Sunday, September 24, 2023
বাড়িSliderবঙ্গবন্ধু ও জীবন বীমা কর্পোরেশন

বঙ্গবন্ধু ও জীবন বীমা কর্পোরেশন

এটিএম নজরুল আলম: জাতিতে আমরা বাঙালি। বাঙালি অধ্যুষিত এই অঞ্চল খণ্ডিতভাবে শোষিত হয়েছে বিদেশি শাসকদের অধীনে। পর্যায় ক্রমে পাল বংশ, সেন বংশ, মুসলিম সুলতানদের শাসন, মুঘলদের শাসন ও ২০০ বছরের ব্রিটিশ শাসন। পরবর্তীকালে ১৯৪৭ সালের পর থেকে পাকিস্তানের অংশ পূর্ব পাকিস্তান নামে শাসিত ও শোষিত হয়েছে পাকিস্তানিদের শাসনাধীনে।
এই শাসন, শোষণ, বঞ্চনা ও অমানুষিক অত্যাচার ও নির্যাতনে কত শক, হুন, পাঠান, মুঘল ও ইংরেজ রাজ-রাজাদের পদভারে ভারাক্রান্ত হয়েছে বাংলার মাঠ ও প্রান্তর। কত সিথির সিঁধুর নিয়েছে কেড়ে বিজাতীয় হায়েনার দল। কত ভাইবোন আত্মাহুতি দিয়েছে বাঙালির স্বাধীনতা ও মুক্তির সংগ্রামে। মাস্টার দা সূর্যসেন, ক্ষুদিরাম, প্রীতিলতা, নেতাজি সুভাষ বসু, আসাদ, মতিউরসহ কত নাম না-জানা অসংখ্য নরনারী। কিন্তু সেই স্বাধীনতার সূর্য ওঠেনি গগণে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক মাহেন্দ্রক্ষণে ডাক দিয়েছিলেন ‘এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম।’ বঙ্গবন্ধুর ১৯৭১ সালের ৭ মার্চে এই ডাকে সাড়া দিয়ে এদেশের কৃষক-শ্রমিক, ছাত্র-যুবক, শিক্ষিত-অশিক্ষিত লাখ লাখ মেহনতি মানুষ ঝাঁপিয়ে পড়েছিল স্বাধীনতাযুদ্ধে। পাকিস্তানি বাহিনীর নির্যাতনে এদেশের ১ কোটি মানুষ প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল। পাক-বাহিনীর সাথে বাঙালির এই স্বাধীনতার যুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে শহিদ হয়েছেন এদেশের ৩০ লাখ মানুষ। সম্ভম হারিয়েছেন ৪ লাখ মা-বোন। হাজার হাজার ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে পাকিস্তানি বাহিনী। দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী এক যুদ্ধের মাধ্যমে বাঙালি ও বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। তাই, বাঙালির বাংলাদেশ এবং বঙ্গবন্ধু এক ও অভিন্ন-অবিচ্ছেদ্য। হাজার বছরের বাঙালির লালিত স্বাধীনতার স্বপ্নের সফল রূপকার হলেন আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
বঙ্গবন্ধু ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ গোপালগঞ্জ মিশন স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় রাজনীতিতে যোগ দিয়ে বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত করতে থাকেন। ক্রমান্বয়ে রাজনৈতিক দল গঠনের মাধ্যমে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ১৯৫৮ সালের আইয়ুব খানের সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন, ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন, বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ ৬-দফা দাবি ১৯৬৬ সালে তিনি পেশ করেন। ১৯৬৯ সালের ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানসহ প্রতিটি আন্দোলনের মূল নেতৃত্বে ছিলেন বঙ্গবন্ধু। দীর্ঘ ৩৩ বছরের সংগ্রামী জীবনে তিনি প্রতিক্রিয়াশীল শক্তির হাতে বারবার কারাভোগ করেছেন, নির্যাতিত হয়েছেন। বাঙালির স্বাধীনতার প্রশ্নে তিনি কোনো শক্তির সাথে আপস করেননি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার জীবনের একপর্যায়ে ১৯৬১ সালের ১ মার্চ থেকে পূর্ব পাকিস্তান আলফা ইনসিওরেন্স কোম্পানি নামে একটি বিমা প্রতিষ্ঠানে ঢাকার ১২নং বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ অফিসে কাজ করেছেন। এখানে বসেই তিনি বাঙালির মুক্তির সনদ ৬-দফা প্রণয়ন করেন। তৎকালীন রাজনীতির প্রায় সব নেতাই তার অফিসে আসতেন। আর তখনই তিনি উপলব্ধি করেছিলেন এদেশের গরিব মেহনতি মানুষের জীবনে জীবন বীমার গুরুত্ব কতটুকু। পরিবারে একমাত্র উর্পাজনক্ষম ব্যক্তির অকাল মৃত্যুতে তার পরিবার ভীষণভাবে অসহায় হয়ে পড়ে। তার যদি একটি জীবন বীমা করা থাকে, সেই জীবন বীমার মরণোত্তর দাবির টাকা দিয়ে তার পরিবার আর্থিক নিরাপত্তা পেতে পারে। শুধু তাই নয়, তিনি জীবিত থাকলে মেয়াদ শেষে বিমার টাকা পেয়ে পরিবার-পরিজন স্বচ্ছলভাবে জীবনযাপন করতে পারেন। তাছাড়া, এদেশের হাজার হাজার বেকার নর-নারী পেশা হিসেবে জীবন বীমাকে গ্রহণ করতে পারেন। জীবন বীমার এই অসীম গুরুত্বের কথা বিবেচনা করে ইংল্যান্ডের প্রভাবশালী প্রধানমন্ত্রী স্যার জন উইচটন চার্চিল বলেছেন, ‘আমার যদি ক্ষমতা থাকত, তবে আমি প্রতিটি ঘরের দরজায় লিখে দিতাম তোমরা বেশি বেশি করে জীবন বীমা করো।’
জীবন বীমার গুরুত্ব যথাযথভাবে উপলব্ধি করে ১৯৭১ সালের স্বাধীনতার পর, স্বাধীনতার সুফল এদেশের সাধারণ মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়া ও দেশ পুনর্গঠনের অংশ হিসেবে তিনি ব্যাংক ও বিমা শিল্পকে জাতীয়করণ করেন। পরবর্তীকালে তিনি এদেশের ৩৭টি বিমা কোম্পানিকে নিয়ে প্রথমে সুরমা জীবন বীমা কর্পোরেশন ও রূপসা জীবন বীমা কর্পোরেশন নামে দুটি জীবন বীমা প্রতিষ্ঠান গঠন করেন। পরবর্তীতে ১৯৭৩ সালে ১৪ মে প্রতিষ্ঠান দুটিকে একত্রিত করে ১৯৭৩ সালে ৬নং আইনবলে জীবন বীমা কর্পোরেশন গঠন করেন। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বর্তমানে জীবন বীমা কর্পোরেশন তার ৪৫৫টি শাখা অফিস, ৮১টি সেলস অফিস, ১২টি কর্পোরেট সেবা দপ্তর, ৮টি রিজিওনাল অফিস ও প্রধান কার্যালয়ের সুশিক্ষিত ও প্রশিক্ষিত, দক্ষ, কর্মকর্তা-কর্মচারী, উন্নয়ন ম্যানেজার, উন্নয়ন অফিসার এবং বিমা এজেন্টদের অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে ব্যসায়িক কর্মকাণ্ড পরিচালনায় দেশের অভ্যন্তরীণ পুঁজি সংগ্রহ, বিমা গ্রাহক এবং তার পরিবারের আর্থিক নিরাপত্তাসহ মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন ও সাধারণ মানুষের মাঝে জীবন বীমা সম্পর্কে আগ্রহ ও সচেতনা বৃদ্ধিতে প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করে আসছে।
উপসংহারে বলা যায়, বাঙালির, বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন এবং জীবন বীমা কর্পোরেশন প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসামান্য অবদানের জন্য ‘বাঙালির জীবনে বঙ্গবন্ধু ও জীবন বীমা কর্পোরেশন’ শিরোনামটি যথার্থ ও স্বার্থক হয়েছে।

লেখক : এজিএম ও সভাপতি বঙ্গবন্ধু পরিষদ, জীবন বীমা কর্পোরেশন

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিএনপি-জামাতের দুঃশাসন
পরবর্তী নিবন্ধ­­­দিনপঞ্জি : নভেম্বর ২০২২
আরও পড়ুন
spot_img

জনপ্রিয় সংবাদ

মন্তব্য