Sunday, September 24, 2023
বাড়িSliderবঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ‘নিঃসঙ্গ লড়াই’

বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ‘নিঃসঙ্গ লড়াই’

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের লায়ালপুর জেলখানার বন্দিজীবনভিত্তিক কাহিনি নিয়ে যাত্রাপালা ‘নিঃসঙ্গ লড়াই’ মঞ্চস্থ হয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে নাট্যকলা ও চলচ্চিত্র বিভাগের ব্যবস্থাপনায় গত ৭ ও ৮ জানুয়ারি জাতীয় নাট্যশালা এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলটি সংগত কারণে হয়ে ওঠে শিল্পের আদান-প্রদান ও বিনিময়ের অনুশীলন ক্ষেত্র। এ নিয়ে শাহ্ সোহাগ ফকির এর প্রতিবেদন-

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শ্রেষ্ঠ বাঙালি। যিনি বাঙালি জাতির মুক্তির জন্য বহুবার কারাবরণ করেছেন। স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন তার পাকিস্তানের কারাজীবন অন্যতম। গত শতকের নব্বই দশক পর্যন্ত যাত্রা একটি জনপ্রিয় শিল্পমাধ্যম হিসেবে এদেশের দর্শকমহলে ব্যাপকভাবে গ্রহণযোগ্য ছিল। যাত্রাশিল্প বাঙালি সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের লায়ালপুর জেলখানার বন্দিজীবনভিত্তিক কাহিনি নিয়ে যাত্রাপালা ‘নিঃসঙ্গ লড়াই’ মঞ্চস্থ হয়েছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে। যাত্রাপালা ‘নিঃসঙ্গ লড়াই’ নির্মাণ প্রক্রিয়ায় ‘যাত্রা’র প্রথা ও পরম্পরাগত পরিবেশনা জ্ঞান, কৌশল ও চর্চা-পদ্ধতির সাথে নগরায়তনে বিকশিত নাট্যকলা এবং পরিবেশনা সংশ্লিষ্ট জ্ঞানকা-ের মধ্যে মেলবন্ধনের একটি প্রয়াস লক্ষ করা যায়। একদিকে পালার অভিনয় ও পরিবেশনার সাথে যুক্ত সকলেই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের দক্ষ এবং অভিজ্ঞ অভিনয় শিল্পী। অভিনয়ের মধ্যে যাত্রার মূল ভাব ফুটয়ে তুলে ধরা হয়েছে সুনিপুণভাবে। অন্যদিকে এর নির্মাণ ও ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়ায় অর্থাৎ রচনা, নির্দেশনা, ব্যবস্থাপনা, পোশাক, আলো, মঞ্চ, সাজসজ্জায় যুক্ত হয়েছে একদল নাগরিক কলাকুশলী।
‘নিঃসঙ্গ লড়াই’ রচনার কাঠামোটি ধারাবাহিক বা এপিসোডিক-যাত্রা’র প্রচলিত ‘বই’ বা ‘পালা’র ন্যায় অঙ্ক ও দৃশ্যের বিভাজনে মেলোড্রামাটিক সংকট শীর্ষ (ক্লাইমেক্স) তৈরি করেনি। পালাটিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পাকিস্তানে জেল-জীবনের ঐতিহাসিক দিনগুলোকে পর্যায়ক্রমিকভাবে ১১টি দৃশ্যে বিন্যস্ত করা হয়েছে। কিন্তু চ্যালেঞ্জিং বিষয় হলোÑ এই গল্প ইতিহাসের সত্য ও তথ্যের আশ্রয়ে আমাদের নিত্যকথনের চেনাজানা বাস্তবিক চরিত্র, যেমনÑ বঙ্গবন্ধু, ইয়াহিয়া, জুলফিকার আলী ভুট্টো প্রভৃতি চরিত্রদের তুলে ধরা হয়েছে। ফলে প্রথমেই যে সংকটটি সামনে এসে দাঁড়ায় তা হলোÑ এদের আসর বা মঞ্চ-জীবনের স্বরূপ কি বাস্তববাদ দ্বারা নির্ধারিত হবে, না-কি যাত্রার দৈনন্দিন-অতিরিক্ত অভিনয়ের প্রচলিত প্রথা ও শৈলী দ্বারা রূপান্তরিত হবে? ‘যাত্রা’র আসর থেকেই মেলে এর উত্তরÑ কেননা, যাত্রার আসরেই তো মাইকেল মধুসূদন, লেলিন, নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা প্রভৃতি চরিত্রদের চিনে নিয়েছি একরকম করে। তবে আমাদের বঙ্গবন্ধু নয় কেন, কেন নয় ইয়াহিয়া বা ভুট্টো! তাছাড়া, বঙ্গবন্ধুর জনসভা আর তার রাজনৈতিক কর্মকা-ের দিকে তাকালে আর কোনো দ্বিধা থাকে না যে বিশাল পারফরম্যাটিভ ব্যক্তিত্ব নিয়ে নেতা বঙ্গবন্ধু ভাষণ-আসরে এসে দাঁড়ান, সে তো দৈনন্দিনের ব্যক্তি বঙ্গবন্ধুকে ছাপিয়ে যায় নিমিষেই।

‘নিঃসঙ্গ লড়াই’ রচনার কাঠামোটি ধারাবাহিক বা এপিসোডিক-যাত্রা’র প্রচলিত ‘বই’ বা ‘পালা’র ন্যায় অঙ্ক ও দৃশ্যের বিভাজনে মেলোড্রামাটিক সংকট শীর্ষ (ক্লাইমেক্স) তৈরি করেনি। পালাটিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পাকিস্তানে জেল-জীবনের ঐতিহাসিক দিনগুলোকে পর্যায়ক্রমিকভাবে ১১টি দৃশ্যে বিন্যস্ত করা হয়েছে।

‘নিঃসঙ্গ লড়াই’ যাত্রাপালাটির কাহিনিতে দেখা যায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের লায়ালপুর জেলখানার বন্দিজীবনভিত্তিক কাহিনি। ২৫ মার্চ রাতে ঢাকা থেকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়ার পরে লাহোর থেকে ৮০ মাইল দূরে লায়ালপুর জেলে বঙ্গবন্ধুকে রাখা হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের পরেও তিনি বন্দি থাকেন পশ্চিম পাকিস্তানের জেলে। বিচার নামের এক প্রহসন মঞ্চস্থ হয় বঙ্গবন্ধুর এই জেল-জীবনে। পৃথিবীতে আর কোথাও কোনো নেতার এ-রকম হাস্যকর সাজানো বিচার হয়েছে কি না ইতিহাসে তার সাক্ষ্য মেলা ভার। ১৯৭১-এর জুলাইয়ের গোড়ার দিকে ইয়াহিয়া বুঝতে পারেন যে পূর্ব পাকিস্তানে তার সেনাবাহিনী বিপুল প্রতিরোধের সম্মুখীন হচ্ছে এবং পৌঁছে যাচ্ছে পরাজয়ের দ্বারপ্রান্তে। তখন প্রতিশোধের নেশায় ইয়াহিয়া শেখ মুজিবকে হত্যার পরিকল্পনা করে। জুলফিকার আলী ভুট্টো তাকে নিবৃত্ত করে এই বলে যে, মুজিবকে হত্যা করা হলে বিশ্ব সমর্থন একেবারে তলানিতে গিয়ে ঠেকবে। কেবলমাত্র বিচারের মাধ্যমে তাকে সাজা দিলে সেটা গ্রহণযোগ্যতা পাবে। শুরু হয় বিচার। লায়ালপুর জেলে বঙ্গবন্ধুর ট্রায়াল। অভিযোগ দাঁড় করানো হয় ১২টি। যার ভেতরে ৬টি প্রমাণিত হলে নিশ্চিত শাস্তি মৃত্যুদ-। আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্যে ব্রোহি নামক এক ব্যারিস্টারকে নিয়োগ দেওয়া হয়, যিনি বঙ্গবন্ধুর পক্ষের উকিল হবেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধু সাফ-সাফ জানিয়ে দেন আমার পক্ষে কোনো উকিলের প্রয়োজন নেই আমি নিজেই আমার যুক্তিতর্ক তুলে ধরব। বিচারে সাজানো কিছু সাক্ষী হাজির করা হয়। বঙ্গবন্ধু তার ক্ষুরধার যুক্তি দিয়ে প্রমাণ করে দিতে থাকেন যে তার বিরুদ্ধে সবগুলো মামলাই ভিত্তিহীন। সাক্ষীরা সব টাকা খেয়ে মিথ্যে সাক্ষী দিতে এসেছে। তারপরেও বিচারের রায় হয় এবং রায়ে বঙ্গবন্ধুর ফাঁসির আদেশ ঘোষণা করা হয়। তাকে লায়ালপুর জেল থেকে নেওয়া হয় মিয়াঁওয়ালি জেলে, যেখানে তার ফাঁসি কার্যকর করা হবে। কবর খোঁড়া হয় তার জন্যে। বঙ্গবন্ধু সেই কবর খোঁড়া দেখতেও পান। তিনি মৃত্যুকে ভয় পাননি। কেবল বলেছিলেন তার লাশটা যেন তার দেশের মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়। এদিকে দেশ স্বাধীন হয় আর বিশ্বনেতৃত্বের চাপে বন্ধ হয়ে যায় ফাঁসি কার্যকরের আয়োজন। পাকিস্তানের জেল থেকে মুক্তি পেয়ে বিলাত ও ভারত হয়ে ১০ জানুয়ারি ১৯৭২-এ দেশে ফেরেন তিনি। প্রযোজনা উপদেষ্টা লিয়াকত আলী লাকী ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির নাট্যকলা ও চলচ্চিত্র বিভাগ আয়োজনে মাসুম রেজার রচনায় যাত্রাপালাটি নির্দেশনা দেন সাইদুর রহমান লিপন।

 

আরও পড়ুন
spot_img

জনপ্রিয় সংবাদ

মন্তব্য