Sunday, September 24, 2023
বাড়িউত্তরণ-২০২১একাদশ বর্ষ,পঞ্চম সংখ্যা,এপ্রিল-২০২১বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বিশ্বনেতাদের শুভেচ্ছা

বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বিশ্বনেতাদের শুভেচ্ছা

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষ উপলক্ষে বাংলাদেশকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বিশ্বনেতারা। ভিডিও বার্তা, বিবৃতি ও ভার্চুয়াল ভাষণে এই শুভেচ্ছা জানান তারা। এ উপলক্ষে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস, রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং, জাপানের প্রেসিডেন্ট ইউশিহিদে সুগা, সৌদি বাদশা সালমান বিন আবদুল আজিজ, যুবরাজ প্রিন্স চার্লস, পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইমরান খান, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান, জার্মানির প্রেসিডেন্ট, স্পেনের রাজা, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট শুভেচ্ছা বার্তা পাঠিয়েছেন। বিশ্বনেতাদের উল্লেখ্যযোগ্য বক্তব্যগুলো তুলে ধরা হলো-

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস
বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশ বড় ভূমিকা রাখছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। ২৬ মার্চ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বাংলাদেশের জনগণকে শুভেচ্ছা জানিয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন। আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, বাংলাদেশের মানুষ বিগত পাঁচ দশকে সামাজিক অগ্রগতিতে বড় ভূমিকা রেখেছেন। তাদের এ উন্নতির জন্য আমি তাদের অভিনন্দন জানাই। আরও অভিনন্দন জানাতে চাই বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হওয়ায়। তিনি বলেন, বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশ বড় ভূমিকা রাখছে। জাতিসংঘের শান্তি রক্ষা মিশনে সবচেয়ে বেশি সদস্য বাংলাদেশের। বাংলাদেশ লাখো রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে। এজন্য তাদের ধন্যবাদ।

ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশের জনগণকে আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদকে পাঠানো এক বার্তায় রানি এলিজাবেথ বলেন, ‘বাংলাদেশের ৫০তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আমি আনন্দিত। আমি বাংলাদেশের আরও অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি কামনা করি। বাংলাদেশের জনগণকে আমার শুভেচ্ছা এবং অভিনন্দন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের মধ্যে বন্ধুত্ব ও ভালোবাসার সম্পর্কের ভিত্তি এখনও ৫০ বছর আগের মতো গুরুত্বপূর্ণ। একটি কঠিন বছর কাটিয়েছি আমরা। আশা করি, আমরা বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্যগত চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে উঠতে পারব। ভবিষ্যতে আরও ভালো সময়ের প্রত্যাশায় আছি।’

ভ্যাটিকানের আর্চবিশপ পোপ ফ্রান্সিস
বাংলাদেশে ভিন্ন ঐতিহ্য ও সম্প্রদায়ের মানুষ একতাবদ্ধ হয়ে মর্যাদার সঙ্গে বসবাস করছে মন্তব্য করে পোপ ফ্রান্সিস বলেছেন, এমন বহুত্ববাদী ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রজ্ঞার ফসল।
গত ২৪ মার্চ জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর আয়োজনে ভিডিও বার্তায় এসব কথা বলেন তিনি। ভ্যাটিকানের আর্চবিশপ ফ্রান্সিস বলেন, অনন্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও আধুনিক দেশ বাংলাদেশ, সোনার বাংলা, যেখানে ভিন্ন ঐতিহ্য ও সম্প্রদায়ের মানুষ ভাষা এবং সংস্কৃতির ঐকতানে এগিয়ে যাচ্ছে। এটা বাংলাদেশিদের জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উত্তরাধিকারের একটি। আলোচনা ও সংলাপের সংস্কৃতির প্রসার তিনি করেছিলেন, যেটা তার প্রজ্ঞা, জ্ঞানের গভীরতা ও বিস্তৃত লক্ষ্য থেকে উৎসারিত। তিনি জানতেন, প্রত্যেক মানুষ স্বাধীনতা, শান্তি ও নিরাপত্তা নিয়ে গঠিত এমন বহুত্ববাদী ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ দিয়েই ন্যায়নিষ্ঠ ও ভ্রাতৃত্বপূর্ণ পৃথিবী গড়া যায়। মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ‘মুজিব চিরন্তন’ প্রতিপাদ্যে ১০ দিনের আয়োজনের অষ্টম দিন এই ভিডিও বক্তব্য দেন পোপ ফ্রান্সিস।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বাংলাদেশের জনগণকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠানো বার্তাটি মার্কিন রাষ্ট্রদূতের কণ্ঠে গত ২৬ মার্চ জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে অনুষ্ঠিত উদযাপন অনুষ্ঠানে প্রচার করা হয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তার বার্তায় বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে আমি বাংলাদেশের জনগণকে স্বাধীনতার ৫০তম বার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে অভিনন্দন জানাচ্ছি। বাংলাদেশ এখন অর্থনৈতিক অগ্রগতির একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত এবং উচ্চাশা ও সুযোগের দেশ। আমি অসাধারণ এ অর্জনের জন্য আপনাকে ও বাংলাদেশের জনগণকে অভিনন্দন জানাই।
তিনি আরও বলেন, ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে আশ্রয় দেওয়া বিশ্বের সামনে মানবিকতা ও উদারতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এই সংকটের একটি টেকসই সমাধান খুঁজে পেতে যুক্তরাষ্ট্র অবিচল অংশীদার হিসেবে বাংলাদেশের পাশে থাকবে। জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে বাংলাদেশের অঙ্গীকারেরও আমি প্রশংসা করি এবং গুরুত্বপূর্ণ এই বিষয়ে আমার প্রশাসন আপনার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করবে বলে প্রত্যাশা করি।
বাইডেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধুত্বকে গুরুত্ব দেয় এবং আমরা বিশ্বাস করি যে, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের প্রতি যৌথ অঙ্গীকার শক্তিশালী অংশীদারিত্বের ভিত্তি তৈরি করে। আগামী ৫০ বছর ও আরও বেশি সময় ধরে আমাদের দুই দেশের জনগণের আরও উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য এই অঙ্গীকারগুলো আরও জোরদার করতে আপনার সঙ্গে কাজ করার প্রত্যাশা করছি। এদিকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে অভিনন্দন জানিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন
বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একজন অসাধারণ নেতা ছিলেন। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে পাঠানো এক বার্তায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এ-কথা বলেন। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশ সরকারের ১০ দিনের অনুষ্ঠানমালার নবম দিনে ২৫ মার্চ জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডের অনুষ্ঠানে পুতিনের এই বার্তা প্রচার করা হয়। ওই বার্তায় পুতিন বলেন, ‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালনের সময়ে বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীও পালন করছে।’ বাংলাদেশ ও রাশিয়ার মধ্যে গভীর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি নিশ্চিত যে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তার জন্য যৌথ উদ্যোগের মাধ্যমে বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুই দেশের গঠনমূলক সহযোগিতা আরও বেশি বৃদ্ধি পাবে।’

ভারতের রাষ্ট্রপতি শ্রী রামনাথ কোবিন্দ
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের কাছে শুভেচ্ছা বার্তা পাঠিয়েছেন ভারতের রাষ্ট্রপতি শ্রী রামনাথ কোবিন্দ। ২৬ মার্চ ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশন এ তথ্য জানিয়েছে। ভারতের রাষ্ট্রপতি বার্তায় বলেন, আপনাদের জাতীয় দিবস উপলক্ষে ভারতের জনগণ এবং আমার পক্ষ থেকে মহামহিম আপনাকে, আপনার সরকার এবং বাংলাদেশের জনগণকে উষ্ণ শুভেচ্ছা এবং আন্তরিক অভিনন্দন জানাই। তিনি বলেন, ভারত ও বাংলাদেশ আমাদের ৫০ বছরের অনুকরণীয় ও অনন্য দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উদযাপন করছে। উভয় সরকারের শক্তিশালী রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি বিভিন্ন খাতে আমাদের বহুমুখী সহযোগিতা জোরদার করেছে। আমি আরও আনন্দিত যে, মুক্তিযুদ্ধে আপনাদের বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের পাশাপাশি বিংশ শতাব্দীর অন্যতম মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের ফলে এই বছরটি ব্যাপকতা লাভ করেছে।

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন
বর্তমানে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম অর্থনৈতিক উন্নয়নশীল দেশ বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে দেশটির জনগণকে শুভেচ্ছা জানিয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন। বরিস জনসন বলেন, বাংলাদেশ বর্তমানে অর্থনৈতিক উন্নয়নশীল রাষ্ট্র। আমরা বাংলাদেশের সমৃদ্ধির স্বপ্নের সঙ্গে থাকতে চাই। তিনি বলেন, ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু ১০ ডাউনিং স্ট্রিটে (যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়) এসেছিলেন। যা আমাদের দুদেশের মধ্যে বন্ধুত্বের সূচনা ছিল। গত ৫০ বছরে এ বন্ধুত্ব আরও দৃঢ় হয়েছে। বরিস জনসন বলেন, যুক্তরাজ্যে ৬ লাখের বেশি বাংলাদেশি রয়েছে। তারা যুক্তরাজ্যের উন্নয়নে ভূমিকা রাখছেন। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বাংলাদেশের জনগণকে শুভেচ্ছা জানিয়ে তিনি বলেন, এ সময়ে বাংলাদেশ যা অর্জন করেছে তা অসাধারণ।

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান
মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশের জনগণকে অভিনন্দন জানিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এক ভিডিও বার্তায় এই অভিনন্দন জানান। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশ সরকারের ১০ দিনের অনুষ্ঠানমালার শেষদিনে ২৬ মার্চ জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডের অনুষ্ঠানে এরদোগানের এই ভিডিও বার্তা প্রচার করা হয়। বাংলাদেশ সফরে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে এরদোগান বলেন, ‘কোভিড-১৯ মহামারি যা সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। এ জন্য আমার পক্ষে এই আমন্ত্রণ গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। তবে যদি পরিস্থিতি ভালো হয়, বাংলাদেশ সফরের ইচ্ছা আমার আছে।’ তিনি বলেন, ‘দুই দেশের জনগণের মধ্যে ভ্রাতৃত্বমূলক অনুভূতি আমাদের সম্পর্ককে আরও উন্নত করার জন্য ইচ্ছাশক্তিকে দৃঢ় করবে।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আপনার পিতা, বাংলাদেশের প্রথম প্রেসিডেন্ট শেখ মুজিবুর রহমান জাতির জন্য সংগ্রাম ও ত্যাগের মাধ্যমে বিংশ শতাব্দীর বিখ্যাত রাষ্ট্রনায়কদের মধ্যে জায়গা করে নিয়েছেন। আমি বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তীর বছরে আমাদের সম্পর্ক ও সহযোগিতা আরও গভীর হবে।’

কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন সেন
কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন সেন বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর বিচক্ষণ ও দূরদর্শী নেতৃত্বের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা হয়েছিল এবং সমৃদ্ধির পথে যাত্রা শুরু হয়েছিল। সেই পথ অনুসরণ করে তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ অনন্য সাফল্যের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে; আর সেটি হচ্ছে উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি প্রাপ্তিতে চূড়ান্ত যোগ্যতা অর্জন। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ উন্নত দেশের পথেই নতুন যাত্রা শুরু করল। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত উদযাপনে অংশ নিয়ে হুন সেন ভিডিও বার্তায় এসব কথা বলেন। ‘মুজিব চিরন্তন’-এর দ্বিতীয় দিনে গত ১৮ মার্চ সন্ধ্যায় তার এ ভিডিও বার্তা প্রচারিত হয়। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও কম্বোডিয়ার মধ্যে ১৯৭৩ সালে বন্ধুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছিল কম্বোডিয়ার প্রয়াত রাজা সিহানুক ও বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মাধ্যমে। সে-সময় আলজেরিয়াতে জোটনিরপেক্ষ সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন তারা। তখন থেকেই দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপিত হয়। হুন সেন বলেন, বাংলাদেশ ও কম্বোডিয়ার মধ্যে আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয় ১৯৯৩ সালে। গত তিন দশকে দুই দেশের সম্পর্ক আরও গভীর হয়েছে এবং উভয় দেশ দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় ব্যবস্থায় একে অপরকে সহযোগিতা করছে।

ওআইসির মহাসচিব ড. ইউসুফ আল ওথাইমিন
ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) মহাসচিব ড. ইউসুফ আল ওথাইমিন বলেছেন, বঙ্গবন্ধু সোনার বাংলা গড়তে চেয়েছিলেন। তিনি দ্বিতীয় ওআইসি সম্মেলনে অংশ নিয়ে বাংলাদেশকে মুসলিম বিশ্বের কাছে পরিচিত করেছিলেন। ২০ মার্চ জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন অনুষ্ঠানমালার চতুর্থ দিনের আয়োজনে ভিডিও বার্তায় এ-কথা বলেন ওআইসি মহাসচিব। অনুষ্ঠানে ভিডিও বার্তায় ইউসুফ আল ওথাইমিন বলেন, বঙ্গবন্ধু যে সোনার বাংলা গড়তে চেয়েছিলেন সেই লক্ষ্যে তার কন্যা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কাজ করছেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পরে বঙ্গবন্ধুর কন্যা দেশের ক্ষমতায় রয়েছেন। তিনি সোনার বাংলা গড়ে তুলতে ক্লান্তিহীনভাবে কাজ করছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখন একটি উজ্জ্বল রাষ্ট্র। বাংলাদেশ ও ওআইসির মধ্যকার সম্পর্ক এখন আরও দৃঢ়। মুসলিম বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা, উন্নয়নের লক্ষ্যে আমরা একসঙ্গে কাজ করব।

ভারতীয় কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধী
গত পাঁচ দশকে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে বাংলাদেশের অর্জন বিস্ময়কর বলে উল্লেখ করেছেন ভারতের কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধী। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে এক ভিডিও বার্তায় বলেছেন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পর্কের মূল ভিত্তি। বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী উভয় দেশের মধ্যে সম্মান ও গভীর বন্ধুত্বের সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন। গত ২৪ মার্চ বিকেলে জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর উদযাপন মঞ্চে সোনিয়া গান্ধীর এ ভিডিও বার্তা প্রচার করা হয়। ভিডিও বার্তায় তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক সব সময় বিশেষ। কারণ, ইন্দিরা গান্ধী ১৯৭১ সালে ঐতিহাসিক ভূমিকা রেখেছিলেন। ইন্দিরা গান্ধী এবং বঙ্গবন্ধু সম্মান ও গভীর বন্ধুত্বের সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন। ১৯৭১ সাল ভারতের জন্য যেমন রূপান্তরের বছর ছিল, তেমনই এটি বাংলাদেশের জন্যও রূপান্তরের বছর ছিল। প্রকৃতপক্ষে ৫০ বছর আগে বাংলাদেশের সাহসী জনগণ এই উপমহাদেশের ইতিহাস ও ভূগোলের রূপান্তর ঘটিয়েছিল। এর পরপরই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্বমঞ্চে আবির্ভূত হন ঐতিহ্য ও বহুপক্ষীয় উদারতাবাদকে রক্ষার জন্য।
সোনিয়া গান্ধী আরও বলেন, আমি এমন একজন ব্যক্তি যে ১৯৭১ সালে ইন্দিরা গান্ধীর বাসায় থেকে আমার প্রয়াত স্বামী রাজীব গান্ধীর সঙ্গে এই রূপান্তরকে সামনে থেকে দেখেছি। আজকের এই আনন্দের দিনে অত্যন্ত খুশির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও এদেশের মানুষের গর্বকে ভাগ করে নিচ্ছি।
ভারতীয় কংগ্রেস সভাপতি বলেন, গত পাঁচ দশকে বাংলাদেশের অভূতপূর্ব অর্জন ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অত্যন্ত বিস্ময়কর এবং এটি বিশ্বের স্বীকৃতি পেয়েছে।

রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ
ল্যাভরভ বাংলাদেশের মানুষের স্বাধীনতা অর্জনের জন্য বঙ্গবন্ধু ছিলেন একজন যোদ্ধা এবং রাশিয়া তাকে সেভাবেই স্মরণ করে। তিনি ছিলেন অসামান্য রাজনৈতিক ও বিপ্লবী নেতা। তার দেশের মানুষের স্বাধীনতা ও শান্তির জন্য তিনি লড়াই করে গেছেন। শেখ মুজিব ছিলেন রাশিয়ার প্রকৃত বন্ধু। গত ১৯ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উৎসবে এক ভিডিও বার্তায় রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ আরও বলেন, ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে কথা বলতে সুযোগ করে দেওয়াটা আমার জন্য দারুণ সম্মানের। বাংলাদেশের মানুষের সফলতাকে আমরা স্বাগত জানাই। আপনাদের দেশ ভালো করছে এবং ক্রমাগত উন্নতি করছে। আন্তর্জাতিক পরিম-লে তা আলোচনা হচ্ছে। বৈশ্বিক সমস্যা দারিদ্র্য ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায়ও ঢাকা কাজ করছে।’ বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় রাশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক অংশীদার বলেও উল্লেখ করেন সের্গেই ভি ল্যাভরভ। এ সময় তিনি রাশিয়ার সহযোগিতায় বাংলাদেশের চলমান প্রথম নিউক্লিয়ার বিদ্যুৎ প্রকল্পের বিষয়টিও উল্লেখ করেন। রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘রাশিয়া বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক রাজনৈতিক আলোচনা চালিয়ে যেতেও প্রস্তুত। বাংলাদেশ-রাশিয়ার মধ্যে বিদ্যমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে আমি সন্তুষ্ট।’ বঙ্গবন্ধুকে রাশিয়ার একজন সত্যিকারের বন্ধু অভিহিত করে তিনি বলেন, বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়ার দুই মাসের মধ্যে মার্চ ১৯৭২-এ বঙ্গবন্ধু মস্কো সফর করেন। ওই সময়ে পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধার ওপর ভিত্তি করে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক তৈরি হয়। বাংলাদেশকে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য রাশিয়া সব সময়ই রাজনৈতিক সমর্থন দিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ১৯৭২ সালে চট্টগ্রাম বন্দরকে মাইনমুক্ত করার জন্য সোভিয়েত নেভির একটি দল পাঠানো হয়েছিল। বাংলাদেশ রাশিয়ার এই সমর্থনকে মনে করেছে, যা প্রশংসার যোগ্য। তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশ অনেক উন্নতি করেছে। এর পাশাপাশি এখনকার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ দারিদ্র্যতার বিরুদ্ধে ঢাকা যুদ্ধ করছে। ল্যাভরভ বলেন, বিভিন্ন দেশে শান্তিরক্ষী বাহিনী পাঠানোর মাধ্যমে বাংলাদেশ শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প ২০২৩-২৪ নাগাদ শেষ হয়ে যাবে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় রাশিয়ার একটি বড় অর্থনৈতিক অংশীদার বাংলাদেশ এবং দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ২৪০ কোটি ডলারের।

ফরাসি সিনেটর জেকোলিন ডেরোমেডি
ফরাসি সিনেটর বাংলাদেশ ফ্রান্সের ঐতিহাসিক বন্ধু বলে উল্লেখ করেছেন ফরাসি সিনেটর ও ইন্টার পার্লামেন্টারি ফ্রেন্ডশিপ গ্রুপ ফর সাউথ ইস্ট এশিয়ার প্রেসিডেন্ট জেকোলিন ডেরোমেডি। একইসঙ্গে দুদেশের মধ্যে সম্পর্কের বন্ধন আরও দৃঢ় হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। ২০ মার্চ জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন অনুষ্ঠানমালার চতুর্থ দিনের আয়োজনে ভিডিও বার্তায় তিনি এ-কথা বলেন।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের চার্জ দ্যা এ্যাফেয়ার্স আবদুল্লা আলী আল-হামুদী
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশের মানুষকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত সংযুক্ত আরব আমিরাতের চার্জ দ্যা এ্যাফেয়ার্স আবদুল্লা আলী আল-হামুদী। ২৬ মার্চ বাংলাদেশের অফিসিয়াল টুইটার আইডি থেকে এক টুইট বার্তায় বাংলা ভাষায় এই অভিনন্দন বার্তা জানান তিনি। এ সময় টুইট বার্তায় বঙ্গবন্ধুর ‘কারাগারের রোজনামচা’র ইংরেজি ভার্সন ‘প্রিজন ডায়েরি’ আবদুল্লা আলী আল-হামুদী হাতে ধরে একটি ছবিও পোস্ট করেন।

আরও পড়ুন
spot_img

জনপ্রিয় সংবাদ

মন্তব্য