবে ২৬টি, যেখানে আগের দুটি টার্মিনালে মোট ব্রিজ ছিল ৮টি। একই সাথে নতুন টার্মিনালে মোট ৩৭টি উড়োজাহাজ পার্কিং করা যাবে। আগের দুটিতে রাখা যেত ২৯টি উড়োজাহাজ। টার্মিনালে মোট চেক ইন কাউন্টার ছিল ৬২টি আর ইমিগ্রেশন কাউন্টার ছিল ১০৭টি। তৃতীয় টার্মিনালে যুক্ত হয়েছে ১১৫টি চেক ইন কাউন্টার আর ১২৮টি ইমিগ্রেশন কাউন্টার। এয়ারলাইন্স লাউঞ্জ, ডে-রুম, মুভি লাউঞ্জ, শিশুদের জন্য প্লে-জোন এবং ফুড কোর্ট সংযোজন করা হয়েছে তৃতীয় টার্মিনালে। নতুন টার্মিনালে একসাথে ১ হাজার ২৩০টি গাড়ি পার্ক করা যাবে। আংশিক উদ্বোধনের পর তৃতীয় টার্মিনালের নতুন পার্কিং অ্যাপ্রোন ও ট্যাক্সিওয়ে ব্যবহার করতে পারছে এয়ারলাইন্সগুলো। পুরাতন দুটি টার্মিনালের অ্যাপ্রোনে বর্তমানে ২৯টি উড়োজাহাজ থাকতে পারে। দুটি এক্সিট ট্যাক্সিওয়ে রয়েছে, যাতে কোনো উড়োজাহাজ অবতরণের পর দ্রুত রানওয়ে ছেড়ে যেতে পারে এবং এটি উড্ডয়ন বা অবতরণের জন্য অন্যান্য উড়োজাহাজ ব্যবহার করতে পারে।
আখাউড়া-আগরতলা রেলপথে নতুন যুগের সূচনা
ডিজিটালি পাশাপাশি স্ক্রিনে বসেছিলেন দুদেশের প্রধানমন্ত্রী। তাদের একজন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অন্যজন ভারতের নরেন্দ্র মোদি। ১ নভেম্বর এক ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে তারা দুদেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট জনগুরুত্বপূর্ণ মোট ৩টি প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। প্রথমত; আখাউড়া-আগরতলা রেলপথ। অনেক দিনের চাওয়া-পাওয়া ছিল আখাউড়া-আগরতলা রেলপথ। এর উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ-ভারত দুদেশের আন্তঃসীমান্ত যোগাযোগের এক নতুন অধ্যায় সৃষ্টি হলো। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ার গঙ্গাসাগর রেলস্টেশন থেকে ভারতের আগরতলার নিশ্চিন্তপুর রেলস্টেশনের দূরন্ত ১২ দশমিক ২৪ কিলোমিটার। দীর্ঘ এই রেলসংযোগ স্থাপিত হওয়ায় ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে রেলপথে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্ত করাও হয়েছে।
২০১৮ সালের জুলাইয়ে আখাউড়া-আগরতলা রেলপথের নির্মাণকাজ শুরু হয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হয়েছে প্রায় ২৪১ কোটি টাকা। পুরো রেলপথের মধ্যে বাংলাদেশ অংশ পড়েছে ৬ দশমিক ৭৮ কিলোমিটার। বাকিটুকু ভারতে। উদ্বোধনের পর প্রথম দিকে পণ্যবাহী ট্রেন এবং পরবর্তী সময়ে যাত্রীবাহী ট্রেনও চলাচল শুরু করেছে।
খুলনা-মোংলা রেলপথ চালু
ঘটা আয়োজনে খুলনা থেকে বাগেরহাটের মোংলা বন্দর পর্যন্ত নির্মিত রেলপথ প্রকল্প উদ্বোধন করা হয়েছে। এই রেলপথ চালু হওয়ায় মোংলা বন্দরের পণ্য পরিবহন আরও সহজতর হবে। খুলনা-মোংলা রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছিল ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে। এই রেলপথের মাধ্যমে মোংলা বন্দরের পণ্য দেশের মধ্যে কম খরচে পরিবহন করা যাবে; অন্যদিকে ভারত, নেপাল ও ভুটান এই পথ ব্যবহার করে পণ্য আমদানি-রপ্তানি করবে। ফলে দক্ষিণের অর্থনীতির অগ্রগতিতে রেলপথটি বড় ভূমিকা রাখবে। খুলনা-মোংলা রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছিল ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে। রেলপথের দৈর্ঘ্য প্রায় ৯০ কিলোমিটার। এ প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ৪ হাজার ২৬০ কোটি টাকা।
মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়ার প্ল্যান্ট-২ চালু
১ নভেম্বর ২০২৩; প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং নরেন্দ্র মোদি বাগেরহাটের রামপালে স্থাপিত মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়ার প্ল্যান্টের দ্বিতীয় ইউনিটের উদ্বোধন করেছেন। কয়লাভিত্তিক এ কেন্দ্র থেকে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে ৬৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। বাংলাদেশ ভারতের যৌথ মালিকানাধীন মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়ার প্ল্যান্ট- রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নামেই পরিচিত। দুই ইউনিট মিলিয়ে ১,৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার এই কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ব্যয় হয়েছে মোট ১৬ হাজার কোটি টাকা। এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট ২০২২ সালের ১৭ ডিসেম্বর বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করে। কয়লার অভাবে কয়েক দফা বন্ধ থাকলেও বিদ্যুৎকেন্দ্রটি এখন চালু রয়েছে। গত ২৪ অক্টোবর দ্বিতীয় ইউনিটের পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু হয়েছে। হ