২৫ ও ২৬ মার্চ বাঙালিদের হত্যাযজ্ঞে মেতেছিল জিয়া
উত্তরণ প্রতিবেদন : প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ নিয়ে বিএনপি নেতাদের বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করে বলেছেন, এরা (বিএনপি) এখনও তাদের পুরনো প্রভুদের (পাকিস্তান) ভুলতে পারেনি। পাকিস্তানের দালালি, তোষামোদ ও চাটুকারিতার কথা ভুলতে পারেনি। তারা তাদের (পাকিস্তান) পালিত সারমেয় দল হিসেবেই এখনও আছে। এটাই হলো বাস্তবতা।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর মূল শক্তিই ছিল দেশের জনগণের শক্তি। সেই শক্তি নিয়েই বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চের ভাষণে স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন। দীর্ঘ ৯ মাস মুক্তিযুদ্ধের সময় বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণই মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রেরণা ও সাহস জুগিয়েছে। যারা বাঙালির এই বিজয় মেনে নিতে পারেনি, যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ আবার গড়ে উঠছে, বাংলাদেশ আবার উন্নত-সমৃদ্ধ হবেÑ এটা যারা মেনে নিতে পারেনি, তারাই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট চরম আঘাত হানে। বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে স্বাধীনতার পর ১০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে উঠত। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে দেশের সেই অগ্রযাত্রাকে থামিয়ে দেওয়া হয়।
তিনি বলেন, যে (জিয়াউর রহমান) পাকিস্তানি হানাদারদের সঙ্গে বাঙালিদের গণহত্যার সঙ্গে জড়িত, ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা, যারা ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা চালায়, বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে যে (জিয়াউর রহমান) রাজনৈতিক দলের জন্ম দেয়, সেই দলের নেতারা বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের ভাষা ও মর্ম বুঝবে না, এটাই তো খুব স্বাভাবিক। এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত, তাই মুষ্টিমেয় কিছু লোক কী বলল, সে-ব্যাপারে আমাদের কোনো কথা বলা বা চিন্তা করার কিছু নেই। গত ৮ মার্চ ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে সভাপতির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ চট্টগ্রামে যারা (মুক্তিকামী বাঙালি) হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে রাস্তায় ব্যারিকেড দিচ্ছিল, তাদের অনেককে জিয়াউর রহমান গুলি করে হত্যা করে। শুধু তাই না, পাকিস্তানি সেনা অফিসার হিসেবে জিয়াউর রহমান ২৫ ও ২৬ মার্চ দুদিনই হত্যাকা- চালান। ২৭ মার্চ সোয়াত জাহাজ থেকে অস্ত্র নামাতে গিয়েছিল এই জিয়া। তিনি যাতে অস্ত্র নামাতে না পারেন, আমাদের স্বাধীনতাকামীরা তাকে আটকান।
সরকারপ্রধান প্রশ্ন রেখে বলেন, যারা ১৫ আগস্টের হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে, যারা এদেশটাকে একটা ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য ক্ষমতা নিয়ে দেশের মেধাবী ছাত্রদের হাতে অস্ত্র তুলে দেয়, সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অস্ত্রের ঝনঝনানি। যারা এদেশটাকে সম্পূর্ণ ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়- তাদের তৈরি করা রাজনৈতিক দলের (বিএনপি) কাছ থেকে বাংলাদেশের মানুষ কী আশা করে?
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় সূচনা বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি। আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ এমপি, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, শ্রমবিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, মেরিনা জাহান, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ দক্ষিণের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী এবং উত্তরের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান। গণভবন প্রান্ত থেকে আলোচনা সভা পরিচালনা করেন দলের কেন্দ্রীয় প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ এমপি। অনুষ্ঠানে মুজিববর্ষ, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে প্রকাশিত স্মারকগ্রন্থ ‘মুক্তির ডাক’-এর মোড়ক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী। ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণই প্রকৃতপক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের প্রতিটি লাইন, প্রতিটি অক্ষরই ছিল একেকটি নির্দেশনা। অতীতে বাঙালিদের ওপর পাকিস্তানিদের অত্যাচার-নির্যাতন, হত্যা, বঞ্চনার ইতিহাসের বর্ণনার পাশাপাশি ভাষণে বঙ্গবন্ধু ভবিষ্যতে কী করণীয় সে-ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দিয়ে গেছেন। সর্বাত্মক গেরিলা যুদ্ধের জন্য ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল, যার যা কিছু আছে তাই দিয়ে শত্রুদের মোকাবেলা করার পাশাপাশি শেষাংশে ‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ বলার মাধ্যমে স্বাধীনতা সংগ্রামের ডাক দিয়ে গেছেন।
বঙ্গবন্ধুর পথ অনুসরণ করেই দেশ আজ উন্নয়নশীল
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেখানো পথ অনুসরণ করেই বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছে। এটি এখন প্রমাণিত হয়েছে যে, বঙ্গবন্ধুর প্রদর্শিত উন্নয়নের পথেই দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখে আগামী ’৪১ সালে বাংলাদেশ উন্নত সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। গত ২১ মার্চ জাতির পিতার ১০১তম জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তৃতায় তিনি এ-কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দলীয় কার্যালয় ২৩, বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আয়োজিত মূল অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতা মাত্র সাড়ে তিন বছর সময় পেলেও তিনি এই সময়ের মধ্যে যে কাজগুলো করে গেছেন, শুধু সেগুলো অনুসরণ করলেই আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি।’
অনুষ্ঠানে সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এমপি সভার প্রারম্ভিক বক্তৃতা করেন। আরও বক্তৃতা করেন দলের সভাপতিম-লীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী এমপি এবং কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক এমপি, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, মির্জা আজম এমপি ও আবু সাইদ আল মাহমুদ স্বপন এমপি, অর্থ ও পরিকল্পনা সম্পাদক ওয়াসিকা আয়েশা খান এমপি, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. শাম্মী আহমেদ, শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক শামসুন্নাহার চাপা, মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তরের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান এবং মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির। গণভবন প্রান্তে সভা পরিচালনা করেন দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ এমপি।
কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি জননেত্রী শেখ হাসিনা করোনার প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায় সবাইকে স্বাস্থ্য সুরক্ষাবিধি মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, যে আদর্শ নিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, সেই আদর্শের ভিত্তিতেই আজকে উন্নয়নের মহাসড়কে চলমান রয়েছে। বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। কিন্তু আমাদের এখানে থেমে থাকলে চলবে না, আমাদের এই যাত্রা আরও অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ তথা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে। বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে যা যা করণীয়, সরকার তা করবে। গত ২৮ মার্চ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মহান স্বাধীনতা দিবস, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে সভাপতির বক্তব্যে এ-কথা বলেন তিনি।
জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর আয়োজনে বিশ্বের যেসব দেশ বাংলাদেশকে শুভেচ্ছা বার্তা পাঠিয়েছেন, সশরীরে উপস্থিত থেকে অনুষ্ঠানকে মহিমান্বিত করেছেন- তাদের সবাকেই ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পৃথিবীর প্রায় সকল দেশই আমাদের শুভেচ্ছা জানিয়ে বার্তা পাঠিয়েছেন। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ৫টি দেশের প্রধান এসেছেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও জাতিসংঘসহ ২৭টি সংস্থা থেকে শুভেচ্ছা বার্তা আমরা পেয়েছি। এটা বাংলাদেশের জনগণের জন্য অত্যন্ত সম্মানের। এটাই হচ্ছে আমাদের স্বার্থকতা। তিনি দলের নেতাকর্মীদের বিশ্বের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের পাঠানো শুভেচ্ছা বার্তাগুলো দেশের তৃণমূল মানুষের সামনে তুলে ধরার নির্দেশ দিয়ে বলেন, সময়ের অভাবে সব বার্তা আমরা শোনাতে পারিনি। সব বার্তা রক্ষিত আছে। তৃণমূল পর্যন্ত এসব প্রচার করতে হবে। বিশ্ব নেতাদের শুভেচ্ছা বার্তা যেন জনসাধারণ জানতে পারে। সরকারের পাশাপাশি আওয়ামী লীগ ও বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনকে এগুলো প্রচার করার নির্দেশ দেন তিনি।
বাংলাদেশের জনগণ, আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের ধন্যবাদ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের অনেক দূর যেতে হবে। আজকে আমরা উন্নয়নশীল দেশ, আজকে বাংলাদেশ ডিজিটাল বাংলাদেশ, আজকে বাংলাদেশের ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে গেছে, আজকে আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ, কিন্তু বাংলাদেশকে আমরা আরও উন্নত, সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই, যেটা জাতির পিতার স্বপ্ন।