Monday, October 2, 2023
বাড়িSliderবঙ্গবন্ধু হত্যার পেছনে কারা জড়িত ও ক্ষেত্র প্রস্তুত করেছিল সেটাও শীঘ্রই বের...

বঙ্গবন্ধু হত্যার পেছনে কারা জড়িত ও ক্ষেত্র প্রস্তুত করেছিল সেটাও শীঘ্রই বের হবে

উত্তরণ প্রতিবেদন: প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা দেশের দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়ে এবং জাতির পিতার স্বপ্ন পূরণের মাধ্যমে তার হত্যার প্রতিশোধ নেওয়ার দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করে বলেছেন, যারা বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত এবং যারা এ হত্যাকা-ের ক্ষেত্র প্রস্তুত করেছে তারাও সমানভাবে দায়ী। জাতির পিতা হত্যার সঙ্গে জড়িতদের বিচার হয়েছে। এ হত্যাকা-ের পেছনে কারা পাশে ছিল, ক্ষেত্র তৈরি করেছে সবই জানি। সেদিন বেশি দূরে নয়, ধীরে ধীরে এসবও বের হবে। একাত্তরের শহিদ ও জাতির পিতার রক্ত কখনও বৃথা যাবে না, বৃথা যেতে দেব না।
আবেগজড়িত কণ্ঠে বঙ্গবন্ধু-কন্যা বলেন, এদেশের মানুষের জন্য জীবন দিয়ে গেছেন আমার বাবা-মা, ভাইসহ পরিবারের সদস্যরা। বঙ্গবন্ধু পরিবারের রক্তের কেউ বেঁচে থাকুক তা চায়নি ঘাতকরা। পিতার মতো আমিও রক্ত দিতেই দেশের মাটিতে পা দিয়েছিলাম। আমার জীবনের কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই, ভয়ও নেই। মৃত্যুকে অনেকবার সামনে থেকে দেখেছি। কখনও ভীত হইনি। আমি সব সময় প্রস্তুতÑ যে কোনো সময় চলে যেতে হবে। কিন্তু যতক্ষণ বেঁচে আছি বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ে তুলব। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন অনুযায়ী যেদিন দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে, উন্নত জীবন পাবে, ঘরে ঘরে আলো জ্বলবে, বঙ্গবন্ধুর আজীবনের লালিত স্বপ্ন যেদিন পূরণ করতে পারব সেদিনই জাতির পিতার হত্যার প্রকৃত প্রতিশোধ নিতে পারব। আর সেই লক্ষ্যে আমরা অনেকদূর এগিয়ে গেছি, আরও এগিয়ে যাব।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৬তম শাহাদাতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে গত ১৬ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত স্মরণসভায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে সভাপতির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় প্রান্তে মূল অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী এমপি, কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক এমপি, অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ এমপি, কৃষিবিদ আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, ধর্মবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়–য়া, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য পারভীন জাহান কল্পনা, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এসএ মান্নান কচি ও দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির। গণভবন প্রান্ত থেকে আলোচনা সভা পরিচালনা করেন কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ এমপি। অনুষ্ঠানের শুরুতেই জাতির পিতাসহ ১৫ আগস্টের সকল শহিদের স্মরণে এক মিনিট দাঁড়িয়ে নীরবতা পালন করা হয়।
দ্রুত উচ্চ পর্যায়ের কমিশন গঠন করে জাতির পিতার হত্যাকা-ের নেপথ্যের কুশীলবদের মুখোশ উন্মোচনে কেন্দ্রীয় নেতাদের দাবির জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নেপথ্যে কে কে রয়েছে তা খুঁজতে বেশিদূর যেতে হবে না। স্বাধীনতার পরের পত্র-পত্রিকার রিপোর্ট দেখলেই সবকিছু স্পষ্ট হয়ে যাবে। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়তে বঙ্গবন্ধুকে একটি বছর সময় দেয়া হলো না, কাদের খুশি করতে তার বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার চালিয়ে এ হত্যাকা-ের গ্রাউন্ড (ক্ষেত্র) তৈরি করা হয়েছিল?
এ প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু-কন্যা আরও বলেন, বাংলাদেশ পাকিস্তানের একটি প্রদেশ ছিল। স্বাধীনতা লাভের পর ১৯৭২ সালে দেশে ফিরে এসেই যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে যখন বঙ্গবন্ধু গড়ে তুলছিলেন, দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত মানুষের কল্যাণে কাজ শুরু করেন তখন অর্থাৎ ’৭২ সাল থেকেই ষড়যন্ত্র শুরু হয়। পরিকল্পিতভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করা, জাসদ সৃষ্টি করা হয়েছিল। পাকিদের দোসররা তখন হঠাৎ করেই হাওয়া হয়ে গেল। তারা বিভিন্ন আন্ডারগ্রাউন্ড পার্টিতে মিশে গিয়ে নানা চক্রান্ত চালাতে লাগল। পত্র-পত্রিকায় নানাভাবে অপপ্রচার চালিয়ে হত্যাকা-ের ক্ষেত্র তৈরি করা হয়েছিল। যারা ’৭৫-এর হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত এবং যারা এ হত্যাকা-ের গ্রাউন্ড তৈরি করেছিল তারা সমানভাবে দায়ী। সেদিন বেশি দূরে নয়, হত্যাকা-ের পেছনের ক্ষেত্র প্রস্তুতকারীদের চেহারাও বের হবে।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে জাতির পিতা হত্যাকা-কে ইতিহাসের সবচেয়ে জঘন্য ও নির্মম হত্যাকা- উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণের সহযোগিতায় বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার করতে পেরেছি। দেশকে অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে নিতে বঙ্গবন্ধুর দেখানো পথ ধরে আমরা এগিয়ে চলেছি। আমরা এমন এক সময় জাতীয় শোক দিবস পালন করছি, যখন স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ১০১তম জন্মবার্ষিকীও পালন করছি।
বাষ্পরুদ্ধ কণ্ঠে বঙ্গবন্ধু-কন্যা বলেন, কারবালার প্রান্তরেও হত্যাকা- হয়েছে; কিন্তু সেখানে কোনো নারী-শিশুকে হত্যা করা হয়নি। কিন্তু ১৫ আগস্ট নারী-শিশু, অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীসহ পরিবারের সবাইকে হত্যা করা হয়েছে। ১৫ আগস্ট ঘটিয়েই ঘাতকরা থেমে থাকেনি, পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধু পরিবারের যারা বেঁচে আছে তাদেরও খুঁজে বেড়িয়েছে। অর্থাৎ বঙ্গবন্ধুর পরিবারের একটি রক্তও যেন বেঁচে না থাকে, সেই চেষ্টাই করা হয়েছিল।
আক্ষেপ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটি জাতির জন্য, দেশের মানুষের মুক্তি ও স্বাধীনতার জন্য জীবনের সবকিছু উজাড় করে দিয়েছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু। তার জীবনের কোনো চাওয়া-পাওয়া ছিল না। শুধুই তিনি দেশের মানুষের কথা ভাবতেন, শোষণ-বঞ্চনা, নিপীড়নের হাত থেকে মুক্তি দিতে এবং দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করতেই আজীবন লড়াই-সংগ্রাম করেছেন, জীবনের অধিকাংশ সময় কারাগারে কাটিয়েছেন।
তিনি বলেন, গোটা জাতিকে স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। এদেশের মাটির সন্তান কেউ আগে রাষ্ট্রের ক্ষমতায় ছিল না। সবাই বাইরে থেকে এসে এদেশকে শাসন ও শোষণ করেছে। একমাত্র বাংলাদেশের মাটির সন্তান হচ্ছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। মাটির সন্তান বলেই একটি জাতিকে দীর্ঘ সংগ্রামের পথ ধরে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে নেতৃত্ব দিয়ে স্বাধীনতা এনে দিয়েছিলেন। আর যুদ্ধে যে বাংলাদেশের মানুষের বিজয় আসবে তা আগে থেকেই জানতেন বঙ্গবন্ধু। দেশের মানুষকে নিয়ে আমার পিতার (বঙ্গবন্ধু) যে স্বপ্ন ছিল, তার বড় সন্তান হিসেবে পাশে থেকে শুনেছি, জেনেছি। আমার মা বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব যেমন সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুর পাশে ছিলেন তেমনি দক্ষ হাতে সংসারও চালিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটি মানুষ (বঙ্গবন্ধু) সবটুকু দিয়েছিলেন একটি জাতির জন্য। নিজের জীবনের কোনো চাওয়া-পাওয়া ছিল না। সব সময় তিনি দেশ ও মানুষের কথা ভাবতেন। এদেশের মানুষ একবেলা খেতেও পারত না। চিকিৎসা, শিক্ষা, ঘরবাড়ি নেই, সেই শোষিত-বঞ্চিত মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে চেয়েছিলেন। এদেশের মানুষকে স্বাধীনতার চেতনায় তিনি উদ্বুদ্ধ করেছিলেন।
তিনি বলেন, ’৭২-এর ১০ জানুয়ারি তিনি দেশে এসেছেন। সেই ’৭২ সাল থেকেই কিন্তু ষড়যন্ত্র শুরু। মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে দু-ভাগ হলো। জাসদ সৃষ্টি হলো। পাকিস্তানি দোসর, অনেক বড় বড় নেতা পাকিস্তানি পাসপোর্ট নিয়ে চলে গেল। কিন্তু যারা এদেশে ছিল তারা কোথায় গেল? তারা যেন উধাও হয়ে গেল। তারা সব আন্ডারগ্রাউন্ড পার্টির সঙ্গে মিশে গেল।
এই হত্যাকা-ের নেপথ্যে কারা আছে, সে-প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এজন্য তো বেশি খোঁজার দরকার নেই। তখকার পত্র-পত্রিকা ও তাদের বক্তব্য খুঁজে বের করেন, অনেক খবর আপনাদের কাছে স্পষ্ট হয়ে যাবে। একটি দেশ প্রতিষ্ঠার পরে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে গড়ে তুলতে বছরের পর বছর সময় লেগে যায়। সেখানে একটি বছরও সময় দেয়া হলো না। শুরু হলো সমালোচনা। আর ধৈর্য ধরা হলো না। এটা হলো না কেন, সেটা হচ্ছে না কেনÑ এমন নানা কথা লেখা হলো, অপপ্রচার চালানো হলো। কারা লিখেছিল? কাদের খুশি করতে? তারা এই হত্যাকা-ের জন্য একটা অবস্থান বা ক্ষেত্র তৈরি করছিল। যাকে বলে গ্রাউন্ড প্রিপেয়ার করা। সেটা করা হয়েছিল।
তিনি আরও বলেন, আমি জানিÑ যারা সরাসরি হত্যা করেছে তারা নিজেরা স্বীকারও করেছে। বিবিসির ইন্টারভিউয়ে খুনি রশিদ-ফারুক বলেছে যে তারা হত্যা করেছে। কারণ, তাদের একটা চেষ্টা ছিলÑ বিভিন্ন অপপ্রচার চালিয়ে বঙ্গবন্ধুকে জনগণের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করা। সেভাবে অনেক অপপ্রচার চালিয়েও বঙ্গবন্ধুকে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারেনি। আর এ জন্যই তারা এই হত্যাকা- ঘটিয়েছে। এটাই হলো বাস্তবতা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তখন যারা সমালোচনা করেছে, লিখেছে, বক্তব্য দিয়েছে, তারা তো এদেরই দোসর হিসেবে গ্রাউন্ড তৈরি করছিল। সেটাও একটু আপনারা স্মরণ করে রাখবেন। তাহলে এসব খুঁজতে আপনাদের বেশিদূর যেতে হবে না। কেউ কমিশন গঠন করতে বলছেন, এ দাবি করছেন, ওই দাবি করছেন, খুব ভালো কথা। সেই সঙ্গে এই জিনিসগুলোও পড়ে দেখেন, অনেক কিছুই আপনাদের কাছে স্পষ্ট হয়ে যাবে।
সরকারপ্রধান এ প্রসঙ্গে আরও বলেন, আজকে খুনিদের বিচার হয়েছে। এখনও যারা কয়েকজন পলাতক রয়েছে। তার মধ্যে খুনি ডালিম তখন থেকে পাকিস্তানেই আছে। মাঝে মধ্যে সে অন্য দেশেও যায়। সে পাকিস্তানি পাসপোর্ট নিয়েই চলে। কিন্তু পাকিস্তান সরকার এটা স্বীকারও করে না, তাকে দেয়ও না। আর রাশেদ ও নূরÑ একজন কানাডা আরেকজন আমেরিকায় আছে। খুনি মোসলেম উদ্দিনের খোঁজ মাঝে মধ্যে পাওয়া যায়, মাঝে মধ্যে পাওয়া যায় নাÑ এই অবস্থার মধ্যে আছে।
তিনি আরও জানান, এক সময় খুনি নূরকে কানাডা থেকে ডিপোর্ট করার কথা ছিল। সেই সময় কানাডায় আমাদের যে হাইকমিশনার ছিলÑ খুনি মোশতাকের দ্বিতীয় স্ত্রীর আগের পক্ষের ছেলে। সে ছিল তখন হাইকমিশনার। রাষ্ট্রদূত হিসেবে যে দায়িত্ব পালনের কথা ছিল সে সেই দায়িত্ব পালন করেনি। সে নূরকে ডিপোর্ট করার কোনো ব্যবস্থাই নেয়নি। তবে এখনও তাকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চালানো হচ্ছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।
স্বাধীনতার মাত্র কিছুদিনের মধ্যে দেশের মানুষকে জাতির পিতার সংবিধান উপহার দেয়ার কথা তুলে ধরে তার কন্যা শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাস করতেন। তাই দেশে ফিরে অল্পদিনের মধ্যেই জাতিকে তিনি সংবিধান উপহার দিয়েছিলেন। ’৭৩ সালে নির্বাচন দিয়েছিলেন। যা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। বঙ্গবন্ধু যখন সমস্ত জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে উৎপাদন বৃদ্ধিসহ দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন; স্বাধীনতাবিরোধী, একাত্তরের পরাজিত শত্রু ও তাদের দোসররা এটা মেনে নিতে পারেনি। স্বাধীনতা পেলেও বাংলাদেশের মানুষ আরও গরিব হবে এটাই ওই পরাজিত শত্রু ও তাদের দোসররা চেয়েছিল।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের মাত্র কিছুদিন আগে তারা দুই বোন জার্মানিতে যাওয়ায় প্রাণে বেঁচে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে কান্নাজড়িত কণ্ঠে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবাইকে রেখে মাত্র ক’দিন আগেই আমার স্বামীর কর্মস্থল জার্মানিতে গিয়েছিলাম শেখ রেহানাকে নিয়ে। ১৩ আগস্ট পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আমার শেষ কথা হয়। কিন্তু একরাতে সব শেষ হয়ে যাবে এখনও ভাবতেও পারি না।
’৮১ সালে দেশে ফিরে আসার পরও নানা বাধার সম্মুখীন হওয়ার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ আমাকে সভাপতি নির্বাচিত করার পর ’৮১ সালে দেশে ফিরে আসি। দেশে আসার পরও আমাকে অনেক বাধা-বিপত্তি মোকাবেলা করতে হয়েছে। আমার বাবা এদেশকে স্বাধীন করেছে। তাই আমার চলার পথ ঠিক রেখে, স্বাধীনতা কখনও ব্যর্থ হতে পারে না, তাই স্বাধীনতার সুফল যেন প্রত্যেক মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছেÑ সেই লক্ষ্য নিয়ে সকল বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে এগিয়ে গেছি।
দলের দুঃসময়ে অনেকের ভিন্নপথে চলার মানসিকতা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেকেই আছেন একটা দুঃসময় এলেই অস্থির হয়ে পড়েন। যারা অর্থের লোলুপতা নিয়ে থাকে তারা দুঃসময়ে সাহস নিয়ে দাঁড়াতে পারে না। আর যাদের অর্থসহ কোনো কিছুর লোলুপতা থাকে না, সততার শক্তি থাকেÑ তারা প্রতিটি দুঃসময়ে ঘুরে দাঁড়ায়, প্রতিবাদ-প্রতিরোধ গড়ে তুলে। কারণ সততাই হচ্ছে বড় শক্তি। এটাই তো হচ্ছে প্রকৃত রাজনীতি।
অর্থ-সম্পদ কখনও স্থায়ী হয় না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই করোনা সবাইকে শিক্ষা দিয়েছে যে, অর্থ-সম্পদ কোনো কিছুই কাজে লাগে না। একটি অদৃশ্য একটা জিনিস গোটা বিশ্বকে স্থবির করে দিয়েছে, মানুষের জীবনকে আতঙ্কগ্রস্ত করে দিয়েছে। এখানে অর্থ-সম্পদ কিংবা অস্ত্র কোনো কিছুই কাজে লাগেনিÑ এটাই হলো বাস্তবতা। তিনি বলেন, যারা বিশ্বের অস্ত্রের ভা-ার গড়ে তুলেছে, অর্থ-সম্পদের পাহাড় গড়েছেÑ কিন্তু অদৃশ্য এই করোনার কাছে কোনো কিছুই কাজে লাগেনি। মহান আল্লাহতায়ালা যেন সেটাই বিশ্ববাসীকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন।
করোনার কারণে ঘরে (গণভবন) বন্দী থাকার কথা তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, বাবা-মাসহ পরিবারের সবাইকে হারিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, সমর্থকরাই হচ্ছেন আমার পরিবার। কিন্তু করোনার কারণে সামনাসামনি দেখা হচ্ছে, ঘরে অনেকটা বন্দীর মতো রয়েছিÑ এটাই সবচেয়ে দুঃখের। তবে সবাই দোয়া করবেনÑ এই করোনা থেকেও আমরা যেন মুক্ত হতে পারি। আর বঙ্গবন্ধুর রক্ত কখনও বৃথা যাবে না, বৃথা যেতে দেব না। দেশের মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়ে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলব, এটাই হচ্ছে জাতীয় শোক দিবসে আমাদের অঙ্গীকার।
স্বাগত বক্তব্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এমপি দেশবাসীকে দেশবিরোধী অপশক্তির ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সজাগ ও সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের কুশীলবরা এখনও সক্রিয়। বঙ্গবন্ধু পরিবারকে ঘিরে এখনও ষড়যন্ত্র চলছে। সামনে ষড়যন্ত্রের বৈরী স্রোত আরও তীব্র হতে পারে। তাই আমাদের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ। যত ষড়যন্ত্রই হোক না কেন বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ সবকিছু মোকাবিলা করেই অদম্য গতিতে এগিয়ে যাবে। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ে জিয়াউর রহমান যে জড়িত বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীররা আর কী প্রমাণ চান? বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর আত্মস্বীকৃত খুনিদের রক্ষা, বিদেশে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করা, ইনডেমনিটিকে আইন করে হত্যার বিচার নিষিদ্ধ করা, বঙ্গবন্ধু ও ৭ মার্চের ভাষণ নিষিদ্ধ এবং দেশকে পাকিস্তানের ভাবধারায় নিয়ে যাওয়া, এসবই করেছে জিয়াউর রহমান। এরপরও আর কী প্রমাণ চায় বিএনপি নেতারা?

আরও পড়ুন
spot_img

জনপ্রিয় সংবাদ

মন্তব্য