প ঙ্ক জ ভ ট্টা চা র্য : আমাদের জাতীয় মুক্তি-সংগ্রামের মহানায়ক স্বাধীনতার স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৫তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে এই মহামানবের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই।
ষাটের দশকের গণতন্ত্র স্বাধিকার ও স্বাধীনতার সংগ্রামে যে বিরাট যুবজাগরণের উত্থান ঘটে নিজগুণে কালক্রমে তিনি হয়ে ওঠেন তাদের প্রধান পথপ্রদর্শক, হয়ে ওঠেন সকলের প্রিয় মুজিব ভাই। আমাদের মতো গণতন্ত্রের মাঠকর্মীরা না-দেখা বীর বিপ্লবী ক্ষুদিরাম, সূর্যসেন, সুভাষ বসু প্রমুখদের জীবন-সংগ্রাম থেকে অনুপ্রেরণা পেয়েছি আর খুবই কাছ থেকে দেখা তেজদীপ্ত বিশাল মাপের মানুষ সকলের প্রিয় মুজিব ভাইকে পেয়েছি পাকিস্তানের বৈরী ও বন্ধুর পরিবেশে আমাদের পরম নির্ভরতার কাণ্ডারি হিসেবে। দলীয় নেতার পরিচয় ছাপিয়ে, দলের সীমা সরহদ্দ মাড়িয়ে তিনি ক্রমে ক্রমে সমগ্র জাতির আস্থা ও বিশ্বাসের প্রতীক হয়ে উঠেছিলেন। জাতির আশা-আকাক্সক্ষা তাকে ঘিরে আবর্তিত হতো সেই দিনগুলোতে। গণতন্ত্র, বাঙালিত্ব, অসাম্প্রদায়িক শোষণহীন সমাজের জন্য আন্দোলন-সংগ্রামের সেদিনকার দল-মত-নির্বিশেষে কর্মীবাহিনীর কাছে তিনি প্রকৃত জাতীয় নেতা হয়ে উঠেছিলেন। তার অনন্য সাধারণ সাহস, জনগণের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা ও দায়বদ্ধতা, দুঃসহ কষ্ট ও কারাযন্ত্রণা ভোগ ও ত্যাগের নজির হয়ে ওঠার মধ্য দিয়ে মুজিব ভাই জনমনে হিমালয়ের উচ্চতা অর্জন করেন। অন্যদল এমনকি ভিন্নমতের নেতা-কর্মীদের সাথে তার উষ্ণ আন্তরিকতাপূর্ণ সম্পর্ক ছিল ঈর্ষণীয়। এখন মনে হয় যেন তিনি এক একান্নবর্তী রাজনৈতিক পরিবারের সহৃদয় অভিভাবক হয়ে উঠেছিলেন সেই দিনগুলোতে। দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ জাতীয়তাবাদী বাম প্রগতিশীল দলের কর্মীবাহিনী মুজিব ভাইয়ের কাছে পেতেন অঢেল স্নেহ-ভালোবাসা ও অফুরন্ত উৎসাহ-উদ্দীপনা। (কল্পনা করতেও আজ কষ্ট হবে রাজনৈতিক সংস্কৃতি কত মানবিক ও সমন্বিত এবং কত উচ্চ ও উন্নত স্তরে উন্নীত ছিল তৎকালে।)
এই স্বল্প গৌরচন্দ্রিকা শেষে দু-চারটি ঘটনার স্মৃতিচারণের মধ্য দিয়ে এই মহানায়কের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করব। জাতীয় কর্তব্য পালনের অঙ্গ হিসেবে দলীয় বিবেচনায় তাকে ব্যবহার করা বা অতিমানব হিসেবে চিহ্নিত করা তাৎক্ষণিক স্বার্থোদ্ধারে তাকে ব্যবহার করা অথবা রাজনৈতিক বৈরিতায় তাকে খাটো করার যে কোনো প্রয়াস ইতিহাস মেনে নেবে না, মানতে পারে না।
তেষট্টি সনে ছাত্র ইউনিয়নের সম্মেলন এবং ছাত্র আন্দোলনে পরামর্শ ও আর্থিক সহায়তার উপলক্ষে মুজিব ভাইয়ের কাছে একাধিকবার গিয়েছি তার ৩২ নম্বর বাসভবনে। কখনও রেজা আলী, মানিক বা মুর্তজা ভাইয়ের সাথে। আন্তরিকতায় সিক্ত তার পরামর্শ ও সহযোগিতা সব সময়ে পেয়েছি, নিজের কর্মীদের জন্য সংগৃহীত সীমিত সঞ্চয় থেকে তিনি আমাদের বড় অনুষ্ঠানের জন্য হাজার টাকাও দিয়েছেন, এমনকি তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া এবং মিজানুর রহমান চৌধুরীর কাছে তিনি আমাদের পাঠাতেন অধিক অর্থের প্রয়োজনে। একাধিকবার দেখেছি মফস্বল থেকে আসা আওয়ামী লীগের গরিব ও নিম্নবিত্ত কর্মীরা নেতার সাথে দেখা করতে এসেছেন, তাদের তিনি মধুর ব্যবহারে তুষ্ট করে সংগঠন ও আন্দোলনের কাজে জোরদারভাবে নামতে উৎসাহিত করতেন। বিদায় পর্বে কর্মীর মাথায় হাত বুলিয়ে তার পকেটে পুরে দিতেন একটি হোমিওপ্যাথিক পুরিয়ার মতো জিনিস। পরে মুজিব ভাইকে প্রশ্ন করে জেনেছি গরিব কর্মীরা কষ্ট করে ঢাকা আসে, তাদের কিছুটা কষ্ট লাঘব করতে তিনি ৫০, ১০০ ও ২০০ টাকার পুরিয়া করে রাখেন। সেদিনকার সংগঠন-আন্দোলনের কাজে ঐ পরিমাণ আর্থিক সহযোগিতা পাওয়া যেত নেতার কাছ থেকে, যা ছিল উদ্দীপনার রসদ। আজকের বাস্তবতায় এই নজির কল্প-কাহিনির মতো শোনাবে।
পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন ও পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের মধ্যে তীব্র প্রতিযোগিতা ছিল, সময় সময় বৈরিতাও হয়েছে; কিন্তু ঐক্যবদ্ধ ছাত্র আন্দোলনের ক্ষেত্রে ৬-দফা ও ১১-দফা, গণ-অভ্যুত্থান ঘটানোর ক্ষেত্রে অবিচ্ছিন্ন ঐক্যবদ্ধ উদ্যোগ অব্যাহত থাকার পশ্চাতে ছিল মুজিব ভাইয়ের দূরদর্শী রাজনৈতিক লক্ষ্যসীমা ও তাগিদ, এ-কাজে মণি সিংহ, মুজাফ্ফর আহমদ, সৈয়দ আলতাফ হোসেন, পীর হবিবুর রহমান, খোকা রায়, মোহাম্মদ ফরহাদ, মানিক মিয়া, মিজানুর রহমান চৌধুরী, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, শহীদুল্লাহ কায়সার পালন করতেন যথাযোগ্য পরিপূরক-সম্পূরক-ভূমিকা। পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়াশীল স্বৈরাচারী সরকার পূর্ব বাংলার বিশেষত ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, সাভার, নরসিংদী, খুলনা প্রভৃতি অঞ্চলে ১৯৬৪ সালের ১৪ জানুয়ারি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা উস্কে দেয়, দিনকয়েক পূর্বে কাশ্মীরের হযরতবাল মসজিদে পয়গম্বরের রক্ষিত পবিত্র চুল চুরির প্রতিক্রিয়ায় পূর্ববঙ্গে এ দাঙ্গা ঘটায় পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী। বিভিন্ন আশ্রয়শিবিরে ভয়ার্ত উদ্বাস্তু নর-নারী-শিশুরা আশ্রয় গ্রহণ করেছিলÑ মাসাধিককাল ধরে। তখন জগন্নাথ হলে ছাত্রদের উদ্যোগে স্বতঃস্ফূর্তভাবে সাবেক পূর্ব পাকিস্তান সংসদ ভবনে একটি আশ্রয়শিবির স্থাপিত হয়, ২ হাজারের বেশি শরণার্থীদের খাদ্য ও আশ্রয়ের ব্যবস্থা করতে একজন উদ্যোক্তা হিসেবে আমি মুজিব ভাই ও মহীউদ্দীন আহমেদের কাছে চাল, ডাল, হ্যাজাক লণ্ঠন ও কিছু টাকা চেয়ে পত্রবাহক আখলাকুর রহমানকে পাঠাই, কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পাঁচ বস্তা চাল, এক বস্তা ডাল, ২ হাজার টাকা এবং দুটি হ্যাজাক পাঠান মুজিব ভাই। পরের দিন মহীউদ্দীন ভাইও পাঠান প্রায় কাছাকাছি পরিমাণের সাহায্য সামগ্রী। ১৫ জানুয়ারি ঢাকা শহরে প্রেসক্লাব থেকে বের করা হয় ঐতিহাসিক দাঙ্গাবিরোধী শান্তি মিছিল, যার নেতৃত্বে ছিলেন মুজিব ভাই, সুফিয়া কামাল, মহীউদ্দীন আহমেদ, আতাউর রহমান খান, সৈয়দ আলতাফ হোসেন, আহমেদুল কবীর, শহীদুল্লাহ কায়সার-সহ অনেকে। সেই শান্তি মিছিল নওয়াবপুর রেলক্রসিং অতিক্রম করে ইত্তেফাকের দিকে অগ্রসর হলে হাক্কা গুণ্ডা নামে একজন দাঙ্গাবাজ (শান্তি আন্দোলনের শহীদ নামে খ্যাত) বেগম রোকেয়ার ভাতিজা আমির হোসেন চৌধুরীকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে। আরেক ঘটনায় মহীউদ্দীন আহমেদ ঐদিন ছুরিসহ এক দাঙ্গাবাজ গুণ্ডাকে ধরে পুলিশে সোপর্দ করেন। ১৫ জানুয়ারি ইত্তেফাক ও সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত হয় ‘পূর্ব বাংলা রুখিয়া দাঁড়াও’ নামে প্রথম পৃষ্ঠার অভিন্ন সম্পাদকীয়।
১৭ অক্টোবর ১৯৬৭ সাল। চার দিন গোয়েন্দা জিজ্ঞাসাবাদের পর আমাকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ‘স্বাধীন বাংলা ষড়যন্ত্র মামলা’ নামে রাষ্ট্রদ্রোহী মামলায় অভিযুক্ত করে পাঠানো হয়। কারাগারে ঢুকেই দেখি কারাগার হাসপাতালে অপেক্ষা করছেন মুজিব ভাই। জিজ্ঞাসাবাদের বিস্তারিত বিষয় তাকে জানালাম, যার সিংহভাগই ছিল মুজিব ভাইয়ের বিরুদ্ধে, মানিক চৌধুরী, বিধান কৃষ্ণ সেন, চট্টগ্রামের ডা. জাফর, হান্নান সাহেব, একে খান প্রমুখ সাথে শেখ মুজিবের বৈঠক ইত্যাদি নিয়ে। পাশাপাশি কয়েকজন সেনা অফিসারদের সাথে বৈঠক প্রসঙ্গও ছিল ঐ জিজ্ঞাসাবাদে। যা হোক ’৬৭ সালের অক্টোবরের ২০ তারিখে আমি তাকে স্মরণ করিয়ে দিই এই মর্মে যে, সেনা-আমলা যুক্ত করে মুজিব ভাইয়ের বিরুদ্ধে একটি ষড়যন্ত্র মামলা তৈরি করা হচ্ছে, যা পরবর্তীকালে ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা’ নামে খ্যাতি পায়।
কারাগারে অবস্থানকালে ঐ সময়কালে কথা প্রসঙ্গে একবার মুজিব ভাইকে একটি বইয়ের কথা বলেছিলাম। বইটির নাম ‘এন এথনিকেল স্টাডি অব পাকিস্তান’Ñ লেখক অধ্যাপক গণকোভস্কী যে গ্রন্থে পাকিস্তানের জাতিসমূহের বিশেষত বাঙালি জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণের প্রশ্নে দীর্ঘ সংগ্রাম-সংঘাতের মাধ্যমে রক্তাক্ত পরিসমাপ্তি ঘটবে বলে ভাষ্য দেওয়া ছিল। কবি জসীমউদ্দীন এ বইটি রাশিয়া থেকে নিয়ে আসেন, তার পুত্র জামাল আনোয়ার বাসু বন্ধুবরের কাছ থেকে বইটি নিয়ে আমি পড়ার সুযোগ পাই। মুজিব ভাই এ তথ্যটি নিয়ে একাধিক দিন তর্ক করেন এই মর্মে যে, প্রচ- জনমত সৃষ্টি হলে শাসকগোষ্ঠী আন্তর্জাতিক চাপে ৬-দফা মেনে নিতে বাধ্য হবে। তাছাড়া সশস্ত্র যুদ্ধের পার্টি তো আওয়ামী লীগ নয়, এমনকি ন্যাপও নয়। অবশ্য এ-কথাও তিনি পরে বলেছিলেন, “যদি সশস্ত্র যুদ্ধই করতে হয় তবে আমি হিসাব করে দেখেছি ২৭ জনের বেশি লোক পাব না। সম্ভাব্যদের মধ্যে তৎকালীন ছাত্র নেতারাসহ বিভিন্ন জেলার সার্বক্ষণিক কর্মীদের নাম তিনি বলেন, যাদের মধ্যে একজন ছিলেন সন্দ্বীপের লোক সম্ভবত আবদুর রহমান বয়াতি, তিনি ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলার জনসভার পূর্বে লোকগান পরিবেশন করে জনগণকে মাতিয়ে তুলতেন। যাক, আমার জামিনে মুক্ত হওয়ার দিনে তিনি বলেন মামা (শহীদুল্লাহ কায়সারকে) দিয়ে বইটা পাঠিয়ে দিস।” স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বিশ্বজয়ীর বেশে দেশে ফিরেন বঙ্গবন্ধু। ১২ জানুয়ারি তাকে শুভেচ্ছা জানাতে গেলাম। তিনি আবেগ আপ্লুত হয়ে জড়িয়ে ধরলেন আমাকে, পরে বললেন, “কিরে রাশিয়ান বইটা তো দিলি না, বইটা না পড়েও বই-য়ের কথা অনুযায়ী কাজ তো করেছি, কি বলিস।” অবাক হলাম মুজিব ভাইয়ের ঈর্ষণীয় স্মরণ শক্তির বহর দেখে ও শুনে। অথচ ঘটনাটি ভুলেই গিয়েছিলাম বলা চলে।
’রাষ্ট্রপতির অফিস থেকে বের হবার পথে দেখি হনহন করে খোন্দকার মোশতাক টুপিটা ঠিক করতে করতে ঢুকছেন-বঙ্গবন্ধু রসিকতা করলেন “কি ‘রিএক্সনারী’ নেতা কেমন আছেন।” ত্বড়িৎ জবাব দিলেন মুশতাক ‘নেতা, আপনার জীবদ্দশায় আমি বিরোধিতা করবো না’ খুনি খোন্দকার মুশতাক বঙ্গবন্ধুর হত্যা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার পরে ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট ক্ষমতা গ্রহণ করেন। খুনিও তার কথা রেখেছেন’
১৯৭৩ সালের শেষের দিকে মুজিব ভাইয়ের সাথে দেখা করি। তখন জাতীয়করণকৃত জুটমিলগুলোতে সাবেক মালিকদের প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল, সাবেক মালিকরা ১৮টি মিলের যাবতীয় অর্থ একই দিনে উঠিয়ে মিলগুলো দেউলিয়া করার উদ্যোগ নেন। পূর্ব রাতে এ সংবাদ নিয়ে ফরাসউদ্দীন (পিএস)-এর সাথে দেখা করে তাকে ঘটনা খুলে বলি। তিনি ডিসিকে টেলিফোন করে ঐ সকল জুটমিলের অ্যাকাউন্ট জব্দ করার ব্যবস্থা করেন।
১৯৭৪ সালে ত্রিদলীয় ঐক্যজোট ‘গজ’ গঠনসহ বহুবার তার সাথে সাক্ষাৎ ও মতবিনিময়ের সুযোগ পেয়েছি, কারাজীবনে তার সান্নিধ্য ও সাক্ষাৎ সঞ্জীবনীতুল্য অভিজ্ঞতায় পূর্ণ করেছে স্মৃতির ভা-ার। সর্বশেষ সাক্ষাৎ করি বঙ্গবন্ধুর সাথে ১২ জুলাই ১৯৭৫ সাল। বুলগেরীয় রাষ্ট্রদূত ছিলেন ৮৭ বছরের, নাম ছিল বরিস বায়েসদিক, যিনি হিটলারের বন্দিশিবিরে অত্যাচারিত হন, বঙ্গবন্ধু হত্যাসহ মধ্যম পর্যায়ের একটি সেনা অভ্যুত্থানের আশঙ্কা অচিরে ঘটতে পারে মর্মে সংবাদটি রাষ্ট্রপতিকে জানাতে তিনি আমাকে অনুরোধ করেন। আমি সে-কথা কিছু সুপারিশসহ বঙ্গবন্ধুকে জানাই, তিনি প্রথমে স্বভাবগত ঔদার্য নিয়ে বিষয়টি হালকাভাবে নেন, আমার চাপাচাপিতে তিনি বলেন- রক্ষীবাহিনীর নুরুজ্জামানকে মার্শাল টিটোর কাছে পাঠিয়েছেন এন্টি ট্যাংক গান আনতে, যা এক মাসের মধ্যে পাওয়া যাবে। উল্লেখ্য, উক্ত রাষ্ট্রপতির সচিব পদমর্যাদার আগন্তক আর কেউ নন, পাকিস্তান পুলিশের দ্বিতীয় ব্যক্তি ছিলেন তিনি এবং ১৯৬৭ সালে গোয়েন্দা হেফাজতে আমাকে তিনি জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু প্রায় ২০ মিনিট কথা বলেন, কিছু প্রতিশোধক ব্যবস্থার কথাও বলেন। এই সময়ে আবদুর রহিম নামধারী একজন সাবেক পুলিশ কর্তা এবং তৎকালীন সচিব আকস্মিকভাবে ঐ ঘরে ঢুকেন একটা ফাইল নিয়ে, আমি বঙ্গবন্ধুর হাঁটুতে চাপা দিই ঐ প্রতিশোধক বিষয়টি যেন না বলেন, তিনি হেসে বলেন, ‘ও আমার লোক’ এ-কথা বলে কি ব্যবস্থা এক মাসের মধ্যে নেবেন তা পুনরায় উল্লেখ করেন। কথা শেষে যখন বেরিয়ে আসি তখন দীর্ঘশ্বাস ফেলে স্বগোতোক্তি করি “ওরা এক মাসের মধ্যেই বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করবে”, বিষয়টি সংক্ষেপে ত্বড়িৎ জানাই অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমেদ ও কমরেড ফরহাদ ও মণি সিংহকে। সেদিন মুজিব ভাইয়ের কাছ থেকে বেরিয়ে আসার সময় তিনি রসিকতা করে বলেন, “আমি তোদের বিপদ নিয়ে ভাবি, তোরা সাবধানে থাকিস, আমি ক্ষমতা ছেড়ে জনতার মধ্যে ভিড়ে যাবো, বিপদ হবে তোদের।” রাষ্ট্রপতির অফিস থেকে বের হবার পথে দেখি হনহন করে খোন্দকার মোশতাক টুপিটা ঠিক করতে করতে ঢুকছেন- বঙ্গবন্ধু রসিকতা করলেন “কি ‘রিএক্সনারী’ নেতা কেমন আছেন।” ত্বড়িৎ জবাব দিলেন মুশতাক ‘নেতা, আপনার জীবদ্দশায় আমি বিরোধিতা করবো না’ খুনি খোন্দকার মুশতাক বঙ্গবন্ধুর হত্যা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার পরে ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট ক্ষমতা গ্রহণ করেন। খুনিও তার কথা রেখেছেন।
প্রিয় মুজিব ভাই, দেশবাসীর প্রিয় বঙ্গবন্ধু মৃত্যুঞ্জয়ী, মৃত্যুহীন ও চির ভাস্বর হয়ে বাংলার মানুষের অন্তরে চিরঞ্জীব হয়ে থাকবেন।
লেখক : ঐক্য ন্যাপের সভাপতি